বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু এগিয়ে যাবার সাহস

  • রামেন্দু মজুমদার   
  • ১৫ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩৭

আমাদের পরম সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকাতে প্রাণে বেঁচে যান। তবে তাদের পক্ষে এ শোক সহ্য করা যে কত কঠিন ছিল, তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। সব হারিয়ে রিক্ত হয়ে বাংলার মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হাতে চলে যাওয়া দেশকে ফিরিয়ে আনতে কঠিন সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

আগস্ট এলেই মনটা বিষণ্নতায় ভরে যায়। ১৯৭৫-এর মধ্য আগস্টে যে নৃশংসতা বাঙালির ললাটে কালিমা লেপন করে দেয় তার জের চলেছে অনেক বছর। এ নির্মম ঘটনায় কেবল যে আমাদের জাতির পিতাকে হারিয়েছি, হারিয়েছি তার পরিবারকে- তা নয়, আমরা প্রবেশ করেছি এক অন্ধকার যুগে। আমাদের কাছ থেকে ছিনিযে নেয়া হয়েছে স্বাধীনতার মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবিক বাংলাদেশের এক স্বপ্ন। এ কৃষ্ণপক্ষের অবসানের জন্যে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, অনেক মূল্যবান জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক অধ্যায় আছে বলে জানা নেই। যে মানুষটি নিজের জীবনের সব সাধ-আহলাদকে বিসর‌্যন দিয়ে, বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কারাগারে অধিকাংশ জীবন কাটিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন একটি জাতি; সেই জাতিরই কিছু বিপথগামী ও মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন কুলাঙ্গার সন্তানের হাতে নিহত হওয়ার নজির বড়ই বেদনাদায়ক ও নির্মম! অকৃতজ্ঞই নয়, এ কৃতঘ্নতা।

পৃথিবীর সভ্যসমাজের কাছে আমাদের নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি ও জাতীয় চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয় এ হত্যাকাণ্ডের পর। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো- খুনিরা রাষ্ট্রীয় ও দেশের বাইরের শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে দাম্ভিক হয়ে ওঠে। তারা প্রকাশ্যেই মুজিব হত্যার ‘কৃতিত্ব’ দাবি করে। তারা আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে যে, পরে এদেশে রাজনীতি করার আড়ালে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা তথা পরিবারের সদস্যরা হুমকির মুখে পড়ে। অবশ্য জনতার ঐক্য, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা বা তার পরিবারের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব অনুভবই এ গোষ্ঠী আড়ালে যেতে বাধ্য হয়। এটা আমাদের একরকম কৃতিত্ব।

আমাদের পরম সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকাতে প্রাণে বেঁচে যান। তবে তাদের পক্ষে এ শোক সহ্য করা যে কত কঠিন ছিল, তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। সব হারিয়ে রিক্ত হয়ে বাংলার মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হাতে চলে যাওয়া দেশকে ফিরিয়ে আনতে কঠিন সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা হাতে পেয়েও তাদের জন্মদাতা ও বাঙালি জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার তিনি করতে পারতেন ভিন্ন উপায়ে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও গণতান্ত্রিক পথের পথিক শেখ হাসিনা খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে।

জাতি আজ এ হত্যার দায় থেকে কলঙ্কমুক্ত। পৃথিবীর হয়তো অনেকে বলবেন, তোমরা তোমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছ। আমরাও এখন এর জবাবে বলতে পারব- সেই হত্যাকারীদের বিচারও আমরা করেছি। আর তা করতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এতদিন যা বলতে পারতাম না; বরং লজ্জায় আমরা মাথা নিচু করে থাকতাম, এখন মাথা উঁচু করে ওই কথা বলতে পারি।

আজ ১৫ আগস্টকে মনে রেখে আমরা কেবল অশ্রু বিসর্জন করি না। এই শোক থেকে শক্তি অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের রেশ ধরে আমরা যখন আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন ১৫ আগস্ট হয়ে উঠেছে আমাদের শক্তির উৎস। এগিয়ে যাবার সাহস। আমাদের পিতার রক্তের ঋণ তখনই আমরা শোধ করতে পারব, যখন তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব, তার নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করতে পারব, তার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে তার রক্তের উত্তরাধিকার আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাহায্য করতে পারব।

আজ বঙ্গবন্ধুকে বলতে চাই, আপনি একটা কথা জানবেন, যতদিন যাচ্ছে আপনি বাঙালির হৃদয়ে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছেন। এখন বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু সমার্থক। আাপনি যেখানে আছেন, সেখান থেকে হয়তো দেখছেন, আপনার সুযোগ্য কন্যা আপনার আদর্শকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্যে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। আপনি নিশ্চয়ই তাকে আশীর্বাদ করছেন।

বঙ্গবন্ধু, আপনি আমাদের জীবনের ধ্রুবতারা, আমাদের এগিয়ে যাবার শক্তি।

লেখক: নাট্যজন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সাম্মানিক সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই)

এ বিভাগের আরো খবর