বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৫ আগস্ট

  •    
  • ১৩ আগস্ট, ২০২১ ১৮:৩৫

বঙ্গবন্ধু সব সময়ই বলতেন, তাঁর দেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশের প্রশাসনের মানুষদেরও তাই এই দেশ সৃষ্টির নেতার আদর্শ অনুযায়ী চলতে হলে অবশ্যই শুধু যোগ্য নয়, প্রকৃত মানুষও হতে হবে। তাদেরও মানুষের দুঃখ-বেদনা বুঝতে হবে। দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। দুর্নীতির ভেতর ঢুকে গেলে মানুষের প্রতি ভালোবাসা কমে যায়। আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা কমে গেলেই দেশ পরিচালনায় নানান সংকট দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু এই সত্যকে তাঁর দর্শনের মধ্যে রেখেছিলেন বলেই সব সময়ই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন দুর্নীতি নিয়ে।

নব্বইয়ের দশক অবধি ঢাকা শহরের যেকোনো রিকশাওয়ালাকে যদি বলা হতো, ৩২ নম্বরে যাবেন। তিনি সোজা বঙ্গবন্ধুর ৩২-এর বাড়িতে নিয়ে যেতেন। ঠিক তেমনি আজ বাংলাদেশে ১৫ আগস্ট বললে, কাউকে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না, এই দিনটি কী বা কেন? সবাই জানেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে আমরা শুধু বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হারাইনি। এদিনের এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে, দীর্ঘ বাইশ বছরের সংগ্রামের ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে পাওয়া বাংলা নামের দেশটি বদলে গেছে। রক্তের ভেতর দিয়ে, দীর্ঘ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যে আধুনিক সংবিধান এ দেশের মানুষ পেয়েছিল, সেই সংবিধান বদলে যায় ওই হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে।

আর সেই সংবিধান বদলের ভেতর দিয়ে যে প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ সংগ্রাম ও যুদ্ধ করেছিল, ওই পাকিস্তানকে অনুকরণের বিষয়গুলো এ দেশের সংবিধানে ঢোকানো হয়। তারপরে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ, বাঙালির রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ নিষিদ্ধ- এ সবই সবাই জানেন। শুধু তাই নয়, এই হত্যাকাণ্ডের পরে দেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে জীবনযাপনের আচরণও বদল করা শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতার নানান কিছু এখনও দেশের মানুষের জীবন ও সমাজজীবনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে থেকে গেছে।

আর এমনই অবস্থার ভেতর বাঙালি জাতির জীবনে আসে ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। বাঙালির ভাগ্য, এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর দল ও তাঁর কন্যা রাষ্ট্রক্ষমতায়। তাই বাঙালি সাড়ম্বরেই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু শুধু বাংলাদেশের বুকে নয়, সারা পৃথিবীতে এ সময়ে নেমে আসে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বড় মহামারি- কোভিড-১৯। বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসতেন। ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর কোয়ালিফিকেশান বলেছিলেন, ‘আমি আমার মানুষকে ভালোবাসি ও আমার মানুষ আমাকে ভালোবাসে।’ তাই সেই মানুষের কল্যাণের জন্যে, মানুষের জীবন রক্ষার জন্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠানই ভার্চুয়ালি করা হয়।

তবে তারপরেও বঙ্গবন্ধুর এই জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ বাস্তবায়নের কাজটি করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঘরহীন মানুষদের বিনা মূল্যে সারা দেশে জমি ও ঘর দেন। যাতে করে নিজের জায়গায় তারা বাস করতে পারেন। পৃথিবীতে একমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশে ছাড়া অন্য কোনো দেশে এই ধরনের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা কমিটির উদ্বোধনী মিটিংয়ে বলেছিলেন, ‘আপনাদেরকে আমি সেই কাজ করতে বলব, যাতে আমার দেশের প্রতিটি দরিদ্র মানুষ সকালে গরম ভাত তরকারি দিয়ে খেতে পারে আর সকলে যেন নিজের ঘরে বাস করতে পারে।’ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাই দেশের ঘরবাড়িহীন মানুষদের এই ঘর ও যে জমির ওপর ঘর তৈরি হয়েছে, ওই জমির মালিকানা দেয়ার ভেতর দিয়ে বাস্তবেই পালন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ।

বঙ্গবন্ধু তাঁর জাতির মাঝে নেই। তাঁকে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক দর্শন রয়ে গেছে। আর বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে জানার জন্যে আলাদা করে কোনো বই লিখে রেখে যাননি। কিন্তু বুদ্ধের মতো তিনিও তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে তাঁর দর্শন রেখে গেছেন। সে দর্শন খুঁজে বের করলে দেখা যাবে অনেক বড় বই-ই হবে। পৃথিবীর প্রত্যেক গেইম চেঞ্জারের দর্শনের একটা মূল সুর থাকে। বঙ্গবন্ধুর দর্শনেরও মূল সুর খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।

বঙ্গবন্ধু আসলে তাঁর দেশের দরিদ্র মানুষের সব ধরনের শোষণ থেকে, বঞ্চনা থেকে যেমন মুক্তি চেয়েছিলেন- তেমনি তিনি মুক্তি চেয়েছিলেন- তাঁর দেশের মানুষের অশিক্ষা থেকে, অপশিক্ষা থেকে ও সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে। আজ এ দেশ ও জাতি যত বেশি এই মুক্তির পথে এগিয়ে যাবে, ততই পালন করা হবে সত্যিকার অর্থে ১৫ আগস্ট।

আর এই মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে হলে মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু তাঁর দেশের সাধারণ মানুষের শুধু সরকারি শোষণযন্ত্র থেকে মুক্তি চাননি। তিনি মুক্তি চেয়েছিলেন পাকিস্তানের ধনী বাইশ পরিবারের হাত থেকে। যাদের হাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদ জমা ছিল। তিনি বারবার বলেছিলেন, ওই সম্পদের মূল মালিক দেশের মানুষ। তাই আজও খেয়াল রাখা প্রয়োজন, শুধু সরকারি শোষণ নয়, শিল্প মালিকানার নামে, ব্যবসা মালিকানার নামে দেশের কিছু মানুষ যেন সাধারণ মানুষকে শোষণ না করে। দেশের অধিকাংশ সম্পদ যেন কয়েক পরিবারের হাতে জমা না হয়।

দেশের সম্পদ যত বেশি দেশের সব মানুষের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ব্যয় হবে, ততই এ দেশের পক্ষ থেকে মানুষের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের শাসক নই, সেবক। আর এই সেবক হবার দায়িত্বটি প্রশাসনের ওপর। যেকোনো প্রকৃত ও উন্নত স্বাধীন দেশের মতো, বিশেষ করে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের প্রশাসনকে সে পথই অনুসরণ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু সব সময়ই বলতেন, তাঁর দেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশের প্রশাসনের মানুষদেরও তাই এই দেশ সৃষ্টির নেতার আদর্শ অনুযায়ী চলতে হলে অবশ্যই শুধু যোগ্য নয়, প্রকৃত মানুষও হতে হবে। তাদেরও মানুষের দুঃখ-বেদনা বুঝতে হবে। দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। দুর্নীতির ভেতর ঢুকে গেলে মানুষের প্রতি ভালোবাসা কমে যায়। আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা কমে গেলেই দেশ পরিচালনায় নানান সংকট দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু এই সত্যকে তাঁর দর্শনের মধ্যে রেখেছিলেন বলেই সব সময়ই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন দুর্নীতি নিয়ে। তিনি তাঁর দলের নেতা ও প্রশাসনের লোকদের হুঁশিয়ার করেও বলে দিয়েছিলেন, দুর্নীতি করলে তিনি তাদের ওপর দিয়ে লাল ঘোড়া দাবড়ে দেবেন। অর্থাৎ কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

বাস্তবে ১৫ আগস্ট প্রতিবছরে বাঙালির জাতীয় জীবনে একবারই আসে। এ দিনটি অবশ্যই প্রতিটি বাঙালি শ্রদ্ধার সঙ্গেই পালন করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিশ্ব মানবের মুক্তির এই অন্যতম দূত ও নায়ক বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে, জীবনের প্রতিদিনই ভালো মানুষ হয়ে চলতে হবে। আলোকিত মানুষ হবার চেষ্টা করতে হবে। এ জাতির প্রতিটি সন্তান যেদিন ভালো মানুষ হবে, যেদিন আলোকিত মানুষ হবে, সেদিনই সত্যিকার অর্থে ১৫ আগস্টের রক্তের ঋণ শোধ হবে।

এ বিভাগের আরো খবর