সরিষা, ধনিয়া ও কালোজিরা ফুলের মধু বাজারজাতকরণ এবং ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ প্রথমবারের শরিয়তপুরে মতো মধু উৎসবের আয়োজন করেছে।
মৌ উৎসব নামে জাজিরা উপজেলা চত্বরে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।
মৌ উৎসবে ১৪ স্টলে বিভিন্ন মৌচাষীরা অংশ নেন। সেখানে তারা সরিষা, ধনিয়া ও কালোজিরার মধু পৃথকভাবে প্রদর্শন করেন।
এ ছাড়া মধু সংগ্রহের পদ্ধতি, গুণাগুণ ও দাম সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানান। এ বছর জেলায় ৭৮টি খামারে ১২ হাজার ৫৮০টি মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে, এতে ৮০ টন মধু সংগ্রহ হবে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের।
মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন মৌখামারি, কৃষক, সাধারণ ক্রেতা, উদ্যোক্তা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, ‘শরীয়তপুরে মধু সংগ্রহ করতে প্রতি বছর খামারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষের জন্য এ জেলায় অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সব জেলায় কালোজিরা আর ধনিয়ার মধু চাষ হয় না।
‘এ ছাড়া রানি মৌমাছি বংশবিস্তারে বাংলাদেশের মধ্যে শরীয়তপুর সবচেয়ে এগিয়ে। কৃষকের মাঝে যে ভুল ধারণা ছিল তা এখন আর নেই। তারাও বুঝে গেছে, মৌচাষের ফলে ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। তবে এ মধুর ন্যায্যা মূল্য নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাজিরা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা বুজতাম না, মনে করতাম ক্ষ্যাতে মৌমাছি গেলে ফসল নষ্ট হয়। কৃষি অফিসের লোকজন আমাগো বুঝানোর পর দ্যাহি ফসল ভালোই অয়। গত বছরের থিক্ক্যা এই বার তিন মন দইন্না বেশি পাইছি। আমিও চিন্তা করতাছি ক্ষ্যাতির লগে মধু চাষ করুম।’
হাজি মৌখামারের সত্বাধিকারী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দ্যাশে দ্যাশে ঘুইরে মৌচাষ করি। সরকারের অনুমোতি আছে। বিসিক থেইক্যা রেজিস্ট্রেশন করি। হেইয়ার পরও আমাগো ঘাডে ঘাডে চান্দা দিতে অইতাছে। প্রশাসনের কাছে আমাগো দাবি, আমরা জানি স্বাধীনভাবে এই ব্যবসা করতে পারি।’
শরীয়তপুরে মৌচাষিদের উৎসাহ দিতে জেলা প্রশাসন মৌ উৎসবের আয়োজন করেছে
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে এইরকম একটা অনুষ্ঠান হইতাছে যেখানে বনে বাদারে পরে থাকা মানুষের কথা সাধারণ মানুষের ভিতরে আলোচিত হচ্ছে। আমরা আইজ খুশি। এমন অনুষ্ঠান প্রতি বছরের আয়োজনের দাবি রাহি।’
মধু কীভাবে প্রক্রিয়াজাত হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত জানান খুলনা থেকে আসা আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আর্ন করি তখন প্রাকৃতিক কারণে মুধতে ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ পানি থাকে। কিন্তু মধুতে পানি থাকতে হবে মাত্র ১৯ থেকে ২০ শতাংশ। কিন্তু আমাদের মধুতে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পানি বেশি থেকে যায়। এই পানি বা ময়শ্চার যদি ফেলে না দেয়া হয় তাহলে উদ্বৃত্ত পানিতে মধু নষ্ট করে দেবে। তার জন্যই চায়না ও আরবসহ কয়েক দেশ একটা মেশিন তৈরি করেছে যা দিয়ে রিফাইন করলে অতিরিক্ত পানি অপসারিত হয়ে ১৮ থেকে ২০ শতাংশে চলে আসবে। এতে মধুর গুণমান ঠিক থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।’
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘খামারিরা যাতে মধুর নায্যা মূল্য পান সে বিষয়ে কাজ করছে প্রশাসন। মৌচাষি ও ভোক্তার মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের মাধ্যমেই এটা সম্ভব। সে লক্ষ্যেই আজকের এই আয়োজন।
‘প্রতিটি জেলারই একটি ব্র্যান্ডিং থাকে, আমরা মনে করি এ জেলার কলোজিরার মধু হতে পারে সেই ব্র্যান্ডিং। সে প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এর ফলে বৃদ্ধি পাবে মৌচাষ, ঘুঁচবে বেকারত্ব, আর অর্থনীতি পাবে গতি।’