বিশ্বকাপে আজ আমরা একটি উচ্চমানের ম্যাচ দেখতে পাব বলে আশা করছি। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি-ভারত ও অস্ট্রেলিয়া পরস্পরের মুখোমুখি হবে। এ বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের দৌড়ে দুদলই ফেভারিট। শক্তি, সামর্থ্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা সাফল্য যাই বলেন, সব দিক দিয়েই এই দুটি দল কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। দুদলের আজকের লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। সমান শক্তির দল যখন একে অপরের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামে, তখন একটি উপভোগ্য জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয়। এই বড় দুই দলের ম্যাচটি এমন রোমাঞ্চকর হবে বলে প্রত্যাশা করি।
এ ম্যাচ দিয়ে স্বাগতিক দেশ ভারত বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে। অস্ট্রেলিয়ারও প্রথম ম্যাচ এটি। স্বাভাবিকভাবেই দুদলই চাইবে-জয় দিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করার। যেকোনো টুর্নামেন্টের শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা ভালো হলে পরের ম্যাচগুলো সহজ হয়ে যায়। তাই ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে কেউ কাউকে কোনোভাবেই ছাড় দেবে না। নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়েই খেলবে তারা। জয় পেতে যা যা করণীয়, সব কিছুই করবে দুদল। ফলে বিশ্বকাপের ‘বিগ’-এর একটি হতে যাচ্ছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার লড়াই। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের মতে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চেয়েও এ ম্যাচ উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়াবে। এই ম্যাচটি বাড়তি দর্শকও টানবে।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ভারত। সেবার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ভারতীয়রা। এবার বিশ্বকাপের একক আয়োজক তারা। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের মিশন তাদের। আমি মনে করি, বর্তমান ভারত দলটি অনেক শক্তিশালী। তারা শিরোপা জয়ের সক্ষমতা রাখে। ঘরের মাঠ, চেনা উইকেট, পরিচিত দর্শক- ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ যাকে বলে সব কিছুই অনুকূলে ভারতের। এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলতে পারেন রোহিত-কোহলিরা। বিশ্বকাপে কেন ভারত ফেভারিট? বছরজুড়ে ভালো খেলে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে এক নম্বর আসন দখল করে সেই প্রমাণ দিয়ে রেখেছে তারা। এবার ঘরের মাঠে বড় মঞ্চে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাতে চায় ভারত।
বিশ্বকাপ-যুদ্ধে মাঠে নামার আগেই ভারতীয় শিবিরে দুঃসংবাদ-তাদের সবচেয়ে ‘ইনফর্ম’ ব্যাটার শুভমান গিল ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। জানা গেছে, চলতি বছর ১২ শর বেশি রান করা এই ওপেনার বেশ কদিন ধরেই জ্বরে ভুগছেন। তার সুস্থতার জন্য অপেক্ষায় দল। আজ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। গিল না খেলতে পারলেও সমস্যা নেই। উদ্বোধনীতে রোহিতের সঙ্গে লোকেশ রাহুল কিংবা ইশান কিষান জুটি বাঁধতে পারেন। তাদের ব্যাটিংয়ে গভীরতা অনেক। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের পাশাপাশি বোলিংয়েও বিশ্ববিখ্যাত ভারত। বিশেষ করে জাদেজা, অশ্বিন, কুলদীপদের ঘূর্ণির সামনে অসহায় দেখা যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের। তারকা পেসার বুমরা, শামি, সিরাজও বিধ্বংসী। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও সবশেষ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় করেছে ভারত। এটি তাদের জন্য আত্মবিশ্বাসের বাড়তি জ্বালানি হবে।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছে দলটি। এবারও ভারতে বিশ্বকাপ জয়ের অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। সবশেষ ভারতের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলে কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা। ওই সিরিজটি হারলেও শেষ ম্যাচে জয় পাওয়ায় আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাদের। এ ছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচে বড় লক্ষ্য তাড়া করে পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা। অন্যদিকে আইপিএলে নিয়মিত খেলে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। এ অভিজ্ঞতা কাজে দেবে তাদের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অস্ট্রেলিয়া দলে বেশ কিছু অলরাউন্ডার রয়েছেন, তারা যেকোনো সময় ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন। যেকোনো অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও রয়েছে দলটির। আশা করি, বিশ্বকাপের শুরুতেই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে ক্রিকেটের আসল আমেজটাই উপভোগ করব সবাই।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা