বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধ্বনিত হোক জীবনের স্পন্দন

  • রণেশ মৈত্র   
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১৩:০৫

আমাদের প্রচার যন্ত্রসমূহ যেসব দেশে করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে সেসব দেশের মানুষ কীভাবে করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হলেন-তা গুরুত্বসহ প্রচার করতে পারে। পত্রিকাগুলোতে ওই প্রতিবেদন নানা দেশ থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশ করলে আশাহত মানুষ তা দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী আমাদের দূতাবাসগুলোর প্রেস সচিব এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলছে। ২০২১-এর জুলাই থেকে করোনা আতঙ্কের ভয়াবহ একটি মাস। আতঙ্কিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে সবাইকে করোনার চলমান ঢেউ সামলাতে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আতঙ্ক তো পিছু ছাড়ছে না কারো। মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিনই বড় হচ্ছে সংক্রমিতের সংখ্যাও নিত্যদিন বাড়ছে বিপুল গতিবেগ নিয়ে।

করোনার এই আক্রমণ নতুন নয়, দেড়টি বছর ধরে চলছে। এই দেড় বছরের মধ্যে এমন একটি দিনও কারো চোখে পড়েনি- যেদিন কেউ সংক্রমিত হননি- কারো মৃত্যু ঘটেনি। আবার এমন এমন মৃত্যু ঘটছে- যা জাতির কাছেই দুঃসহ। এই তো মাত্র কয়েকদিন আগে আমরা হারালাম জনপ্রিয় গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। হারিয়ে যাওয়া বিশিষ্টজনদের তালিকা এতই দীর্ঘ যে সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়।

শিল্পী-সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ-প্রকৌশলী, সাংবাদিক-চিকিৎসক, নার্স বিপুল সংখ্যায় হারিয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে, আমার মনে হয় যেন দেশটি আমাদের বুদ্ধিজীবীশূন্য হয়ে পড়েছে। শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সানজীদা খাতুন, সেলিনা হোসেন এবং এ রকম হাতেগোনা কজন কোনোক্রমে জীবন প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন। আগামীতে বাঙালি জাতি যে বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞানীগুণী মানুষের সংকটে পড়তে চলেছে- এ কথা ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। তবু যারা বেঁচে আছেন- তারা সবাই বেঁচে থাকুন সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত দেহ নিয়ে। প্রার্থনা এটাই।

অশেষ অবদান সত্ত্বেও বাংলাদেশ তো শুধু বুদ্ধিজীবী-শিল্পী, সাহিত্যিক এবং জ্ঞানীগুণীদের দেশ নয়, একমাত্র তাদের অবদানেই দেশটি টিকে আছে তাও নয়। দেশকে মূলত বাঁচিয়ে রেখেছেন কৃষক, শ্রমিক, ভূমিহীন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা- যারা সংখ্যায় কয়েক কোটি।

আজ সেই গ্রামীণ মানুষদেরকেও রেহাই দিচ্ছে না করোনা। ঈদের কারণে লক ডাউনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় লাখ লাখ মানুষ ঈদযাত্রা করে বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলগুলোতে ঈদ উদযাপন করার ফলে সংক্রমণের সংখ্যা এবং মৃত্যুও বেড়েছে। পরিণতিতে এখন কি গ্রাম, কি শহর- সবখানেই করোনা মহামারি, সবখানে কান্নার রোল।

এ কান্না থামাতে হবে। মৃত্যু ও সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না হলেও তা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব বিজ্ঞানের কল্যাণে। অবশ্য বিলম্বে হলেও এবং অসংখ্য মৃত্যু ও সংক্রমণের পরে বিগত ২৬ জুলাই মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানালেন, প্রধানমন্ত্রী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্যাপক হারে ভ্যাক্সিনেশনের নির্দেশ দিয়েছেন।

এখন চার হাজার নতুন ডাক্তার ও চার হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্যে, তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কতদিনের মধ্যে ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে, কতদিনে ওই ডাক্তার-নার্স নিয়োগ কামনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত পাঠাবে বা গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া কতদিনে শেষ হবে তা বলা দুরূহ। তবে এটুকু মাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোনো ইন্টারভিউ বা পরীক্ষা ছাড়াই এই নিয়োগ দেয়া হবে।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্ততর কি প্রধানমন্ত্রী বলার পরেই বুঝতে পারল যে, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ভ্যাক্সিনেশন প্রসারিত করা মানুষ বাঁচানোর স্বার্থে জরুরি প্রয়োজন? দেড় বছর ধরে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু দেশের নানাস্থানে অব্যাহত রয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য-বাজেটে উপযুক্ত পরিমাণ বরাদ্দ পায়নি। আবার বাজেটে যে বরাদ্দ বিগত অর্থবছরে হয়েছিল-তারও সিংহভাগ ব্যয় না হয়ে ফেরত দেয়া হয়েছে।

অথচ সর্বত্র সকল সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংকট, অক্সিজেন-সংকট, করোনা চিকিৎসায় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মাত্রাধিক স্বল্পতাজনিত সংকট, ৩৫টি জেলায় কোনো আইসিইউ বেড নেই, অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই-এ কথা জেনেও সেই জরুরি বিষয়গুলোতে অর্থব্যয় না করে বাজেটে পাওয়া বরাদ্দের একটি পয়সাও ফেরত যাওয়া কি ভাবা যায়?

ঈদযাত্রার জন্য সরকারি নির্দেশনাগুলো শিথিল না করে তা কঠোরতর করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ মানুষ বাঁচানোর স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল। তা না করায় দেশটি বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটছে ততধিক মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে- মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে।

এক সপ্তাহের মধ্যে সকল সরকারি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে যথেষ্টসংখ্যক বেড, আইসিইউ অক্সিজেনের ব্যবস্থা এবং করোনা চিকিৎসায় প্রতিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থাও করতে হবে।

একই সঙ্গে বয়স নির্বিশেষে, অন্তত ১২ বছর বয়স পর্যন্ত সবার টিকার ব্যবস্থা গ্রহণ ও শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বাধ্যতামূলকভাবে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; যাতে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব নাগরিকের টিকাদান সম্পন্ন করা যায়। আর যত ব্যবস্থাই থাক-করোনার প্রতিরোধের এখন পর্যন্ত সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা হলো টিকা।

আমাদের প্রচার যন্ত্রসমূহ যেসব দেশে করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে সেসব দেশের মানুষ কীভাবে করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হলেন-তা গুরুত্বসহ প্রচার করতে পারে। পত্রিকাগুলোতে ওই প্রতিবেদন নানা দেশ থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশ করলে আশাহত মানুষ তা দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী আমাদের দূতাবাসগুলোর প্রেস সচিব এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বস্তুত, আমরা যেভাবে করোনাকে ওয়াকওভার দিয়ে চলছি দ্রুত তার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের নানা দেশ করোনাবিরোধী সব লড়াইয়ের ঘটনা তুলে ধরলে মানুষের মনে এর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও দায়িত্ব রয়েছে। তিনি যদি আমাদের বিদেশি দূতাবাসগুলোকে এ ব্যাপারে সচেতন এবং সক্রিয় করে তুলতে পারেন তবে কাজ অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ৫ আগস্টের পর আরও দু’সপ্তাহ কঠোর লকডাউন বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ ঈদফেরত মানুষের করোনার যে ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে আগস্ট মাসজুড়েই অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন অপরহিার্য।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিদেশ মন্ত্রণালয় ও তথ্যমন্ত্রণালয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমরা অবশ্যই অনেকাংশে সফল হতে পারব।

এখন এমন কর্মসূচি প্রয়োজন যেন মানুষের বেদনার্ত মনে সাহস সঞ্চার করে জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে আনতে পারি। দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস রাখতে হবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের সহায়তায় মানুষের বিজয় সুনিশ্চিত।

লেখক: সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত

এ বিভাগের আরো খবর