বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিপ, ইভ টিজিং ও স্পর্শকাতর বিষয়াদি

  • দীপংকর গৌতম   
  • ৩ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:৪২

ইদানিং অনেকে অভিযোগ করেন শাড়ি-সিঁদুর, টিপ পরলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনতে হয়। গত ২ এপ্রিল যে ঘটনাটা ঘটেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর, একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এ কাজ করলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতে হবে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছিলাম প্রিয় বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি আমরা মাত্র কদিন হলো। কিন্তু সার্বিকভাবে দেশের দিকে তাকালে মনে হয় দেশ কতদূর এগিয়েছে? একটা পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল খত উন্নয়ন করেছে সরকার।

ভাবনাচিন্তা অতিক্রম করেছে সব উন্নয়ন। কিন্তু মানবিক উন্নয়ন কতটা হলো সেটাও দেখার বিষয়। দেশে কালো টাকার মালিক বেড়েছে ভয়াবহ হারে। সবখানেই সিন্ডিকেট। গাড়ির মালিকের সংখ্যা এত বেড়েছে যে সড়কের চেয়ে রাস্তায় উন্নত মডেলের গাড়ির সারি। কারা এত টাকার মালিক তা রাষ্ট্র জানে না। গাড়ি ক্রয়ের নীতিমালা থাকলে যানজট হতো না। কিন্তু নেই। হাসপাতাল থেকে সরকারি অফিস অনিয়মে কতটা ভরা তা সবাই জানে।

রমজানে সারা বিশ্বে পণ্যের মূল্য কমে আর আমাদের দেশে কালোবাজারিরা লুটে নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা। ইফতার সামগ্রী ভাজে পোড়া মোবিলসহ ভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে। এসব সবাই জানে। কিন্তু কেউ কথা বলে না। পুলিশ, টাস্কফোর্স, সরকারি দলের নেতা। না কেউ না। গত ২৮ মার্চ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি হরতাল ডেকেছিল, তাতে পুলিশের তৎপরতা ছিল ভয়াবহ। রাষ্ট্র জানে কমিউনিস্ট পার্টি হরতাল করেছে করোনাকালের অর্থনীতিতে বিধ্বস্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাতে দ্রব্যমূল্য না যায়। কিন্তু ভয়াবহ পুলিশি তৎপরতা দেখেছি আমরা সেদিন।

অথচ গত ১ এপ্রিল চরমোনাই পীরের সদস্যরা মুহূর্তে সারা ঢাকা অচল করল তাতে কোনো পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়ল না। বর্তমান সরকার হেফাজতকে খুশি করতে গিয়ে পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসকে সাম্প্রদায়িক ধারায় পরিবর্তন করেছে। প্রগতিশীল বিভিন্ন লেখক, এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়াসহ পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন ছবি, শব্দ পরিবর্তনের জন্য হেফাজতের দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুসারে পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাস নতুন করে মুদ্রিত হয়েছে। একথা সবার জানা। আওয়ামী লীগের শাসনপর্বেও একই ধারা বজায় রয়েছে। ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বহাল রাখা হয়েছে। প্রো-পাকিস্তানি ধারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠছে এটা অস্বীকার করা যাবে না।

গত দুর্গাপূজার ঘটনা বা রামু বৌদ্ধমন্দিরের ঘটনা কোনো আলাদা ঘটনা নয়। অর্থাৎ একদিকে কালো টাকার মালিক বাড়ছে সঙ্গে প্রো-পাকিস্তানি ধারার বিস্তার বাড়ছে। প্রগতিশীল ধারা মাঠে নামলে পুলিশি তৎপরতা বাড়ছে আর সবখানে নীরব। অথচ পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রসংগীত বন্ধের বিরুদ্ধে তৈরি হয়ে উঠেছিল ছায়ানট। মেয়েদের টিপ পরাকে হিন্দুয়ানি বললে তখন ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনসহ প্রগতিশীলরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পাকিস্তানি মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাহলে আমরা কতদূর এগিয়েছি?

ইদানিং অনেকে অভিযোগ করেন শাড়ি-সিঁদুর, টিপ পরলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনতে হয়। গত ২ এপ্রিল যে ঘটনাটা ঘটেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর, একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এ কাজ করলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতে হবে।গত ২ এপ্রিল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইভ টিজিং ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করেছেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানায় শনিবার (২ এপ্রিল) একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। ওই নারী প্রভাষক কলেজে যাওয়ার পথে সেজান পয়েন্টের পাশে ইভ টিজিংয়ের শিকার হন।

পুলিশের পোশাক পরিহিত ওই ব্যক্তি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। তবে ওই পুলিশ সদস্যের নাম বা পদবি জানাতে পারেননি ভুক্তভোগী নারী। তবে একটি মোটরসাইকেলের নাম্বার দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষিকা নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না। এই ঘটনার প্রতিবাদে ফেসবুকে টিপের পক্ষে সরব হয়েছেন হাজারও মানুষ।

টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। তবে প্রতিবাদকারীরা এটাকে ‘শুধু টিপ পরা’র বলছেন না। তারা বলছেন, টিপের উপর এমন আঘাত-বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত, নারী স্বাধীনতার উপর আঘাত। নারীকে নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র মেনে না নেয়ার ঘোষণায় এই প্রতিবাদ। এমন ঘটনা যখন কোনো পুলিশ ঘটায় তখন ভাবতে হয় বাংলাদেশ কতদূর এগোল? অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তাহলে কোথায় যাচ্ছে? সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে আছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে কি জানে না? এই ঘটনার পর যদি ওই ব্যক্তি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয় তাহলে আমরা কী বুঝে নেব? সেটা পরিষ্কার করা হোক।

লেখক: প্রাবন্ধিক-গবেষক, সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর