বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতিকথা

  • রণেশ মৈত্র   
  • ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:০৩

আমরা মুখ্যমন্ত্রী অজয় বাবুকে জানালাম, তাজউদ্দীন সাহেব এসেছেন; তিনিই বাংলাদেশের প্রতিনিধি। কাজেই আমাদের দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাকে পাবনার পরিস্থিতি জানাব। তবে তার সঙ্গে আমজাদ সাহেবকে দেখা করিয়ে দিলে ভালো হয়। ঠিকানা নিয়ে আমজাদ হোসেন বললেন- রণেশ বাবু, আপনি বাসায় যান। আমি দেখা করে আসছি।

একটি জাতির বিকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্তটির সঙ্গে নিজের ক্ষুদ্র সম্পৃক্ততার কথাটি বলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা করতে চাই।

১৯৭১-এ সারা দেশের মতোই পাবনা তখন উত্তপ্ত। বরং অন্য অনেক জেলা থেকে পাবনার উত্তাপটি একটু বেশিই অনুভব করা যাচ্ছিল। কারণ, শুধু পাকিস্তানি সেনাই নয়; পূর্ববাংলার গোপন কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী সশস্ত্র নকশালপন্থিদেরও টার্গেট হয়ে পড়েছিল পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রকাশ্য রাজনীতিকরা।

দেশ তখন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবিতে টালমাটাল। তাই ন্যাপ-আওয়ামী লীগ যৌথভাবে লড়ছিল পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী ও নকশালপন্থিদের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল পাবনা শহরে মিছিল বের করত আওয়ামী লীগ-ন্যাপ, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। কখনও যৌথ, কখনওবা পৃথকভাবে। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চরমে পৌঁছায়। মিছিলগুলোর প্রধান দাবি ছিল- বঙ্গবন্ধু তথা বাঙালির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর।

পাবনা শহরে ২৫ মার্চ গভীর রাতে আচমকা ঢুকে পড়ে অস্ত্রসহ প্রায় ২০০ পাকিস্তানি সেনা। দ্রুত ওরা শহরের নানা প্রান্তে আস্তানা গাড়লেও পাবনার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ডিসি ও এসপি সহযোগিতা না করায় ঘুমন্ত পাবনা শহরে বেসরকারি মাইক ও রিকশা করে কারফিউ ঘোষণা করে। যদিও ঘুমন্ত শহরবাসী তা শুনতে পায়নি।

এ কারণে ভোরে কেউ কেউ রাস্তায় বের হলে তাদেরকে ধরে আর্মির হেডকোয়ার্টারে ওয়াপদা অফিসের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। আটক হওয়া সবাই নির্যাতনের শিকার হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি সেনারা পাবনার পুরোনো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনও দখল করে নেয়। সেখানে এসেই ওরা সব সরকারি-বেসরকারি টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাশাপাশি শহরের পুবদিকের একটি বিশাল মাঠে অবস্থিত শ্যালো টিউবওয়েল পাহারা কক্ষেও ঢুকে পড়ে। এভাবে নানা দিক থেকে পাবনা শহরটিকে ঘিরে ফেলা হয়।

সেদিন ভোরে আমার ঘুম ভাঙে পাবনা জেলা স্কুলের হেড মৌলবি- মাওলানা কছিম উদ্দিনের ডাকে। উঠে দরজা খুলতেই দেখি তার বাইসাইকেল ঠেস দিয়ে মাওলানা সাহেব দাঁড়িয়ে। তিনি ঝড়ের বেগে বললেন- ‘শহরে মিলিটারি এসে গেছে, পুরো শহরে কারফিউ। বিলম্ব না করে নিরাপদ আশ্রয়ে সপরিবারে চলে যাও।’ বলেই সাইকেলে চড়ে দ্রুত চলে গেলেন। তাকে এক পেয়ালা চা খেয়ে যেতে বললাম। জবাবে মাওলানা সাহেব বললেন- ‘না রণেশ, কেউই মনে হয় খবরটি জানে না। তাই ক্যাপ্টেন মনসুরসহ সব নেতাকে খবরটি পৌঁছাতে হবে।’ ২৫ মার্চ কাটল সবার এখানে-সেখানে আশ্রয় ও প্রস্তুতি গ্রহণের কাজে।

পাকিস্তানি বাহিনী ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় পাবনা বাজারের কাবুলিওয়ালা পাহারাদারদের সঙ্গে নিয়ে নেতাদের বাড়ি বাড়ি যায়। ওই অভিযানে ওরা পাবনা সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাবনা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, ভাসানী ন্যাপের সভাপতি ডা. অমলেন্দু দাক্ষী ও পরিবহন ব্যবসায়ী-আওয়ামী লীগ নেতা আর সাইদ তালুকদারসহ কয়েকজনকে ধরতে সক্ষম হয়। তাদেরকে নিয়ে হেডকোয়ার্টার ওয়াপদা ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে ও নির্মম নির্যাতন চালায়। পাবনা ছেড়ে পালানোর আগে ২৯ মার্চ তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়।

২৭ মার্চ সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনারা পাবনার ‘বেয়াড়া ও অবাধ্য’ পুলিশ বাহিনীকে বশে আনার লক্ষ্যে পুলিশ লাইনসের অস্ত্রাগার দখল করতে দু-তিনটি ট্রাকে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে পুলিশ লাইনসের নিকটস্থ জজ কোর্টের সামনাসামনি এসে পৌঁছায়। অপরদিকে পাবনার সাহসী তরুণ, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিকটস্থ সব দালানের উপর থেকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে বিপর্যস্ত পাকিস্তানি বাহিনীর ৩ থেকে ৪ জন নিহত হয়। বেশকিছু আহত অবস্থায় হেডকোয়ার্টারের দিকে পালিয়ে যায়।

পুলিশের অস্ত্রাগার দখল অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর, ২৮ মার্চ ওই অস্ত্রাগার খুলে সব অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। ওই দিন সকালেই পুরোনো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনটির নানা দিকের দালানের ছাদ থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী পাবনার পুলিশ-তরুণ একসঙ্গে মিলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে।

ওরা ভবনটির দরজা-জানালা বন্ধ করে নানা ফাঁকফোকর দিয়ে লক্ষ্যহীনভাবে গুলি ছুড়তে থাকে প্রতিরোধ ভাঙার লক্ষ্যে। একপর্যায়ে ওদের গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেলে বোঝা যায়- গুলির মজুত ফুরিয়ে গেছে। তখন কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা ওই দরজা-জানালা ভেঙে ভবনটিতে ঢুকে দেখতে পান ২৮ সেনার ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ। সেই অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর চাইনিজ রাইফেলগুলো প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে চলে আসে।

এটা ছিল পাবনার আরেক দফা বিজয়। এরপর থেকেই পাকিস্তানি সেনারা পাবনা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে শুরু করে। ২৮ মার্চ সারা দিন পাবনা শহর ও আশপাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করে তোলে। যা কাঁপন ধরিয়ে দেয় ওয়াপদা ভবনস্থ পাকিস্তানি সেনাদের হেডকোয়ার্টারে অবস্থানরত বাকি সেনা-সদস্যদের মনে।

এই আতঙ্ক ওদের মনে আরও গভীর হয়, যখন ওরা জানতে পারে পাবনা-নগরবাড়ি রোড পাহারারত চার সেনাসদস্য সেখানেই এবং তিনজন পালাতে গেলে পাশের একটি গ্রামে গ্রামবাসীদের হাতে নিহত হয়। এর পরিণতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আরও পাকিস্তানি সেনাদের অস্ত্র চলে আসে।

২৯ মার্চ সকাল ১০টার দিকে পাবনার আকাশে একটি বিমান উড়তে দেখা যায়। সেই বিমানটি পাবনা শহর লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শেষে আবার উড়ে চলে যায়। এতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিমানটি একেবারে না গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে শুধুই উড়তে থাকে। ফলে হাজার হাজার আতঙ্কিত মানুষ ওয়াপদা ভবনের চারপাশে সৃষ্ট অবরোধ ভেঙে কিছুটা পিছিয়ে যায়।

এরপর ১০ থেকে ১২টি ট্রাক বিপরীত দিক থেকে সাদা পতাকা উড়িয়ে ভাঙা গলায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ওয়াপদা ভবনের সামনে এসে দাঁড়ানোমাত্র প্রায় ১৫০ পাকিস্তানি সেনা দ্রুত সেগুলোতে ওঠে পড়ে এবং ট্রাকগুলো একই পথে ফিরে যেতে শুরু করে। তাদের সাদা পতাকা ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান গ্রামবাসীদের বুঝতে সমস্যা হয়নি। তারা পুরো রাস্তায় নানাভাবে ব্যারিকেড তৈরি করে ঘরের চাল, গাছের ডাল বা জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থেকে ট্রাকগুলো লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

পলায়নপর পাকিস্তানি সেনারাও দিগ্বিদিক-জ্ঞানশূন্য হয়ে চলন্ত ট্রাকগুলো থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এভাবে নাটোরের গোপালিপুর পৌঁছতে পৌঁছতে সব পাকিস্তানি সেনা খতম হয়। এরপর থেকেই ২৯ মার্চ পাবনার বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা নূরুল কাদের খানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন সরকারি প্রশাসন।

অন্যদিকে শহরের অধিবাসীদেরকে শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কীভাবে সম্ভাব্য দ্বিতীয় দফা হামলা প্রতিরোধ করা যাবে তা নিয়ে আলোচনায় যা যা স্থির হয় তার মধ্যে- প্রতিবেশী ভারত থেকে কিছু সামরিক প্রশিক্ষক ও ভারী অস্ত্র এনে স্থানীয় যুবকদের উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাবনা-আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন ও ন্যাপের পক্ষ থেকে এই নিবন্ধের লেখককে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

যতদূর মনে পড়ে, ২ এপ্রিল আমরা কলকাতা এসে পৌঁছাই শিকরপুর সীমান্ত হয়ে। কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতে আসার ব্যাপারটি নিরাপত্তামূলক গোপনীয়তার স্বার্থে কাউকে জানানো হয়নি। কলকাতা আমাদের অচেনা শহর। বাল্যকালে ২ থেকে ৩ বার বাবার সঙ্গে গেলেও আমজাদ সাহেব একবারও যাননি। উভয়েরই পকেটে একটি করে পাকিস্তানি ৫০ টাকার নোট- যা পাবনা থেকে দুজনকে দেয়া হয়েছিল। অনেক ভেবেচিন্তে উঠলাম গিয়ে কালীঘাটে আমার খুড়তুতো ভাই (দাদা) পরিমল মৈত্রের বাসায়। আগ্রহ নিয়ে তিনি আমাদেরকে থাকার ব্যবস্থা করলেন।

সেখানে পরদিন থেকেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ২ থেকে ৩ দিনের মাথায় কমরেড রমেন মিত্র ও কমরেড ইলা মিত্রের মাধ্যমে পশ্চিম বাংলার প্রাদেশিক সিপিআই সাধারণ সম্পাদক কমরেড বিশ্বনাথ মুখার্জীর সঙ্গে দেখা করে দেশের বিস্তারিত জানিয়ে আমাদের উদ্দেশ্য পূরণে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাইলাম।

তিনি তখনই আমাদের দুজনকে তার গাড়িতে উঠিয়ে নিজেই বর্ধমান হাউসে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অজয় মুখার্জী সে সময়ের বাংলা কংগ্রেস দলের নেতা। তিনি ডেপুটি চিফ মিনিস্টার ও কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা বিজয় সিংহ নাহাকেও ডেকে আনলেন। উভয়ে আমাদের কাছে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হলেন। অজয় মুখার্জী আমাদের লড়াই ও মিশনের সাফল্য কামনা করে বললেন, তারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে জানাবেন, কারণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ এখতিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের।

ঠিকই দু বা তিন দিন পর খবর এল মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জী ডেকেছেন। আবার বিশ্বনাথ মুখার্জী নিয়ে গেলেন। এবারে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন- প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। যেতে চাইলে তিনি তখনই আমাদের জন্য দিল্লির দুটি রিটার্ন টিকিটের ব্যবস্থা করবেন। বিকল্প হিসেবে বললেন- ওইদিনই দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত কলকাতা পৌঁছাবেন সদ্য আসা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করতে। আমরা কলকাতায়ও ওই বিশেষ দূতের সঙ্গে কথা বলতে পারি।

আগের দিন তাজউদ্দীন সাহেব কলকাতা পৌঁছেছেন এটা জানতাম না। তাই আমরা মুখ্যমন্ত্রী অজয় বাবুকে জানালাম, তাজউদ্দীন সাহেব এসেছেন; তিনিই বাংলাদেশের প্রতিনিধি। কাজেই আমাদের দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাকে পাবনার পরিস্থিতি জানাব। তবে তার সঙ্গে আমজাদ সাহেবকে দেখা করিয়ে দিলে ভালো হয়। ঠিকানা নিয়ে আমজাদ হোসেন বললেন- রণেশ বাবু, আপনি বাসায় যান। আমি দেখা করে আসছি।

আমজাদ সাহেব ওখানেই আটকে গেলেন। কমরেড ইলা মিত্রের বাসায় যেতেই কমরেড মনি সিংয়ের সঙ্গে দেখা। রাজশাহী জেল ভেঙে বেরিয়ে তিনি আগরতলা যান। সেখানে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে এসেছেন। আমার কাছে পাবনার খবর শুনলেন এবং পাবনার যেসব ন্যাপ ও সিপিবি নেতাকর্মী এসেছেন তারা পাবনার নিকটতম সীমান্ত এলাকায় যুব শিবির প্রতিষ্ঠা করে দেশ থেকে আসা তরুণদের রিক্রুটিং শুরু করতে বললেন। আর বললেন- ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ পরদিন কলকাতা পৌঁছলে তিনিসহ তারা দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলাপ করে সার্বিক বিষয় স্থির করে জানাবেন।

পরবর্তী সময়ে দেখা হয় পাবনার কমরেড অমূল্য লাহিড়ী, শামছুজ্জামান সেলিম ও কামাল আহমেদের সঙ্গে। শেষের দুজন ঈশ্বরদীর ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অমূল্যকে নিয়ে এসেছেন দেহরক্ষী হিসেবে। দুজনেই পার্টির কর্মী। অমূল্য গোপনে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ও প্রকাশ্যে ন্যাপের সভাপতি। কামাল ও সেলিম গিয়ে নদীয়ার করিমপুরে বাসা ভাড়া নিলে সেখানেই অস্থায়ীভাবে পাবনা জেলার ন্যাপ-সিপিবি যৌথ রিক্রুটিং ক্যাম্প বা যুব শিবির স্থাপন করা হয়।

স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিগগিরই একটি বড় কাঁচাবাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে ক্যাম্প স্থানান্তর করার কিছু সময়ের মধ্যে আমাদের প্রথম ব্যাচে কামাল, সেলিম ও জাহিদ হাসানসহ চারজন বিশেষ গেরিলা প্রশিক্ষণে চলে গেলে আমি সার্বিক দায়িত্বে থেকে যাই।

এর অনেক আগেই দ্বিতীয় দফা পাবনার পতন ঘটে গিয়েছিল। প্রবল শক্তিতে ১০ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনার বিশাল বাহিনী নগরবাড়ি ঘাট হয়ে পাবনার পথে রাস্তার দুধারের গ্রামগুলো পোড়াতে পোড়াতে এবং গুলি করে সবাইকে হত্যা করতে করতে তাদের আগের পরাজয়ের প্রতিশোধস্পৃহায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে। আকাশবাণীতে ওই খবর পাওয়ায় দেশে ফেরা সম্ভব হলো না। তাই ভারতে থেকেই দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার কাজে নিযুক্ত থাকতে হয়।

লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর