বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উপমহাদেশের রাজনীতি- আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেস: সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য

  •    
  • ২৫ জুন, ২০২১ ১২:৫২

বিশ্বে বাংলাদেশই হয়তো একমাত্র দেশ যেখানে স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বনামে-বেনামে তৎপর এবং পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে অর্থাৎ দেশকে আবারও পাকিস্তানের আদলে পরিচালিত করতে দেশে এবং দেশের বাইরে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র আজও অব্যাহত রেখেছে। আর এ রকম ভয়ংকর পরিস্থিতি বিশ্বে একজন মাত্র ব্যক্তিই মোকাবিলা করে চলেছেন, আর তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

উপমহাদেশের অন্যতম পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ চলার পথে ৭২ বছর পার করল। ২৩ জুন ছিল ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী; যা এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে বেশ অনাড়ম্বরভাবেই পালিত হয়েছে। মহাকালের বিবেচনায় ৭২ বছর হয়তো একটি রাজনৈতিক দলের জন্য তেমন কোনো সময় নয়। তবে বাস্তবতার আলোকে একেবারে কম সময়ও নয়, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের জন্য। কারণ, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অর্জন যেমন আকাশচুম্বী, তেমনি এই দলের রয়েছে দীর্ঘ এক সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস।

বাঙালি জাতির জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে আজকের উন্নতির মহাসড়কে দাঁড় করাতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে যে পরিমাণ প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে, যে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার করতে হয়েছে, ভেতরে-বাইরে যত চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছে এবং যে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে; তেমনটা বিশ্বের আর কোনো রাজনৈতিক দল করেছে কি না, আমার জানা নেই।

এত সব বৈরী পরিবেশ সফলভাবে মোকাবিলা করে এবং সব রকমের উত্থানপতন সামলে নিয়ে এই দলটি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে শুধু দুজন যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। একজন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আরেকজন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যদিও সুদীর্ঘ চলার পথে অনেক প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ এবং গুণীমানুষ এই দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন, তাদের অবদানও কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। মূলত তারা একদিকে যেমন সার্বক্ষণিক সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছেন, অপরদিকে তেমনি মহান নেতার ঘোষিত কর্মসূচিগুলো পালনে অসাধারণ সফলতার স্বাক্ষরও রেখেছেন। কিন্তু মূল নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম পেরিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। একইভাবে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একসময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা দেয়া বাংলাদেশকে আজকের উন্নতির রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর একক কৃতিত্বও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। এ কারণেই আওয়ামী লীগের প্রতিটা কর্মী, সদস্য এবং নেতা-নেত্রী তো বটেই, সমগ্র দেশবাসী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তারই সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন এলেই উপমহাদেশের আরও একটি দীর্ঘদিনের পুরোনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের কথা আলোচনায় চলে আসে। কারণ, উপমহাদেশের এই দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এত বেশি সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়, যা আর কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেই।

ভারতের কংগ্রেস ভারত স্বাধীন করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগও নেতৃত্ব দিয়েই বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কংগ্রেসের চেয়ে অনেক বেশি আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ, রক্তাক্তমুখর।

আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে যে দীর্ঘ সময় কারাবাস করতে হয়েছে, তা কোনো কংগ্রেস নেতা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে করেছেন কি না, জানা নেই।

কংগ্রেস যেমন ভারতের একটি অসাম্প্রদায়িক দল, আওয়ামী লীগও বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক দল। বিভিন্ন ধর্মবর্ণ ও মতের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং দেশের উন্নতিও নিশ্চিত করা যায়। এই মূলমন্ত্রটি কংগ্রেস যেমন উপলব্ধি করে তাদের দলের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিল, আওয়ামী লীগও তেমনটাই করেছিল।

ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের শাসনামলেই আধুনিক ভারতের প্রকাশ ঘটে। ভারতের যে উত্তরোত্তর উন্নতি এবং বিশ্বব্যাপী আধুনিক ভারতের যে স্বীকৃতি, সেটি সম্ভব হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর যোগ্য নেতৃত্বের গুণেই।

আজকের বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতি তা-ও সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের গুণেই। আজকের বাংলাদেশের উন্নতি সমগ্র বিশ্বে আলোচিত, প্রশংসিত এবং স্বীকৃত। মাথাপিছু আয়সহ উন্নয়নের অনেক সূচকে বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি তো পেয়েছেই, এখন ২০৪০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হবার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এত সব অভাবনীয় অর্জন সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যার সফল নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং কংগ্রেসের মধ্যে যেমন অনেক সাদৃশ্য আছে, তেমনি বৈসাদৃশ্যও কম নয়। স্বাধীনতা লাভের মাত্র চার বছরের মধ্যে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন।

কংগ্রেসের কোনো নেতাকে এমন করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে চক্রান্তকারীরা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে দেশকে উলটো পথে অর্থাৎ পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনা করতে শুরু করে। এমন উদ্ভট এবং স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ভারতের কংগ্রেসের ক্ষেত্রে ঘটেনি।

ভারতে কোনো দল ক্ষমতায় এসে ব্রিটিশের আদলে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেনি। চক্রান্তকারীরা ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালায়, নেতা-নেত্রীদের কারাগারে নিক্ষেপ করে, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করে, বিদেশে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তাদের দেশে ফিরতে না দেয়া।

আইন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পথ যে বন্ধ করে রাখা হয় শুধু তাই নয়, তাদের বিদেশি দূতাবাসে চাকরিও দেয়া হয়। ভারতের কংগ্রেসকে নিশ্চয়ই এ রকম জঘন্য কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করতে হয়নি। এখানেই শেষ নয়, স্বাধীনতার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধীরা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার প্রচেষ্টা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে, দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে সক্রিয়ভাবে অব্যাহত রেখেছে।

এই স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রতিনিয়ত চক্রান্ত করে চলেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে এসব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত এবং স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতেই এখন পর্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এমন পরিস্থিতি ভারতের কংগ্রেস কেন, বিশ্বের কোনো দেশেই দেখা যাবে না।

আমাদের স্বাধীনতার পর বিশ্বে আরও অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু কোনো দেশেই স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান নেই। দেশ স্বাধীন হয়েছে, পরাজিতরা হার মেনে নিয়েছে এবং সেখানেই শেষ। কিন্তু বিশ্বে বাংলাদেশই হয়তো একমাত্র দেশ, যেখানে স্বাধীনতাবিরোধীরা স্বনামে-বেনামে তৎপর এবং পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে অর্থাৎ দেশকে আবারও পাকিস্তানের আদলে পরিচালিত করতে দেশে এবং দেশের বাইরে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র আজও অব্যাহত রেখেছে। আর এ রকম ভয়ংকর পরিস্থিতি বিশ্বে একজন মাত্র ব্যক্তিই মোকাবিলা করে চলেছেন, আর তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ ৭২ বছর চলার পথে উত্থানপতন যা-ই থাকুক না কেন, প্রাপ্তির পরিমাণ আসলেই অবিস্মরণীয় এবং ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে যত দিন থাকবে বাঙালি জাতি। একটি দল দেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে এবং সেই সঙ্গে দেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে সেই একই দলের অধীনে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন পিতা এবং তারই সুযোগ্য কন্যা।

এমন দুর্লভ সাফল্যের নজির পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে কি না, জানা নেই। এই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের পরবর্তী নেতৃত্ব কেমন হবে, সেটিই এখন ভাবনার বিষয়। দলের সফলতার ধারাবাহিকতা অনেকটাই নির্ভর করে সেই দলের উত্তরাধিকার পরিকল্পনার ওপর।

আমরা প্রত্যাশা করি এবং সব সময় প্রার্থনা করি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও দীর্ঘদিন দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তারপরও একসময় তিনি অবসর নেয়ার কথা ভাববেন এবং তখন তার স্থান নেয়ার জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব এখন থেকেই প্রস্তুত করা প্রয়োজন। কেননা, যোগ্য উত্তরসূরির অভাবে অনেক সফল এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দলও অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, এমন নজির পৃথিবীতে আছে।

কংগ্রেসই মনে হয় এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ইন্দিরা গান্ধী দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হবার পর দলটি যে নেতৃত্বের সংকটে পড়ে তা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইন্দিরা গান্ধী নিহত হবার পর তারই ছেলে রাজীব গান্ধী সহানুভূতি ভোট পেয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারলেও সঠিক নেতৃত্বের স্থানটি পূরণ করতে পারেননি। আর এই নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে দলটি আর সর্বভারতীয় দল হিসেবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতেই পারছে না।

এই সুযোগে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ভারতের শাসনক্ষমতায় জেঁকে বসেছে। অর্ধশতাব্দীরও অধিক সময় ধর্মনিরপেক্ষতাচর্চা করার পর সেই দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যে যেতে পারে, তা ভাবতেও অবাক লাগে।

ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের এহেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসের নেতৃত্বের দুর্বলতাই প্রধানত দায়ী। আমাদের দেশেও যদি কখনও আওয়ামী লীগে আবারও নেতৃত্বের দুর্বলতা দেখা দেয় এবং সেই সুযোগে যদি ভারতের মতো রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

এখানেও আমাদের শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যেহেতু সবকিছু খেয়াল রাখছেন এবং সব দিক যথেষ্ট দূরদৃষ্টির সঙ্গেই সামলাচ্ছেন তাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের যোগ্য উত্তরসূরির বিষয়টি তার সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে। তিনি নিশ্চয়ই নেতৃত্বের এমন যোগ্য উত্তরসূরির সোপান তৈরি করে দেবেন যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং শেখ হাসিনার বাস্তবায়নের পথ ধরেই দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে সমান গতিতে।

লেখক: ব্যাংকার-কলাম লেখক, টরেন্টো, কানাডা

এ বিভাগের আরো খবর