বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভিন্ন চোখে নিউইয়র্কে কালো মানুষের অধিকার

  • শামীমা জামান   
  • ১৭ জুলাই, ২০২১ ১৪:৪৬

আমরা সবাই মুক্তির গান গাইতে গাইতে সে আন্দোলনে শরিক হয়েছি, একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তার কিছু মাশুল হয়তো নিউইয়র্কবাসী এখন গুনছে। এ ঘটনার পরে পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করে আইন পাস হয়েছে। পুলিশের চোখের সামনে এখন অপরাধ হয়। পুলিশ নীরবে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। আপনি বিপদে পড়ে পুলিশের সাহায্য চাইবেন পুলিশ আগে জানতে চাইবে অপরাধকারী কৃষ্ণাঙ্গ কি না। অবস্থা প্রায় এমনই।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেয়াপোলিসের রাস্তায় গত বছরের মে মাসে জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন হাঁটু গেড়ে বসে থাকার ৯ মিনিটের একটি ভিডিও যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে। সে সময় ফ্লয়েড বলছিলেন তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। নিষ্ঠুর শভিন তাতে ভ্রূক্ষেপ না করে দানবের মতো চেপে বসে থাকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান ফ্লয়েড। নির্মম এই ভিডিও ক্লিপ নিতে পারেনি মানুষ। পুলিশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের জমে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ ক্ষোভ (গত কয়েক বছরে মার্কিন পুলিশের হাতে ৭,৬৬৬ কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু) ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সারাবিশ্বে । পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ব তখন। শুরু হয় ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন। এক্টিভিস্ট ননএক্টিভিস্ট নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। ভুলে যায় কোভিড নাইনটিনের পিক সময়কে। যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তাজুড়ে আন্দোলনকারীরা বন্দির বাঁধা হাতে গড়াগড়ি খেয়ে প্রতিবাদ করেন।

ফ্লয়েডের শেষ হৃদয়বিদারক বাক্য ‘আই কান্ট ব্রিদ’ হয়ে যায় আন্দোলনের স্লোগান। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সব মানুষ একাত্মা হয়ে এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিচার তথা কালো মানুষের শত বছরের অধিকার চেয়েছিল। শিক্ষিত সাদারাও এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে ঐতিহাসিক রায় আসে খুনি ডেরেকের বিরুদ্ধে। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন ফ্লয়েড হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়। শভিনকে তিনটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার, থার্ড ডিগ্রি মার্ডার, এবং নরহত্যা। গত মাসের শেষ সপ্তাহে এক ঐতিহাসিক রায়ে আদালত ডেরেক শভিনকে ২২ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ চলে আসছিল। পুলিশ ডিপার্টমেন্টও ছিল শুরু থেকেই বর্ণবাদী আচরণে দুষ্ট। নাগরিক অধিকার আইন ১৯৬৪ পাশের মাধ্যমে চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্ণবাদী আচরণ কিছুটা দূর হলেও কৃষ্ণাঙ্গরা অন্যান্য ক্ষেত্রে ছিল চরম অবহেলিত। আফ্রিকান- আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ বনাম শ্বেতাঙ্গ পুলিশীয় বৈরিতা পাকাপোক্ত হয় গ্রেট মাইগ্রেশনের কালে।

সেই সময় আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়গুলোতে দক্ষিণের গ্রামাঞ্চলগুলো হতে উত্তরের শহরাঞ্চলে পাড়ি জমায়। বিশালসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গদের উত্তরের অঙ্গরাজ্যগুলোতে আগমন শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটি তথা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ভালো চোখে নেয়নি। তারা এই ধারণা পোষণ করত যে, এরা অপরাধপ্রবণ, মারমুখী, নিয়ম ভঙ্গকারী (আজকের প্রেক্ষাপটে যদিও তা ১০০ পার্সেন্ট সত্য) যার পরিপ্রেক্ষিতে ওদের প্রতি পুলিশি নজরদারি বাড়ানোসহ সাধারণ চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতো। পুলিশদের মননই তৈরি হয়ে যায় ওদের প্রতি প্রতিপক্ষমূলক আচরণের ।

কিন্তু ৯০ পরবর্তী দৃশ্যপট বলে ভিন্নচিত্রের কথা। পথে চলতে ফিরতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষগুলোর ড্যামকেয়ার অনেকটা মারমুখী অভিব্যক্তি এবং আচরণ খুব কমন বিষয়। আমাদের মতো দুর্বল এশিয়ানদের জন্য তা অনেকটা ভীতিকর বটে। সহসা কেউ ওদের ঘাঁটায় না। পূর্বপুরুষদের সঙ্গে হওয়া বর্ণবৈষম্যের নির্মম যাঁতাকলে ওরা এতটাই কাদা পুড়ে ইট হয়েছে যে, ওদের আচরণ এখন ‘সরে যা সামনে থেকে নয়তো খেয়ে ফেলবো’। হবেইবা না কেন, শিশু বয়স থেকেই মার নয়তো মর শিক্ষায় বড় হয় ওরা। পূর্ব পুরুষদের বৈষম্যের শিকার হওয়া ইনফিরিওরিটিকে ওরা আজ চরম সুপিরিওরিটিতে নিয়ে গেছে । যেখানে ওরাই রাজা বাকিরা কেউ না।

কঠিন নিয়ম-কানুনের এই দেশে একমাত্র ওরাই আছে নিয়ম ভঙ্গ করার ওস্তাদ। বাসে চড়বে, ট্রেনে চড়বে ডলার খরচ না করেই। এমনকি ওদের প্রধান খাদ্য মারিজুয়ানা জোগাড় করতে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে পথিকের গলায় অস্ত্র উঁচিয়ে ডলার হাতিয়ে নেয়া খুব কমন বিষয়। বহুদিন পর জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ একটা নান্দনিক এক্টিভিজম হয়েছে বটে। আমরা সবাই মুক্তির গান গাইতে গাইতে সে আন্দোলনে শরিক হয়েছি, একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তার কিছু মাশুল হয়তো নিউইয়র্কবাসী এখন গুনছে। এ ঘটনার পরে পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করে আইন পাস হয়েছে। পুলিশের চোখের সামনে এখন অপরাধ হয়। পুলিশ নীরবে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। আপনি বিপদে পড়ে পুলিশের সাহায্য চাইবেন পুলিশ আগে জানতে চাইবে অপরাধকারী কৃষ্ণাঙ্গ কি না। অবস্থা প্রায় এমনই।

সারাবিশ্বের মধ্যে এনওয়াইপিডির দক্ষতার সুনাম ছিল এই কদিন আগেও। আজ তারা বিষদাঁত ফেলা সাপ। আপনাকে সাহায্য করে তারা মরতে চায় না। ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার পরবর্তী নিউইয়র্কের আইন শৃঙ্খলার অবনতি চরম পর্যায়ে এসেছে। চোখের সামনে যখন দেখেছি ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলনে কালোরা বড় বড় নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুম লুট করে চলেছে গনিমতের মালের মতো তখনই মনে হয়েছে এ শহর আর আগের নিরাপত্তায় থাকবে না। কালোরা এখন সর্বেসর্বা। দুই কথায় যারা গলা ধাক্কা না দিয়ে একটা গুলি খরচ করে ফেলে তাদের হাতে শহর চলে গেছে পাকাপোক্তভাবে। সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছে এশিয়ান আমেরিকানরা। পর পর ঘটে চলেছে বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা। যার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত ভাইয়েরা। এই নিউইয়র্ক মানুষ আগে দেখেনি। সহিংসতার চাদরে ঢাকা পড়েছে এক সময়কার নিরাপদ এ শহরটি।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর