বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সঙ্গে ‘প্রতারক’দের বিচার হবে তো

  • লীনা পারভীন   
  • ১১ জুলাই, ২০২১ ১৪:৩৬

আমি জানি না সেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবরা কি জবাবদিহির আওতায় আসবেন?। কোনো বিচার হবে কি না এই গাদ্দারির? আমি এটাকে গাদ্দারি বলব কারণ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেছিলেন তাদেরকে। ব্যক্তিগত স্বপ্নটিকে তুলে দিয়েছিলেন তার একান্ত নির্ভরশীল পদাধিকারের লোকেদের। অথচ বিনিময়ে তারা কী উপহার দিলেন? প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসলে তারা এতটা উদাসীন হতে পারতেন না।

এ দেশটির ইতিহাসের সঙ্গে প্রতারণা-দুঃখ, কষ্ট-গাদ্দারির ইতিহাস জড়িত। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক প্রতারকের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা হয় এই দেশের নাম ও পরিচয়কে। কে ছিনিয়ে আনতে উদ্দীপনা দিয়েছিলেন? স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন কে? কে জাগিয়েছিল সুপ্ত এই জাতিকে? সেই স্বপ্নদ্রষ্টা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও খুন করেছিল একদল প্রতারক।

সেই প্রতারক-গাদ্দারদের প্রতিনিধিরা আজও লুকিয়ে আছে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সুযোগ পেলেই তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ছোবল মেরে প্রতিশোধ নিতে চায় তাদের হেরে যাওয়া স্বপ্নের। বহু চরাইউতরাই পেরিয়ে আজ বাংলাদেশ আবারও ফিরেছে তার কাঙ্ক্ষিত পথে।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না, সবার থাকবে একটি নিরাপদ মাথাগোঁজার আশ্রয়– এই শপথকে সামনে রেখে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একমাত্র সফল প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামে সেই প্রকল্পের অধীনে ঘোষণা করা হয় “বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না”।

প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাকে সামনে রেখেই ঘোষণা করা হয় একটি নীতিমালাও। মূলত বঙ্গবন্ধুর সময়ে শুরু হওয়া এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ধারাবাহিকতা বলা যায় প্রকল্পটিকে। আর এই প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

নীতিমালাতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, এই তালিকা কারা করবে এবং কাদের তত্ত্বাবধানে চলবে এই প্রকল্পের কাজ। জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী শুরু হয় এই প্রকল্পের গৃহনির্মাণের কাজ। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস থেকে স্থানীয়ভাবে সামগ্রিক কর্মপরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে তার সাফল্য বা পরিচালনা প্রক্রিয়াকে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তি অবহিত আছে যে, এটি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সফলতার একটি প্রকল্প এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোটা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার এক অদম্য গতির গল্প। এই প্রকল্পের সফলতা নিয়ে আসতে পারে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় একটি অধ্যায়। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের যে স্বপ্নের বীজকে ধীরে ধীরে সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই প্রকল্প যুক্ত করবে একটি বড় ফলক।

সফলভাবে প্রথম দফায় মোট ৬৬ হাজার গৃহ হস্তান্তরও করা হয় যেটির উদ্ভোধন করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। একটি অনন্য মাইলফলক জন্ম নিয়েছিলো সেই সময়ে। গৃহহারা পরিবারগুলো খুঁজে পেয়েছিল একটি আশ্রয় যেটি তাদের আজন্ম স্বপ্ন ছিল। প্রাণভরে দোয়া করেছিলেন সেসব দরিদ্র পরিবারগুলোর মানুষ।

হায়! এ কী হলো? কয়েকমাসেই স্বপ্নের ঘরগুলো ভেঙে পড়তে লাগলো এক এক করে। এ তো ঘর ভাঙা নয়, এ যেন বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ। প্রধানমন্ত্রীর এতদিনের লালিত স্বপ্নের এ কী করুণ পরিণতি এনে দিলেন আমাদের কর্তাব্যক্তিরা? একের পর এক রিপোর্ট আসছে দেয়াল ভেঙে পড়ছে, কোথাওবা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আবার কোথাওবা ঘরের মাঝ বরাবর ফাটল দেখা দিয়েছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সাক্ষাৎ মৃত্যুর গুহা হয়ে গেলো আশ্রয় প্রকল্পটি। প্রশংসার বদলে শুরু হলো সমালোচনা। হবেইনাবা কেন? এ কোন গৃহের স্বপ্ন দেখালেন তারা?

নামকাওয়াস্তে কিছু দেয়াল দাঁড় করিয়ে বলা হলো সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকার প্রকল্পের গৃহনির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট সিমেন্ট ও অন্য নির্মাণসামগ্রী। কোথাওবা স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে এমন জায়গাকে যেটিতে কোনোদিনই ঘরবাড়ি নির্মাণের উপযোগী বলা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে চলা আশ্রয় প্রকল্পের যদি এই পরিণতি হয়, বাদ বাকি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর আলোচনার সুযোগ আছে কি?

আমি জানি না সেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবরা কি জবাবদিহির আওতায় আসবেন?। কোনো বিচার হবে কি না এই গাদ্দারির? আমি এটাকে গাদ্দারি বলব কারণ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেছিলেন তাদেরকে। ব্যক্তিগত স্বপ্নটিকে তুলে দিয়েছিলেন তার একান্ত নির্ভরশীল পদাধিকারের লোকেদের। অথচ বিনিময়ে তারা কী উপহার দিলেন? প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসলে তারা এতটা উদাসীন হতে পারতেন না। বাংলাদেশকে যারা ভালোবাসে, বাংলাদেশ নিয়ে যারা স্বপ্ন দেখে বা জাতির পিতার স্বপ্নকে যারা বুকে লালন করে তারা এমন প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন না। আমি একে প্রতারণাই বলব কারণ সামান্য অবহেলাও এখানে দুর্নীতি।

এই প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো মানুষের গৃহ পাবার স্বপ্ন। যারা দোয়া করেছিলেন তাদের সঙ্গে এমন প্রতারণাকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। এসব গাদ্দারদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি তাড়ানো কেবল কেতাবি স্লোগানই হয়ে থাকবে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসে থাকা সেসব দুর্নীতিবাজদের যদি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার রাস্তাটি। কারণ এরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এরাই সেসব প্রতারকদের বংশধর যারা ’৭১ ও ’৭৫ সালে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের পরিচয়ের ইতিহাসকে।

লেখক: প্রবন্ধকার।

এ বিভাগের আরো খবর