বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার আরম্ভ হয়েছিল একুশ বছর পর। ঘাতকরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দীর্ঘ একুশ বছর এই বিচারের পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে এই নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং অভিযোগনামা প্রণয়ন করা হয়, এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আমরা হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছি।
যেকোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সময়ও প্রধানত তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয়- ১) হত্যার অভিপ্রায় কী ২) হত্যার ফলে কে বা কারা কীভাবে লাভবান হয়েছে এবং ৩) হত্যার পেছনে কেউ কলকাঠি নেড়েছে কি না? রাষ্ট্রের কোনো শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে আরও অনুসন্ধান করা হয় এর পেছনে সুদূরপ্রসারী কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে কি না! দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে জাতির পিতার হত্যার তদন্তে এর কোনোটি আমলে আনা হয়নি। যে ঘাতকরা দেশ ও বিদেশে সদম্ভে বলেছে ‘আমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি’- শুধু তাদেরই বিচার হয়েছে।
আমরা ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার করেছি, জাতির পিতা রাষ্ট্রনায়ক, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পারিনি। উচ্চতর আদালতের রায়ে এ কারণে বলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুহত্যার প্রকৃত কারণ এবং নেপথ্যের কুশিলবদের খুঁজে বের করার জন্য সরকারের উচিত হবে একটি কমিশন করা। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি এবং উচ্চতর আদালতের নির্দেশে প্রায় দেড় বছর আগে এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে নেয়া হলেও আইনমন্ত্রী গত ১২ আগস্ট (২০২১) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনার কারণে নাকি কমিশনটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।
করোনাকালে সভা-সমাবেশ বন্ধ আছে জানি, সরকারি কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে শুনিনি। কমিশন তো কোনো বিশাল জনসমাবেশ করে গঠন করার বিষয় নয়। মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে, যদি তা ভার্চুয়ালিও হয়, কমিশন গঠন সম্ভব। প্রয়োজন সদিচ্ছা। যে কারণে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্থবির করে রাখা হয়েছে, যে কারণে জামায়াতে ইসলামীর মতো গণহত্যাকারীদের সংগঠন বা ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধের জন্য প্রধানত দায়ী পাকিস্তানি হাই কমান্ডকে এখনও বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি, মনে হয় একই কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যাতদন্ত কমিশন গঠনও ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনীতিতে ধর্মের যথেচ্ছ ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি। জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসের রাজনীতি বিভিন্ন মাধ্যমে যেভাবে বিস্তার লাভ করছে এ নিয়ে পাঁচ বছর আগে হলি আর্টিজানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন মৌলবাদী সন্ত্রাস নির্মূলের নিদান’ শিরোনামের এক নিবন্ধে লিখেছিলাম-
“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আংশিক বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ’৭৫-এর পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন তারা কখন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছেন, কারা তাদের সমর্থন করেছেন এবং কিভাবে তারা এই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায়ে আদালত আত্মস্বীকৃত খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বলেছে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এ বিষয়ে অভিযোগনামায় যেহেতু কিছু বলা হয়নি সরকারের উচিৎ হবে একটি কমিশন গঠন করে জাতিকে তা জানানো।” (বাংলাদেশে আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্ব এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, অনন্যা ২০১৭)
’৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ধর্মের নামে যেভাবে ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম, ভিনদেশি এবং ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসীদের হত্যা করা হয়েছে, যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বিগ্ন-এর মূল নিহিত রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পুনরুত্থান ঘটানো সম্ভব ছিল না।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের শোচনীয় পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান কবর খুঁড়ে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তার মাশুল এখনও গোটা জাতিকে দিতে হচ্ছে।
মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে জাতি হিসেবে বাঙালি কতটুকু সচেতন এবং কী পরিমাণ অসাম্প্রদায়িক তার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে। ’৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু স্বাধীনতার ডাক দেননি, ‘মুক্তির সংগ্রামের’ও ডাক দিয়েছিলেন। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি এই মুক্তিসংগ্রামের ডাক ছিল সব অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তি, সামাজিক অসাম্য, ধর্মীয় বিভাজন, জাতিগত নিপীড়ন, কূপমণ্ডূকতা ও ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনকাল ছিল ধর্মের নামে শোষণ-পীড়নের এক অন্ধকার যুগ। বঙ্গবন্ধু এবং তার সহযোগীরা স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন একটি প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য, যেখানে পাকিস্তানের মতো ধর্মের নামে বিভাজন, হত্যা-সন্ত্রাস, উন্মাদনা থাকবে না।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের শুধু সামরিক পরাজয়ই হয়নি, তাদের ধর্মের নামে রাজনীতি, হানাহানি, হত্যা ও ধ্বংসের দর্শনেরও পরাজয় ঘটেছিল। এটি সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সব ধর্মীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে বাঙালিত্বের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কারণে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালিত্বের এই চেতনার প্রধান রূপকার, যার ভিত নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাঙালির এই ঐক্য পাকিস্তান ভেঙেছে, ধর্মের নামে রাজনীতির অমানবিক ধারণা ভেঙেছে। পরাজিত পাকিস্তান এবং তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালির এই ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য প্রথমে বঙ্গবন্ধু এবং তার সহযোগীদের হত্যা করে পাকিস্তানের সেবকদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। ’৭২-এর সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলে বাঙালিত্বের চেতনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ধর্মকে, যা তারা পাকিস্তান আন্দোলনের সূচনা থেকেই করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি ও সন্ত্রাসের প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির জনক জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য জাতিকে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা, বাঙালি-বাংলাদেশী, ধর্মনিরপেক্ষতা-ইসলাম (রাজনৈতিক), সমরতন্ত্র-গণতন্ত্র প্রভৃতি দ্বন্দ্বে বিভক্ত করেছেন।
‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দি পলিটিশিয়ানস’- এই ঘোষণা দিয়ে জেনারেল জিয়া বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চেতনা ও প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ বলে রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক আদর্শকে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিনাশ ঘটানোর পাশাপাশি ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির এই বিভাজন ঘটানো হয়েছে। এই সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী বিভাজনের উদ্দেশ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে অধিকাংশ সময় এ দেশটি শাসন করেছে পাকিস্তানপন্থি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, যারা বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার বন্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করেছে। ’৭৫-এর পর বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির যে পাকিস্তানিকরণ, মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ আরম্ভ হয়েছে- বর্তমানে একটানা একযুগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও আমরা ’৭১-এর চেতনায় পুরোপুরি ফিরে যেতে পারিনি।
’৭২-এর সংবিধানে জেনারেল জিয়ার বাতিল করা রাষ্ট্রের চার মূলনীতি পুনঃস্থাপিত হলেও এখনও সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্ক থেকে সংবিধানকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা যায়নি। সেখানেও বাধা হচ্ছে বিভাজনের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রাবল্য। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপ্রেমীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে।
২০১৫ সালে হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা যখন মুক্তচিন্তার লেখকদের ‘নাস্তিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে হত্যাকারীদের উৎসাহিত করেছেন- প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের সমাজে নাস্তিকতার অনুমোদন নেই। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলে দাবি করেন এমন কেউ কেউ বলেছেন, ব্লগাররা ধর্মের সমালোচনা করে মৌলবাদীদের উস্কে দিচ্ছে। তারা ভুলে যান ২০১৩ সালে হেফাজত-জামায়াতের মহাতাণ্ডবের সময় আস্তিক-নাস্তিক বিভাজন বাংলাদেশে আমদানি করেছে পাকিস্তানপ্রেমী মৌলবাদীরা, যাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে মোল্লাতন্ত্রের আফগানিস্তান বা জিয়াউল হকের পাকিস্তানের মতো মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানানো।
বঙ্গবন্ধু নাস্তিক ছিলেন না। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে বঙ্গবন্ধু সক্রিয়ভাবে পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে বাঙালির কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিকশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্রের দর্শন, যার মূর্ত রূপ ছিল ১৯৭২-এর সংবিধান।
পাকিস্তানপন্থি বাংলাদেশিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল- ১) ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, ২) ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বন্ধ করার জন্য এবং ৩) সংবিধান ও জাতীয় জীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা মুছে ফেলে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাবার জন্য।
বাংলাদেশে চলমান জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা গত শতাব্দীর আশির দশকে আফগানযুদ্ধের সময় থেকে জিহাদের নামে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মৌলবাদী সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই সন্ত্রাসের শক্তির উৎস ও অভিব্যক্তি যেমন বহুমাত্রিক- সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্যেও বহুমাত্রিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে হবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংবিধানিক এবং সামাজিকভাবে।
সামাজিকভাবে মোকাবিলা করার সময় গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং গণপ্রতিরোধের ওপর। ধর্মীয়ভাবেও এ সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, প্রকৃত ইসলামি শিক্ষাই নাকি এ সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারে। অথচ সন্ত্রাসীরা সব সময় কোরআন-হাদিস উদ্ধৃত করেই তাদের কর্মকাণ্ডকে ইসলামের লেবাস পরিয়ে বৈধতা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আলেম সমাজ নিশ্চয়ই চলমান জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাস প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন, তবে সরকারের নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে।
বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিহতকরণ ও নির্মূল সম্পর্কে সরকার এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ফোরামে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করছেন। অথচ এই সন্ত্রাসের যে নির্দিষ্ট দর্শন ও রাজনীতি রয়েছে এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের অনেকের, এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও ধারণা স্বচ্ছ নয়।
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রের যে মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ ঘটেছে যেভাবে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছে- পরিত্রাণের অমোঘ নিদান হচ্ছে ১৯৭২-এর মূল সংবিধানের পুনঃপ্রবর্তন, যেখানে জেনারেল জিয়া বা তার উত্তরসূরিদের কোনো কলঙ্কচিহ্ন থাকবে না। আরও নির্দিষ্টভাবে যদি বলি, ‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রেখে জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ না করে ধর্মের নামে চলমান জঙ্গি সন্ত্রাস সাময়িকভাবে দমন করা গেলেও কখনও তা নির্মূল করা যাবে না এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাও গড়া যাবে না।
লেখক: সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা