৫০ ও ৫০ মিলিয়ে মোট ১০০ ওভারের ক্রিকেট খেলায় এখনও অতটা শক্তিশালী দলে পরিণত হতে পারেনি আফগানিস্তান। তবে তারা এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে কতটা উন্নতি করেছে, সেটির প্রমাণ হবে আজ ভারতের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা শক্তিধর দলের একটি স্বাগতিক ভারত। ব্যাটিংয়ে যেমন সুনাম রয়েছে দলটির, তাদের বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপও বিশ্বমানের। এবার তারা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের মিশনে নেমেছে। কাজেই প্রতিটি ম্যাচ বাড়তি গুরুত্ব দিয়েই খেলবেন রোহিত-কোহলিরা।
আফগানিস্তান অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ হলেও একাদশে কোনো ঘাটতি রাখবে না তারা। তাদের দলের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটার শুভমান গিল টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই খেলছেন না। তার খেলতে না পারাটা ভারতের জন্য খুবই আফসোসের বিষয়। কেননা চলতি বছর গিলের ব্যাটে রানবন্যা হয়েছে। বিশ্বকাপের মঞ্চেও এই কীর্তিমান ওপেনারের নান্দনিক ব্যাটিং দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। কিন্তু তিনি ডেঙ্গু জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ব্যাটিং শক্তি কমেছে ভারতের, যার প্রভাব দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর দিকে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল স্বাগতিকরা।
গিলের অনুপস্থিতিতে উদ্বোধনী ম্যাচে ইশান কিষানকে খেলানো হলেও ফায়দা হয়নি ভারতের। টপ-অর্ডারে যে দুর্গতি দেখা গেছে তাদের, সেটি বিরল ঘটনা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও অনিশ্চিত গিল। উদ্বোধনী ম্যাচের একাদশে রদবদল না এনে এ ম্যাচেও ইশান কিষানের ওপর আস্থা রাখতে পারে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তাদের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হলেন বিরাট কোহলি। লোকেশ রাহুলকে নিয়ে গত ম্যাচে যে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি, এ নৈপুণ্যেই তো বিশ্বখ্যাত এই ব্যাটার।
আফগানদের বিপক্ষেও শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে নামবে ভারত। প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও নির্ভার থাকবে না তারা। অন্যদিকে আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপ দুর্বল। বড় টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচে যে চাপ থাকে, সেটা কাটিয়ে উঠে সেরাটা নিংড়ে দিতে পারেননি আফগান যোদ্ধারা। প্রথম ম্যাচে দেড়শ রান করার পরই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। তবে তিনশর বেশি রান করার সামর্থ্য রয়েছে গুরবাজ, শহিদিদের। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এটি প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে আবার। কিন্তু এজন্য ভারতীয় শক্তিমান বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে তাদের। কৌশলে পরিবর্তন এনে নিপুণ দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে আফগান ব্যাটারদের।
রশিদ খান, মুজিব-উর রহমান, মোহাম্মদ নবি- এই ত্রয়ীর সমন্বয়ে আফগানিস্তানের স্পিন অ্যাটাক খুবই ভয়ংকর ও বিধ্বংসী। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ যেকোনো সময় ধসিয়ে দিতে পারেন তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সেই ভয়ংকর রূপ দেখা না গেলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিপক্ষে পাদপ্রদীপে থাকবেন এই তিন স্পিনার।
অবশ্য স্পিন খেলার অভ্যস্ততা আছে কোহলিদের। তারাও হোমওয়ার্ক করে মাঠে নামবেন। স্পিনে শক্তিশালী ভারতও। জাদেজা, কুলদীপ ও অশ্বিনকে খেলা খুবই কঠিন। অস্ট্রেলিয়ানরাই তাদের সামনে খাবি খেয়েছে, উইকেট হারিয়েছে অসহায়ভাবে। সাবেক দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের অনেক এগিয়ে রাখছে এই ধারালো স্পিন অ্যাটাক।
রশিদ খানরা নিয়মিত আইপিএল খেলে ভারতের উইকেট, কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছেন। অনেকটা নিজেদের দেশের মতো সবকিছু পাবেন তারা। ফলে এ নিয়ে নতুন করে কোনো কিছু ভাবতে হবে না তাদের। অন্যদিকে আফগানদের নাড়ি-নক্ষত্র সব জানা ভারতীয়দের। কোথায় তাদের দুর্বলতা, কোথায় শক্তি- সবকিছু জেনেশুনেই মাঠে নামছেন রোহিতরা।
আজকের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে নিরঙ্কুশ ফেভারিট ভারত। তবে যদি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির খেলোয়াড়রা ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়ে শক্ত মানসিকতা নিয়ে খেলেন, তাহলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ আশা করা যায়।
অবশ্য সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই খেলবেন আফগানরা। কেননা তাদের হারানোর কিছু নেই। একপেশে ম্যাচ না হয়ে লড়াই জমে উঠুক- এ কামনা করি।