বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাদকে সর্ষের ভূত আগে তাড়ান

  • নাসির আহমেদ   
  • ৩০ জুন, ২০২১ ১২:৪০

মাদকমুক্ত সমাজ ছাড়া মাদকমুক্ত তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতির পিতার সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেতা-কর্মী সবার প্রতি আহ্বান রেখেছেন। অথচ অপ্রিয় হলেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, দেশের এমন অঞ্চলও আছে যেখানে স্বয়ং মন্ত্রী কিংবা সাংসদের স্বজন-পরিজনেরা মাদক কারবারিদের সহযোগী, তথাকথিত ডিলারদের পৃষ্ঠপোষক, আবার কোথাও কোথাও তারা নিজেরাই মাদক কারবারে নিয়োজিত।

প্রখ্যাত রম্যলেখক ভ্রমণকাহিনির অমর কথাশিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলী তার কাবুল প্রবাসের অভিজ্ঞতার ওপরে লেখা ভ্রমণকাহিনির এক জায়গায় তার গৃহপরিচারক বিশালদেহী আব্দুর রহমানকে দেখে মনে মনে প্রমাদ গুণেছিলেন। ভয়টা ছিল এই যে, আব্দুর রহমান তাকে বিপদ-আপদে রক্ষা করবে ঠিক আছে, স্বয়ং আব্দুর রহমান যদি কোনো কারণে কখনও বিগড়ে যায়, তাহলে উপায়! এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছিলেন: কুইনাইনে জ্বর সারবে বটে কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে?

আমাদের দেশে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সমগ্র প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে প্রায় তিন বছর আগে। ২০১৮ সালে স্বয়ং দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলার সমস্ত উইংকে এই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মাদক পাচারকারী, সরবরাহকারীসহ মাদকাসক্তি নির্মূলের সেই নির্দেশে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয় দেশজুড়ে।

বহু মাদক কারবারি অবৈধ মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়, অনেকে ক্রসফায়ারে প্রাণ হারায়, অনেকে আত্মগোপন করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। এমনকি পাড়া-মহল্লার মুক্ত মাদক-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ঝিমিয়ে পড়ে সেই অভিযান। ফলে আবার মাদকের রমরমা বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মাদক-বাণিজ্য আবার ফিরে আসতে শুরু করে।

জনমনে পুরানো সেই প্রশ্ন থেকেই যায়, মাদক কেন এত সহজলভ্য? কেন মাদক নির্মূল অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়া বাহিনী পুলিশেরই কোনো কোনো সদস্য মাদকসহ ধরা পড়বেন! সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে ভূত তাড়াবেন কী দিয়ে?

এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে পুলিশ প্রধান ডক্টর বেনজির আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুলিশ বাহিনীর ভেতরেই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। মাদক গ্রহণের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়ার ফলে বাহিনীরই বেশকিছু সদস্য ধরা পড়ে যান।

কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সদস্যদের ডোপটেস্টে মাদক গ্রহণ প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুত করা হয় তাদেরকে। শুধু কুষ্টিয়ায় পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থানের কারণেই ৮ পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত হন। আরও বেশ কয়েকটি জেলায় ডোপটেস্ট পজিটিভ হওয়ার পর তদন্ত শেষে অপরাধ প্রমাণিত হলে চাকরি হারান পুলিশের কজন সদস্য।

সন্দেহ নেই কঠোর শাস্তি। তারপরও কি থেমে থেকেছে মাদক গ্রহণ এবং মাদক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা? না, থেমে নেই! এই করোনাকালেও একাধিক পুলিশ সদস্য ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগের খবর।

তাহলে চাকরি হারানোর ভয়ও তাদের নেই? একটি সরকারি চাকরি প্রায় দুর্লভ এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার চাকরির সন্ধানে মাথা কুটে মরছেন। সেখানে জেল-জরিমানা তো বটেই, চাকরি হারানোর ভয়ও থাকবে না! এ বড় বিস্ময়!

এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার অবসান ঘটাতে পথ খুঁজে বের করতে হবে। সেটা শুধু পুলিশ বাহিনীর চেষ্টাতেই হবে না। জনসাধারণের তথা সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।

এ প্রসঙ্গে আলোচনার আগে দেশে মাদকের ভয়াবহতা কোন পর্যায়ে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে কী চরম ঝুঁকি নিয়ে এসেছে, দৃষ্টিপাত করা দরকার।

মাদক যে এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম, সে কথা আজ সর্বজনবিদিত। মাদকাসক্তির কবলে পড়ে বহু তরুণ তাজাপ্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। শুধু তা-ই নয়, মাদকের নেশায় পড়ে অনেক সংসারের সুখশান্তি চিরতরে নষ্ট হয়েছে। সংসার ভাঙার অন্যতম কারণে পরিণত হয়েছে মাদকাসক্তি। এমনকি জন্মদাতা কত বাবা এবং গর্ভধারিণী মাকেও খুন হতে হয়েছে মাদকাসক্ত সন্তানদের হাতে! ভাইকে ভাই খুন করে ফেলেছে বাবা-মার চোখের সামনে।

এর কারণ মাদকের টাকা না পেয়ে সহোদর ভাইটি মায়া-মমতাহীন হিংস্র পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে। মাদকের ভয়াল ছোবলে শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে বহু সম্ভাবনাময় তরুণকে। এমনকি আত্মহননের মতো করুণ পরিণতিও নেমে এসেছে অনেক তরুণ-তরুণীর জীবনে।

একটি আলোচিত দৃষ্টান্ত হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী কুমিল্লার হাফিজুর রহমানের কথা উল্লেখ করা যায়। এইতো মাত্র মাস দুয়েক আগের কথা।

সে ভয়াবহ মাদক এলএসডি গ্রহণ করে নেশায় চুর হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক ডাবের দোকান থেকে অকস্মাৎ ধারালো দা তুলে নিয়ে নিজের গলায় কোপ বসিয়ে দিয়েছে। ডিএমসি-র ডাক্তাররা চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। ঢাবির এই তরুণ শিক্ষার্থীর এমন করুণ মৃত্যু জনমনে বিষাদ ছড়িয়ে দিয়েছে। চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও।

হাফিজুরের আত্মহননের কারণ তদন্ত করতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে বিদেশি ভয়াবহ মাদক এলএসডি বাংলাদেশে থাকার তথ্য। বিস্ময়কর ব্যাপার, নিষিদ্ধ মাদক এলএসডি বাংলাদেশে ঢুকেছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে আসা পার্সেলে, এই উচ্চমূল্যের মাদক এসেছে সুদূর ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস থেকে।

লএসডিসেবী যারা এই মাদকসহ ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অত্যন্ত বিলাসী জীবনের অধিকারী। এই ঘটনার পর পরই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো র‌্যাপিড অ্যকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) ডিএমটি-র মতো আরও উচ্চমূল্যের ভয়ংকর মাদক খুঁজে পেয়েছে ঢাকায়। যার উৎসভূমি ইউরোপ। ধরা পড়েছে ডিএমটি মাদক গ্রহণকারী কিছু তরুণও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পেরেছে ইদানিং বড়লোকের নেশা ইয়াবাকে ছাপিয়ে গেছে এলএসডি, ডিএমটি এবং আইচের মতো ভয়ংকর মাদকদ্রব্য।

যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সেসব তরুণ যদি এভাবে আত্মঘাতী পথে চলে যায়, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী!

কঠিন কঠোর হাতে ২০১৮ সালের মতো আবারও অভিযান প্রয়োজন। তার আগে চাই পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরে কঠোর শুদ্ধি অভিযান। আর সেখানে শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করা গেলে মানুষ আশান্বিত হবে, নৈতিক শক্তি বেড়ে যাবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অভিযানকারীদেরও। শাস্তি শুধু নয়, সেজন্যই চাই ব্যাপক কাউন্সেলিংও।

মাদকের হাত থেকে আমাদের দেশের তরুণসমাজকে রক্ষা করতেই হবে। একবার কেউ এই ভয়াবহ নেশায় জড়িয়ে পড়লে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা দুরূহ হয়ে পড়ে তার জন্য। এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।

পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রচার ও গণমাধ্যমে মাদকাসক্তির পরিণতির নানারকম দুঃসংবাদ প্রতিনিয়ত আমরা দেখে উঠছি। ধনী-গরিব নির্বিশেষ এই মাদকাসক্তির বিপর্যয়ের শিকার। এ অবস্থায় নীরব দর্শক হয়ে তো থাকতে পারেন না কোনো বিবেকবান মানুষ।

কেন এই অপ্রতিরোধ্য বিপর্যয়! কী এর প্রতিকার, কেমন করে নির্মূল করা যাবে এই ভয়ংকর সর্বনাশের ছোবল! মুক্তির পথ খুঁজে বের করতেই হবে। তা না হলে আজ বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের যে গৌরবময় অধিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধজয়ী বাংলাদেশ আজ যে বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের মহাবিস্ময়, সেই অর্জন আর গৌরব ধরে রাখা যাবে না, যদি আমরা তরুণসমাজকে সুনাগরিক করে আগামী দিনের জন্য গড়ে তুলতে না পারি।

বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে মাদকাসক্তির পেছনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রের

দুর্বলতাগুলো কী? কোন পথে গেলে তরুণদের বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো যাবে?

ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যও আমরা মাদক আগ্রাসনের মধ্যে আছি। যেমন আন্তর্জাতিক মাদক উৎপাদন অঞ্চল এবং মাদক পাচারকারী যে জোন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস- এসব দেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ খুব কাছাকাছিই বলা যায়।

ছোট্ট নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে তো বাংলাদেশ সীমান্ত ক্রস করা সহজ ব্যাপার। বিশেষ করে সমুদ্র যেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের অনেকখানি ঘিরে রেখেছে। এর বাইরে ফেনসিডিলের মতো মাদক আসছে প্রায় তিন দিকবেষ্টিত সীমান্তের প্রতিবেশী ভারত থেকে।

ফলে মাদকের প্রবেশপথ অনেক। এ ক্ষেত্রে প্রধান পয়েন্টগুলোকে বেঁধে ফেলতে হবে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীকেও যথার্থই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে।

ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও একেবারে মোহমুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ নির্মাণে আন্তরিক হতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।

সাম্প্রতিক এক গবেষণামূলক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে বাংলাদেশে ইয়াবার ডিলার সর্বত্র। এমনকি গ্রাম-গঞ্জেও। রাজধানীতে যখন-তখন ডেলিভারি পাওয়া যায়। একটু বাড়তি টাকা দিতে হয় আর কি! তরুণদের পাশাপাশি আজকাল বহু তরুণীও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রকাশ্য-গোপনে অনেকের চিকিৎসা করাচ্ছেন হতভাগ্য অভিভাবকরা।

অন্য এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ইয়াবাসেবীদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। নারী মাদকসেবীর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। দুবছর আগের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশের প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এর মধ্যে বহু দরিদ্র মানুষও রয়েছে, যারা গাঁজা- ভাঙ, আফিম, চোলাই এবং বাংলামদসহ কম দামি বিভিন্ন মাদক গ্রহণ করে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

মাদকমুক্ত সমাজ ছাড়া মাদকমুক্ত তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির পিতার সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেতাকর্মী সবার প্রতি আহ্বান রেখেছেন। অথচ অপ্রিয় হলেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, দেশের এমন অঞ্চলও আছে যেখানে স্বয়ং মন্ত্রী কিংবা সাংসদের স্বজন-পরিজনেরা মাদক কারবারীদের সহযোগী, তথাকথিত ডিলারদের পৃষ্ঠপোষক, আবার কোথাও কোথাও তারা নিজেরাই মাদক কারবারে নিয়োজিত।

২০১৯ সালে যখন দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছিল, তখন কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রত হতে হয়েছে, এই অবাঞ্ছিত অবস্থায় থমকে দাঁড়াতে হয়েছে তাদেরকে। আর যা-ই হোক, মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে দেশ এবং দেশের তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিকভাবে কোনো রকম প্রশ্রয়ই দেয়া যাবে না।

কেন তরুণসমাজ মাদক গ্রহণ করছে। শুধু যে সঙ্গদোষে তা নয়। সঙ্গদোষ একটি কারণ। আরও অনেক কারণ আছে যা আজ আমাদের ভেবে দেখা উচিত। দ্বিতীয়ত, নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি যৌথ পরিবারগুলো

গত দুই তিন দশকে এত দ্রুত ভেঙে গেছে যে, আজকাল আর কোনো শিক্ষিত পরিবারের শিশুরা দাদা-দাদি, নানা-নানির মতো মুরব্বির আদর-যত্নে, বাবা-মার শাসন-স্নেহে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারছে না। কর্মজীবী বাবা-মার সেই সময়ও নেই যে, নিবিড়ভাবে খোঁজ রাখবেন তার শিশুটি বাসায় কীভাবে সারাটি দিন পার করে। ফলে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা আর বন্ধনহীনতায় বেড়ে ওঠা এই শিশুরা যোগ্য তরুণ-তরুণী হিসেবে, আবেগ, মায়া-মমতায় পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।

এমনকি শিক্ষক আর সহপাঠীদের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক-মেলামেশা একেবারেই যান্ত্রিক। যে সমাজ শিশুকে শিক্ষা দেয় একা একা খাবে, লুকিয়ে খাবে, সেই সমাজে শিশুর মধ্যে মানবিক উদারতা সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খাওয়ার মানসিকতা কেমন করে তৈরি হবে?

মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করতে হলে পারিবারিক ভাঙন, শিশুর একাকিত্ব, তরুণ-তরুণীদের বেকারত্ব, কুসঙ্গ আর আশাভঙ্গের বেদনা থেকেও আমাদের শিশুদের রক্ষা করতে হবে। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের পিতা-মাতা কেন গুলশান-বনানীর বাসিন্দা-সম্পদের পাহাড়ে বাস করা গুটিকয় জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে উদগ্র অর্থলিপ্সায় উন্মাদ হবেন? আকাঙ্ক্ষা তো ততটুকুই থাকা দরকার যতটুকু আমার সাধ্যের মধ্যে আছে।

অবাঞ্ছিত আকাঙ্ক্ষা শৈশব থেকে শিশু-কিশোরদের উচ্চাভিলাষী করে তোলে এবং একদিন সেই আশাভঙ্গের বেদনায় তারা চরম হতাশায় ডুবে যায়, হতাশা থেকে অনেকে নেশার জগতে চলে যায়। এমনকি কেউ কেউ আত্মহননের মতো নির্মম পরও বেঁচে নেয়!

লেখক: কবি, সিনিয়র সাংবাদিক-কলাম লেখক, সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর