আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা যেন একসূত্রে গাঁথা। ২৩ জুন, সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও সাফল্যের ৭২ বছর পেরিয়ে ৭৩ বছরে পদার্পণ করল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গণমানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটাতে বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যেন রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
এদেশে একটা সময় ছিল যখন বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটত। পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখে আজ ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম বাংলাদেশ। যোগাযোগব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রত্যেকটি বিভাগে করা হচ্ছে ফোর লেনের সড়ক। যে পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেল জনগণের স্বপ্ন ছিল, সে স্বপ্নকে সত্যি করে বাস্তব রূপদান করে দিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাসনকালেই মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নসাধিত হয়েছে বহু গুণে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০০৮ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। এ বছর ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের আগেই এ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশের সর্বস্তরের জনগণের পাশে বিপদের বন্ধু হয়ে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
টানা একযুগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি অনন্য উদাহরণ। এ দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক শক্তির সমর্থনের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতার যোগ্য কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি উন্নয়নশীল দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন।
তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে চলেছে। এত সব সফলতার পাশাপাশি আমাদের কিছু আক্ষেপও আছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ঐতিহ্যবাহী এ দলটিতে ভিড় জমিয়েছে ভিন্ন আদর্শ এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একটা অংশ। বিভিন্ন সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা, যেকোনো ইস্যুতে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টাও তাদের কুকর্মের মাধ্যমেই হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার ৭২ বছরে এসে এ ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের ব্যথিত করে, কষ্ট দেয়।
এ বিষয়ে সচেতন হয়ে, দুধের মাছি এবং সুযোগসন্ধানীদের দ্রুত দল থেকে বের করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, দলটি এর ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়ে স্থিতিশীল অবস্থা খুঁজতে গিয়ে পেন্ডুলামের মতো করে দুলতে থাকবে, যা আমরা দেখতে চাই না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকৃত খবরএবং তথ্যগুলো পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। আওয়ামী লীগ এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি। অন্যথায় ঐতিহ্যবাহী এ দলটির কর্মীসংকট দেখা দিতে বেশি দিন লাগবে না। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে এর দীর্ঘদিনের সুনাম এবং ঐতিহ্য বিনষ্ট করতে কালপ্রিট এবং হাইব্রিডদের নোংরা তৎপরতা পরিলক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দমন করতে হবে।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগকে মুজিবাদর্শে বলীয়ান হয়ে জনগণের কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাওয়ায় মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য শতবর্ষ থেকে হাজার বছর ছুঁয়ে যাক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু!
লেখক: শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়