বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিশ বছরের খতিয়ান 

  • ড. সেলিম মাহমুদ    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৩:০৩

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৬ মে জ্বালানি তেলের প্রথম মূল্য নির্ধারণের দিন থেকে এই সম্পর্কিত গত পঞ্চাশ বছরের তথ্য সংরক্ষিত আছে। বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিশ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করলে এটি পরিষ্কার যে, বিএনপির বক্তব্য কেবলই অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার। এই বক্তব্যে তাদের স্ববিরোধী অবস্থান ফুটে ওঠে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অপপ্রচার চালানোসহ সস্তা রাজনীতি করছে। পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য সমন্বয় একটি অজনপ্রিয় কাজ। কিন্তু দেশের সার্বিক অর্থনীতির গতিশীলতার স্বার্থে এই কাজটি করতে হয়। এই জন্য পশ্চিমাবিশ্বে এটিকে ‘Necessary Nuisance’ বলা হয়ে থাকে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশই প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার সবসময় জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল ভোক্তাপর্যায়ে সরবরাহ করে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারই জনগণের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সময়ে সময়ে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য কোনো সরকারের সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একটানা প্রায় তেরো বছর ধরে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছে। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। জাতির পিতার মতো তিনিও অনুধাবন করেছিলেন, জ্বালানির ব্যবহারের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশের দ্রব্যমূলের অবস্থা এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বিষয়টি নিয়ে সহানুভূতিশীল। আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে অর্থনীতির নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও ঝুঁকি থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৬ মে জ্বালানি তেলের প্রথম মূল্য নির্ধারণের দিন থেকে এই সম্পর্কিত গত পঞ্চাশ বছরের তথ্য সংরক্ষিত আছে। বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিশ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করলে এটি পরিষ্কার যে, বিএনপির বক্তব্য কেবলই অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার। এই বক্তব্যে তাদের স্ববিরোধী অবস্থান ফুটে ওঠে।

বিএনপি-জামায়াত ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে মাত্র পাঁচ বছরে মোট আটবার ডিজেল-কেরোসিনসহ অন্যান্য জ্বালানি ও পণ্যের দাম বাড়িয়েছিল । বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র পাঁচ বছরে মোট আট বার জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা আর কোনো সরকারের সময় হয়নি। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিএনপি- জামায়াত রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালের অক্টোবরে কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ২৭ ডিসেম্বর ২০০১ তারিখে ডিজেল, কেরোসিনসহ প্রায় সব জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দ্বিতীয় দফায় ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি ডিজেলসহ প্রায় সব জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছিল। তৃতীয় দফায় তারা ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডিজেল-কেরোসিনসহ প্রায় সব জ্বালানির দাম বাড়িয়েছিল। চতুর্থ দফায় তারা ২০০৫ সালের ২৫ মে আবার ডিজেল-কেরোসিনসহ প্রায় সব জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল।

পঞ্চম দফায় তারা ২০০৫ সালের ২০ জুলাই জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায়। ষষ্ঠ দফায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ডিজেল-কেরোসিনসহ সব জ্বালানির দাম বাড়ায়। সপ্তম দফায় তারা ২০০৬ সালের ৯ জুন ডিজেল-কেরোসিনসহ প্রায় সব জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায়। অষ্টম দফায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৬ সালের ২৬ জুন জ্বালানির মূল্য বাড়ায়। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার অব্যবহিত আগেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে সরকার গঠনের মাত্র সাত দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ডিজেল এবং কেরোসিনের মূল্য কমিয়েছিলেন। এর প্রায় দুই মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালের ১ মার্চ জ্বালানি মূল্য কমান।

এর তিন মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ১ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আবার জ্বালানির মূল্য কমানো হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল এবং একই বছরের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জ্বালানি মূল্য কমানো হয়। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সাল থেকে এযাবৎ মোট পাঁচবার জ্বালানি মূল্য কমানো হয়েছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ৬ মে ২০১১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১১ নভেম্বর ২০১১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ এবং ৪ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মোট পাঁচবার জ্বালানি মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করে। এটি লক্ষণীয় যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের তেরো বছরের মেয়াদে মোট পাঁচবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয় আর একই সময়ে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার জন্য মোট পাঁচবার জ্বালানি মূল্য কমানো হয়েছিল।

এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে মাত্র পাঁচ বছরে আটবার জ্বালানির মূল্য বাড়ায়। অথচ ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য নিম্নপর্যায়ে ছিল। ২০০১ সালের ডিসেম্বের থেকে ২০০৬ সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ছিল মাত্র ৪১۔৪৫ ডলার।

আর আওয়ামী লীগের মেয়াদে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে যখন মূলত জ্বালানি মূল্য সমন্বয় করা হয়, ওই সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অসহনীয়ভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ছিল ৯৫-৬৩ ডলার।

আর আওয়ামী লীগের মেয়াদকালে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে যখন মূলত জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছিল, ওই সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অসহনীয়ভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ছিল ৯৫۔৬৩ ডলার। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তেল সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখতেই ওই সময়ে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বাড়ার কারণেই জ্বালানি সেক্টরকে বাঁচাতে এই মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। কারণ জ্বালানি সেক্টর স্বস্তিতে না থাকলে পুরো অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়তে পারে। জ্বালানি নিরাপত্তা হচ্ছে যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য অক্সিজেন। জ্বালানি খাত অসুবিধার সম্মুখীন হলে দেশের জনগণই প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মতো আন্তর্জাতিক পণ্যের মূল্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নির্ধারিত হয়। মূল্যে বেশি পার্থক্য থাকলে তেল পাচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পশ্চিমবঙ্গের ডিজেলের মূল্যের চেয়ে আমাদের ডিজেলের মূল্য প্রায় ৬০ টাকার মতো কম ছিল। তাই এই মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য ছিল।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এ বিভাগের আরো খবর