বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষায় ধস ঠেকাতে চাই টেকসই পরিকল্পনা

  • শেখ এ. রাজ্জাক রাজু   
  • ২৯ জুন, ২০২১ ১৩:১৫

সবাই সন্দিহান যে, ২০২২ সালেও এই করোনা সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে কি না! শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের কর্ণধার, তারা কি পারবে এই জাতিকে পুনরায় শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতে? বিশেষ করে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা স্তরে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ও নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যক্তি-উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়- এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী ও অর্থের অভাবে স্থবির হয়ে পড়ে, তাহলে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুটিকয়েক সরকারি স্কুল-কলেজ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে ৫ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাদান ও সামাল দেয়া আদৌ সম্ভব নয়।

প্রত্যেক মানুষ তার খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পায়- যা পৃথিবীর সব ধর্মই একথা বলে। কেউ হয়তো আগে, কেউবা পরে। সময় থাকতেও হয়তোবা আমরা পৃথিবীর ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে বুঝে উঠতে পারি না। কোন কাজের জন্য এই গোটা বিশ্বের মানুষ এবং আমরা শাস্তি পাচ্ছি!

আমরা কাউকে কষ্ট দিয়ে, কাউকে কাঁদিয়ে, কাউকে অপমান বা ছোট করে বেমালুম ভুলে যাই কিন্তু প্রকৃতি ভোলে না, ক্ষমাও করে না। তাই, প্রকৃতি মাঝেমধ্যে মহামারি, প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় বা প্লাবণ-জলোচ্ছ্বাসের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়। সুতরাং কাউকে কষ্ট বা ব্যথা দিয়ে, অভিশাপ দিয়ে কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না।

প্রসঙ্গক্রমে স্বর্ণ ও লোহার গল্পটি বলা যেতে পারে- একদিন স্বর্ণ ও লোহা দু’জনে বসে গল্প করছিল। স্বর্ণ লোহাকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা, আমাদের দু’জনকেই আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটানো হয়, আমি তো চিৎকার করি না। কিন্তু তুমি এত চিৎকার কর কেন? তখন লোহা বলল, ভাই তুমি বুঝবে না- যখন নিজের স্বজাতি কেউ মারে, তখন ব্যথাটা অনেক বেশি লাগে।

কোনো মহামারিই চিরস্থায়ী নয়। অনেক কিছু হারিয়ে, অনেক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে এক সময় সব ঠিক হয়ে যায়। করোনার বিপদও এক সময় হয়ত কেটে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কারোনা-পরবর্তী পৃথিবী কি আগের মতোই স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারবে! বিশ্ব মহামারি করোনার আগ্রাসনে একদিকে যেমন লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে- যা কল্পনাতীত। প্রায় দীর্ঘ দেড় বছর যাবত শিক্ষাঙ্গন এক নাগারে বন্ধ থাকার কারণে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে আসা বাংলাদেশ বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি ঝুঁকির দ্বারপ্রান্তে।

শিক্ষা ও গবেষণায় মননশীল ব্যক্তিত্ব ব্যতিত সুদূরপ্রসারী শিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশ উচ্চতর মানসম্পন্ন শিক্ষা গবেষণায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। স্বাধীনতাত্তোর অর্থনৈতিকভাবে দেশ স্বাবলম্বীর পথে কিছুটা এগিয়েছে বটে কিন্তু শিক্ষার মান ও মানব সম্পদ উন্নয়নের (হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্টের) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যূনতম কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি- তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

ভাইরাস সংক্রমণ যে হারে দিন দিন বেড়েই চলেছে- তাতে মনে হয় না চলতি বছরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারবে। এমন এক সংকটকালে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কর্মরত শিক্ষকেরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ‘শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও শিক্ষাঙ্গন বাঁচাও’ এমন স্লোগান নিয়ে জাতীয় রক্ষা কমিটি গঠন করা বোধ করি অযৌক্তিক নয়। সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বাঁচানোর কর্মসূচি গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

করোনার তৃতীয় ঢেউ বিশেষ করে ভারতীয় ধরনের (ভেরিয়েন্ট) আকাশচুম্বী সংক্রমণ ঘটেছে ইতোমধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভারতীয় ভাইরাসের ধরন অন্য ধরনের তুলনায় ৩ গুণ বেশি সংক্রামক ও ভয়ানক। ভারতীয় ভাইরাস সংক্রমণের কারণেই বাংলাদেশে ‘তৃতীয় ঢেউ’ শুরু হয়েছে বলে চিকিৎসক, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকরা মনে করেন। দিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে এবং আইসিইউতে যেন ঠাঁই নেই।

এই তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটে চলেছে তা বলঅর অপেক্ষা রাখে না। সবাই সন্দিহান যে, ২০২২ সালেও এই করোনা সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে কি না! শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের কর্ণধার, তারা কি পারবে এই জাতিকে পুনরায় শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতে? বিশেষ করে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা স্তরে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ও নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যক্তি-উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়- এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী ও অর্থের অভাবে স্থবির হয়ে পড়ে, তাহলে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুটিকয়েক সরকারি স্কুল-কলেজ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে ৫ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাদান ও সামাল দেয়া আদৌ সম্ভব নয়।

শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নামার সঙ্গে সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে শিক্ষাঙ্গন থেকে এবং সমাজে অনাচার-অবিচার, বেকারত্ব, খুন-খারাবি, ধর্ষণ-রাহাজানি বেড়ে যেতে পারে তা বলাই বাহুল্য। ফলে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। এছাড়াও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সামাজিক-মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটবে এবং সমাজে অস্থিরতাসহ পারিবারিক কলহ বেড়ে যাবে।

এই পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশমাতৃকার বৃহত্তর স্বার্থে এবং সরকারসহ প্রখ্যাত চিকিৎসক, সমাজসেবক, সৎ-নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক-সাহিত্যিক-গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের হিংসা-বিদ্বেষ-ধর্মান্ধতা পরিহার করে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ভুলে জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে দেশ রক্ষার্থে। সব মানুষের জন্য- যেন পরবর্তী প্রজন্ম একটি বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে প্রত্যাশার ডানায় ভর করে।

লেখক: শিক্ষা-উদ্যোক্তা, প্রাবন্ধিক ও গবেষক।

এ বিভাগের আরো খবর