১. ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিএনপি’র আমলে ২০০৪ সালে সংঘটিত হয়।
২. ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর, হামলাকারীদের না ধরে উলটো আহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা করে। হামলায় আহত মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত সরকারের পেটোয়া বাহিনী নিক্ষেপ করেছিল কাঁদানে গ্যাস। আহতদের সাহায্য না করে অমানুষের মতো নির্মমভাবে করেছিল লাঠিপেটা।
৩. ঘটনা ঘটার পর পরই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়েই চাপিয়েছিল।
৪. রাতের অন্ধকারে ফায়ার ব্রিগেড দিয়ে সব আলামত ধুয়ে-মুছে ধ্বংস করা হয়েছিল।
৫. অবিস্ফোরিত গ্রেনেড ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করে পরবর্তী ৯ ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়।
৬. হামলার পর আওয়ামী লীগ নেতারা মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ।
৭. হামলার সময় যেসব পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা দায়িত্বে অবহেলা করেছিল পরবর্তী সময়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
৮. বিএনপি-জামায়াত জোট ২১ আগস্ট ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। মাত্র এক মাস ১০ দিনের মাথায় ওই বছরের ২ অক্টোবর তদন্ত কমিশন সরকারের কাছে ১৬২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করে বিচারপতি জয়নুল আবেদীন মূলত জাতির সঙ্গে তামাশা করেন। এই ফরমায়েশি তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে পুরস্কার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।
৯. বিএনপি-জামায়াত সরকার আসল অপরাধীদের বাঁচাতে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
১০. পরবর্তী সময়ে, ২১ আগস্টের হামলা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাস ছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাদিক।
১১. মুফতি হান্নানের একটি সাক্ষাৎকারে পরববর্তী সময়ে জানা যায় যে, তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ মদদে এই হামলা সংঘটিত হয়।
১২. তারেক রহমানের সঙ্গে এই হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল জামায়াতনেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের আমির আব্দুস সালাম এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মেজর নূর।
১৩. সর্বশেষ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের আগে বিএনপি নেতা তারেক রহমান লন্ডন থেকে পাঠানো এক ভিডিও-বার্তায় দাবি করেছিলেন কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই ২১ আগস্ট মুক্তাঙ্গন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ সরিয়ে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
অথচ, ২০০৪-এর আগস্টের প্রথম সারির প্রায় সব কটি জাতীয় দৈনিকে সমাবেশের ২ দিন আগে, ১৯ আগস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় যাতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল- ২১ আগস্ট ৩ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা। ঘুরে ফিরে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানোর উদ্দেশ্যেই তারেক রহমান আবারও মিথ্যাচার করেন।
উল্লিখিত ঘটনাগুলো কোনো সৎ ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারবে না। যাদের ন্যূনতম বিবেকবোধ, সততা আছে এবং যারা বিএনপি-জামায়াতের দলীয় রাজনীতি দ্বারা পুরোপুরি অন্ধ নন, তারা সবাই বুঝতে পারবেন কী ভয়াবহ অপরাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াত এবং কেমন ভয়াবহ তাদের মিথ্যাচার!
এতকিছুর পরেও বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ মনে করেন “২১ আগস্টের ঘটনা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে কোনো ‘ক্ষত’ই না, একটি দুর্ঘটনা মাত্র। এটা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কিছুই নেই।”
কারো মধ্যে ন্যূনতম মনুষ্যত্ব থাকলে এমন কথা বলতে পারবেন না। এদের অপরাজনীতির বিপক্ষে শুধু রাজনীতিই করা যায়, কিন্তু এদের কাছে কি ‘গণতন্ত্র’ পাওয়া সম্ভব? বা এরা কতটা ‘গণতান্ত্রিক’ আচরণ প্রত্যাশা করতে পারে? এরা কি গণতন্ত্রের উপযোগী?
লেখক: অধ্যাপক। চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।