বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা চাই

  • রাজন ভট্টাচার্য   
  • ১৩ আগস্ট, ২০২১ ১৬:১০

কোভিডের চেয়ে ডেঙ্গুকে সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু এ রোগটি বলতে গেলে এখনও রাজধানীর মধ্যেই বেশি সীমাবদ্ধ তাই প্রতিরোধও সহজ হবে। শেষ কথা হলো, সময়ের কারণে অনেক সিদ্ধান্তই বদলাতে হয়। তাই দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশের কল্যাণের কথা ভেবে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার চিন্তা করতে পারে সরকার।

এখন তিন রকম বিপদের সামনে আমরা। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন ৯৮ ভাগ রোগী ক্ষতিকর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। মহামারিতে আক্রান্ত, মৃত্যুর ভয় যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না।

অপরদিকে নতুন উপদ্রব হয়ে সামনে এসেছে ডেঙ্গু। যদিও এর বিস্তার রাজধানী ঢাকাতেই বেশি। এই পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই বেহাল। প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে চাকরিপ্রার্থীরা। যারা অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখছিলেন, তাদের অবস্থা আরও নাজুক। একদিকে বয়স শেষ হতে চলেছে। কারো একেবারেই শেষ।

জীবনকে ঘিরে আছে বেকারত্বের অভিশাপ। তাই দিন দিন সরকারি চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবি জোড়ালো হচ্ছে। করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবিলার পাশাপাশি সামাজিক এই সংকট সমাধানে দ্রুত রাজনৈতিক ভাবনার সময় এসেছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ২১ কোটি টিকা দেশে আসার কথা। অর্থাৎ এই টিকায় সাড়ে ১০ কোটি মানুষকে অনেকটাই নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা সম্ভব। পাশাপাশি দেশে করোনার টিকা উৎপাদনের বিষয়টিও সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভাবছে। টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী, সেই টিকার চাহিদাও বেশি। এই পরিস্থিতিতে সে দেশটি যদি করোনার ধাক্কা একেবারেই সামাল দিতে না পারে, তখন নিজেদের চাহিদার প্রতি বেশি দৃষ্টি দেবে এটাই স্বাভাবিক। এতে অন্যান্য দেশকে টিকা দেয়ার চুক্তি যেকোন সময় বাতিল করতে পারে।

এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানিনির্ভর দেশগুলোর সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনে যাওয়া। তাছাড়া এই মহামারি সামাল দেয়ার তো আর কোনো পথ নেই। তবে এখন পর্যন্ত গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যেহেতু কোভিড নিরাময়ে কোনো টিকা বা আক্রান্ত ঠেকাতে কোনো কার‌্যকর ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি তাই সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো মাস্ক। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি জোড় দেয়া উচিত। একদিকে করোনার টিকা আসতে থাকুক। সেইসঙ্গে গণটিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকাও জরুরি। আরেক দিকে নিজস্ব উৎপাদন আর স্বাস্থ্যবিধির প্রতি নজর দিলে মনে হয় পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

দুই.

আগের মতো রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রভাব ও মৃত্যু নেই একথা সত্য। আক্রান্ত অতিমারি পর্যায়ে না গেলেও জীবন কেড়ে নেয়ার ঘটনা কিন্তু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে বেশি রোগী রাজধানী ঢাকায়। বর্ষা মৌসুমকেন্দ্রিক এই রোগটি কিন্তু ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সবাই মিলে যদি একটু সচেতন হওয়া যায়, তবেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত, হৃদয়স্পর্শী মৃত্যুর খবর পেতে হবে না। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা বেশি মিলছে। এরপর সরকারি আবাসিক এলাকাগুলোতে এডিস মশার প্রজনন বেশি। মূলত তদারকির অভাব আর উদাসীনতার কারণেই এই সমস্যা বেশি হচ্ছে।

ফ্রিজের ট্রে, ডাবের খোসা, টায়ায়, টবসহ পরিষ্কার পাত্রে জমে থাকা পানিতে এই মশা বংশবিস্তার করে। দিনে এই মশার কামড় থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, মশারি টানিয়ে ঘুমানো। যতদূর সম্ভব নিরাপদে থাকা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এটা তো সবচেয়ে বড় উপায় বটেই। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয়, মানুষকে আরও অনেক বেশি সচেতন করা গেলে। বিগত এক দশকের বেশি সময়ে যদি নগরবাসীকে এই রোগ প্রতিরোধে সচেতন করা সম্ভব না হয়, এর দায় নাগরিক ও কর্তৃপক্ষ উভয়কেই নিতে হবে।

এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে যেমন কার্যকর পদক্ষেপ পালন করে যেতে হবে, তেমনি জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে আশা করি এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এজন্য ওয়ার্ড-ভিত্তিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানো যেতে পারে। সেসঙ্গে যারা একেবারেই উদাসীন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও চালু রাখার বিকল্প নেই।

তিন.

কোভিড পরিস্থিতির কারণে সরকারি চাকরির নিয়োগ আগের চেয়ে কমেছে। দেশের অর্থনীতি যখন টালমাটাল তখন নতুন করে নিয়োগ দেয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির আশায় বুক পেতে বসেছিলেন তাদের অনেকের ইতোমধ্যে বয়স শেষ হয়ে গেছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এর কোনো নিশ্চয়তা একেবারেই নেই। এর মধ্যেও টুকটাক সরকারি নিয়োগ হচ্ছে না তা কিন্তু বলা যাবে না। তবে বড়দাগে নিয়োগ প্রক্রিয়া কমেছে। যারা সামনে দুই থেকে দিন বছর রেখে চাকরি যুদ্ধের জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলেন, তাদের কিন্তু ইতোমধ্যে দেড় বছর শেষ। কাঙ্ক্ষিত সার্কুলারও অনেকে পায়নি। তাই চাকরির বয়স ৩৫ করার আওয়াজ আরও বেশি। দেশের বেশিরভাগ যুবসমাজ কিন্তু এ দাবির পক্ষে। বিশ্বের অনেক দেশেই এ বয়সে সরকারি চাকরি হয়। তাই বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে। দেশের কোটি কোটি যুবকের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরির বয়স ৩৫-এর দাবিতে বড় বড় কয়েকটি আন্দোলন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দাবিতে চলছে নিয়মিত লেখালেখি। শিক্ষাবিদ, অভিভাবকসহ ছোট বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এ দাবির পক্ষে একমত পোষণ করেছে।

যদি রাজনীতির মাঠে আলোচনা আছে আগামী নির্বাচনি ইশতেহারে হয়ত সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেবে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। তরুণসমাজের একটা বিরাট অংশের ভোট টানতে দলগুলো এ বিষয়টিকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এমন চিন্তা সত্যিকার অর্থে কোনো রাজনৈতিক দলের থেকে থাকলে ভালো। চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন অন্তত যুবকদের একটি বিশেষ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তা হলো ২০২০ সালের মার্চ মাসে যাদের চাকরির বয়স ৩০ ছিল তারা আগামী অন্তত দুই বছর সব সরকারি চাকরির সার্কুলারে যেন আবেদন করার সুযোগ পায়। এতেও যুবসমাজ অনেকটাই স্বস্তি পাবে।

চলমান তিন সমস্যাই কমবেশি সমাধান যোগ্য। কোভিড মোকাবিলায় গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। তেমনি সবাইকে আরও বেশি সচেতন করে অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকাকে সচল রাখারও বিকল্প নেই। আর কোভিডের চেয়ে ডেঙ্গুকে সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু এ রোগটি বলতে গেলে এখনও রাজধানীর মধ্যেই বেশি সীমাবদ্ধ তাই প্রতিরোধও সহজ হবে। শেষ কথা হলো, সময়ের কারণে অনেক সিদ্ধান্তই বদলাতে হয়। তাই দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশের কল্যাণের কথা ভেবে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার চিন্তা করতে পারে সরকার। সেসঙ্গে বেকার যুবকদের ছোট-বড় শিল্পদ্যোক্তা করে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র নিবেদিতভাবে উদ্যোগ নিতে পারে। যেন পরিকল্পনাটি একেবারেই দৃশ্যমান হয়।

লেখক: সাংবাদিক

এ বিভাগের আরো খবর