বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাংস্কৃতিক সংকটই উসকে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা

  • দীপংকর গৌতম   
  • ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ১৫:৪১

সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছাড়া এই ধর্মান্ধদের আস্ফালন বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সংস্কৃতি তার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বার বার আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলদের সমস্ত আঘাতকে রুখতে হবে। তাহলেই অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করা যাবে, নতুবা নয়। এটা করা না গেলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।

আমি ভালোবাসি নিসর্গ, ভালোবাসি দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ। ভালোবাসি মাঠের ভেতরে শিশু ধানের ধানসিড়ি খেলা। আমি মধুমতী আর ঘর্ঘরা নদীর ঢেউয়ে দুলতে দুলতে বড় হয়েছি। আমরা জারি-সারি, কীর্তনের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। আমাদের অভিভাবক শিখিয়েছেন বৃক্ষ, লতাগুল্ম একসঙ্গে বেড়ে উঠে যেমন প্রকৃতিকে সুন্দর করে তোলে। তেমনি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একত্রে বসবাসে এলাকার সংস্কৃতিকে সুন্দর করে তোলে। আমাদের এলাকায় বারো জাতের মানুষের বসবাস। এলাকার সংস্কৃতি সমৃদ্ধ।

একটু সাহিত্যচর্চা করার চেষ্টা করি, পেশা সাংবাদিকতা। সংবাদপত্রের কাজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘোরার সুবাদে দেখেছি যেকোনো ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও। অভিযোগ, নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না৷

সম্প্রতি সুনামগঞ্জে হিন্দুপল্লিতে হামলা হয় মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে৷ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। সবশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন ‘মূল আসামি’ শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বার৷ এলাকাবাসী বলেছে, সে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু একজন মন্ত্রী তা অস্বীকার করেছেন। শুধু সুনামগঞ্জ কেন, তার আগেও যে কয়টি বড় ধরনের হামলা হয়েছে পুলিশ আগে পরিকল্পনার কথা জানলেও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রামুতে বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ঘটনা ঘটে৷ প্রায় নয় বছর পার হলেও কোনো বিচার হয়নি৷ এই ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা হয়৷

একটি মামলার চার্জশিট হলেও বিচার শুরু হয়নি৷ যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তারা সবাই জামিনে আছেন৷ আর যে উত্তম বড়ুয়ার নামে ফেসবুক পোস্টের অজুহাতে রামু, উখিয়া এবং টেকনাফে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল তিনি জামিন পেলেও এখন তাকে এলাকায় দেখা যায় না। যদিও তদন্তে তার ফেসবুক পোস্টের কোনো প্রমাণ মেলেনি৷ ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু বসতিতে হামলার তদন্ত প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি৷ ওই সময় যাদের আটক করা হয় তারাও জামিনে মুক্ত৷ অপরদিকে লেখাপড়া না জানা যে রসরাজের ফেসবুক পোস্টের ধর্মীয় অবমাননার কথা তুলে হামলা হয়েছিল তাকেই উল্টো দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে৷ এখন জামিন পেলেও আতঙ্কে তার দিন কাটে।

এমন কত ঘটনার কথা বলব। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল তা বলার নয়। মনে হয় আমি বুঝি আকণ্ঠ ক্লেদে নিমজ্জিত হয়ে আছি। আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের বিষণ্নতা দেখি। আমার অসাম্প্রদায়িক বন্ধুদের ম্লান মুখ দেখি, আমার চেনা মানুষদের একই অনুভূতি দেখি। মনে হচ্ছে জাতির বড় একটি অংশ বিষণ্নতায় ডুবে আছে।

পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার হুজুগ তুলে দুর্গা প্রতিমা ধ্বংস করা, মন্দির থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘর-বাড়িতে অবাধ লুটপাট চালানো, এমনকি সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষকে হত্যা, এক শিশুকে ধর্ষণ- এর প্রতিটি ঘটনা মানুষ হিসেবে আমাদেরকে গভীরতর দুর্ভাবনা এবং লজ্জার দিকে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশকে অজুহাত করে ত্রিপুরায় যে মেরুকরণের ধ্বংসলীলা চলছে, সেটাও সমান নিন্দনীয়। যে দুর্গাপূজাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আনন্দোৎসব হওয়ার কথা, সেই দুর্গাপূজাটি এবারে সবচেয়ে বড় তাণ্ডবের কেন্দ্রস্থল।

কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে এটা শুধু কুমিল্লাতে থেমে থাকেনি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, রংপুর— বলতে গেলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে কমবেশি। যার অর্থ সারা দেশের প্রতিটা আনাচে-কানাচে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক মানুষ রয়েছে, তারা লুকিয়ে নেই, তারা প্রকাশ্যে আছে, বুক ফুলিয়ে আছে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছিল দেশবাসী। দেশ হবে সব মানুষের এমন চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু সামষ্টিক বা বিক্ষিপ্তভাবে এ পর্যন্ত অনেকবার ‘সংখ্যালঘু’রা যেকোনো অজুহাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে আজ পর্যন্ত এমন হামলাকারী বা এমন দুষ্কৃতকারীদের কারো বিচার হয়নি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন কোনো ‘সংখ্যালঘু’ বিশেষ করে হিন্দু পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ এই স্বাধীন দেশেই গত ৫০ বছরে হিন্দুরা নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। কখনও রাষ্ট্রীয় মদদে, কখনও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ বছরে এই দেশে ৩ হাজার ৬ শ’ ৮৯ বার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হয়েছে। এটা প্রকাশিত তথ্যের কথা, প্রকৃত সংখ্যা আসলে আরও অনেক বেশি। এই দেশের শতকরা দশভাগ সনাতন ধর্মাবলম্বী, যদি তাদের জিজ্ঞেস করা হয় তারা কেমন আছেন, তাদের কেউ কি বলবেন ভালো আছেন? একটা দেশ কেমন চলছে সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের জিজ্ঞেস করা তারা কেমন আছে? তারা যদি বলে ভালো নেই, তাহলে বুঝতে হবে দেশটাও ভালো নেই।

আমরাও ভালো নেই। এই ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এখানে বহুদিন থেকে শেকড় গেড়েছে, আমরা কেউ কেউ দলকানা দৃষ্টিভঙ্গিতে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার চেষ্টা করছি। সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শেকড় ‘রাজনীতি’।

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ডালপালা, লতাপাতা সবই রাজনীতি। পুঁজিবাদের টিকে থাকার বড় অস্ত্র হলো সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়া। এর মাশুল গুনতে হয় সাধারণ মানুষকে। আর ফলাফল যায় ধড়িবাজ রাজনীতিবিদদের ঘরে। সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির বহু উপাদান আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা, অগণতান্ত্রিক শাসন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক শিক্ষা, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদির মধ্যে রয়ে গেছে।

ফলে ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস। আগে অনেকবার আমরা তা দেখেছি এবং এবারও ঠিক সেটাই হয়েছে, হচ্ছে। এই নারকীয় অন্ধতা, অশিক্ষা ও যুক্তিবোধের অভাব থেকেই জন্ম নেয়। অনেকেই আছেন, যারা সচেতন, কতটা লজ্জিত ও ব্যথিত হয়েছেন এই ঘটনায়, তাও বুঝি। এ বাংলাদেশ আমাদের চেনা বাংলাদেশ নয়। হুমায়ুন আজাদের ভাষায় বলাই যায়- ‘এ বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?’ শরীরে জখমের দাগ হয়তো একদিন শুকিয়ে যাবে, বাড়িঘর, মন্দির আবার নির্মিত হবে, কিন্তু হৃদয়ের ক্ষত কখনেও শোকাবে না ব্যথিতদের।

জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে দেশভাগ হওয়ায় এই সংঘাত যে হওয়ার ছিল, তা এখন বুঝতে পণ্ডিত হতে হয় না। কিন্তু দেশভাগের প্রায় ৭৫ বছর হলো। এখন কেন সংঘাত হবে? এর কারণ দু’টি হতে পারে। সম্পত্তির লোভ অথবা রাজনীতি। এখন হিন্দুদের এমন কিছু সম্পত্তি বাংলাদেশে নেই যে, যার ভিত্তিতে ধর্মীয় সহিংসতা ঘটাতে হবে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাতের মতে, ধর্মীয় লেবাসের আওতায় থেকে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে আছে রাজনৈতিক নেতারা। কাজেই রাজনীতি এই সংঘাতের মূল কারণ। হিন্দুসমর্থিত দলকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যে এই সংঘাত ঘটানোর কারণ এই তত্ত্ব বোধ হয় উপরিভাসা অতি সরলীকরণ।

বাবরি মসজিদ ভাঙা হলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের বাড়িঘরে যেমন হামলা হয়েছে ভারতের নানা প্রান্তে হয়েছিল দাঙ্গা। পশ্চিমবঙ্গে তার আঁচ পড়তে দেননি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। দলের কর্মীদের তিনি রাস্তায় নামিয়েছিলেন। একটা টিভি সাক্ষাৎকারে জাভেদ আখতার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার রাজ্যে দাঙ্গা হয় না কেন? এক কথায় উত্তর দিয়েছিলেন, ‘কিঁউ কি হুকুমত নেহি চাহতি।’ অর্থাৎ, প্রশাসন চায় না, তাই দাঙ্গা হয় না। ছোট্ট একটি বাক্য। কী বিশাল তার ব্যাপ্তি! কী মারাত্মক বার্তা লুকিয়ে আছে।

আমাদের দেশের সংস্কৃতি বদলে যাওয়া এর অন্যতম একটি কারণ। আমাদের খেলার মাঠগুলেঅ পড়ে থাকে। কীর্তন, রয়ানি, যাত্রা সবকিছুতে পারমিশন লাগে স্থানীয় প্রশাসনের এবং এই প্রশাসন ইচ্ছে করেই নিরাপত্তার ধুয়ো তুলে পারমিশন দেয় না। কিন্তু ওয়াজ করতে পারমিশন লাগে না। ওয়াজের সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বলে বাদ দিতে চায় ওয়াজে আগের মতো ধর্মীয় প্রচার হয় না, হয় নাস্তিক, ধার্মিক চিহ্নিতকরণ, আর চলে পলিটিক্স। সাধারণ মানুষকে উসকে দেয়ার কাজ চলে । আর আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ প্রায়। আমাদের সংস্কৃতিকর্মীরা সেখানে পুঁজির দালালি নিয়ে ব্যস্ত। সংস্কৃতিকর্মীরা দলীয় নমিনেশনের জন্য লাইন দেয়, লাইসেন্স পারমিট, প্লটের দালালি করে। সেখানে সবার অজান্তে বেড়ে উঠছে মৌলবাদী বিষকাঁটা।

ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়। সেটাই ব্যবহার করছে মৌলবাদ। সংস্কৃতির চর্চা সমাজে যখন থাকে না, তখন সমাজের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ আবহে জন্ম নেয় প্রতিক্রিয়াশীলতা ধর্মান্ধতা। জন্ম নেয় কুমিল্লা, নাসিরনগর, রামু, মালোপাড়া। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এখানে খুঁজে পাওয়া গেল না। সমাজে সাম্প্রদায়িকতাকে টিকিয়ে রাখে কারা? এ প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। তারপরও একের পর এক ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই যাচ্ছে। ‘সংখ্যালঘু’ নির্যাতন বিশ্বে নতুন নয়। বিশ্বের দেশে দেশে এটা আছে থাকবে।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এনআরসিতে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে কত লক্ষ ‘সংখ্যালঘু’কে? গরুর মাংস রপ্তানিতে ভারত বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম। সেখানে গরুর মাংস বেচার অপরাধে মানুষকে পিটিয়ে মারা হয়, চীনে উইঘুর মুসলমান বা মিয়ানমারে রোহিঙ্গদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস আমরা জানি। সবখানেই সংখ্যালঘুরা নিগৃহীত। কিন্তু বাংলাদেশটা অন্য দেশের মতো নয়।

এটা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আমাদের যুদ্ধটা ছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানিরা যেভাবে অত্যাচার চালিয়েছে পাকিস্তানপন্থি প্রেতাত্মারা আজও সেটা করছে। বাঙালি সংস্কৃতি বদলে দিতে তারা মরিয়া। তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ কোথায়? কুমিল্লায় প্রকাশ্য দিবালোকে হামলে পড়া এবং তারপরে সারা বাংলাদেশে– এ ইঙ্গিত কীসের?

একসময় গ্রামে গ্রামে যেটুকু সংস্কৃতির চর্চা ছিল সেটা আজ নেই। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সেই সর্বজনীন সাংস্কৃতিক চেতনা জাগাতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অনুপস্থিত। বাউল হওয়া এখন অনেক সময় অপরাধ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ফতোয়া দিয়ে তাদের চুল কেটে দেয়। বলা যায় আমাদের বাঙালিত্ব ও এখন সংখ্যালঘিষ্ঠদের সংস্কৃতির পথে হাঁটছে। আমাদের সংস্কৃতির জগতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেই শূন্যতা দ্রুত পূরণ করতে আসছে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। রাজনৈতিক বিপ্লবের আগে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা লেনিন বলেছেন বার বার।

মাওসেতুং ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কৃতির সংকট বুঝতে পেরে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করেছিলেন। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছাড়া এই ধর্মান্ধদের আস্ফালন বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সংস্কৃতি তার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বার বার আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলদের সমস্ত আঘাতকে রুখতে হবে। তাহলেই অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করা যাবে, নতুবা নয়। এটা করা না গেলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে। আমরা কি বসে বসে দেখবো ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার কালো করে স্ট্যাটাস দিয়ে বসে থাকব?

লেখক: গবেষক-প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক

এ বিভাগের আরো খবর