বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগাযোগ দর্শন কী ছিল? কী মৌল যোগাযোগ নীতি তিনি অনুসরণ করতেন? অনুসৃত নীতিগুলো কী তার সহজাত বৈশিষ্ট্য ছিল? নাকি চর্চার মধ্য দিয়ে তিনি তা রপ্ত করেছেন?
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিকতা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের ওপর যোগাযোগ পরিপ্রেক্ষিত থেকে বেশ কিছু মূল্যায়নও হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগ-দর্শন নিয়ে কোনো কাজ হয়েছে বলে জানা নেই।
বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, ভাষণ, স্মৃতিকথা ও অভিজ্ঞতামূলক লেখা ও সাক্ষাৎকারে তার যোগাযোগ-দর্শনের সন্ধান মেলে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন এক অনন্য সংযোগ ফসল। বঙ্গবন্ধুর সেই সংযোগ বা যোগাযোগের পাটাতন নির্মিত হয় শৈশবে। তৈরি হয় সংবেদী মন যা রূপ পায় আবেগের মুগ্ধ বিন্যাস। তিনি খুব শৈশবে এক দরিদ্র বন্ধুকে নিজের জামা খুলে দিয়েছিলেন। এটি ছিল একটি বারতা। উদারতা আর দিগন্তপ্রসারী মনের প্রতিবিম্ব। যে প্রতিবিম্ব দিয়ে এদেশে ঘর ভরে আলো এসেছিল।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়াশোনাকালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মুষ্টিচাল সংগ্রহ এবং তা বাজারে বিক্রি করে গরিব ছাত্রদের লেখাপড়া চালানোর পরার্থবোধ আরেকটি নজির। সাম্প্রদায়িক বৈরিতার শিকার এক বন্ধুকে উদ্ধার করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জেলে যেতে হয়। তার ১৪ বছর বয়সে জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়। মায়ের বুকের দুধের কাঁচা ঘ্রাণ দূর হওয়ার আগেই তিনি প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের শপথ নিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সংবেদী মন গড়ে উঠেছে টুঙ্গিপাড়ার প্রাণ-প্রকৃতি, খাল-নদী, অবারিত জলরাশি, সামাজিক সম্পর্ক ও পারিবারিক ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয়ে। সেই সময়ের টুঙ্গিপাড়া বিস্তৃত জলরাশির আধার। তিনি শৈশবে বাড়িসংলগ্ন বাঘিয়ার খালে গোসল করতেন, সঙ্গে থাকতেন সমবয়সীরা। খালপাড়ে থাকা হিজল গাছের ডাল থেকে পানিতে ঝাঁপ দিতেন। খালের স্রোতে, হিজল গাছ এবং সমবয়সীদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এক বিশেষ সখ্য। বঙ্গবন্ধুর শৈশবের মনোকাঠামো গঠনের এগুলোই অন্যতম কারক।
যুগপৎভাবে, মধুমতি নদীর রুপালি ঢেউ। ঘাটে বাঁধা বজরা নৌকা। নানা মানুষের আসা-যাওয়া। হরেকরমকের মাছ। সবগুলোর আলাদা আলাদা চরিত্র। সবগুলোর আঁচড় পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কোমল হৃদয়ে। শৈশবে কেবল একটি সংবেদী মন গঠন হয়নি তার গন্তব্যও স্থির হয় কল্যাণবোধে যাকে ঘিরে মূলত জাতির পিতার সংযোগ ও সংযুক্তি।
বৃহৎপ্রাণ, প্রকৃতি ও মানবিক সম্পর্কের প্রতিসরণ ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে, যা একটি পলল ও উর্বর মনোভূমি তৈরি করেছে। এ মনোভূমে রোপিত হয়েছে একটি দেশের মানচিত্র। মনের গভীর স্তর থেকে সে বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে জীবনের ঊষালগ্নে।
বঙ্গবন্ধুর মন এক বৃহৎ চেতনার দ্যোতক। আর তা হলো একটি স্বতন্ত্র পরিচয়, একটি মানচিত্র ও একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। এ ত্রিভূজাকৃতির আকাঙ্ক্ষাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগের দর্শন নির্মিত। একদিকে কতগুলো চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষা অন্যদিকে সেগুলো অর্জনের জন্য কার্যকর সংযোগ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের ভিত রচনাকারী এবং একই সঙ্গে সে স্বপ্ন অর্জনের পথনির্দেশকও বটে। আর নিশানাভেদী তীর ছুড়তে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে তার অনন্য যোগাযোগকলা।
বঙ্গবন্ধুর সংবেদী মনের সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সংযুক্তি ঘটছে দারুণভাবে। তিনি ১৮ বছর বয়সে এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সঙ্গে সম্মুখ সাক্ষাতের সুযোগ পান। তিনি সোহরাওয়ার্দীর অনুরক্ত হয়ে ওঠেন। এ আরেক বৃহৎ সংযুক্তি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সংযোগপ্রবণ অর্থাৎ যুক্ত হতে ভালোবাসতেন।
তার চেতনার পরিস্ফুটনে দরকার ছিল আরেক বৃহৎ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংযোগ, যা ঘটেছে বেশ সফলতার সঙ্গে। বেঙ্গল কমিউনিকেশনে গুরু-চ্যালা রিলেশনস একটি বিশেষ ব্যাপার। এখানে অন্য অনেক সাধনার মতো রাজনৈতিক সাধনাও গুরুমুখী। বঙ্গবন্ধু একজন গুরু পেয়েছিলেন, পেয়েছিলেন এগিয়ে যাওয়ার আশ্রয়।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকূশলতা চলেছে বন্ধুর পথ মাড়িয়ে। মানুষের অধিকারের প্রশ্নে তিনি আপসহীন। এ আপসহীনতা জনসাধারণ সহজে গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুকে তারা আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছে। বঙ্গবন্ধু নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে মানুষের মন জয় করেছেন। মানুষের মনোজগতের আকাঙ্ক্ষা অনুসন্ধান করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগের মূল আধেয় মানুষ। তিনি মানুষপাঠে এক পারঙ্গম রাজনৈতিক নেতা। বঙ্গবন্ধু মানুষ পড়ে পড়ে সামনে এগিয়েছেন। মানুষের প্রতি এ একান্ত মনোযোগ ও বিশেষ দক্ষতা তাকে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে।
তিনি মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। মানুষের নিকটতম নেতা বঙ্গবন্ধু। তিনি যাকে একবার দেখতেন তার চেহারা ভুলতেন না, নামও ভুলতেন না। কারো নাম ধরে ডাকার মধ্যে যে নৈকট্যবোধ তৈরি হয় তিনি তা দারুণভাবে রপ্ত করেছিলেন।
মাঠ-ঘাটের সাধারণ নেতাকর্মীদের তিনি যখন নাম ধরে ডাকতেন, ‘তুই’ বা ‘তোরা’ তখন নৈকট্যের স্থিতি খুব গভীর হতো। সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইমপাওয়ারমেন্ট ফিলিং কাজ করত। তারা অনুভব করতেন নেতার মনে নিজেদের বসত রয়েছে। এভাবে তিনি লক্ষ-কোটি মানুষের অন্তঃপুরে বসত গাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন, যা তার রাজনৈতিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ককে কালোত্তীর্ণ করে তোলে।
তিনি ছিলেন নিরহংকার ও নিঃস্বার্থ। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের স্পর্শে মানুষ আশ্রয় পেতেন, শীতল ছায়া অনুভব করতেন। বঙ্গবন্ধুর দ্যুতিময় ও দৃঢ় ব্যক্তিত্ব যোগাযোগ-দর্শনের ঘোরতর আবেশ তৈরি করেছিল। তার সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল। তিনি সম্মোহন করতে পারতেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক তৎপরতা দেশের জনগণ সেগুলো গভীর মনোযোগে প্রত্যক্ষ করেছে। পরীক্ষিত নেতার যে ধারণা সে মানে তিনি অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। অর্থাৎ নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি বেঙ্গল পলিটিক্যাল কমিউকেশনে স্বতন্ত্র চরিত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে যান।
বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগের নৈতিক ভিত্তি ছিল সহমর্মিতাবোধ। তিনি সহমর্মিতার পরশে সকলকে আপন করে নিতে পারতেন। তিনি ধনী-নির্ধন, সমমত, ভিন্নমত সবাইকে ধারণ করতেন। তিনি ছিলেন গ্রহণোউন্মুক্ত ও সমন্বয়বাদী নেতা। তিনি সংকোচন নীতি পছন্দ করতেন না। বঙ্গবন্ধু মানবিক গুণের আধার। তিনি যেমন বৃহৎ-এ মনোযোগ দিতেন তেমনি ক্ষুদ্রেও নিমগ্ন থাকতেন। খবরের কাগজ পরিবীক্ষণে তার সমর্থনে পাওয়া কয়েকটি টুকরো স্মৃতি তুলে ধরা হলো-
এক. বিয়ের উপহার
“ ১৯৭৪ সালের ১ মার্চ আমি বিয়ে করি। ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো একদিন তারিখ মনে নেই। দুপুর বেলায় বঙ্গবন্ধু যখন খেতে বসলেন তখন বিয়ের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত দিই। অবশ্য আমার সহকারী কন্ট্রোলার হাসানুজ্জামানের কথামতো বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত দেয়া হয়। সহকারী কন্ট্রোলার যখন বিয়ের প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন আমি তখন ওই রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। বিয়ের কথা শুনে আমাকে ডাক দিলেন। জানতে চাইলেন কোথায় বিয়ে করছি? বউ কী করে? কতটুকু পড়াশোনা করেছে, শ্বশুর কী করে, এমন অনেক প্রশ্ন? উত্তর দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে ডেকে বললেন, ওকে এক হাজার টাকা দিয়ে দে। আর আমাকে বললেন, তোর বউকে একটা বেনারশি শাড়ি আর একটা ঘড়ি কিনে দিস এ টাকায়। বঙ্গবন্ধুর দেয়া টাকা দিয়ে স্ত্রীকে লালপাড়ের একটি হলুদ শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। এই হলো বঙ্গবন্ধু।...বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসায় রকমফের দেখিনি”- বঙ্গবন্ধুর মাহনুভবতা ও ব্যক্তিত্বের কাছে সবাই ছিল ম্রিয়মাণ; (মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন: গণভবেনের সাবেক স্টোরকিপার; সূত্র: ১৫ আগস্ট ২০২০; বণিক বার্তা)
খ. কৈ মাছের মাথা
“খাবার সময় গেলে মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথম প্রশ্ন: ‘তুমি খেয়েছ?’ আমরা সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। সফলতার ভাগ কম। তিনি কিছু সময় মুখের দিক তাকিয়ে বলতেন, ‘তোমার মুখ শুকনো দেখা যাচ্ছে, খাও, পরে কাজ।’ নিজ হাতে প্লেট এগিয়ে দিয়ে ভাত-মাছ উঠিয়ে দিতেন। কৈ মাছ ও মাছের মাথা নিত্যদিনের ম্যেনু। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে কৈ মাছ খাওয়া দুষ্কর। পরিবেশ সহজ করার জন্য তিনি হয়তো বলতেন: ‘তোমরা মাছ খাওয়া শেখোনি, দেখো এভাবে খেতে হয়।’ কৈ মাছের কাঁটা সরিয়ে বা মাছের মাথা হাত দিয়ে ভেঙে কীভাবে মুখে পুরতে হয় দেখিয়ে দিতেন।” (বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি: ড. মসিউর রহমান: বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব; সূত্র: ১৫ আগস্ট ২০২০; বণিক বার্তা)
গ. সাতাশ হাজার টাকা
“১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে আমি চলে গেলাম ফ্রান্সে। যাওয়ার আগে শেষ যেদিন তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সেদিন তার চোখে জল দেখেছিলাম। চুয়াত্তরের বন্যার ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার জন্য আমি ছবি এঁকে, বিক্রি করে সাতাশ হাজার টাকার একটা চেক নিয়ে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে। চারদিকে সমস্যা। সামাল দেওয়া যাচ্ছে না দেশের দুর্নীতি। সেই চেক হাতে নিয়ে তিনি সেদিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চশমাটা খুলে আমাকে বললেন, ‘এই টাকা। কী হবে এটা দিয়ে আমার! এটা তুই তোর বাবাকে দিয়ে দে। তোর বাবাকে কিছুই তো দিতে পারলাম না।’ আমি বললাম, না কাকা। আমি এটা মানুষের জন্য করেছি। তখন সেদিন এই এক বড় মানুষকে দেখলাম আমার মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘বেঁচে থাক’। আমি বেঁচে আছি। শুধু তাকেই এই বাংলার মাটিতে বেঁচে থাকতে দিলো না ওরা।” (সাক্ষাৎকার: শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ; বঙ্গবন্ধু, আমাদের ভিত্তির স্থপতি; ১৫ আগস্ট ২০২০; দৈনিক সমকাল)
ঘ. খরগোশ
“১৯৭৩ বা ’৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু একবার আমাদের হেয়ার রোডের বাসায় এসেছিলেন। আমার বাবা তখন অর্থমন্ত্রী। আমার ভাই সোহেল অনেক ছোট। বঙ্গবন্ধু তাকে দেখে বললেন, ‘সোহেল, তোমার কী পছন্দ বলো তো? কী চাও তুমি?’ তখন সোহেল বলল, ‘আমার খরগোশ চাই।’ বঙ্গবন্ধুর কথাটা মনে ছিল। তারপর ১৯৭৫ সালে হঠাৎ একদিন বঙ্গবন্ধু আম্মাকে ফোন করে বললেন, ‘সোহেলের তো খরগোশ খুব পছন্দ। ওর জন্য খরগোশ পাঠাচ্ছি।’ পরে বঙ্গবন্ধু সুন্দর একটা কাঠের খাঁচায় দুইটা খরগোশ পাঠিয়েছিলেন। সেই খরগোশ দুইটাকে নিয়ে খুবই আনন্দ করতাম। ওদের আমরা গাজর ও কচি ঘাস খাওয়াতাম। আমার বাবাও পরম যত্ন নিয়ে খরগোশগুলোর দেখাশোনা করতেন। এটা যে তার মুজিব ভাইয়ের উপহার।” (সাক্ষাৎকার: সিমিন হোসেন রিমি এখনও মাথার ওপর বঙ্গবন্ধুর হাতের স্পর্শ অনুভব করি; ১৫ আগস্ট ২০২০; দৈনিক সমকাল)
বঙ্গবন্ধু হলেন মেঘনা নদীর মোহনা। যমুনা নদী যেমন গোয়ালন্দে পদ্মার সঙ্গে মিশে পদ্মা নাম ধারণ করে চাঁদপুরে মেঘনার সঙ্গে মিশে মেঘনা নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু ঠিক তাই।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে প্রবহমান শত ধারার সম্মিলন। শতধারার সমাবেশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধু বহুত্ব ও সমন্বয়বাদী নেতা। বৈচিত্র্য তার হৃদয়ের বাতিঘর।
বঙ্গবন্ধু কোনো খণ্ডিত সত্ত্বা নন। তিনি অখণ্ড। এ অখণ্ডতা বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগের মূল রসায়ন। এ সমগ্রতা থেকে উৎসারিত মুক্তির বার্তা। বঙ্গবন্ধুর ভাষা খুব স্পষ্ট। বুলেটের মতো তীব্র ও তীক্ষ্ন।
কেবল তাই নয়, তিনি ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সময়ের সন্ধি নিপুণ দক্ষতায় বেঁধেছেন। সময় পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিক করেছেন, জ্বলে উঠেছেন। আর জাতিকে উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশ নামের লাল-সবুজের এক বর্ণিল ছবি। ৭ মার্চ ১৯৭১ যা ধ্বনিত হয়েছে প্রতিটি বাঙালি মননে।
তার যোগাযোগের কেন্দ্রীয় বিষয়-কল্যাণ ও অধিকারবোধ, সংগ্রামী চেতনা, স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ গঠন এবং সমৃদ্ধতায় ভরে দেয়া (সোনার বাংলা)। চূড়ান্তভাবে, জনগণের অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। তার পদচারণা সাজানো সিঁড়ির মতো।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষই সবসময় যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। বঙ্গবন্ধুর নিজেই মাধ্যম, নিজেই বার্তা। ব্যক্তিগত, দ্বিত্বয়, ও গণযোগাযোগে বঙ্গবন্ধুর নৈপুণ্য ইতিহাস-উত্তীর্ণ। বঙ্গবন্ধুকে যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে তিনি বহুমাত্রিক যোগাযোগের আধার বেঙ্গল পলিটিক্যাল কমিউনিকেশনে এক শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপক রেহমান সোবহান যাঁকে বলেছেন ‘আকাশী মানুষ’ অর্থাৎ আকাশের সমান উঁচু। পলিটিক্যাল কমিউনিকেশন গবেষণায় বঙ্গবন্ধু এক অনন্য যোগাযোগ মডেল।
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও সমাজ বিশ্লেষক