বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রামভিত্তিক পর্যটন শিল্প উন্নয়নের নতুন দিগন্ত

  • সেলিম রেজা   
  • ৩ জুলাই, ২০২১ ১৩:২৭

বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল ও সমবায়ের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অতিমারি করোনার কারণে পর্যটন শিল্পের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে চরমভাবে সরকারি প্রণোদনা ছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের টিকে থাকতে কষ্ট হবে। সার্বিক গ্রাম উন্নয়নের কর্মসূচি হিসেবে পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে সম্ভব।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ। নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা গ্রামকে কেন্দ্র করেই শত শত বছরের রূপলাবণ্যের বাংলাদেশ। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত রূপসী বাংলার নান্দনিক মায়া মুগ্ধ ছবি দেখলে মন ভরে যায়। নদীবিধৌত বাংলায় নদী-নালা, খাল-বিলই আমাদের আসল সম্পদ। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার অত্যাবশীয় হয়ে উঠছে। গ্রামের মুরব্বিরা এখনও বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী কৃষিকাজ অব্যাহত রেখেছে।

আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না, তাদের নির্ভুল দিনক্ষণের গণনা দেখে। মুহূর্তের মধ্যে বলে দিতে পারেন বাংলা মাসের নাম ও কত তারিখ, কবে পূর্ণিমা, কবে অমাবস্যা এমনকি কোন মাসের কত তারিখের মধ্যে কোন ফসল বুনতে হবে। আকাশের তারা দেখে, সূর্য দেখে আনুমানিক সময় বলে দিতে পারেন।

ভাবতে অবাক লাগে, বাংলা বাংলা বলে গলা ফাটালেও বাংলা মাসের তারিখ শিক্ষিতদের মধ্যে প্রায় সবারই অজানা থেকে যায়। যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কৃষিখাত অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ তাই কৃষি পর্যটনে প্রসার খুব সহজে সম্ভব। বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশত বছর ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী চলছে। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

জাতীয় পর্যটন নীতিমালা-২০১০-এর মাধ্যমে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন থেকে পর্যটন শিল্প-সংশ্লিষ্ট ১২টি উপখাত উল্লেখ করে একটি পরিপত্র জারির জন্য অনুরোধ করেছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যটন নিয়ে মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করে।

সে আলোকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে আমি আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ২৬ পৃষ্ঠার একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলাম। পর্যটনকে যারা ভালোবাসেন তারা অনেকেই মতামত জমা দিয়েছিলেন। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে পর্যটন শিল্পখাত উন্নত করার জন্য কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নানাবিধ কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্যুরিজম বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ঢাকা আগারগাঁওতে দৃষ্টিনন্দন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করেছেন, যা প্রশংসার দাবিদার।

আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন হলেই পর্যটন হতে পারে একটি সেবামূলক বড় শিল্প। বাংলাদেশে গ্রামভিত্তিক পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন, যা অনেকটা এমন-

ক. অনেক পণ্ডিতই ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছেন যে, আগামীদিনের অর্থনীতি, উন্নয়ন ইত্যাদি সবই হবে গ্রামীণপর্যায়ে। কারণ, ২০৫০-এর মধ্যে নাগরিক উন্নয়ন ও সভ্যতা ভেঙে পড়বে, সুতারং আমাদের গ্রামের কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, সাংস্কৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ইত্যাদির দিকে নজর দিতে হবে। এসবের উৎকর্ষ সাধনের জন্য বাংলা মাসের অনুসরণ আবশ্যিক হয়ে দাঁড়াবে।

খ. গ্রামীণপর্যায়ে বিনিয়োগ, পণ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি করতে হবে বাংলা মাস দেখে।

গ. গ্রামভিত্তিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে তাই কৃষি পর্যটন, সাংস্কৃতিক পর্যটন, খাদ্য পর্যটন, জলাভূমি পর্যটন, স্বাস্থ্য পর্যটন, জীবনধারা পর্যটন, ইতিহাস-ঐতিহ্য পর্যটন ইত্যাদির জন্য বাংলা মাসের অনুসন্ধান ও তারিখ নির্ধারণ জরুরি হয়ে পড়বে।

ঘ. ভ্রমনকাল ও ভ্রমনের মেয়াদের জন্য বাংলা সালের তারিখ খুঁজতে হবে। কারণ গ্রামের মানুষ স্বাগত জনগোষ্ঠী হিসেবে কাজ করলে তাদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী তাদের কাছে সেবা নেয়ার জন্য যেতে হবে। খ্রিস্টীয় সালের তারিখ দেখে গ্রামে ভ্রমণে যাওয়া হবে বোকার সিদ্ধান্ত।

ঙ. চৈত্রসংক্রান্তি, পয়লা বৈশাখ, দোল পূর্ণিমা, ভাদ্র পূর্ণিমা (বছরের সেরা পূর্ণিমা), নবান্ন উৎসব, বসন্ত বরণ, মাঘীপূর্ণিমা ইত্যাদি থেকে প্রকৃত অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য আমাদের বাংলা সাল বুঝতে হবে। তাই সম্রাট আকবর তার সুবিধার জন্য এই সালের প্রবর্তন করলেও করোনাময় পৃথিবীতে এই সাল আমাদেরকে অর্থবহ জীবন পরিচালনায় ভবিষৎ পথ দেখাবে।

গ্রামভিত্তিক পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব বললে অত্যুক্তি হবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রাম উন্নয়নের কথা বলেছেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৩০ জুন, বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, ধ্যান-ধারণা ও আরাধনার ধন। আর সে সোনার বাংলা ঘুমিয়ে আছে চির অবহেলিত গ্রামের আনাচে-কানাচে, চির উপেক্ষিত কন্দরে-কন্দরে, বিস্তীর্ণ জলাভূমির আশপাশে আর সুবিশাল অরণ্যের গভীরে। ভাইয়েরা আমার-আসুন সমবায়ের যাদুস্পর্শে সুপ্ত গ্রাম বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলি। নবসৃষ্টির উন্মাদনায় জীবনের জয় গানে তাকে মুখরিত করি।”

বঙ্গবন্ধুর আহবানের কথা মনে করে, নতুন চিন্তা নিয়ে অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যায় সে ব্যাপারে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। বাংলাদেশের প্রথম গ্রামভিত্তিক পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির নাম হলো বারবাড়িয়া পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড যা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চারিপাড়া গ্রামে। এটি ১২ এপ্রিল ২০২১ তারিখে নিবন্ধন লাভ করেছে। সমবায়ের মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়ন ও এসডিজি অর্জন শীর্ষক কৌশলপত্র জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় এই সংগঠনটি প্রেরণ করবে।

এই কৌশলপত্র গৃহীত হলে পর্যটনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল ও সমবায়ের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অতিমারি করোনার কারণে পর্যটন শিল্পের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে চরমভাবে সরকারি প্রণোদনা ছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের টিকে থাকতে কষ্ট হবে। সার্বিক গ্রাম উন্নয়নের কর্মসূচি হিসেবে পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে সম্ভব। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ফলে ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠবে স্ব-ব্যাবস্থাপনা, স্ব-অর্থায়ন, গণতন্ত্রায়ন ও স্ব-শাসন সংবলিত একটি আদর্শ গ্রাম। এভাবেই সাংগঠনিক ও সামাজিক সংহতি এবং যৌথ পুঁজি গঠনের মাধ্যমে ধনী-গরিব বৈষম্য হ্রাস পাবে।

লেখক: পর্যটনকর্মী, কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর