বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে ৬ দফা প্রদানের পর জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তখন তার সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। তার পরিবারের খোঁজখবরও মানুষের মুখে মুখে কম বেশি উচ্চারিত হতে থাকে। শেখ হাসিনা, শেখ কামালসহ তার সন্তানদের নামও মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতো। সেই সময়ে আমরা যারা গণ-অভ্যুত্থান দেখেছি কিংবা অংশ নিয়েছি, আমাদের কাছে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম দূর থেকে কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুনেছি। শেখ কামালের নাম সেই সময় থেকে আমাদের মতো কিশোর-তরুণদের মুখে উচ্চারিত হতো।
’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি বন্দি অবস্থা থেকে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন, যুদ্ধে একজন লড়াকু হিসেবে অংশ নেয়ার কথাও শোনা গেছে। যুদ্ধ শেষে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে আসি। ১৯৭৩ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, উঠি সলিমউল্লাহ হলে। হলে ওঠার পর জানতে পারি শেখ কামাল এই হলেরই একজন অনাবাসিক ছাত্র। তবে তিনি প্রায়ই হলে আসেন, হলের সম্মুখে ব্যাডমিন্টন খেলেন। এছাড়া ছাত্রদের সঙ্গেও মাঝেমধ্যে আড্ডা দেন। শেখ কামাল সম্পর্কে দীর্ঘদিন থেকে অনেক কিছু জানা ও শোনার পর তাকে দেখা ও পরিচিত হওয়ার বেশ আগ্রহ মনের মধ্যে ছিল। প্রথম তাকে সমাজতত্ত্ব বিভাগের করিডরে দেখতে পাই। বেশ লম্বা, চশমা পরা এবং অত্যন্ত সাধারণ শার্ট-প্যান্ট পরা হালকা পাতলা- তরুণটিকে দেখেই চিনতে ভুল হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর চেহারার সঙ্গে কিছুটা মিল খুঁজে পেলাম। তিনি বন্ধুবান্ধব নিয়ে করিডোরে কথা বলছিলেন, আড্ডা জমিয়েও সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিলেন। বেশ কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে আমার অর্থনীতি বিভাগের দিকে পা বাড়ালাম। এর কদিন পরেই একদিন তাকে সলিমউল্লাহ হলের সম্মুখে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তার খেলা উপভোগ করছিলাম। দারুণ খেলতেন। খেলার পর আমরা যারা দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলাম তাদের সঙ্গে পরিচিত হলেন, খোঁজখবর নিলেন, কে কোন বিভাগে পড়ছি ইত্যাদি জানার চেষ্টা করলেন।
এর কদিন পর আবার একদিন তাকে একটি ছোট্ট জিপ গাড়ি চালিয়ে হলের সম্মুখে এসে নামতে দেখলাম। তখন আমি হলের সম্মুখে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের দেয়াল পত্রিকাগুলো দেখছিলাম। আমি নিজেও তেমন একটি দেয়াল পত্রিকা রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। হলের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নিজ নিজ হল শাখার উদ্যোগে এসব দেয়াল পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করত। আমি ছাত্র ইউনিয়নের একজন সমর্থক ছিলাম। সেকারণে ছাত্র ইউনিয়নের দেয়াল পত্রিকার সম্মুখে দাঁড়িয়ে পত্রিকাটি ভালো করে দেখছিলাম। কামাল ভাই কদিন আগেই আমাকে ব্যাডমিন্টন খেলার দর্শক হিসেবে দেখেছিলেন।
তিনি আমাকে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি আমার দিকে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমিও হাত বাড়াতেই তিনি কাছে টেনে দিলেন, খোঁজখবর জানতে চাইলেন, দেয়াল পত্রিকাগুলো ঘুরে দেখলেন, আমাদের পত্রিকাটির প্রশংসাও করলেন। এরপর তিনি হলের ভেতরে সম্ভবত প্রভোস্ট রুমে যান। বিকেলে আবার তাকে হলের সম্মুখে খেলতে দেখেছি। তার সঙ্গে স্বল্প এই করমর্দন, কর্থাবার্তা আমাকে আজও তাড়িত করে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকবারই তাকে দেখেছি। টিএসসিতে অনুষ্ঠিত একটি নাটকে তাকে মূল চরিত্রে অভিনয় করতেও দেখেছি। তার অভিনয়দক্ষতা সবাইকে মুগ্ধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডেতে তাকে ভীষণভাবে সাজগোজ করে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি।
১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠিত হওয়ার পর ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের বিভাগপর্যায়ে সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে। শিক্ষকদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন নতুন এই প্রাণস্পন্দনের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। দেশে গঠিত হয় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে জাতীয় ছাত্রলীগ।
ঢাকা কলেজের বিপরীতে মিরপুর রোডে জাতীয় ছাত্রলীগ অফিসে শেখ কামালকে একদিন বেশ জমিয়ে আড্ডা দিতে দেখেছিলাম। মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মতো তার বলা গল্প এবং আড্ডা অনেকক্ষণ উপভোগ করেছিলাম। সেটিই ছিল শেখ কামালকে আমার শেষ দেখা।
২৮ জুলাই আমি সোভিয়েত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খবরটি যখন মস্কোতে বসে রেডিওতে শুনতে পাই তখন মনটা ছিল ভীষণভাবে ভারাক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার খবরে গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা শোকাহত ছিল। যে কজন শিক্ষার্থী তখন মস্কোতে অবস্থান করছিলেন তারা সমবেত হলেন একটি কক্ষে। আমরা নবাগতরাও তাতে অংশ নেই। আমরা বয়সে তরুণ হলেও বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।
এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নয়, পাকিস্তানের এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশবিরোধীদের ধারায় পরিচালিত করার নীলনকশা। ’৭৫ পরবর্তী থেকে সেই ধারায় বেশ কয়েকটি সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিচালনা করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ হারিয়েছে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের যারা পূর্ব বাংলার জনগণের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা রাতের আঁধারে পরিবারের সবাইকে নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে।
শেখ কামাল বঙ্গবন্ধু পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান, তার বড় শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পিঠাপিঠি ১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে তার জন্ম। ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর পরিবার ৫০-এর দশকে এলেও পরিবারের ব্যয়ভার অনেকটাই বহন করতেন বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার কারণে কয়েকবার তাদের ঢাকায় থাকা নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকেই বাড়ি ভাড়া দিতে রাজি ছিলেন না। পুরাতন ঢাকাতেই থেকেছিলেন তারা। সেখানেই তাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়া, বেড়ে ওঠা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দেয়ার ওপর গুরত্বারোপ করতেন।
এই দায়িত্বটি বেগম ফজিলুতুন্নেছা মুজিব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করতেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর জন্য রাজনীতিতে সময় দেয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। বেগম মুজিব ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতেন। ছোটবেলা থেকে কামাল লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি, সংগীতচর্চা এবং ক্রীড়ায় বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখেন। খুব ভালো সেতার, গিটার ও বাঁশি বাজাতেন বলে তার সুনাম ছিল। খেলাধুলাতেও তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট সুনাম কুড়ান।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে এসে শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করেন। তখনি আবাহনী ফুটবল টিম বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকে। নিজে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে আগ বাড়িয়ে কখনও কিছু করতে যাননি। কারো তদবির সুপারিশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাননি। বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারই কারো তদবির ও সুপারিশে কোনো প্রকার আগ্রহ দেখাননি। তেমন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে কেউ করেছে বলে শুনিনি।
শেখ কামাল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পদ-পদবি তার ছিল না। তার চলন ও বলনে কোথাও সেই অহংকার বা আভিজাত্য ফুটে ওঠেনি। তিনি তার মতোই চলতেন, সবার সঙ্গে মিশতেন। তবে তিনি সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে নিজেকে নীরবে ব্যস্ত রাখতেন।
খেলাধুলায় তরুণরা যেন উজ্জীবিত হয়, সেজন্যই তিনি আবাহনী ক্রীড়া চক্র স্থাপন করেছিলেন। নিজেও খেলাধুলায় যেমন অংশ নিতেন; তেমনি সংগঠন গড়ে তোলাতেও মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ক্রীড়াবিদ হিসেবে সুলতানা আহমেদ খুকি বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। সুলতানা আহমেদ খুকির সঙ্গেই তার বিয়ে হয় ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় শেখ কামালকে কখনও ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে কেউ ভাবার মতো কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন বলে দেখিনি। বরং তিনি লেখাপড়া শেষে হয়তো আবাহনী চক্র, নাট্যাঙ্গন কিংবা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দিকেই অধিকতর মনোযোগী বলে মনে করা হতো।
তার কাজকর্মের সঙ্গে এসবই দৃশ্যমান ছিল। কমবয়সী হলেও তিনি একজন ভালো সংগঠক, উদ্যোক্তা এবং নেতৃত্বদানকারী তরুণ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে রাজনীতিতে সেভাবে যুক্ত করার কোনো বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন এমনটি দাবি করা যাবে না। কারণ বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে পারিবারিক বংশধর প্রতিষ্ঠা করার কোনো কৃত্রিম উদ্যোগ নেননি। শেখ কামাল রাজনীতিতে নিজস্ব যোগ্যতা, দক্ষতা ও আগ্রহে বেড়ে উঠবেন এমনটি হয়তো তখন ভাবা হতো। শেখ কামাল তার নিজস্ব দক্ষতা, ভালো লাগা ও চিন্তার জায়গায় ভূমিকা রাখছিলেন।
তখনও তার সম্মুখে ছিল অনেক বড় ভবিষ্যৎ। সুতরাং বেঁচে থাকলে ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করত তিনি শেষ পর্যন্ত কোথায় নিজেকে যুক্ত করতেন। কিন্তু সেটি হয়নি। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরশ্রীকাতরতা একটি বড় ধরণের খারাপ প্রবণতা ছিল এবং এখনও আছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তার বিরোধীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে স্বাভাবিক বিরোধী হিসেবে না ভেবে অনেকটাই ‘শ্রেণিশত্রুর’ দৃষ্টিতে দেখেছেন। এর প্রমাণ পাকিস্তানকালেও যেমন ছিল, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার, দুর্নাম ইত্যাদি তেমন করেছে। তাকে হত্যা করে ‘শ্রেণিশত্রুর’ পৈশাচিক মনোবৃত্তিও নিবৃত্ত করেছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরাও এই অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও ‘শ্রেণিশত্রুর’ পৈশাচিক মানসিকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি।
শেখ কামাল স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নানা অপপ্রচারের শিকার হয়েছিলেন। তার সম্পর্কে জাসদের গণতন্ত্র, মওলানা ভাসানীর ‘হক কথা’, ‘বিচিত্রা’, ‘হলিডে’ ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় নানা ধরনের কল্পকাহিনি প্রচার করা হতো। তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের অপবাদও দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সরাসরি যুক্ত থাকার কথাও অপপ্রচার করা হয়। বলা হয়েছিল তার নাকি বিপুল অর্থবিত্ত রয়েছে। এই অপপ্রচারগুলো তরুণসমাজে একটি বড় অংশের মধ্যে যেমন ছিল, একইভাবে গ্রাম-গঞ্জেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়ানো হয়েছিল।
মূলত স্বাধীনতা লাভের পর তরুণদের একটি বড় অংশ রাজনীতির জটিল পাট সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না নিয়েই রোমান্টিক বিপ্লববাদের নানা জটিল তত্ত্বে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এদের কাছে তখন শ্রেণিশত্রু খতম, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি যেন ডালভাতের মতো সহজ বিষয়ে পরিণত হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে বহুদূর যাওয়ার যে সুস্থ স্বাভাবিক যুক্তিবাদী, উদারনৈতিক, রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন অধিকতর প্রয়োজন ছিল সেটি তাদের মূল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাই স্বভাবগতভাবে উপলব্ধি করার মতো ছিল না।
একটা চরম উত্তেজনাকর বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে বাস্তবতা বিবর্জিত রাজনীতি-সমালোচনা, অপপ্রচার, মিথ্যাচার ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এর পরিণতি আমাদের জাতির জীবনে কত ভয়ংকর হয়েছিল সেটি ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ধীরে ধীরে অনেকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, অনেকেই পারেননি। অতিবিপ্লবী সব দল ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও ভেঙে অন্যরকম হয়ে গেছে। তারপরও অপপ্রচার, মিথ্যাচার, বিদ্বেষ, বৈরী মনোভাব, যুক্তিহীন, ভিত্তিহীন প্রচার-প্রচারণা শুধু শেষই হয়নি বরং তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে অপশক্তিসমূহ বৃদ্ধি করতে পেরেছে।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর প্রমাণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যেসব অপপ্রচার ও মিথ্যাচার পত্রপত্রিকা ও জনশ্রুতিতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তার সবটাই ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্ষমতা দখলকারীরা কেউই সেগুলোর প্রমাণ জনগণের সামনে হাজির করতে পারেনি, করেওনি
শেখ কামাল সম্পর্কেও রটানো প্রচার ও অপপ্রচার ছিল বিদ্বেষপূর্ণ, পরশ্রীকাতরতায় ভরপুর। এখনও অনেক তরুণ-তরুণী সেসব অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের কথা বিশ্বাস করছে। কিন্তু তাদেরও মেধা, সততা, বিদ্যাবুদ্ধি, জ্ঞানচর্চা ও বই-পুস্তক পড়ে ওইসব অপপ্রচারের রহস্য উন্মোচন করতে খুব একটা মনোযোগী হতে দেখা যায় না। আজ শেখ কামালের জন্মদিন। ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট তার অকাল মৃত্যুদিন। এই দুই দিবসে নতুন প্রজন্মের কাজ হবে সেই সময়ের সঠিক ইতিহাসটা জানা, শেখ কামালকে ইতিহাসের সঠিক সত্য থেকে তুলে আনা, তাকে মিথ্যাচারের আবর্জনায় ঢেকে রেখে নিজেরাই পাপে নিমজ্জিত হওয়া থেকে মুক্ত হওয়া।
লেখক: গবেষক, অধ্যাপক।