বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

  • মোহাম্মদ শাহজাহান   
  • ২ আগস্ট, ২০২১ ২১:২৫

বাঙালি জাতির ক্রান্তিলগ্নে প্রকাশ্যে পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে জান্তার হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচারপতি চৌধুরী কাজ করার তরিৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর দেশপ্রেমের পরিচয় দেন। এই সিদ্ধান্ত তার পরিবারের সদস্যবর্গ এবং তার নিজের জীবনের জন্যও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তখনও তিনি জানতেন না বাঙালি জাতির মুক্তির কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধু কোথায়।

২ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করে রাতারাতি তিনি জাতীয় বীরে পরিণত হন। নিরীহ, নির্বিবাদী, নিরহংকারী, সজ্জন পণ্ডিত মানুষটি একাত্তরে মাতৃভূমির মুক্তির যুদ্ধে অমিত বিক্রম আপসহীন যোদ্ধায় পরিণত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ। তাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা যাবে না।

এই ইতিহাস সৃষ্টির অনেকখানি ভার তিনি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। কেউ তাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। শুধুমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, কর্তব্যবোধে পরিচালিত হয়ে পাকিস্তানের নৃশংস বর্বরতায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন।

১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। ৫ আগস্ট তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছে। তার তিরোধানে বিশ্ববরেণ্য বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রনায়ক ও রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব পেরেজ দ্য কুয়েলার, রাণী এলিজাবেথ, তার প্রিন্স ফিলিপ প্রমুখ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শোকবার্তা পাঠান।

স্বৈরাচার এরশাদ তখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। বিচাপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর মরদেহ ঢাকায় আসার পর রাষ্ট্রপতি এরশাদ মরহুমের বাসায় গিয়েছিলেন। স্বৈরশাসক এরশাদকে জীবনে ওই একবারই কাছ থেকে দেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত এরশাদ মরহুমের জানাজায় অংশ নেন এবং বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। হিথরো এয়ারপোর্টে স্বয়ং রানীর গার্ড রেজিমেন্ট একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মরদেহের প্রতি যেমন গার্ড অব অনার দেয়া হয়, তেমনিভাবে তার কফিন বিমানে তুলে দিয়েছে।

ক্ষমতার প্রতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কোনো মোহ ছিল না। ড. কামাল হোসেন লিখেছেন, ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে স্বদেশে আসার পর ১১ তারিখ বিচারপতি চৌধুরীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাসভবনে তাকে দেখা করতে বলা হলো। বিচারপতি চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলামকে নিয়ে ড. কামাল সেখানে গিয়ে দেখেন বঙ্গবন্ধুও উপস্থিত আছেন। তাজউদ্দীন সাহেব তাদেরকে একান্তে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্টারি কাঠামোতে আসতে চাই, তোমরা এ ব্যাপারে সাংবিধানিক উপদেশ দাও।’

সেই বাসভবনে তাঁদের রচিত প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২-এ রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐদিনই স্বাক্ষর দিলেন।

স্বাক্ষর দেবার পরই বঙ্গবন্ধু ড. কামালকে এক কোনে ডেকে নিয়ে জাস্টিস চৌধুরী সম্পর্কে বললেন, প্রেসিডেন্ট তো উনিই হতে পারেন। বিচারপতি চৌধুরী এই প্রস্তাবের জন্য তৈরি ছিলেন না। তাকে বলা হলে তিনি নম্র স্বরে বললেন, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমাকে প্রেসিডেন্ট হতে হবে আমি কখনও তা ভাবিনি।’

কিন্তু তিনি আপত্তি করতে পারলেন না। কারণ, বঙ্গবন্ধুকে তিনি খুবই শ্রদ্ধা করতেন। এখনও ভাবি, প্রেসিডেন্ট পদ তিনি চাননি। অবস্থার চাপেই তাকে প্রেসিডেন্ট হতে হয়েছিল।

২৫ মার্চ মধ্য রাতে পাকিস্তান সামরিক জান্তা নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ঐ রাতে শুধু ঢাকা শহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ অজস্র নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়। ২৬ মার্চ সকালে বিবিসির খবরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের ভাসা ভাসা খবর প্রচারিত হয়। বিবিসির খবর শুনে বিচলিত বিচারপতি চৌধুরী মানবাধিকার কমিশনের সভায় উপস্থিত হয়ে ঢাকায় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত বিবিসির খবরের কথা জানান। ঢাকায় গণহত্যার খবর শুনে বিচারপতি চৌধুরী ২৭ মার্চ শনিবার পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন।

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বিশ্ব জনমত গঠনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লন্ডনে সদরদপ্তর স্থাপন করে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে সমগ্র বিশ্ব ছুটে বেড়িয়ে সম্পন্ন করেছেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও তাদের দোসরদের প্রাণনাশের হুমকির মুখে অবিচলিত, শান্ত এই কর্মবীর সাহসের সাথে মাতৃভূমির মুক্তির লক্ষ্যে বিরামহীনভাবে কাজ করে গেছেন।

একাত্তরে যুদ্ধ চলাকালে বিশ্বের শক্তিশালী কিছু দেশ পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের আপস-মীমাংসার চেষ্টা চালায়। দেশ ও জাতির ওই সংকটের সময় বিচারপতি চৌধুরীর অবিস্মরণীয় উক্তি ছিল, ‘লন্ডনের রাস্তায় আমার শবদেহ পড়ে থাকবে, তবু পাকিস্তানের সাথে আপস করে দেশে ফিরব না।’

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সশস্ত্র যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। জেনেভায় অবস্থানরত বিচারপতি চৌধুরী এবারও দেশ ও জাতির জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেননি। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি দস্যুদের দ্বারা বাঙালি হত্যাযজ্ঞের খবর পরের দিন সকালে বিবিসির সংবাদে তিনি অবহিত হন। কিছুক্ষণের মধ্যে মানবাধিকার কমিশনের সভায় উপস্থিত হয়ে বিচারপতি চৌধুরী বাংলার মানুষের হত্যার কথা জানান। জেনেভা থেকে অতি দ্রুত লন্ডন ফিরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ঢাকা থেকে প্রেরিত টেলেক্স পড়ে কালরাতের খবরাখবর তিনি জানতে পারেন। ক্ষোভে, দুঃখে, যন্ত্রণায়, অপমানে বিচারপতি চৌধুরী ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান ইয়ান সাদারল্যান্ডকে বললেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে পাকিস্তান সরকারের সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক রইল না। আমি দেশ থেকে দেশান্তরে যাব আর পাকিস্তানি সৈন্যদের নিষ্ঠুরতা-নির্মমতার কথা বিশ্ববাসীকে জানাব।’

বাঙালি জাতির ঐ ক্রান্তিলগ্নে এভাবে প্রকাশ্যে পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে জান্তার হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচারপতি চৌধুরী কাজ করার তরিৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর দেশপ্রেমের পরিচয় দেন।

এই সিদ্ধান্ত তার পরিবারের সদস্যবর্গ এবং তার নিজের জীবনের জন্যও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তখনও তিনি জানতেন না বাঙালি জাতির মুক্তির কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধু কোথায়। বাংলাদেশ সরকার তখনও গঠিত হয়নি। প্রথম সারির নেতারা নিহত, গ্রেপ্তার নাকি আত্মগোপনে, কিছুই তার জানা ছিল না। জাতির ঐ সংকটময় মুহূর্তে বিচারপতি চৌধুরীর দেশের পক্ষে কাজ করার ওই সরব ঘোষণা শুধু ঐতিহাসিক বললেই দায়িত্ব শেষ হবে না, এটা ছিল পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। শুধুমাত্র এই একটি সিদ্ধান্তের জন্য বাঙালি জাতির ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র এক দিন পর ২৭ মার্চ শনিবার ছুটির দিনে খোদ লন্ডন শহরে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী একজন বীরের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। আবু সাঈদ চৌধুরীর ওই বীরোচিত ঘোষণা শুধু লন্ডন বা আমেরিকায় অবস্থানরত বাঙালিদের নয়, বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালি সন্তানদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে।

ঐতিহাসিকরা একদিন লিখবেন, ‘২৬ মার্চের পর পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুর অবস্থান, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সারা বাংলায় গণহত্যা, আওয়ামী শীর্ষ নেতাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে দেশ-বিদেশের মানুষ যখন কিছুই জানতে পারছিল না, তখন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ আবু সাঈদ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণার পর ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড হিউমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এরপর তিনি কমনওয়েলথ সচিবালয় সাধারণ সম্পাদক আর্নল্ড স্মিথের সাথে দেখা করে ঢাকায় গণহত্যা বন্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চেষ্টা করতে অনুরোধ জানান।’

১০ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড হিউমের সাথে আবু সাঈদ চৌধুরীর সাক্ষাৎ হয়। লর্ড হিউম তাকে দেখেই বলেন, ‘পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিন্তার কারণ নেই।’

বিচারপতি চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচানোর জন্য চেষ্টার অনুরোধ জানান। হিউম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট খবর আছে। শেখ মুজিব ভালোই আছেন।’

ঐদিনই ১০ এপ্রিল ৪টার সময় বিচারপতি চৌধুরী বিবিসিতে যান। মি. পিটারগিল তার একক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি পাকিস্তানিদের গণহত্যাসহ পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বিস্তারিত বলেন। বিবিসির দুজন সাংবাদিক সিরাজুর রহমান এবং শ্যামল লোধ বিচারপতি চৌধুরীর বক্তব্য নেন এবং প্রচার করেন। বিবিসি তখন সকাল-বিকাল বাংলাদেশের খবর বিশেষভাবে প্রচার করত। এভাবে বিচারপতি চৌধুরী ২৫ মার্চের পর থেকে লন্ডনে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তোলেন।

এভাবে মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতার অবস্থান না জেনে এবং যুদ্ধকালীন সরকার গঠিত হওয়ার আগেই লন্ডনে মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে কাজ শুরু করে দিয়ে বিচারপতি চৌধুরী দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করেন। যুক্তরাজ্যে নানা দলমতে বিভক্ত বাঙালিদের তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। মূলত তিনি ছিলেন বহির্বিশ্বে বাঙালিদের ঐক্যের প্রতীক। ইউরোপ ও আমেরিকার বাঙালি সমাজকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার মন্ত্রে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। ২৩ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার বিচারপতি চৌধুরীকে বিদেশে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করে।

বিচারপতি চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাবার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহানের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাঙালিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুরতম আঘাতের ফলে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

৭১-এর বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যক্তি নন, বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, তার নামেই স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। কোনো ব্যক্তির নাম যখন প্রেরণার উৎস হয়, তখন তিনি ইতিহাসে স্থায়ী মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হন।... বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে স্বাদেশিকতা, স্বাজাত্যবোধ জাগিয়েছেন, সর্বোপরি এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা।’

আবু সাঈদ চৌধুরী আজীবন গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ পূজারী ছিলেন। আশির দশকে জীবনের শেষ কয়েক বছর তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা জোরের সাথে বলেছেন। স্বৈরশাসকরা ঐ সময় বঙ্গবন্ধুর অবদান শুধু অস্বীকারই করেনি, বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য যা যা দরকার তার সবই করে। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও বহু সভা-সমিতিতে প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা, সভাপতি, সম্বর্ধিত ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন ভূমিকায় যোগ দিয়ে বিচারপতি চৌধুরী তার সুললিত ভাষায় বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা জাতির সামনে তুলে ধরেন। স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যেভাবে তিনি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

আবু সাঈদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদকীয়তে লেখে: ‘হয়তো তাঁর অপেক্ষা অনেক পণ্ডিত লোককে ভবিষ্যতে আমরা পাইব, হয়তো অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি বিজ্ঞ আইনজ্ঞ কিংবা দূরদর্শী রাজনীতিকেরও আবির্ভাব ঘটবে, এদেশে। কিন্তু একই সঙ্গে এতগুলো উজ্জ্বল গুণের অধিকারী এবং চরিত্রবান, ব্যক্তিত্বমণ্ডিত, সজ্জন, নির্লোভ আর একজন আবু সাঈদ চৌধুরীর জন্য আমাদের কতকাল অপেক্ষা করতে হবে কে জানে।’ (সোমবার, ১৭ শ্রাবণ ১৩৯৪)।

দৈনিক সংবাদ (১৮ শ্রাবণ ১৩৯৪) সম্পাদকীয়তে লেখা হয়: ‘আবু সাঈদ চৌধুরীর কর্মজীবন পর্যালোচনা করে তাকে সার্থকভাবেই দার্শনিক-রাজনীতিক হিসেবে অভিহিত করা চলে।’

দৈনিক বাংলা লেখে:, ‘বিচারপতি চৌধুরী তার কর্মে আর কৃতিত্বের মাধ্যমে অমরত্বে উপনীত হয়েছেন।’

একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এম সাদিক নামে লেখেন: ‘বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্নময় বরেণ্য মনীষী আবু সাঈদ চৌধুরীর তিরোধান নক্ষত্রের পতনের মতো। কিন্তু তিনি জেগে রবেন প্রতিটি বাঙালির চোখের তারায়।’ (স্মৃতিসত্তায় আবু সাঈদ চৌধুরী, পৃ. ৩৮)।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন নায়ক জাতীয় বীর আবু সাঈদ চৌধুরীর মৃত্যু নেই। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে চিরকাল তিনি অমর হয়ে থাকবেন। মৃত্যুদিবসে স্যারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষক

এ বিভাগের আরো খবর