বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ কামাল: অশেষ প্রাণশক্তির তারুণ্য

  • মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ   
  • ৫ আগস্ট, ২০২১ ১৫:৫৩

একজন তরুণের জীবন কত কর্মময়, কত প্রাণবন্ত এবং কত উজ্জ্বল হতে পারে, নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনে তা তিনি দেখিয়ে গেছেন শেখ কামাল। ছোটবেলা থেকেই তার ছিল খেলাধুলায় প্রচণ্ড আগ্রহ। শুধু খেলাধুলা নয়, লেখাপড়া, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতির সব শাখাতেই তার ছিল মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল তার সংক্ষিপ্ত জীবনে অপূর্ব প্রাণশক্তিতে ভরপুর থেকে এক দুরন্ত তারুণ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ সব অঙ্গনে।

একজন তরুণের জীবন কত কর্মময়, কত প্রাণবন্ত এবং কত উজ্জ্বল হতে পারে, নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনে তা তিনি দেখিয়ে গেছেন। ছোটবেলা থেকেই তার ছিল খেলাধুলায় প্রচণ্ড আগ্রহ। শুধু খেলাধুলা নয়, লেখাপড়া, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতির সব শাখাতেই তার ছিল মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা। মেধাবী ছাত্র, প্রথম ডিভিশনের ফুটবল প্লেয়ার, ক্রীড়া সংগঠক, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামাল ছিলেন সদালাপী, সদা হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মানুষ। তিনি গড়ে তুলেছেন ঢাকা থিয়েটার এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’।

ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ ও ১১ দফা আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেনাবাহিনীর যে প্রথম ব্যাচটি ভারতের বেলুনিয়া থেকে কমিশন্ড লাভ করে, সেই ব্যাচের একজন শেখ কামাল।

২৫ মার্চের পর তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশ গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সেনাবাহিনী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিরঞ্জীব ও চির উজ্জ্বল এই জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার এই জন্মদিনে আমরা সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই জাতির এই কৃতি সন্তানের প্রতি।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাত্র এক মাস ১২ দিন পর ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের জন্ম। জন্মের পর পিতার সান্নিধ্য তিনি ভালোভাবে পাননি, কারণ নতুন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আত্মনিবেদিত থাকতেন। পিতার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত থাকলেও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরম স্নেহ, ধৈর্য, সাহস ও একাগ্রতা দিয়ে আদর্শ শিক্ষায় সন্তানদের মানুষ করেছেন।

শেখ কামাল ঢাকার স্বনামধন্য শাহীন স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী জনাব দবির উদ্দিন আহম্মদের কন্যা দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানার সঙ্গে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই শেখ কামাল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। একই দিনে বঙ্গবন্ধুর আরেক পুত্র লেফটেন্যান্ট শেখ জামালেরও বিয়ে হয়। ফলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ছিল তখন উত্সবমুখর।

অথচ বধূদের হাতের মেহেদির রং মুছে যাওয়ার আগেই বিয়ের মাত্র এক মাস এক দিন পর দেশি-বিদেশি চক্র এবং সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাদের নিষ্পাপ শিশুপুত্র শেখ রাসেল ও অপর দুই পুত্রসহ ১৮ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে, যার মধ্যে প্রথম শহিদ হন শেখ কামাল। পরিবারের সবার সঙ্গে নিভে যায় শেখ কামালের মাত্র ২৬ বছরের জীবনপ্রদীপ। বয়স নিছক একটা সংখ্যা, যা দিয়ে মানুষকে মাপা যায় না। কারণ ২৬ বছরের অতিক্ষুদ্র জীবন শেখ কামাল ক্রিড়া-শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য সব কর্ম দিয়ে সাজিয়ে গেছেন। বাংলার ইতিহাসের অন্যতম অগ্রগামী সন্তান হিসেবে তিনি নিজেকে চিনিয়ে গেছেন অসম্ভব বিনয় আর সারল্যে।

শেখ কামাল তার মাত্র ২৬ বছরের জীবনে একদিকে মেধাবী ছাত্র, প্রথম শ্রেণির ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা, সংগীত ও অভিনয়শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ছায়ানট ও স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক, সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা, অপরদিকে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত, সদালাপী ও সুকুমার মনোবৃত্তির মানুষ। জাতির পিতার সন্তান হয়েও তিনি কোনো দিন অহংকারী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন আচার-আচরণে অতি সহজ-সরল মাটির মানুষ। শেখ কামাল ছিলেন সব ক্ষেত্রে অনন্য গুণের অধিকারী। তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে সমাজ হতো গতিশীল, জীবন হতো শৈল্পিক আর বাংলাদেশ হতো ক্রীড়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র।

একজন মানুষের মাত্র ২৬ বছরের জীবন কত কর্মময়, গতিশীল, গঠনমূলক ও প্রাণবন্ত হতে পারে, শেখ কামাল তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি অপূর্ব প্রাণশক্তিতে ভরপুর সৃষ্টিশীল তারুণ্যের প্রতীক, যিনি চির উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাকবেন এদেশের মানুষের হৃদয়ে। ৫ আগস্ট বাংলার এই উজ্জ্বল সন্তানের জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধা ও নিরন্তর শুভেচ্ছা।

লেখক: সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব

এ বিভাগের আরো খবর