বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তাফসীরে হিদায়াতুল কোরআন

  • সম্পাদকীয়   
  • ২৯ আগস্ট, ২০২৫ ০০:৪৬

সুরা সাজদাহ, পর্ব ১

অনুবাদ

(১) আলিফ-লাম-মীম। (২) এ কিতাব বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ; এতে কোনো সন্দেহ নেই। (৩) তবে কী তারা বলে, এই ব্যক্তি নিজে এটা রচনা করেছে? বরং তা তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত মহাসত্য, যাতে তুমি এমন এক জাতিকে সতর্ক করতে পারও, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোনো সতর্ককারী আসেনি। হয়তো তারা হিদায়াত পেয়ে যাবে।

মর্ম ও শিক্ষা

পূর্বের সূরা লোকমানও আল্লাহর কিতাব কোরআন দিয়ে শুরু হয়েছে। এরপর এখানে সূরা সিজদাহ আল্লাহর কিতাব কোরআনের দিকে মানুষকে তাগিদ করে শুরু হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ এ দুটি সূরাতেই ইমানের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে আল্লাহর কিতাবের প্রতি ইমান অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ কোরআনে ইসলামী জীবন-দর্শনের দলীল রয়েছে। কোরআন মেনে নিলে সবই মানা হয়। এতে ইমান আনলে অন্য সবকিছুর ওপর ইমান আনা হয়ে যায়।

কোরআন হলো নাযিলকৃত ঐশী কিতাব

আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআন হলো- রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। আরবি মূল শব্দ হলো- তানযিলুল কিতাব। অর্থাৎ নাযিলকৃত কিতাব। অর্থাৎ এ কিতাব আল্লাহর নিকট থেকে জিবরাইল (আ)-এর মাধ্যমে ওহী স্বরূপ সরাসরি নাযিলকৃত। নাযিলকৃত মানে হলো- ওপর থেকে অবতরণকৃত। এ কথাগুলো সরাসরি আল্লাহর কথা, যা জিবরাইল নিয়ে এসে শেষনবীর নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। কখনো জিবরাইল (আ.) মানুষের বেশে এসে রাসূলের নিকট কথাগুলো বলেছেন। কখনো আকৃতিহীনভাবে বলেছেন। কখনো রাসূলের মনে এ কোরআনের বাণীগুলো নাযিল করা হয়েছে। এ কোরআনের বাণীগুলো প্রেক্ষাপট সৃষ্টির মাধ্যমে রাসূল (স.)-এর ২৩ বছরের জীবনে ধীরে ধীরে নাযিল হয়েছে। এ গোটা কিতাবটিকে মুদ্রিত আকারে এক সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়নি। বরং প্রত্যেকটা কথার পৃষ্ঠে কোনো ঘটনা বা প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার আলোকে ওহী এসেছে। যেন ওহীর অর্থ বোঝতে সুবিধা হয়। বলাবাহুল্য, নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করে আয়াত নাযিল হলেও তা শুধু সেই প্রেক্ষাপটের সঙ্গে নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট নয়, বরং এর দিকনির্দেশনা সাধারণ, সর্বক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

কোরআন রাসূল (স.)-এর রচিত গ্রন্থ নয়

কোরআন যে সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত কিতাব, এ বিষয়টিতে আরও তাগিদ ও জোর দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় আয়াতে আরও বলা হয়েছে, তারা কী বলে যে মুহাম্মদ (স.) নিজে তা রচনা করেছেন? অর্থাৎ বাতিলপন্থিরা কোরআনকে গ্রহণ না করার অজুহাত হিসেবে বলে বেড়াত যে, এ কোরআন হলো- মুহাম্মদের নিজের রচিত। যেহেতু তিনি নিরক্ষর ছিলেন, সেহেতু তার পক্ষে হয়তো তা রচনা করা সম্ভব হয়নি। সেহেতু কোনো ইহুদি পণ্ডীতের সাহায্য গ্রহণ করে তিনি পুরোনো কল্পকাহিনী শুনেছেন এবং সেগুলো কোরআন বলে চালিয়েছেন। কেউ কেউ বলত, তিনি ছিলেন একজন কবি। আর সেই সুবাদে কোরআনের কথাগুলো রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এভাবে কোরআন প্রত্যাখ্যান করার জন্য অনেক ধরনের অজুহাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে তার জবাব দেওয়া হয়েছে যে, কোরআন রাসূলের রচিত কিতাব নয় বরং আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত। এটা এ পৃথিবীর জিনিস না। কারও রচিত নয়। এতে কোনো জাদু নেই, কবিতা নেই। এখানে গণকের কোনো কথা নেই। তা কোনো কবি সাহিত্যিকের বানানো নয়। কোনো মতবাদ বা জীবনাদর্শ যদি কোনো মানুষ দ্বারা রচিত হয়, তবে তা সে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, মতাদর্শ ও সীমাবদ্ধতায় সীমিত থাকে। তা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সার্বজনীনতার গুণে গুণান্বিত হতে পারে না। ফলে তা আজ চললেও- কাল চলে না। এ সমাজে প্রযোজ্য হলেও- সে সমাজে তা পরিত্যাক্ত হয়। কাজেই কোনো ব্যক্তি রচিত সে মানব রচিত মতাদর্শ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সকলের জন্য কল্যাণময় হওয়া সম্ভব নয়।

এ কথাটিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাতিলপন্থিদের একাধিকবার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে যে, এটা যদি মানুষের রচিত হয়, তাহলে তোমাদের সকল শিক্ষিত ব্যক্তি, পণ্ডিত, কবি, সাহিত্যিক এবং সবাই একত্র হয়ে কোরআনের মতো অল্প কিছু রচনা করে দেখাও তো! কিন্তু তারা পারেনি। সেটা ছিল সাহিত্যের উৎকর্ষতার যুগ। কিন্তু তাদের সম্মিলিত চেষ্টা সত্ত্বেও তারা তা করতে পারেনি। কাজেই তা প্রমাণ করে যে, কোরআন মানব রচিত নয়। কোরআন হলো- আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত ও অবতরণকৃত কিতাব।

কোরআন হলো আল্লাহর দেওয়া জীবনাদর্শ ও জীবন-বিধান

কোরআন প্রতিপালক আল্লাহর নিকট থেকে আগত মহাসত্য, হক ও হিদায়াত (আয়াত-৩)। আল্লাহই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। মানুষকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। স্বভাবতই যে কারিগর কোনো যন্ত্র তৈরি করে, সে জানে সে যন্ত্র কীভাবে চালাতে হবে, কীভাবে চালালে সে যন্ত্র নষ্ট হবে, আর কীভাবে চালালে সে যন্ত্র সুস্থ থাকবে, সঠিক থাকবে। তেমনিভাবে মানুষের জন্য কোনো জীবন-ব্যবস্থা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর তা আল্লাহই ভালো জানেন। কোনো মানুষ নিজে অপরিপক্ব জ্ঞানে তা নির্ধারণ করতে অপরাগ। হয়তো কোনো ব্যক্তি তার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো মত ও পথকে কল্যাণকর মনে করতে পারে, কিন্তু সময়ের আবর্তে কিছুদিন পরে তা অকল্যাণকর ও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু যেহেতু আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এককভাবে জানেন ও বোঝেন। একমাত্র তিনিই এমন জীবন- বিধান দিতে পারেন, যা সর্বযুগের জন্য মানব জীবনের কল্যাণ নিয়ে আসবে এবং আখিরাতেও শান্তি পাবে। আর সে আদর্শ ও ব্যবস্থাই কোরআনে দেওয়া হয়েছে। কোরআন হলো- আল্লাহর দেওয়া জীবনাদর্শ ও জীবন-বিধানের লিখিত দলিল।

কোরআন হলো জান্নাতে ফিরে যাওয়ার রোডম্যাপ

আলোচ্য আয়াতের শেষ দিকে বলা হয়েছে, কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হলো- মানুষকে সতর্ক করা, যাতে মানুষ হিদায়াত পেতে পারে। আল্লাহ যখন আদম (আ.)-কে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠান, তখন বলেছিলেন, তোমরা অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে যাচ্ছ, সেখানে আমার হিদায়াত আসবে, যারা এ হিদায়াত গ্রহণ করবে তাদের কোনো চিন্তা বা ভয় নেই, তারা আবার জান্নাতে ফিরে আসতে পারবে। দুনিয়া থেকে জান্নাতে ফিরে যাওয়ার রোডম্যাপ হলো- আল্লাহর কিতাব। সে রোডম্যাপকেই হিদায়াত বলা হয়েছে। বর্তমান উম্মতের জন্য সে কিতাব হলো- কোরআন। সূরা বাকারার প্রথমেই বলা হয়েছে, কোরআন হলো হিদায়াত, তবে একটা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোরআন হিদায়াত তাদের জন্য যাদের মধ্যে তাকওয়া আছে। অন্যত্র বলা হয়েছে, কোরআন হলো সকল মানুষের জন্য হিদায়াত। অর্থাৎ কোরআনের উদ্দেশ্য হলো- সকল মানুষের হিদায়াত, কিন্তু এখান থেকে উপকৃত তারাই হবে যাদের ইতিবাচক মানসিকতা আছে, যারা সত্য অনুসন্ধান করে, যাদের মধ্যে আল্লাহভীতি ও তাকওয়া আছে।

কোরআন সন্দেহমুক্ত

আয়াতে বলা হয়েছে, ‘লা-রাইবা ফীহ’ অর্থাৎ এ কোরআনে কোনো সন্দেহ নেই। কোরআনের সূচনা সূরা বাকারার প্রথম দিকেও এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। এর কয়েকটি দিক আছে। প্রথম, কোরআন আল্লাহর নিকট থেকে নাযিল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়, কোরআন যে মানুষের জন্য কল্যাণকর জীবন-ব্যবস্থা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তৃতীয়, এ কোরআন মানুষের জন্য কল্যাণময় হিসেবে কালোত্তীর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে দেওয়া জীবনাদর্শ সাময়িক কিছু কালের জন্য মানব জীবনের কল্যাণ নিয়ে আসে না, বরং যখন কোরআন নাযিল হয়েছে তখন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগ, শতাব্দী ও সহস্রাধেই এ কল্যাণময়তা ও মঙ্গল অপরিবর্তিত থাকবে। চতুর্থ, এ কোরআনের বাণী ও দিকনির্দেশনা স্পষ্ট, পরিষ্কার ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন। কোরআনের দিকনির্দেশনায় কোনো অস্বচ্ছতা বা অস্পষ্টতা নেই। যদি কোনো নির্দেশ, আদেশ বা কথা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ হয়, অর্থাৎ তার একাধিক ব্যাখ্যা থাকে, তাহলে সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, দিকনির্দেশনা ও নির্দেশ আসলে কোনটি। কিন্তু এখানে এমনটি নয়। কোরআনে নির্দেশ, আদেশ ও দিকনির্দেশনা অত্যন্ত পরিষ্কার। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

কোরআনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআন নাযিল করা হয়েছে, যেন রাসূল মানুষকে সতর্ক করতে পারেন, যাতে তারা হিদায়াত পায়। এখানে দুটি বিষয় আছে। প্রথম, কোরআন হলো- হিদায়াত তথা আল্লাহর মনোনীত জীবন-ব্যবস্থা। দ্বিতীয়- তা গ্রহণ ও অনুসরণের উদ্বুদ্ধ করা এবং তা প্রত্যাখ্যানের কঠিন পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা। আল্লাহর দেওয়া দীনকে প্রত্যাখ্যান করলে এবং তার সঙ্গে সংঘর্ষিক অন্য কোনো পথে চললে দুনিয়াতেও মানুষের জন্য রয়েছে অকল্যাণ, আর আখিরাতেও রয়ছে কঠিন শাস্তি। সারকথা, কোরআনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- মানুষকে সুপথের দিকনির্দেশনা দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের হিদায়াত দান করা।

নবুয়তের দায়িত্ব

বলা হয়েছে, শেষনবীকে- কোরআন দিয়ে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে যেন তিনি মানুষকে সতর্ক করতে পারেন। অর্থাৎ নবীদের দায়িত্ব হলো- মানুষকে সতর্ক করা। সতর্ক করার দুটি দিক। প্রথম- মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক করা যে, আল্লাহর দেওয়া জীবনাদর্শ ও জীবন-ব্যবস্থা বা আল্লাহর দীন অনুসরণ করা অপরিহার্য ও অবশ্যকর্তব্য। তা করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ পাবে। দ্বিতীয়- আসল সতর্কতা হলো- এই যে, মানুষ যদি কোরআনে প্রদত্ত আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা অনুসরণ না করে তাহলে দুনিয়াতেও তাদের জন্য রয়েছে অকল্যাণ ও আখিরাতেও রয়েছে কঠিন শাস্তি। অন্যভাবে বলতে গেলে নবুয়তের দায়িত্ব হলো- মানুষকে সত্যের দাওয়াত দেওয়া, ভালো কাজের উপদেশ দেওয়া এবং অন্যায় থেকে বিরত রাখা। বলাবাহুল্য, শেষ নবীর পর আর কোনো নবী আসবেন না। সে দায়িত্ব বর্তায় শেষ নবীর অনুসারী সত্যপন্থিদের ওপর। সে জন্যই এ উম্মত শ্রেষ্ঠ উম্মত।

এ বিভাগের আরো খবর