আজ নজরুলজয়ন্তী এভাবে না বলে বলতে ইচ্ছে করছে তারই কবিতার সেই চির অমর বাণীর শরণ নিয়ে: আজ নবসৃষ্টির দিন। আজ উল্লাসের দিন।
“আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে
বান ডেকে ঐ জাগলো জোয়ার
দুয়ার ভাঙা কল্লোলে!
আসল হাসি আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর
তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে__
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!”
এমনই উল্লাসমুখর এক আনন্দের দিন -১১ জ্যৈষ্ঠ। বাংলা কবিতার সম্পূর্ণ নতুন কণ্ঠস্বর চির বিদ্রোহী -চিরপ্রেমিক কবি কাজী নজরুল ইসলামের (১৩০৬- ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) আগমনের আলোয় উদ্ভাসিত জন্মদিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে তরুণ কবিকে তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সানন্দে বরণ করে নিয়েছিলেন।
বাংলা কবিতার দুই দিকপাল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মের স্মৃতিবিজড়িত মাস বৈশাখ আর জ্যৈষ্ঠ। কদিন আগেই আমরা উদ্যাপন করেছি পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, আমাদের জাতীয় কবির জন্মদিন- নজরুল জয়ন্তী। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আগমনকে ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ বলেও অভিহিত করেছিলেন কোনো কোনো সাহিত্য সমালোচক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বাংলা সাহিত্যখ্যাতির মধ্যগগনে। ঐ রকম প্রতাপশালী কবির প্রবল অস্তিত্ব উজিয়ে নতুন কবিতা লেখা? চাট্টিখানি কথা নয়। সে এক অসাধ্য সাধনই বটে!
সেই প্রায় অসম্ভব কাজটিই করেছিলেন অসামান্য প্রতিভাবান কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণকবলিত ভারতীয় উপমহাদেশ যখন শৃঙ্খল মুক্তির স্বপ্নে উত্তাল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে টালমাটাল পৃথিবী শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর। ঠিক তেমনি সময়ে রাশিয়ায় ঘটে গেল বলশেভিক বিপ্লব (১৯১৭) স্বৈরাচারীর জার শাসকের পতন ঘটিয়ে দিলো শ্রমিক বিপ্লব। সেই সমাজতান্ত্রিক পৃথিবীতে কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম শৃঙ্খল ছেঁড়ার কবিতায়-গানে মুখর করে তুললেন এই উপমহাদেশ।
বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন ১৮ বছরের টগবগে যুবক কাজী নজরুল ইসলাম। অবহেলা অনাদরে বড় হওয়া পিতৃমাতৃহীন দুখু মিয়া বেঙ্গল প্লাটুনে যোগ দিয়ে দেশ এবং সমাজকে দেখার তৃতীয় নয়ন যেন পেয়ে গেলেন। অসাধারণ মেধা আর প্রতিভা বলে নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন মাত্র তিন বছরের সৈনিক জীবনে। কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পদে উন্নীত হয়েছিলেন তিনি। এখানেই ব্যাপকভাবে শিখেছিলেন ফার্সি সাহিত্য আর সংগীত।
যুদ্ধশেষে বেঙ্গল প্লাটুন ভেঙে দেয়ার পর হাবিলদার কবি কলকাতায় ফিরেই শৃঙ্খল ছেঁড়ার গানে আর কবিতায় কাঁপিয়ে দিলেন ইংরেজ শাসকদের ভিত্তিমূল।
“কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট/
রক্ত জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী”...
কিংবা ১৯২১ সালে লেখা সেই চির অমর কবিতা বিদ্রোহী:
“বল বীর -
বল -উন্নত মম শির।
শির নেহারি, আমারি নতশির, ওই শিখর হিমাদ্রির।”...
এই বলে যে কবিতার সূচনা, তার পরিণতি এই দৃপ্ত অঙ্গীকারে-
“মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেইদিন হব শান্ত।”...
সমগ্র বাংলা সাহিত্যর অঙ্গনই চমকে উঠেছিল এই অভিনব উচ্চারণে। এমন কবিতা কেউ কখনো পড়েননি, শোনেননি!
অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, চন্দ্রবিন্দু, ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উত্তাল তরঙ্গ তুলে দিয়ে গেল বাঙালির হৃদয়ে। শৃঙ্খল ছেঁড়ার দৃপ্ত সাহসের অগ্নিমশাল ছড়িয়ে দিল বাঙালির চেতনায় মননে। ব্রিটিশ শাসক কারারুদ্ধ করল কবিকে। নিষিদ্ধ করল তার একাধিক কাব্যগ্রন্থ। কিন্তু তাতে কী! নির্ভীক কবি আর উচ্চকণ্ঠে উঠলেন কারাগারে বসেই:
“এই শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল।”
স্বদেশের মুক্তির জন্য এমন দ্রোহের দাবানল যার হৃদয়ে, তিনিই শোনালেন মর্মস্পর্শী প্রেমের গান, বিরহের গান। নিজের অস্তিত্বের কথাও জানান দিলেন এই বলে: “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী/আর হাতে রণ-তূর্য!”
প্রেমে আর দ্রোহের এক অভূতপূর্ব কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা গানের জগতেও এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করে দিয়েছিলেন তিনিই।
যে অর্থে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্রোহী কবি, যে অর্থে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত দ্রোহী কবি, নজরুলকে সেই অর্থে যেমন নতুন কবিতার জন্য বিদ্রোহী বলা যায়, ততধিক বিদ্রোহ করেছিলেন তিনি বাংলা কবিতায় নতুন বিষয় সংযুক্ত করে।
এদিক থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের সঙ্গে তার কিছুটা সাহায্য আছে। মাইকেল যেমন মেঘনাদবধ কাব্য লিখে কবিতার আঙ্গিকে ভাষায় তেমনি হাজার বছরের হিন্দু-পুরাণের প্রচলিত মিথ ভেঙে দিয়ে রামায়ণ কাহিনিকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন, রাবণকে দেশপ্রেমিক নায়কে পরিণত করেছিলেন, তেমনি কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রচলিত কাব্যধারণা এবং আঙ্গিক ভেঙে দিয়ে নতুন কাব্যভাষা এবং বিষয়ের অবতারণা করেছিলেন, যা তাকে গণমানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দিয়েছিল প্রবল রবীন্দ্রপ্রভাবের যুগেও।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা (১৯২১) লিখে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। মানুষের মহিমাকে তিনি এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যা তার আগে বাংলা সাহিত্যেই বিরল।
‘শুন হে মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”।
এই কবিতা নজরুলের আগেই রচিত হয়েছিল চন্ডীদাসের হাতে। মানুষের মহিমা এখানে উচ্চারিত হলেও মানুষের বিপুল শক্তি এবং অমিত সম্ভাবনার কথা নজরুলের আগে কেউ বলেননি এমন নতুন ছন্দে নতুন উপমায়। এমন রক্তে ঝাঁকুনি দিয়ে।
সমাজের শাসন-শোষণ, বঞ্চনা আর শক্তিধরদের শক্তির তাণ্ডব দেখে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত কবি জাগাতে চেয়েছিলেন ঘুমন্ত সমাজকে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী কবিতার কাব্য জীবনের সূচনাতেই বলশেভিক বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। প্রমাণ আমরা পাই তার সাহিত্যে যেমন, তেমনি পাই কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদসহ অনেকের স্মৃতিচারণমূলক রচনা থেকেও।
বিদ্রোহী কবিতায় হিন্দু মুসলমানের ধর্মীয় মিথ যেভাবে তিনি অকপটে ব্যবহার করেছেন তা বিস্ময়কর! অসাম্প্রদায়িক নজরুল হিন্দু এবং মুসলিম মৌলবাদীদের দ্বারা বার বার আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু অবিচল বিশ্বাস থেকে তিনি সরে দাঁড়াননি। তিনি চেয়েছিলেন মানুষে মানুষে মিলন। অবিভক্ত বাংলাসহ পরাধীন সমগ্র ভারতবর্ষকেই জেনেছিলেন মাতৃভূমি বলে। যে কারণে ‘কান্ডারী হুশিয়ার’ কবিতায় সুস্পষ্টভাবে বলতে পেরেছেন:
“ওরা হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন!
কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।”
সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল নজরুলের কণ্ঠ। ধর্মান্ধ লোভী মোল্লা আর পুরোহিতদের তিনি সমান ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেছেন। বার বার বাধার মুখে পড়েছেন। কিন্তু তাতে তিনি অসাম্প্রদায়িক আদর্শ থেকে একচুল সরেননি। নারী-পুরুষের বিভেদ বৈষম্য তিনি মুছে দিতে চেয়েছেন।
“বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।”
এমন উদার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কাজী নজরুল ইসলাম নারী-পুরুষের মর্যাদাকে সমান করে দেখেছেন আজীবন। কুলি-মজুর, শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের অধিকারের বিষয়ে ছিলেন সোচ্চার! তার গানে কবিতায় আমরা বার বার সেই উদার মানবিকতার পরিচয় পাই। নজরুল চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত এমন এক সমাজ যে সমাজে মানুষে মানুষে, নারী-পুরুষে, ধনী-গরিবের কোনো বিভেদ থাকবে না। মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে মানুষ। তার ব্যত্যয় দেখেছেন যেখানে, সেখানে ফুঁসে উঠেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। একই সঙ্গে এমন দ্রোহী আর এমন প্রেমিক কবি ও বাংলা কাব্যে বিরল বললেও অত্যুক্তি হয় না।
বাংলা গানের জগতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীত বা সেসময়ের গীতিকবিদের গান শুনলেই বোঝা যেত, এটা রবীন্দ্রসংগীত, এটা ডি এল রায়ের লেখা এবং সুরের গান। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা গান এতো বিচিত্র সুর আরোপ করেছেন, এমন এমন নতুন রাগ এবং সুর সৃষ্টি করেছেন যা অভূতপূর্ব।
সে যুগে হিজ মাস্টার্স ভয়েস বা এইচএমভি কেবল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকেই গানের রয়্যালটি দিতে চুক্তি স্বাক্ষর করত। অন্য কোনো গীতিকবি এইচ এমভিতে গান লিখে কোনো রকম রয়্যালটি পেতেন না। নজরুল দ্বিতীয় কোনো গীতিকবি যিনি এইচএমভির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন রয়্যালটিসহ। বাংলা গানে যে অবদান তিনি রেখেছেন, তা চিরস্মরণীয়।
একইসঙ্গে তিনি ইসলামিক গজল এবং শ্যামাসংগীত লিখেছেন আশ্চর্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে। বাংলা গানের জগতে এমন বিপরীত ধারার সব সংগীত রচনার কোনো দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই।
নজরুল ইসলাম বেঁচে ছিলেন ৭৭ বছর (১৮৯৯-১৯৭৬) কিন্তু তার সাহিত্যচর্চার জীবন মাত্র দুই দশকের। ১৯২০ সাল থেকে ধরলে ১৯৪২ মাত্র ২২ বছর। ওই বছর ৯ জুলাই কলকাতা বেতার কেন্দ্রে ছোটদের একটি আসরে নজরুলের ১০ মিনিটের একটি গল্প বলার কথা ছিল। গল্প বলতে শুরু করেই থেমে গিয়েছিলেন কবি। কোনো চিকিৎসাতেই তিনি আর বাকশক্তি ফিরে পাননি। লেখনীর ক্ষমতাও হারিয়েছেন সেদিন থেকেই। যেন নিজের ভবিষ্যৎ তিনি জানতেন! না হলে অনেক আগেই গুবাক-তরুর সারি কবিতায় কী করে লিখলেন: “তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল নিশ্চুপ!
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধূর ধূপ।"
সেই ১৯২১ সালে লেখা বিদ্রোহী কবিতাতেই তো তিনি লিখছেন: “আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!”
এরকম নিজেকে জানা বা আত্ম-আবিষ্কারশক্তি কেবল মহাসাধকেরাই অর্জন করেন। সুফিবাদের দর্শন তার অস্তিত্বে বিরাজমান ছিল। তার বহু লেখায, বক্তৃতায় সুফিতত্ত্বের পরিচয় আমরা পাই।
যা-ই হোক, স্বল্প পরিসর সাহিত্যিক জীবনে তিনি যে অসামান্য সৃষ্টিসম্ভারে পূর্ণ করে গেছেন বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারকে, তার তুলনা নেই। মানব মুক্তির বাণী বাহক হিসেবে কাজী নজরুল ইসলাম প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন। যিনি দ্রোহী সত্তায় মুখর হয়ে “ভগবান বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিতে” কিংবা ‘খেয়ালী-বিধির বক্ষ’ বিদীর্ণ করে দিতেও সামান্য ভয় পান না, তিনি যে কত বড় বিদ্রোহী, তা ওই একটি কবিতা থেকেই প্রমাণিত!
একদিন গানের বাণীতেই চিরবিদ্রোহী চির প্রেমিক কবি লিখেছিলেন:
“আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে”।
তার কথাই সত্য হয়েছে। বাঙালি তাকে ভুলতে পারেনি, পারবেও না। চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি বাঙালির হৃদয়ে।
গানের বাণীতে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন: “মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই/ যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই”।
বাংলাদেশ তার সেই আকাঙ্ক্ষাও পূরণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছে তাকে। কিন্তু তার যে আকাঙ্ক্ষা আজও বাংলাদেশ পূরণ করতে পারেনি, তা হলো সমাজে এখনও প্রবলভাবে বিরাজমান সাম্প্রদায়িকতা। সব ধর্মের মধ্যেই এখন প্রবল উগ্রতা দৃশ্যমান। শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের শোষণ-বঞ্চনা এতটুকুও কমেনি।
পুঁজিবাদী অর্থনীতির জাঁতাকলে, বৈষম্যমূলক অর্থব্যবস্থায় দিন দিন গরিব আরও গরিব হচ্ছে, অর্থনীতি বিস্তৃত হচ্ছে প্রসারিত হচ্ছে, উন্নয়নের সীমানা যত প্রসারিত হচ্ছে, ধনী ততই আরও ধনী হচ্ছে। নারী নির্যাতন সমাজ থেকে আমরা মুছে ফেলতে পারিনি। নারীনীতি ঘোষণা করেও তা মৌলবাদী ধর্মান্ধদের চাপের মুখে বাস্তবায়ন করা যায়নি।
নজরুলজয়ন্তীতে কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন তখনই সার্থক হবে যখন আমরা কবির স্বপ্নের শোষণহীন অসম্প্রদায়িক সমতার আর মানবিক মমতার সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক: জ্যেষ্ঠসাংবাদিক ও কবি। সাবেক পরিচালক (বার্তা) বাংলাদেশ টেলিভিশন।