১৯৮২ সালে পিরোজপুর থেকে জীবিকার তাগিদে বরিশাল নগরীতে আসেন ষাটোর্ধ্ব বাহাদুর মিঞা। কয়েকটি এলাকা ঘুরে নিবাস গড়েন নগরীর পলাশপুর এলাকায়। দুই দশক পলাশপুরেই বাস করছেন বাহাদুর মিঞা।
আশপাশের এলাকায় এসেছে পরিবর্তন, কিন্তু পরিবর্তন হয়নি পলাশপুরের। পাশেই কীর্তনখোলা নদী থাকলেও নেই তাতে শহররক্ষা বাঁধ। তাই জোয়ারের পানির অবাধ যাতায়াত পশালপুরে।
এলাকার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশায় জলাবদ্ধতা মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই জমে হাঁটুপানি; উঠে পড়ে ঘরে।
দুই দশকে এসবের সমাধান পাননি বাহাদুর মিঞা। এই সময়ে শুধু একবারই দেখেছেন সড়কের সংস্কার। সেটা ঠিক কত আগে ভুলে গেছেন ওই বাসিন্দা।
সড়ক সংস্কার ও নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন নির্বাচনের আগে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি মুখে থাকলেও ভোগান্তিতে পাশে নেই কেউ। স্থানীয় কাউন্সিলর এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ পলাশপুরের বাসিন্দাদের।
বাহাদুর মিঞা বলেন, ‘নিচু এলাকার সড়ক, সহজেই নদীর পানি ওঠে। ভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু সড়ক নয়, ঘরের মধ্যেও হাঁটু সমান পানি থাকে আমাদের এখানে।’
পলাশপুর ৮নং গলির বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে আমরাও নদীর অংশ হয়ে যাই। নগরীতে বাস করি, কিন্তু জোয়ারে আশ্রয় নিতে ছুটতে হয় পার্শ্ববর্তী এক স্কুলে।’
তার প্রশ্ন, ‘নগরীর মানুষের যদি এমন ভোগান্তি হয়, তাহলে সিটি কর্পোরেশনের কাজটা কী?’
এই বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, কতকিছু করবে বলে প্রতিশ্রুতি ছিল জনপ্রতিনিধিদের। দুর্ভোগের সময় মেয়র বা কাউন্সিলরের খোঁজ নেই।
সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডের বেশিরভাগ জুড়েই পলাশপুর এলাকা। এই এলাকায় বাস ৩০ হাজারের বেশি মানুষের। কোনো মেয়রের আমলেই এই এলাকার উন্নয়ন হয় না বলে দাবী বাসিন্দাদের।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের পর এই এলাকায় মেয়রকে তেমন দেখা যায়নি। অস্বাভাবিক জোয়ার হলে গভীর রাতে একবার এসেছিলেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। স্থানীয় কাউন্সিলর হলেও কেফায়েত হোসেন রনি সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি।’
এসব বিষয়ে জানতে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনির সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘খালগুলোর বেহাল দশা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করেছি। প্রকল্প পাস হলেই আমরা কাজ শুরু করব।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা লোকাল ফান্ড থেকে সড়ক সংস্কার থেকে শুরু করে নানা কাজ শুরু করেছি।’