রাষ্ট্র ও সমাজসংশ্লিষ্ট যেকোনো সমস্যা সমাধানের সামগ্রিক কর্মপ্রক্রিয়ার স্বরূপ হলো রাজনীতি।
রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতি বলতে অবশ্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিকে বুঝায়। তবে বহুল প্রচলিত 'রাজনীতি' শব্দটি দ্বারা আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ অথবা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে পরিচালিত কর্মসূচি ও আন্দোলনকেই বিবেচনা করি। সে অর্থে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। ব্যাপকতর অর্থে 'রাজনীতি' শুধু রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের দাবি নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের যেকোনো সমস্যা সমাধানের আন্দোলনকেই বুঝাতে পারে।
ব্যাপক অর্থে ধনী, গরিব, কৃষক, শ্রমিক বা অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের আর্থসামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্য গৃহীত কর্মসূচি বা আন্দোলনই রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত। যে কারণে রাজনীতি বলতে কোনো নির্দিষ্ট নীতির পরিবর্তে শ্রেণিবিভক্ত সমাজে বিভিন্ন শ্রেণিস্বার্থ রক্ষায় সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ও কর্মকাণ্ডকে অভিহিত করা হয়। কাজেই, রাজনীতির প্রধানতম বাহন হিসেবে স্বীকৃত হলো সংঘবদ্ধ সংগঠিত দল। রাষ্ট্র বা সমাজের স্বার্থে গণমানুষের কল্যাণে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন পরিচালনা করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, বাসদ, জাসদসহ অন্য বহু গতিশীল রাজনৈতিক দল রয়েছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের সামগ্রিক রাজনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা দলকেই নাগরিক সমাজ ভোট প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ-পরবর্তী সময়ে এতদ্ঞ্চলের বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা শীর্ষক পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত শাসনের আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের জয়লাভ, ১৯৭১-এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ কর্তৃক মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন, ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ (...এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা...), ২৩ মার্চ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের আন্দোলন-সংগ্রামের মুখপাত্র বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজ হাতে ধানমন্ডির বাসভবনে মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা প্রদান করে ওয়্যারলেসে বিবৃতি প্রদান, সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদান করে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অবদান ও রাজনৈতিক গুরুত্ব ইতিহাস স্বীকৃত এবং সর্বাগ্রে স্মরণীয় বরণীয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয় দেশটি একটি স্বীকৃত স্বাধীন সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক পরে। উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলা যায় বিএনপির কথা। দলটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আত্মস্বীকৃত জবানবন্দি, সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিরোধিতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়।
মূলত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ৪টি মূলনীতির অন্যতম মূলনীতি হিসেবে 'সমাজতন্ত্র'কে সংযুক্ত করা হয়। যার ফলে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত থাকা গণতন্ত্রপন্থি মার্কিন প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে ঘটানো হয় মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড! জাতির পিতার দুই আত্মজা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্যতীত পাক-মার্কিন যৌথ ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের ১১ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নরঘাতক সেনাসদস্য। এ নির্মম ঘটনার পরবর্তী সময়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী পাক-মার্কিন প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ট সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান কর্তৃক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে মানবাধিকারের চূড়ান্ত বরখেলাপের পাশাপাশি বিশ্ব ইতিহাসের হৃদপিণ্ডে লেপন করা হয়েছে অমোচনীয় কলঙ্কের কালিমা। আর পাকিস্তানি নাগপাশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সদ্য মুক্ত হওয়া বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানীকরণ করে পরকল্পিতভাবে বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তির দিনটিকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইতিহাসের অনিবার্য প্রবহমানতা ও ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদে দেখা যাচ্ছে যে মার্কিন প্রশাসনের বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট পাকিস্তানপন্থি বিএনপি জঘন্যভাবে সক্রিয় রয়েছে। বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন অসীম দুর্নীতি, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, অর্থপাচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, হাওয়া ভবন খোয়াব ভবন কেলেঙ্কারির ফলে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিতাড়িত। জনবিমুখ গণবিরোধী কর্মসূচির ফলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতালাভে দলটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই দলটি ক্ষমতার মোহে মরিয়া হয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে পদদলিত করে গুজবনির্ভর কর্মসূচিতে ব্যর্থ হয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হতেও বাদ রাখেনি!
বহুল প্রচলিত গণমাধ্যমের তথ্য মতে, বিএনপি পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের জন্য নতুন কৌশল হিসেবে অঢেল অর্থের বিনিময়ে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এ ছাড়া দলটি গোপন রাষ্ট্রীয় আগাম কোনো চুক্তির শর্তে (উদাহরণস্বরূপ: রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি প্রদানের মতো কিছু!) আমেরিকান নেতৃবৃন্দ ও আমলাদের খুশি করছে কি না তার বিস্তারিত তদন্ত করা অত্যন্ত জরুরি এখন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ সাহায্য না করার অনুরোধের মতো জঘন্য দেশবিরোধী আবদার করতেও পিছপা হয়নি প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় বিতর্কিতভাবে জন্ম নেয়া বিএনপি নামক দলটি!
বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। অথচ যেকোনো রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র ও জাতির স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যেকোনো জাতীয় সংকট নিরসনে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখার কথা। কিন্তু বিএনপি রাজনীতির আলোকিত পথকে বেছে না নিয়ে অন্ধকারে পা বাড়িয়ে ক্রমাগত একটি রাজনৈতিক ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছে। দলটি অতিসম্প্রতি গুজবের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়াতে ব্যর্থ হয়ে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে রাজনৈতিক ফায়দালাভের জন্য বিদেশিদের কাছে তদবির নালিশ করে চলছে। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেশের ভবিষ্যতের জন্য খুবই ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যেমন, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মতো এ দেশে কৃত্রিম সন্ত্রাসের অজুহাত সৃষ্টি করে শান্তিরক্ষার নামে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রেরণ করে বাংলাদেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করার মতো সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ নিজ দেশের যেকোনো স্বার্থের জন্য মোসাদ, সিআইএ ইত্যাদির মতো ইসরায়েল, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেকোনো ঘটনাই ঘটাতে পটু।
অতএব, বিএনপির এ ধরনের বাংলাদেশবিরোধী অশুভ তৎপরতা ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে অস্তমিত করে ব্যক্তিগত ক্ষমতার লোভে পরাধীনতার অন্ধকারকে আলিঙ্গনকারী লর্ড ক্লাইভের পদলেহনকারী মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎ শেঠদেরকেই প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা শুরু করে। এতে প্রাণভয়ে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশ করতে থাকে লাখো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।ওই মানবিক সংকটকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ ও রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বর্ডার খুলে দিতে আন্তর্জাতিক মহলকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে আন্তর্জাতিক মোড়ল রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
অবশ্য দুঃখজনক বিষয় হলো, যুগ যুগ ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী। সেখানে প্রতিনিয়ত জাগতিক সব হিংস্রতার বাস্তবায়নে হত্যা, গুমসহ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের লাশ। এ ছাড়া মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল NLD এর গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
যার প্রমাণ জাতিসংঘের কাছে রয়েছে। বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠনের কাছেও আছে তার যথাযথ প্রমাণ। অথচ ১৭ লাখের অধিকসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে অঙ্গীকারকৃত অনুদানও দিচ্ছে না বিশ্ব মোড়ল রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থাসমূহ! যার ফলে এ দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে জগদ্দল পাথরের ন্যায় অহেতুক বোঝায় পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের মোড়ল মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ সংকট নিরসনে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে না। এত বছরেও বাংলাদেশে উদ্ভূত উদ্ভট রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘসহ বিশ্ব মোড়লদের কোনো তৎপরতা বা নির্দেশনা নেই, বল প্রয়োগের কোনো লক্ষণ নেই। তবে কোনো এক ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে এবং এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় কোন দল থাকবে, কোন দল থাকবে না তা নির্ধারণের অনধিকার চর্চায় আমেরিকা অধিক সিদ্ধহস্ত।
প্রসঙ্গক্রমে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পগুলোতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের জন্য ঠিক কী ধরনের আন্তর্জাতিক মাপের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি? নাকি তা বাংলাদেশের গণমানুষের স্বার্থ বলে বিএনপি তা বেমালুম এড়িয়ে যাবে!
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে ক্ষমতার মোহে মীর জাফর, জগৎ শেঠ, ঘষেটি বেগম গং ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে নবাব সিরাজ উদদৌলাকে দমন করতে গিয়ে বাংলার স্বাধীনতাকেও প্রায় ২০০ বছরের জন্য লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে বিকিয়ে দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দমন করার জন্য অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি ও মার্কিনিদের হস্তক্ষেপ কামনার মধ্য দিয়ে বিএনপি দলটি মীর জাফর-ঘষেটি বেগম গংদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, জনগণের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নসহ সামগ্রিক ইতিবাচক অগ্রযাত্রার মূলে কুঠারঘাতের শামিল।
পরিশেষে, এ দেশের আলোকিত পথের অভিযাত্রিক, শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে প্রত্যাশা তারা দেশ ও জাতির শত্রু স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষদাঁতকে উপড়ে ফেলবে। বাংলা মায়ের আলোকিত সন্তানেরা মহাকাব্য রামায়ণের 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী' সর্বজনীন মন্ত্রের ন্যায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র ও অপশক্তিকে রুখে দেবে।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।