বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে ত্রাণকর্তা হিসেবে যখন আবির্ভূত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তখন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখ লাখ মানুষের মিছিলের সঙ্গে একাকার হয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায়। তাকে এক নজর দেখতে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয় ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- পিতৃহত্যার বদলা নেব’, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।
১৯৮১-এর ১৭ মে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’ আরও বলেন- ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
শুরু হয় শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিকজান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তা একটানা চলে। জেল-জুলুম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে পথ থেকে টলাতে পারেনি। শত প্রতিকূলতায়ও হতোদ্যম হননি তিনি। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বার বার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেন, আবির্ভূত হন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে।
দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬-এর ১২ জুন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের উন্নয়নের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের ইতিহাস রচনা শুরু হয়। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এ সেক্টরে ব্যক্তিগত খাতের বিনিয়োগ চালু করার পাশাপাশি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা। এছাড়া ১৯৯৮ সালে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা এবং মূল্যস্ফীতি ১৯৯৬ সালের ৮.৯ শতাংশ থেকে ২০০১ সালে ১.৯ শতাংশে নিয়ে আসা, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও খাদ্যশস্য উৎপাদন ২ কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা হয় এসময়ে।
প্রথমবারের মতো ১৯৯৮ সালে দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষাকল্পে শেখ হাসিনা ‘সেইফটি নেট’ কার্যক্রম শুরু করেন। গ্রহণ করা হয় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’-এর মতো দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচি। বয়স্কভাতা ও বিধবা ভাতার মতো কর্মসূচিগুলোর সূচনাও ঘটে ওই সময়। প্রান্তিক কৃষকের কথা চিন্তা করে শেখ হাসিনা দেশে প্রথমবারের মতো কৃষকের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেন। নাগরিকের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ওপর জোর দিয়ে সরকারি উদ্যোগে প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।
মোবাইল ফোন খাতের একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটিয়ে স্বল্পমূল্যে সবার কাছে মোবাইল ফোন সহজলভ্য করা হয়। বাংলাদেশকে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে সরকার তথ্য-প্রযুক্তিকে জনগণের কাছে সহজলভ্য করে তোলেন যার ফলে দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সুযোগ পায়। পরিবহন খাতের বিকেন্দ্রীকরণ, বেসরকারি উদ্যোগে আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শেখ হাসিনার সরকার।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন।
যে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করে, সে-ই ১৯৯৮ সালে ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাফল্যের স্তুতি বর্ণনা করে বক্তব্য দেয়।
১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেখানে বিশ্বব্যাংক বলে, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে প্রথম আখ্যায়িত করে Just Faaland I আর John Richard Parkinson নামক দুজন অর্থনীতিবিদ। তাদের রচিত Bangladesh: the test case of development বইতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অবজ্ঞা করে বলে, ‘যদি বাংলাদেশ উন্নতি করতে পারে তাহলে পৃথিবীর যেকোনো দেশ উন্নতি করতে পারবে।’ তাদের কথা ভুল প্রমাণ করে ১৯৯৬-২০০১ সালে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য মর্যাদা পুনরায় ফিরে পায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
পৃথিবীর অনেক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিস্ময়কর ও অনুকরণীয় বলে স্বীকৃতি দেয়।
Citigroup-এর বিবেচনায় ২০১০ থেকে ২০৫০-এর মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক 3G (Global Grotwh Generator) Countries তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ। Price Waterhouse Coopers (PWC) ২০১৭-এর The World in ২০৫০ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামকে আগামী দিনে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে পরিণত হবে পৃথিবীর ২৩তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশে এবং পেছনে ফেলবে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গও বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে J P Morgan-এর Frontier Five তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাপানিদের কাছে দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায়।
অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘আরব নিউজ’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরবর্তী কেন্দ্রস্থল হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে এটি ৩২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বাজারে পরিণত হবে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক Business Insider পত্রিকার নিবন্ধে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও তাইওয়ানের পর বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের পঞ্চম এশিয়ান টাইগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান Lowy Institute তাদের গবেষণায় এ বক্তব্যের স্বপক্ষে বলে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে তাইওয়ানকেও ছাড়িয়ে যাবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফ্রিল্যান্স’ কর্তৃক প্রকাশিত Nation Brands ২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ দেশের মধ্যে ৩৯তম, যা ২০১৬ সালে ছিল ৪৪তম। প্রথমবারের মতো ২০০৯-১০ অর্থবছরে Standard and PoorÕs এবং MoodyÕs বাংলাদেশের ওপর সভরেন ক্রেডিট রেটিং প্রণয়ন করে। তাদের ২০১৭-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের পরিমাণ Ba3 stable। সম্প্রতি World Economic Forum (WEF) বিশ্বের ৭৪টি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির ওপর সমীক্ষা করে, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-বিষয়ক Inclusive Development Index অনুযায়ী পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪, ভারতের ৬২, পাকিস্তান ৪৭, শ্রীলঙ্কা ৪০ ও চীন ২৬তম।
আবার একই ফোরামে বৈশ্বিক প্রতযোগিতায় সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে আগের বছরের চেয়ে ৭ ধাপ এগিয়ে ৯৯তম অবস্থানে আসে। এছাড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে আগের বছরের চেয়ে ৯ ধাপ এগিয়ে ১২৮তম অবস্থানে আছে। বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে (HDI) ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। লিঙ্গসমতার দিক থেকে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং টানা তিন বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
উপমহাদেশের আরেক নোবেলবিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের সামাজিক ক্ষেত্র, বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সফলতার বিষয়টি তার বইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উল্লেখ করেন।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উড়ন্ত সূচনার পর্যায়ে রয়েছে। তার ভাষায় প্রবৃদ্ধি ‘তর তর’ করে বাড়ছে। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘আজকের বাংলাদেশ পুরোটাই সাফল্যের গল্প, যা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই দৃষ্টান্ত।’ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত Millennium Development Goals বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের আগে এবং ২০১৫-এর অনেক আগেই বাস্তবায়ন করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়। The Rise of the South শীর্ষক জাতিসংঘের ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩’-তে যে ১৮টি দেশ এমডিজি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ হচ্ছে অর্থনীতির এলাকায় একটি রোল মডেল।’ বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ং জিমও বাংলাদেশের প্রশংসায় পিছিয়ে থাকেননি। ২০১৬ সালে সফরে এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ২০১৫ সালে কেনিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘সব দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা, তারা কীভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করছে তা শেখা উচিত’- এসব ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি’ আর বিশ্বদরবারে ‘মর্যাদাশীল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনার অর্থনীতির মুক্তিসংগ্রামের কারণে।
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত, সে দেশ আজ বিশ্বজয়ের অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংকটের এ ক্রান্তিলগ্নেও শেখ হাসিনা জনগণের ‘জীবন’ ও ‘জীবিকার’ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট সংকটের শুরু থেকেই তিনি এ ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জনগণের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে জাতির অভিভাবক হিসেবে ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের এ পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করার অপরাধে তাকে বার বার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারানির্যাতন ভোগ করতে হয়। কিন্তু তিনি নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন পিতা মুজিবের মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী।
জনগণের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প ২০২১’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেযোগ্য।
এছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হন শেখ হাসিনা। অপরদিকে বিশ্বের বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিও প্রদান করে।
চীনপন্থি, রাশিয়াপন্থি, আমেরিকাপন্থি, ভারতপন্থি, সৌদি-আরবপন্থিসহ নানাপন্থি রাজনীতি ও রাজনীতিবিদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর পরে একমাত্র শেখ হাসিনাই বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র বানাতে সক্ষম হন।
চার দশকের বেশি সময়ের পথচলায় জেল-জুলুমের সঙ্গে যার দিকে বার বার বন্দুক তাক করা হয়, যার দিকে বার বার সন্ত্রাসীর বোমা-গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে, যাকে রক্তাক্ত ও কণ্টকাকীর্ণ পথেও দমাতে পারেনি, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ছুটে চলেছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্য অর্জনে। মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতধারা ও অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার সংগ্রামে তিনি সাহসী যোদ্ধা।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যেখানেই মানুষ তার অধিকারবঞ্চিত হবে, যেখানেই শোষণ আর নির্যাতনের শিকার হবে, নিষ্পেষিত হবে মানুষ আর মানবতা, সেখানেই আলোকময় হয়ে আবির্ভূত হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা-এই শুভ কামনায় শুভ জন্মদিন।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা। সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)