বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষা-ঐতিহ্যচর্চা আমাদের উজ্জীবিত করবে

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২১ ১০:৩০

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বাস্তবতার আলোকেই বলেছেন, সবাইকে টিকার আওতায় আনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এর অর্থ এ বছর খোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই ঘরে বসেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট থাকা ছাড়া উপায় কি! এ সময় বাংলাদেশের শিক্ষার উজ্জ্বল ঐতিহ্য যদি চর্চায় থাকে তাহলে মানসিকভাবে অনেকটা উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

সবকিছুর পরও দুর্যোগকে তো অস্বীকার করা যাবে না। প্রায় দেড় বছরের নিশ্চল শিক্ষাঙ্গন হতাশ করে তুলছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বাস্তবতার আলোকেই বলেছেন, সবাইকে টিকার আওতায় আনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এর অর্থ এ বছর খোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই ঘরে বসেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট থাকা ছাড়া উপায় কি! এ সময় বাংলাদেশের শিক্ষার উজ্জ্বল ঐতিহ্য যদি চর্চায় থাকে তাহলে মানসিকভাবে অনেকটা উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই আজকের লেখাটির অবতারণা।

পাশ্চাত্য দেশগুলোর একটি অহংকার রয়েছে। ওসব দেশের মানুষ বলতে চায় ইউরোপে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভব হয়েছিল। প্রাচীন ধ্রুপদী সভ্যতার পতন ঘটেছিল পাঁচ শতকের শেষ পর্বে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে।

এরপর মধ্যযুগের সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। গ্রামকেন্দ্রিক এই সভ্যতা সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিল। ইউরোপের ছোট ছোট অঞ্চল নিয়ে এক একটি সামন্ত রাজ্যের জন্ম হয়। তখনও শিক্ষার কোনো আলো পৌঁছেনি ইউরোপে। এগারো-বারো শতকের দিকে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালিতে। তেরো শতকে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্বাবিদ্যালয়।

তথ্যসূত্রের অভাবে বাংলার ইতিহাসচর্চা তেমন এগোয়নি। বলা যায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার কোনো সমকালীন ইতিহাস গ্রন্থ পাওয়া যায়নি। ফলে নিজেদের অনেক গৌরব ও অহংকারের সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে পারিনি, বিশ্ববাসীর কাছেও এই গৌরবগাথা প্রচার করতে পারিনি। আট শতকের শেষ দিক থেকেই বাংলায় পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আট থেকে দশ শতকের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এই সূত্রে বলা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধারা সূচিত হয়েছে এরও অনেক আগে।

বৌদ্ধবিহারগুলো ছিল ওই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো ছিল প্রধানত আবাসিক শিক্ষায়তন। বিহারে বৌদ্ধভিক্ষুরা বসবাস করতেন এবং বিদ্যালয় হিসেবে বিহারকে ব্যবহার করা হতো। সাত শতকের পূর্ব থেকেই বাংলাদেশে যে বিহার স্থাপিত হয়েছিল এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। চৈনিক বিবরণে এসব বিহারের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। কালের আঘাত সহ্য করতে না পেরে এসব স্থাপত্য এখন আর টিকে নেই।

পাহাড়পুরের বিখ্যাত সোমপুর মহাবিহার নির্মিত হওয়ার অনেক আগে এই অঞ্চলে একটি জৈনবিহার ছিল বলে সমকালীন সূত্রে জানা যায়। আট শতকে বিখ্যাত পাল রাজা ধর্মপাল একই স্থানে সোমপুর মহাবিহারটি নির্মাণ করেন। সাধারণ্যে এটি পাহাড়পুর বিহার নামে পরিচিত।

পাহাড়পুর বিহার ছাড়াও কুমিল্লা জেলার ময়নামতিতে নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভেতর বেশ কয়েকটি বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ইটাখোলামুড়া বিহার, ভোজ বিহার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। উত্তর বাংলায় হলুদ বিহার, সীতাকোট বিহার প্রভৃতি নিদর্শনের চিহ্নও পাওয়া গেছে। মালদহ জেলার জগদ্দল নামক স্থানে এককালে স্থাপিত হয়েছিল জগদ্দল মহাবিহার। অক্ষত অবস্থায় পাওয়া না গেলেও এ সব বিহারের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাচীনকালে বিহার স্থাপত্যের উজ্জ্বল ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য দুটো ভিন্ন ধারায় বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। প্রথমত, স্থাপত্যের প্রকৃতি থেকে আবিষ্কার করা সম্ভব সমকালীন বাঙালির জাগতিক জীবনের চিত্র। পাহাড়পুরের সোমপুর মহাবিহার বা ময়নামতি অঞ্চলের বিহারগুলো যেমন বৌদ্ধ শাস্ত্রচর্চার ছবি স্পষ্ট করে আবার মহাস্থানগড়ের প্রত্ননিদর্শন থেকে হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের নানা ছবি প্রতিবিম্বিত হয়। স্থাপত্যের গায়ের অলংকরণ বাঙালির শৈল্পিক মেধাকে স্পষ্ট করে। দ্বিতীয়ত, স্থাপত্যের গায়ে সাঁটা পোড়ামাটির ফলকগুলো উপস্থাপন করছে সমকালীন বাঙালির জীবনের নানা খণ্ডচিত্র।

পোড়ামাটির ফলকে বিমূর্ত শিল্প সৃষ্টির প্রতি তেমন মনোযোগ ছিল না। তার বদলে বাঙালির সব সাধারণ জীবনছবিই প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালির লোকজ জীবনের নানা খণ্ডচিত্র পোড়ামাটির ফলকগুলোতে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে। সমকালীন লিপিমালা ও মুদ্রাপাঠ ও বিশ্লেষণ করে প্রাচীন বাংলার জনজীবনের কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এসব বিহারে বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতিও অধ্যয়ন করা হতো। বিখ্যাত পণ্ডিত শান্তি রক্ষিত, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর প্রমুখ শিক্ষার ধারাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিলেন।

এগারো শতকের মাঝামাঝি পাল শাসনের অবসান ঘটে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের ব্রাহ্মণ সেন শাসকদের হাতে। এর আগে সেনরা পাল রাজাদের সৈন্য বাহিনীতে চাকরি করত। পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা বাংলার সিংহাসন কেড়ে নেয়।

দখলদার শক্তি হিসেবে সেনরা শুরু থেকেই সন্ত্রস্ত ছিল। নিজেদের অন্যায় ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে বিদ্রোহের আশঙ্কা করেছিল। একারণেই সেন রাজারা কড়াকড়িভাবে বর্ণপ্রথা আরোপ করেন। শূদ্র বর্ণের আড়ালে সাধারণ বাঙালিকে সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখেন। ক্রমে তাদের শিক্ষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হলো। পাঠশালায় সীমিতভাবে পড়ার অধিকার থাকলেও হিন্দুদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান টোল শুধু ব্রাহ্মণদের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেল। এভাবে পাল যুগে শিক্ষার যে বিকাশমান রূপ দেখেছিলাম সেনযুগে তার অবক্ষয় ঘটে।

তেরো শতকের শুরুতে বহিরাগত মুসলমানদের হাতে বাংলার রাজদণ্ড চলে যায়। এ সময় থেকে এই ভূখণ্ডের মধ্যযুগের যাত্রা শুরু হয়। মুসলমান শাসকদের আগমন প্রচলিত জীবন ব্যবস্থায় একটা পরিবর্তনের ছোঁয়া এনেছিল। অবশ্য এগারো শতকের শুরু থেকে মুসলমান সুফি-সাধকদের কর্মভূমিকা এই রূপান্তরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। তেরো শতকের সূচনাকাল থেকে ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খলজি মালিকদের তত্ত্বাবধানে বাংলার মুসলিম সমাজ-বিকাশের ভিত্তি প্রস্তুত হয়েছিল। ফলে পরবর্তী দুই শতক স্থায়ী স্বাধীন সুলতানদের শাসনকাল এদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনে আসে নবজাগরণের জোয়ার।

সেন শাসন যুগের অধিকারবঞ্চিত মানুষ এবার স্বাভাবিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন ফিরে পায়। মধ্যযুগের বাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে গড়ে ওঠা শিক্ষা কাঠামোর বিশেষত্ব রয়েছে। সুলতানি যুগে বাংলার শিক্ষার স্বরূপ উদ্ঘাটনকারী কোনো ব্যাপক গবেষণার তথ্য আমাদের হাতে নেই। এ দেশীয় শিক্ষা কাঠামোর ওপর ১৮৮৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পর সর্বপ্রথম একটি সাধারণ চিত্র আমরা দেখতে পাই। এতে দেখা যায়, বাংলায় হিন্দু ও মুসলমানের দুটো স্বতন্ত্র ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল।

হিন্দুর উচ্চ শিক্ষালয় টোলে ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। তবে তাদের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠশালায় বর্ণ নির্বিশেষে সকলে পড়তে পারত। ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে দুটো ধারায় এদেশের শিক্ষা কাঠামো ছিল। প্রথমটি টোল ও মাদ্রাসা। যেখানে যথাক্রমে সংস্কৃত ও আরবি-ফার্সি ধারায় শিক্ষা পরিচালিত হতো। ধনী অভিজাত শ্রেণির সদস্যরা এই ধারার শিক্ষা গ্রহণের অধিকারী ছিল। দ্বিতীয়টি পাঠশালা ও মক্তবে সাধারণ শিক্ষার ধারা। এই দুই ধারার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তেমন ছিল না। ধারা দুটো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ।

সেন শাসন যুগে সাধারণ হিন্দুর জন্য শিক্ষার দরজা ছিল রুদ্ধ। এবার সুলতানি যুগে তা অবারিত হয়ে যায়। ফলে নিম্নশ্রেণির হিন্দুরাও শিক্ষার সমান সুযোগ লাভ করে। এজন্যই শিক্ষার আলো বঞ্চিত নীচু শ্রেণির হিন্দুসমাজ থেকে প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের আবিষ্কার সম্ভব হয়। বাংলার মুসলমানদের শিক্ষার ধারা ভারতবর্ষের সমকালীন ধারারই অনুষঙ্গী ছিল। এগুলোর ব্যয় নির্বাহে রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতা লক্ষ করা যায়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন বাড়িতেই গড়ে উঠেছিল প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রসমূহ।

সাহিত্য শিল্প প্রভৃতির মধ্য দিয়ে মুসলমান সংস্কৃতির ক্রমোন্নয়ন লক্ষ করা যায়। মুসলিম শক্তি কর্তৃক এদেশ অধিকৃত হওয়ার পর বহিরাগত মুসলমান পণ্ডিতগণ তাদের কর্মভূমিকার মাধ্যমে এদেশে উচ্চতর শিক্ষার পথকে বিকশিত করেন। সমরখন্দ থেকে আগত কাজী রুকনউদ্দিন অমৃতকুণ্ড নামের সংস্কৃত ভাষায় লিখিত যোগশাস্ত্রের গ্রন্থ প্রথমে ফার্সি ও পরে আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন। একটি ফার্সি অভিধান পনেরো শতকে লিখিত হয়েছিল বলে জানা যায়।

ভারতের সর্বত্র প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিম শিক্ষার ধারা প্রায় অভিন্নই ছিল। মুসলমান পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বয়স চার বছর চার মাস চার দিন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়াশুনোয় হাতেখড়ি দিতেন। এই অনুষ্ঠানের নাম ছিল বিসমিল্লাহখানি।

অবস্থাপন্ন মুসলিম পরিবারের সদস্যগণ ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিতেন। শিলালিপিসমূহে শিক্ষা বিস্তারে সুলতান, শাসনকর্তা বা রাজপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকলেও শিক্ষকের ভূমিকায় তথা শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উত্তর ভারত থেকে বাংলা পর্যন্ত এই একই ধারা অব্যাহত থাকে। এদেশে আগত সুফি, পির, ফকির বা দরবেশরা বিভিন্ন দিক থেকে জ্ঞানী ও শিক্ষিত ছিলেন। একই সঙ্গে তারা ছিলেন কবি ও ধর্মতত্ত্ববিদ। তারা তাদের অবস্থান কেন্দ্রে শিক্ষা বিস্তারের পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। ফলে শহরগুলো একাধারে প্রশাসনিক, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়। যেমন বিহার শরীফ, সাতগাঁও, পাণ্ডুয়া, সোনারগাঁও ও সিলেট। এ সবের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বহিরাগত সুফি-সাধকরা।

মোগল যুগেও শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা অব্যাহত থাকে। এ ক্ষেত্রে নানামুখী উৎকর্ষও সাধিত হয়। আবুল ফজলের বর্ণনা থেকে জানা যায় সম্রাট আকবর শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার করেছিলেন। পাঠ্যসূচিতেও এ সময় অনেক পরিবর্তন আসে। বাংলায় দায়িত্ব পালন করতে আসা মোগল সুবাদার থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছেন।

এদের অনেকেই শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলায় মোগল অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উত্তর ভারত থেকে বাংলায় অনেক শিক্ষক ও পণ্ডিত ব্যক্তির আগমন ঘটে। তারা বাংলার জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মোগল কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ যুগে বাংলায় বেশ কয়েকটি কাব্য লিখিত হয়েছে।

বাংলায় মোগল সুবার কেন্দ্র ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধিত হয়েছিল। এ সময় ঢাকা পরিচিত ছিল জাহাঙ্গীরনগর নামে। সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থ সুবহ-ই-সাদিক থেকে জাহাঙ্গীরনগরে যে অনেক বিদ্বান ব্যক্তির বাস ছিল তা জানা যায়। মাদ্রাসার শিক্ষকদের ব্যয়ভার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাহ করা হতো। নবাবী আমলে বাংলার শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ছিল মুর্শিদাবাদ।

মধ্যযুগের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনার জন্য সমকালীন সূত্রের অভাবে এ সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরূপ উন্মোচন খুব সহজ নয়। তথাপি প্রাথমিক কিছু সূত্র অবলম্বনে যেটুকু চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় তাতে মধ্যযুগ বাঙালির জন্য নিয়ে এসেছিল এক সম্ভাবনার পরিবেশ। ফলে শাসকদের উদার দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের জন্যই শিক্ষার সুযোগ উন্মুক্ত হয়। প্রাচীন যুগ থেকে বাংলার যে শিক্ষার ধারা ইতিহাসে উন্মোচিত হয়েছে তাতে ধ্রুপদী সভ্যতার যুগের পর পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে এদেশের উজ্জ্বল অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত।

লেখক: গবেষক-অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এ বিভাগের আরো খবর