বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদ-উৎসব: তবুও শেকড়ের স্বাদ

  • লাভা মাহমুদা    
  • ২০ জুলাই, ২০২১ ১৫:০৮

ঈদের সময় মেস বন্ধ থাকায় খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, হোটেলও বন্ধ। নানারকম প্রতিবন্ধকতায় অনেকেই টিকতে না পেরে পরিবার গ্রামে রেখে শহরে একাকি থাকেন। প্রাণপ্রিয় সন্তান, প্রিয়তমা স্ত্রী, জন্মদাতা পিতা-মাতা, ভাইবোন আত্মীয়স্বজন- সবাই যে গ্রামে। সেই নীড়, সেই নারী, সেই প্রিয়জন। সেই গ্রামকে অগ্রাহ্য করা যায়? ঈদে অনেকেই বিদেশভ্রমণে যান পরিবার পরিজন নিয়ে। অর্থ যাদের অগাধ, তাদের তো বাড়ির অভাব নেই, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম, বেগমপাড়া আরও কত কী!। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের একটাই হোম নিজের গ্রাম, নিজের বাড়ি।

আমাদের ঈদ, আমাদের বাড়ি ফেরা- অজগর সাপের মতো বাস, লঞ্চ, স্টিমারের টিকেটের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা, সারারাত রেল স্টেশনে শুয়ে বসে সকালবেলা একখানা ট্রেনের টিকেট পেয়ে ‘V’ চিহ্ন দেখানো মানুষগুলাকে দেখলে মনে হয় সোনার হরিণ পেয়েছে। অতঃপর প্রাণপণ চেষ্টায় শত কষ্ট, শত প্রতিকূলতায় শেষ পর্যন্ত কোনো এক সময় বাড়ি ফেরা। প্রিয়জনের সান্নিধ্য, প্রিয়তমার উষ্ণতায়, স্বজনের কাঙ্ক্ষিত বাসনায় ফিরতেই হয়েছে যে!পৃথিবীর অল্পকিছু শহরের মধ্যে ঢাকা এমন একটি- যেখানে মানুষ সুবিধা ভোগ করলেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে শহর টানে না। শত কষ্ট, নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেও সেই গ্রামেই ফিরতে হবে। নইলে যেকোনো উৎসবে বা আপৎকালীন সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায় কেন? এমনকি এই মহামারিতে লকডাউন, শাটডাউন বা সাধারণ ছুটিকে কেন্দ্র করেও লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। বাস ট্রেন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও যাত্রাপথে অবর্ণনীয় কষ্ট আর দুর্ভোগ সহ্য করেও পাগলপারা হয়ে গ্রামের পানে ছুটেছে। যাত্রাপথে নানান হয়রানি আর দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে জেনেও কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করেই ছুটেছে।

‘যে যেখানে আছেন, সেখানেই ঈদ করুন’… মহামারির কালে সরকারি এই সতর্কবার্তা, ঘরে ফেরা মানুষের আবেগের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে নিজের শেকড়ে উৎসব পালন করার তীব্র বাসনা থেকেই মানুষের ঘরে ফেরার তাগিদ। এটাই বোধহয় বাঙালির চিরন্তন বৈশিষ্ট্য।ঈদের আনন্দযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই নিরানন্দের সুর বেজে ওঠে। দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটে আর বাকি জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় বহু মানুষকে। ঈদের স্বপ্নযাত্রা, সারা জীবনের কান্নায় পরিণত হয় অসংখ্য পরিবারের।

ঢাকা ব্যয়বহুল নগরী হলেও কাজের সহজলভ্যতার কারণে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে ভালোভাবে টিকে থাকার নিমিত্তে বা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে, একটু উন্নত জীবনের জন্য, বাচ্চাদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ানো, ভালো চিকিৎসা... এসব কারণে এ শহরে বাস করলেও, বেশিরভাগ মানুষই এ শহরকে আপন মনে করতে পারে না।

নির্মম সত্য হলো, যুগ যুগ ধরে ঢাকায় থাকলেও মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষেরা ঢাকা শহরকে বিশ্বাস করতে পারেনি। এই শ্রেণির বাসিন্দারা জানে, তারা যে অর্থনৈতিক কাঠামোতে বাস করে, যেকোনো সময়ই উচ্ছেদ হতে পারে সেখান থেকে। এখানে রোজগারের সুবিধা যেমন আছে, তেমনি হঠাৎ করেই নিঃস্ব হবারও ঝুঁকিও আছে। অনিশ্চয়তার এই সংকটের কারণে মানুষের মাঝে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। মানুষ ভাবে কোনোভাবে পা পিছলে গেলে আর নিস্তার নেই, তাকে এ জাদুরশহর ছাড়তেই হবে। ফিরে যেতে হবে সেই গ্রামেই। গ্রামের ঠিকানাই তার স্থায়ী ঠিকানা। গ্রামই তাকে বুক পেতে নেবে।আরও আছে আয়-ব্যয়ের অসংগতি। কেউ কেউ ভাড়া বাসায় থাকেন, কেউবা মেসে। ভাড়া বাড়ি কখনও নিজের হয় না। আবার ঈদের সময় মেস বন্ধ থাকায় খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, হোটেলও বন্ধ। নানারকম প্রতিবন্ধকতায় অনেকেই টিকতে না পেরে পরিবার গ্রামে রেখে শহরে একাকি থাকেন। প্রাণপ্রিয় সন্তান, প্রিয়তমা স্ত্রী, জন্মদাতা পিতা-মাতা, ভাইবোন আত্মীয়স্বজন- সবাই যে গ্রামে। সেই নীড়, সেই নারী, সেই প্রিয়জন। সেই গ্রামকে অগ্রাহ্য করা যায়? ঈদে অনেকেই বিদেশভ্রমণে যান পরিবার পরিজন নিয়ে। অর্থ যাদের অগাধ, তাদের তো বাড়ির অভাব নেই, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম, বেগমপাড়া আরও কত কী!। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের একটাই হোম নিজের গ্রাম, নিজের বাড়ি।আমরা যদি ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারতাম, তাহলে সবদিক থেকেই ঢাকার ওপর চাপ কমত। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টর ঢাকার বাইরে গেলে দেশেরও সুষম উন্নয়ন হতো, মানুষ এবং যানবাহনের অতিমাত্রায় চাপ থেকেও রক্ষা পাবে।এ দেশের শহুরে আভিজাত্য যেমন গ্রামে ঢুকতে পারে না ঠিক তেমনি গ্রামের স্নিগ্ধতা শহরকে স্পর্শ করে না। তাই নিয়ন আলোর ঝলকানিতে এ শহরের সৌন্দর্য দেখলেও শেকড় তাকে টানে, প্রবলভাবেই টানে। তবে প্রত্যাশা একটাই করোনা মহামারির অতিশয় প্রাবল্য থেকে রক্ষা পাক এদেশের মানুষ। অন্তত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎসব চলুক। ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে যেয়ে যেন মহামারিকে আর বিস্তৃত না করি।

লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষক ও কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর