বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বমহিমায় আলোকিত সায়মা ওয়াজেদ

  • ড. কাজী এরতেজা হাসান   
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:০৯

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আজ একজন বিশ্বখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। কেউ ভাববেন না প্রধানমন্ত্রীর কন্যা হিসেবে তিনি এই সুযোগ পেয়েছেন। একজন স্বীকৃত মনোবিজ্ঞানী এবং অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেই তার এ অর্জন।

তার পারিবারিক পরিচয় কারো কাছে অজানা নয়। তিনি যে পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য, সেই পরিবারটির রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তার মাতামহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মা বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ও ওয়াজেদ মিয়া। কাজেই পাদপ্রদীপের আলোয় এসে রাজনৈতিক জীবন বেছে নেয়ার সব সুযোগ তার ছিল। কিন্তু সে পথে গেলেন না সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বেছে নিলেন অন্য এক জীবন। সে জীবনও মানুষের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কল্যাণব্রতে নিবেদিত।

বাঙালি নারী হয়েও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজেকে এই সাধনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন পারিবারিক সংস্কৃতি থেকে অর্জিত ইচ্ছাশক্তির গুণে। ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ আমরা পাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারে।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর তার জীবিত দুই কন্যা রাজনীতিবিমুখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে দেশসেবাকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আজ একজন বিশ্বখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। কেউ ভাববেন না প্রধানমন্ত্রীর কন্যা হিসেবে তিনি এই সুযোগ পেয়েছেন। একজন স্বীকৃত মনোবিজ্ঞানী এবং অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেই তার এ অর্জন। সায়মা ওয়াজেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ক্লিনিক্যাল মনস্তত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্কুল মনস্তত্ত্বেও রয়েছে তার ডিগ্রি। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ব সংস্থা তাকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

৯ ডিসেম্বর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিনে বৃহস্পতিবার সকালে ‘বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি অনুরোধ করব, আজকে আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন, সবার কাছে দোয়া চাই।’

অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য পুতুলের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘সে (সায়মা ওয়াজেদ) অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে। একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছে সায়মা ওয়াজেদ। সেটা হলো এখন কেউ এই অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলে তাদেরকে আর লুকিয়ে রাখে না।’

অনুষ্ঠানে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন পুতুল। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ও একজন মনোবিজ্ঞানী। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন।

অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুতুলকে ‘ডব্লিউএইচও অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দূত নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সায়মার সঙ্গে দূত হিসেবে আরও রয়েছেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান স্পিকার নাশিদ কামাল, ফিলিপাইনের জাতীয় সংসদের উপস্পিকার লরেন লেগার্দা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর প্রধান জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ তোসি এমপানু।

‘থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিএইচও) মহাপরিচালকের উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

মানুষের ধর্ম নিবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- “মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও তার সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস। জন্তুদের বাস ভূমণ্ডলে, মানুষের বাস সেইখানে যাকে সে বলে তার দেশ। দেশ কেবল ভৌমিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে জ্ঞানে, কর্মে কর্মে। যুগযুগান্তরের প্রবাহিত চিন্তাধারায় প্রীতিধারায় দেশের মন ফলে শস্যে সমৃদ্ধ।”… সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সেই মানুষের ধর্ম পালন করে চলেছেন। পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচিতির বাইরে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজেকে ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত করেছেন একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে। বিশ্বব্যাপী অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।

এ কথা খুব সহজেই বলতে পারি, স্বমহিমায় আলোকিত কল্যাণব্রতী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার কল্যাণ হোক।

লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই। সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এ বিভাগের আরো খবর