বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুফিবাদে মানবপ্রেম ও মওদুদীদের অপ্রেম

  •    
  • ১৮ জুলাই, ২০২১ ১৮:১১

স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নাই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।’

বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে ইসলামের নামে সন্ত্রাসী ওহাবি, সালাফি, তালেবান, আল-কায়েদা, আইএস ইত্যাদির নব-উত্থান চার দশকের বেশি নয়। বাংলাদেশে তাদের পুনর্জন্ম দেখছি ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর থেকে। ধর্মের নামে রাজনীতি ও সন্ত্রাস হচ্ছে এর বৈশিষ্ট্য। অথচ ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি ও সহমর্মিতার ইসলাম প্রচার করেছিলেন সুফি সাধকরা। ভারতবর্ষে প্রথম ইসলাম প্রচারক মালিক দীনার (মৃত্যু ৭৪৮ খ্রি.) ছিলেন সুফি তরিকার অন্যতম প্রধান ইমাম হাসান আল বসরির (৬৪২-৭২৮ খ্রি.) মুরিদ। তারা ছয়জন এসেছিলেন ইরাকের বসরা থেকে ভারতের কেরালায়। মালিক দিনার কেরালার থালাঙ্গানায় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘চেরামাল জুমা মসজিদ’ নামে যে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন, সেটি আরব বিশ্বের বাইরে প্রথম মসজিদ বলে দাবি করা হয়। বহু সংস্কারের পর এটি এখন কেরালার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।

উমাইয়া বংশের মোহাম্মদ বিন কাশিম ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ধুর রাজা দাহিরকে পরাজিত করে তলোয়ারের জোরে ভারতের মাটিতে ইসলামের প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বটে, তবে সফল হননি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শক্তি প্রয়োগ করে ইসলাম প্রচারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মোহাম্মদ বিন কাশিমের পর গজনীর সুলতান মাহমুদ (৯৭১-১০৩০ খ্রি.) ও শাহবুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী (১১৭৩-১২০২ খ্রি.) দিল্লিতে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নির্বিচারে অমুসলিম নিধন করেছেন, মন্দির ধ্বংস করেছেন, বলপ্রয়োগ করে ধর্মান্তরিত করেছেন, পরে উপলব্ধি করেছেন গায়ের জোরে ধর্মপ্রচার ফলদায়ক হয় না।

পক্ষান্তরে সুফি ধর্মপ্রচারকরা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে সাধারণভাবে জবরদস্তি করেননি। তারা শান্তি, সাম্য ও সৌহার্দের কথা বলেছেন। স্থানীয় সংস্কৃতি, লোকাচার ও ধর্মকে তারা আঘাত করেননি, বরং বহু ক্ষেত্রে ইসলামকে আঞ্চলিক রূপ দিতে চেয়েছেন, মানুষের সেবা করেছেন, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার কথা বলেছেন, যে কারণে ভারতবর্ষ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামের দ্রুত বিস্তার ঘটেছে।

ভারতবর্ষের সুফি সাধকদের ভেতর বহুল পরিচিত হচ্ছেন খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (১১৪১-১২৩৬ খ্রি.), যিনি দক্ষিণ এশিয়ার চিশতিয়া তরিকার জনক। আজমিরে তার মাজারে প্রতিদিন ধর্মনির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। উপমহাদেশে চিশতিয়া তরিকার পর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাদারিয়া, যে তরিকার প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ বদিউদ্দিন জিন্দা শাহ মাদার (মৃত্যু ১৪৩৪ খ্রি.), যিনি কুতুবউল মাদার নামে বেশি পরিচিত। তার মাজার রয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে। এরপর রয়েছে বাগদাদের হজরত আবদুল কাদির জিলানীর (১০৭৮-১১৬৬ খ্রি.) অনুসারী, যাদের বলা হয় কাদেরিয়া। এই তিন ধারার বাইরে দক্ষিণ এশিয়ায় নকশবন্দীরা ও সুহরাওয়ার্দী তরিকার অনুসারীও আছেন, যারা তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল। নকশবন্দীরা গান, বাজনা, নাচকে হারাম মনে করেন। মুঘল সম্রাটদের ভেতর বাবর ও আওরঙ্গজেব নকশবন্দী সুফিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। হালে চেচনিয়া ও ইরাকে নকশবন্দীরা অস্ত্র হাতে জিহাদ করছেন। সুহরাওয়ার্দী ও নকশবন্দীরা শরিয়তের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন, অন্যরা গুরুত্ব দেন মারেফত বা মরমিবাদের ওপর।

ভারতবর্ষের সুফিদের প্রধান তিনটি তরিকা- চিশতিয়া, কাদেরিয়া ও মাদারিয়াদের ওপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ইরানের জালালউদ্দীন রুমির (১২০৭-১২৭৩), যার মাজার তুরস্কের কোনিয়া শহরে। মধ্যযুগে রুমির শিষ্য ও অনুসারী দরবেশরা সিরিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে ভারতবর্ষ পর্যন্ত এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। বাংলাদেশে যে সুফি সাধকরা ইসলাম প্রচার করেছেন তাদের ভেতর সর্বাগ্রগণ্য হচ্ছেন সিলেটের হজরত শাহজালাল(রহ.), যিনি ছিলেন রুমির ভাবশিষ্য, যার জন্মস্থান তুরস্কের কোনিয়ায়। পূর্ব ভারতের জনপদ সিলেটে তার আগমন ঘটেছিল ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে। জনশ্রুতি হচ্ছে- রুমির নির্দেশে তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য ভারতে এসেছিলেন। রুমির অনুসারীদের দরবেশ বলা হয়, যারা নাচ ও গানের ভেতর স্রষ্টার মাহাত্ম্য বর্ণনার মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জন করতে চান।

২০০১-এর ৯/১১-এ যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে জঙ্গি মৌলবাদীদের ভয়ংকর হামলার পর সেখানে রুমির মানবিক ইসলাম সম্পর্কে কৌতূহল এমনই বেড়েছে, বছরের পর বছর রুমির গ্রন্থ ছিল বিক্রয় তালিকার শীর্ষে।

বাংলাদেশে বা এই উপমহাদেশে মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারীদের সর্বত্র মাওলানা সম্বোধন করা হলেও তুরস্কে মাওলানা (তুর্কি ভাষায় মেভ্লানা) একজনই আছেন, তিনি জালালউদ্দিন রুমি। রুমির গুরু ছিলেন সুফি সাধক শামস তাবরেজি (১১৮৫-১২৪৮ খ্রি.), রুমির মতো পারস্যে জন্মগ্রহণ করলেও মৃত্যুবরণ করেছেন তুরস্কে।

কোনিয়ায় রুমির মাজারের কাছেই তার মাজার। শামস-এর একটি বহুল প্রচারিত কালাম হচ্ছে- ‘কখনও ভবিষ্যতের স্বর্গ বা নরকের সন্ধান করো না। যখনই তুমি কোনো প্রত্যাশা, হিসেবনিকেশ, দরদস্তুর ছাড়া কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে- অবশ্যই স্বর্গসুখ অনুভব করবে। যখনই তুমি সংঘাতে লিপ্ত হবে, ঘৃণা করবে- তুমি নরক অনুভব করবে।’ তার আরেকটি বাণী হচ্ছে- ‘আমাদের প্রত্যেকের নাম, চেহারা, চরিত্র ভিন্ন। স্রষ্টা যদি সবাইকে এক রকম চাইতেন, তবে তিনি তা-ই করতেন।’ তার মানবপ্রেম ও বহুত্ববাদী সমাজের বোধ বিকশিত হয়েছে রুমির রচনায় এবং পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের বহু সুফি সাধকের রচনায়।

বাংলাদেশের লালন ফকির (১৭৭২-১৮৯০ খ্রি.) দেড় শ বছর আগে লিখেছিলেন, ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/ লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।’ কিংবা ‘সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন/ লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান।’

লালনের শিষ্য ফকির দুদ্দু শাহ (১৮৪১-১৯১১ খ্রি.) আরও স্পষ্ট করে লিখেছেন, ‘আগে মানুষ পরে ধর্ম জাতির নির্ণয়/ ধর্ম জাতি আগে হলে, শিশু বালক কে না জানতে পায়।/ দর্শন শ্রবণ পারিপার্শ্বিক অবস্থার গুণে/ শেখে শিশু হিন্দু, যবন আর খ্রিষ্টানে বিচার আচার/ হিংসা ঘৃণা উদয় হয় মনে, জাতি জন্মগত নয়॥’ সৃষ্টির ভেতর স্রষ্টাকে অনুসন্ধানের সুফিবাদের কথা দুদ্দু শাহ সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন- ‘যে খোঁজে মানুষে খোদা সেই তো বাউল/ বস্তুতে ঈশ্বর খুঁজে, পায় তার উল॥/ পূর্ব পুনর্জন্ম না মানে চক্ষু না দেয় অনুমানে/ মানুষ ভজে বর্তমানে, হয়রে কবুল।’১

দুদ্দু শাহর গুরু লালনও লিখেছেন, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।/ মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই সব হারাবি।’ কিংবা ‘সহজ মানুষ ভজে দেখ না রে মন দিব্যজ্ঞানে/ পাবি রে অমূল্য নিধি বর্তমানে।’

বাংলার লালন ও দুদ্দুর ছয় শ বছর আগে পারস্যের জালালউদ্দিন রুমি লিখেছেন, ‘হে মুসলিম, আমি কী করব? আমি তো নিজেকে জানি না/ আমি খ্রিষ্টান নই, ইহুদি নই, অগ্নি-উপাসক নই, মুসলমানও নই।/ আমি পুবেরও নই, পশ্চিমেরও নই, জলের নই, স্থলের নই/... আমি ভারতের নই, চীনের নই, বুলগারের নই সাকসিনেরও নই/ আমি এই পৃথিবীর নই, পৃথিবীর বাইরেরও নই/ স্বর্গের নই, নরকেরও নই/ স্থানহীনতা আমার স্থান, চিহ্নহীনতা আমার চিহ্ন/ আমার শরীর নেই, আত্মা নেই, আমি সকল আত্মার আত্মা/... আমি একজনকে চাই, একজনকে জানি, একজনকে দেখি, একজনকে ডাকি/ সে প্রথম, সে-ই শেষ, সে বাইরের, সে ভিতরের/ তাকে ছাড়া আমি আর কাউকে জানি না।’

রুমির বহুল প্রচারিত আরেকটি কালাম হচ্ছে- ‘সব ধর্মেই ভালোবাসার কথা আছে/ ভালোবাসার কোনো ধর্ম নেই/ আমার কোনো ধর্ম নেই/ ভালোবাসাই আমার ধর্ম/ প্রতিটি হৃদয় আমার উপাসনাস্থল।’ রুমি লিখেছেন- ‘আমি স্রষ্টাকে খুঁজেছি খ্রিষ্টানদের ক্রস-এ, তিনি সেখানে ছিলেন না।/ আমি মক্কায় মুসলমানদের কাবায় গিয়েছি, তিনি সেখানেও ছিলেন না/ আমি ইহুদিদের সিনেগগ-এ গিয়েছি, হিন্দুদের প্রতিমার মন্দিরে গিয়েছি/ কিন্তু কোথাও আমি স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি/ আমি প্রশ্ন করেছি জ্ঞানী ও দার্শনিকদের, কিন্তু স্রষ্টা ছিলেন তাদের উপলব্ধির অতীত/ এরপর আমার হৃদয়ের গভীরে তাকে খুঁজেছি, তিনি সেখানেই বিরাজ করেন।’

একই কথা লালন বলেছেন, ‘আদি মক্কা এই মানব দেহে/ দেখ না রে মন ভেয়ে।/ দেশ দেশান্তর দৌড়ে এবার মরছ কেন হাঁফায়ে।’ কিংবা ‘ধড়ে কোথায় মক্কা মদিনে/ চেয়ে দেখ নয়নে॥ ধড়ের খবর না জানিলে ঘোর যাবে না কোনো দিনে।’২

নিজেকে জানার ভেতর স্রষ্টাকে জানা এবং তার নৈকট্যলাভের সাধনা করেছেন সুফিরা। রুমির প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার সকল সুফির ভেতর লক্ষ করেছি। বাংলাদেশের মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তার ভাষণে রুমির একটি বহুল প্রচারিত উক্তি উদ্ধৃত করতেন- ‘হাজার কাবার চেয়ে একটি হৃদয় বড় জেনো।’ পাঞ্জাবের সুফি সাধক বুল্লে শাহ (১৬৮০-১৭৫৭ খ্রি.) আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মসজিদ ধ্বংস কর, মন্দির ধ্বংস কর, ধ্বংস কর সব কিছু যা তোমার ইচ্ছা, কিন্তু কখনও মানুষের হৃদয়ে আঘাত করো না, কারণ স্রষ্টা সেখানে বিরাজ করেন।’

বুল্লে শাহও রুমি আর লালনের মতো বলেছেন, ‘বুল্লা আমি জানি না আমি কে/ আমি মসজিদের মুসল্লি নই, হিন্দুদের আচারনিষ্ঠায়ও আমি নেই/ আমি অশুদ্ধের ভেতরের শুদ্ধও নই।/... আমি আরবের নই, লাহোরের নই, ভারতের নাগোর শহরেরও নই,/ হিন্দুও নই, পেশোয়ারের তুর্কিও নই,/ আমি ধর্মের ভেতর পার্থক্য করিনি, আমি আদম হাওয়াকেও সৃষ্টি করিনি, আমি আমার নামকরণও করিনি/... আমি মুসা নই, আমি ফেরাউনও নই, আমি অগ্নি অথবা বায়ু নই/ আমি নিষ্পাপদের নগরের বাসিন্দাও নই, বুল্লে শাহ, কে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে?’

জালালউদ্দিন রুমির প্রভাব শুধু দক্ষিণ এশিয়ার সুফিদের ওপর পড়েনি, হিন্দু ভক্তিবাদের অনুসারীরাও রুমির আত্ম-অনুসন্ধানের মানবিক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, যে দর্শনের মূল প্রোথিত রয়েছে ভারতীয় উপনিষদে। ভক্তিবাদের সবচেয়ে খ্যাতিমান সাধক কবীরের (আনুমানিক ১৪৪০-১৫১৮ খ্রি.) একটি বিখ্যাত দোঁহা হচ্ছে- ‘মোকে কাঁহা ঢুন্ডেরে বান্দে।’ বাংলা অনুবাদ হচ্ছে- ‘আমাকে কোথায় খুঁজছো? আমি তো তোমারই ভেতর/ আমি কোনো তীর্থে নেই, কোনো প্রতিমায়ও নেই/ কোনো নির্জনতায় নেই, কোনো মন্দিরে নেই, মসজিদেও নেই, কাবা কিংবা কৈলাশেও নেই/ হে মানব আমি তোমারই ভেতর বিরাজ করি।’

ভক্তিযুগের বাঙালি কবি চন্ডীদাস (১৩৩৯-১৩৯৯ খ্রি.) মানবতার যে জয়গান গেয়েছেন সেটি বাংলা সাহিত্যে প্রবাদে পরিণত হয়েছে। মূল পদে চন্ডীদাস লিখেছেন, ‘স্বরূপ বিহনে রূপের জনম কখন নাহিক হয়/ অনুগত বিনে কার্যসিদ্ধি কেমনে সাধকে কয়॥/ কে বা অনুগত কাহার সহিত জানিবে কেমনে শুনে/ মনে অনুগত মঞ্জুরি সহিত ভাবিয়া দেখহ মনে॥/ দুই চারি করি আটটি আখরে তিনের জনম তায়/ এগার আখরে মূল বস্তু জানিলে একটি আখর হয়॥/ চন্ডীদাস কহে শুনহ মানুষ ভাই/ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই॥’৩

ভক্তি ও সুফি সাধকরা কখনও ধর্ম, বর্ণ, জাতি গোত্রের নামে মানুষকে বিভক্ত করেননি। লালন স্বপ্ন দেখেছেন- ‘এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে/ যেদিন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান/ জাতি গোত্র নাহি রবে।’

রুমি ইসলামের ভেতর মানবতা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তার মানবতাবোধ আচারধর্মের বাইরে নয়। অপরদিকে লালনের মানবতাবোধ অনেক সময় আচারধর্মকে অতিক্রম করেছে। ‘জাত’ বলতে লালন আচারধর্ম বুঝিয়েছেন। মানবতার বোধ ধর্মে আছে, ধর্মের বাইরেও আছে- যুগে যুগে এটি সুফি সাধকরা প্রচার করেছেন।

দুই.

সুফিদের শান্তি, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার বিপরীতে অবস্থান করছে ওহাবি-সালাফি-মওদুদীবাদীদের কট্টর জিহাদি ইসলাম, যারা ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার জন্য হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধকে ইসলামের নামে জায়েজ করতে চায় জিহাদের কথা বলে। ওহাবিদের আক্রমণের লক্ষ্য ভিন্নধর্ম-ভিন্নমত-ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসী মানুষ। মানুষ স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি, এটা তারা বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে তাদের মতানুসারীরাই খাঁটি মুসলমান, বাকিরা নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের- অতএব হত্যার যোগ্য। ইমাম ইবনে তায়মিয়া থেকে আবুল আলা মওদুদী এবং অতি সাম্প্রতিক আবু বকর আল বোগদাদী এই ফতোয়াই দিয়েছেন।

শান্তির ধর্ম ইসলামকে এভাবে তারা সন্ত্রাসের সমার্থক বানাতে চেয়েছে, যা পশ্চিমে ইসলাম বিদ্বেষের পাশাপাশি অন্য ধর্মে উগ্রতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। যুদ্ধ-সন্ত্রাস-ঘৃণা-বৈষম্য লাঞ্ছিত বর্তমান মুসলিম বিশ্বে সুফি বাউলদের মানবিকতার আমন্ত্রণ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।

ওহাবি-সালাফিরা সুফিদের শান্তি ও সম্প্রীতির ইসলাম পছন্দ করে না। কট্টর জিহাদপন্থিরা যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই সুফিদের ওপর হামলা করেছে, তাদের আবাস ও মাজার ধ্বংস করেছে। ওহাবি-সালাফি এবং তাদের পূর্ব ও উত্তরসূরিরা সংগীত, নৃত্য ও চারুকলাসহ যা কিছু মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটায় সব হারাম ঘোষণা করেছে। তাদের রাজনৈতিক ইসলাম ও ধ্বংসাত্মক জিহাদের কারণে মানব সভ্যতার বহু স্মারক ধ্বংস হয়েছে। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি- খিলাফত প্রতিষ্ঠার নামে ‘আইএস’-এর ওহাবিবাদী জঙ্গিরা কীভাবে ইরাক ও সিরিয়ায় মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শনসমূহ ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তানে রাজনৈতিক ইসলামের ধ্বজাধারী সামরিক বাহিনী এবং তাদের রাজনৈতিক দোসর ওহাবিবাদী জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে ইসলামের দোহাই দিয়ে ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের এই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মসজিদে ইবাদতরত মুসলমানরাও রেহাই পায়নি।

ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটানোর জন্য স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মূল সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নাই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।’

বঙ্গবন্ধু ধর্মের বিরুদ্ধে ছিলেন না। তিনি ধর্মের নামে হত্যা, নির্যাতন, সন্ত্রাস বন্ধ করার পাশাপাশি ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য ধর্মকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র থেকে পৃথক রাখতে চেয়েছিলেন। সুফি ইসলামের সার কথাও তাই।

স্বাধীনতাবিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী, সন্ত্রাসী ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাবার জন্য নৃশংসভাবে হত্যা করছিল বঙ্গবন্ধু এবং তার প্রধান সহযোগীদের, যাদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে; যারা প্রণয়ন করেছিলেন ১৯৭২-এর অনন্যসাধারণ সংবিধান। ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলো বঙ্গবন্ধুর সরকার সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইসলামের নামে গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীদের আবার পাকিস্তানের মতো ধর্মের নামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ বপন করেছেন, যার বিষাক্ত ফল এখনও আমরা ভোগ করছি।

ধর্মের নামে রাজনীতি করার ভয়ংকর পরিণাম হচ্ছে পাকিস্তান। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর রাজনৈতিক জিহাদি ইসলাম পাকিস্তানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ধর্মের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে পাকিস্তান যে তালেবান ও আল-কায়েদাদের মদদ দিয়েছে তারাই আজ পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চাইছে।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সেওয়ান শরীফে সুফিসাধক শাহবায কলন্দরের মাজারে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে শতাধিক ধর্মপ্রাণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশ ছিল নারী ও শিশু।

২০০৪ সালে জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের পোষা জঙ্গিরা সিলেটে হজরত শাহজালাল(রহ.)-এর মাজারে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছিল, যে সুফিসাধক বাংলাদেশে এসেছিলেন রুমির শান্তি ও সহমর্মিতার ইসলাম প্রচার করার জন্য। এই হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা জেয়ারতে আসা ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। হামলায় দুজন ভক্ত নিহত হয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তাদের অনুসারীরাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে আত্মঘাতী হত্যা চালিয়ে ২১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশ ছিলেন বিদেশি।

হালে হেফাজতে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জামায়াতীরা ইসলামের নামে সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। ওয়াজের নামে হেফাজতের নেতারা ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে গোটা সমাজকে মধ্যযুগীয় তামসিকতায় নিক্ষেপ করতে চাইছে। ‘হরকাতুল জিহাদ’ থেকে আরম্ভ করে হালের ‘আনসারউল্লাহ বাংলা টিম’সহ তাবৎ জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসের ধর্মপিতা হচ্ছে ওহাবি-সালাফিবাদের অনুসারী জামায়াতে ইসলামী- যারা ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম, ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসীদের ইসলামের নামে হত্যা করা ইমানি কর্তব্য মনে করে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতার শরিক ছিল জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বদান্যতায় জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালের দুই প্রধান গণহত্যাকারী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। যে বাংলাদেশকে তারা জন্মকালে আঁতুড়ঘরে হত্যা করতে চেয়েছিল, যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে ৩০ লাখ স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে হত্যা করেছিল, ক্ষমতায় এসে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ সন্ত্রাসী মৌলবাদী রাষ্ট্র বানাবার উদ্যোগ নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পাশাপাশি মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী এবং সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশকে জেনারেল জিয়াউল হকের পাকিস্তান ও মোল্লা উমরের আফগানিস্তানের জঙ্গি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল।

২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৩টি জাতীয় নির্বাচনে এ দেশের জনগণ জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-যুদ্ধাপরাধী অধ্যুষিত জোটকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ ক্ষমতায় থাকাকালে তারা বাংলাদেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য জামায়াত-বিএনপি জোট সাধারণ মানুষকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

কখনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে, কখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্য, কখনও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে তারা নিরীহ মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার বাড়িঘর, ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, ভিন্ন ধর্মের পুরোহিত, যাজক, ভিক্ষুদের হত্যা করেছে। ভিন্নমতের লেখক, প্রকাশক এমনকি বিদেশি নাগরিকদেরও হত্যা করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস নয়, শান্তি চায়, ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চায়- যেখানে ধর্মের নামে হানাহানি থাকবে না, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতিসত্তা নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাস করবে, যে দেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের মতো রুমির দেশ তুরস্কের সাধারণ মানুষও ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, ধ্বংস পছন্দ করে না। তুরস্কের মানবতাবাদী সুফিসাধক হজরত জালালউদ্দিন রুমির ওপর ২০১৮ সালে ‘মিথাতের স্বপ্ন’ এবং ২০২০ সালের ‘হাকানের শান্তিযাত্রা’ নামে যে দুটি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছি, সেখানে শান্তি ও মানবতার কথাই বলা হয়েছে। সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে অশান্ত সংঘাতময় মুসলিম বিশ্বে সুফিসাধকদের সর্বজনীন মানবতার দর্শন আরও প্রাসঙ্গিক হচ্ছে।

এ কথা অস্বীকার করা যাবে না- মুসলিম বিশ্বের তরুণদের একটি অংশের চেতনায় ওহাবি, সালাফি মৌলবাদ আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা- একদিন এই বিভ্রান্ত তরুণরা ইসলামের সন্ত্রাস ও উন্মাদনা থেকে মুক্ত হবে। কোনিয়ার তরুণ দরবেশ মিথাতের মতো তারা ইসলামের ভেতর সম্প্রীতি ও সর্বজনীন মানবপ্রেম অনুসন্ধান করে নিজ নিজ দেশে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।

তথ্যসূত্র: ১. দুদ্দু শাহ’র পদ নেয়া হয়েছে শক্তিনাথ ঝা সম্পাদিত ‘দুদ্দু সা’র পদাবলি থেকে। প্রকাশক: সহজপাঠ, হাওড়া, জানুয়ারি ২০১২

২. লালনের গান নেয়া হয়েছে ফকির আনোয়ার হোসেন (মন্টু শাহ) সম্পাদিত ‘লালন সংগীত’ থেকে। প্রকাশক: লালন মাজার শরিফ ও সেবা সদন কমিটি, কুষ্টিয়া, জুন ২০০৬

৩. চন্ডীদাসের মূল রচনা মুর্শিদাবাদের বাউল গবেষক অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝা’র সৌজন্যে প্রাপ্ত

লেখক: সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রামাণচিত্র নির্মাতা

এ বিভাগের আরো খবর