বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঐতিহাসিক তেইশে জুন: ফিরে দেখা গৌরবের ৭২ বছর

  • নাসির আহমেদ   
  • ২৩ জুন, ২০২১ ১৭:১৮

পাকিস্তানি দর্শন ধর্মের রাজনীতি, সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসা, সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এবং ভারত-বিদ্বেষের রাজনীতি আজও এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জিইয়ে রাখা হয়েছে! এই চিত্র দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই! কী বিচিত্র এই দেশ আর দেশের রাজনীতি! ত্রিশলাখ শহিদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধের রাজনীতি পাকিস্তানি পরাজিত অপশক্তির অনুসারীদের সাম্প্রদায়িক আস্ফালন দেখতে হচ্ছে!

বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় তেইশে জুন লাল অক্ষরে লেখা একটি দিন। ১৭৫৭ সালের তেইশে জুন পলাশী প্রান্তরে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলা তথা উপমহাদেশের শাসনভার দখলে নিয়েছিল ব্রিটিশ বেনিয়ারা।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও ঔপনিবেশিক দুঃশাসন থেকে মুক্তি পায়নি বাংলার মানুষ।

ব্রিটিশ কলোনি থেকে পূর্ববাংলা আসলে প্রবেশ করেছিল পাকিস্তানি কলোনির দুঃশাসনের শৃঙ্খলে। ফলে পাকিস্তান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রনেতা শেখ মুজিব, অলি আহাদসহ তৎকালীন দেশপ্রেমিক তরুণরা উপলব্ধি করলেন, যে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে মুসলিম লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলার মানুষ পাকিস্তান-আন্দোলন করেছিল, সেই স্বপ্ন এই স্বাধীনতা দিয়ে কিছুতেই পূরণ হবে না।

কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকেই বৈষম্য আর নিপীড়ন বাংলার মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ বাঙালি হলেও পূর্ববাংলা অবহেলিত উপেক্ষিতই থাকবে। যে কারণে রাষ্ট্রের ৫৬ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার অন্যতম মর্যাদাও দিতে রাজি হয়নি অবাঙালি শাসকরা।

ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের তিন সপ্তাহের মধ্যে শেখ মুজিবসহ বাংলার মুক্তিকামী প্রগতিশীল যুবসমাজ ‘পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন (৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭)। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছয় মাস বয়সেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা লাভ করে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। ১৪ সদস্যের সাংগঠনিক কমিটির অন্যতম সংগঠক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

যুবলীগ ও ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শোষিত-বঞ্চিত এবং মৌলিক অধিকারহারা বাংলার মানুষের পক্ষে কথা বলার যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়, তার ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই ছাত্র-যুব শক্তির মিলিত সাহস আর ত্যাগের ওপরেই দাঁড়িয়ে যায় স্বাধিকার চেতনা তথা অসাম্প্রদায়িক বাঙালিত্বের বোধ।

আর সে কারণে এই দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের মাত্র দেড় বছরের মধ্যে দেশের প্রধান বিরোধী দল ১৯৪৯ সালের তেইশে জুন আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে, ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে যে স্বাধীনতা আমরা হারিয়েছিলাম, কে জানত ১৯৪৯ সালের সেই একই দিনে এমন একটি রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে উঠবে, যা বাংলার রাজনৈতিক দিগন্তে স্বাধীনতার সূর্য উন্মোচন করবে ১৯৭১ সালে!

সেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি লড়াই করেছে ২৩ বছর। বায়ান্নর রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের বাঙালির রাজনৈতিক ঐক্যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে বিজয় ও সরকার গঠন, ৫৮তে সামরিক দুঃশাসন তথা আইয়ুববিরোধী রাজপথের আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬তে বঙ্গবন্ধুঘোষিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলন, ১৯৬৮তে সর্বাত্মক গণ-আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে আইয়ুবি শাসনের অবসান এবং ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন আদায়ের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় দফার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার পক্ষে বাঙালির ঐতিহাসিক গণরায়। সেই রায় উপেক্ষার প্রতিবাদে অসহযোগ আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, অবশেষে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন।

উল্লিখিত প্রতিটি আন্দোলনেই নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন এ জাতির কর্ণধার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে কারণেই বাংলার মানুষের মুক্তিদূত অসম সাহসী দেশপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের প্রায় ১৩ বছরই শাসকদের রোষানলে পড়ে কারাগারের পীড়ন সইতে হয়েছে।

তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়: আওয়ামী লীগের ইতিহাস ধর্মান্ধতা আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালির গৌরব আর মহিমা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। দরিদ্র মানুষের জন্য অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস।

তাই ২৩ জুন ইতিহাসের বাঁক ফেরানো এক নতুন যুগে যাত্রার গৌরবময় দিন। ১৭৫৭-এর ২৩ জুন পরাজয়ের, ৪৯'র ২৩ জুন বিজয়ের দুর্গম পথে যাত্রার আলোকবর্তিকা জ্বালানোর দিন।

কাকতালীয় হলেও স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর তারই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিল, সেদিনটিও ছিল ২৩ জুন!

বঙ্গবন্ধু জীবনের সমস্ত সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে যে শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাষ্ট্রদর্শন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যার মধ্যদিয়ে সেই রাষ্ট্র দর্শনকেই হত্যা করা হয়।

ফিরিয়ে আনা হয়েছিল মৃত পাকিস্তানের সেই ‘জিন্দাবাদ’ সংস্কৃতি, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মের নামে রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই কল্যাণমুখী রাষ্ট্র দর্শন ফিরিয়ে আনার পথে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন। তাই সব অর্থেই তেইশে জুন রক্ত-আখরে লেখা এক ঐতিহাসিক দিন।

বাঙালির হারানো গৌরব ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের গৌরবময় সংগ্রামের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগের জন্মের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সেই দিন আজ।

১৯৪৯ থেকে ২০২১। ৭২ বছরের এই দীর্ঘ পথচলায় নানা চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে দলটিকে। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু আর অগণতান্ত্রিক দুঃশাসনের মুখে দাঁড়িয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা খুব সহজ যে ছিল না, তা ১৯৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানি সামরিকতন্ত্র আর আর তাদের বিমাতাসুলভ বৈষম্যনীতির শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসের দিকে তাকালে যে কেউ সম্যক উপলব্ধি করতে পারবেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসকদের বৈষম্যনীতি দেখে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল যে অংশটি স্বপ্নভঙ্গের বেদনা অনুভব করেছিলেন, তারাই মূলত ভাষা আন্দোলনসহ কেন্দ্রীয় শাসকচক্রের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এসব আন্দোলনে জড়িতদের পাকিস্তানের শাসকচক্র ইসলাম ও তাহজিব তমদ্দুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী বলে অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি বিনাশকারী, ভারতের দালাল বলে গাল দিয়েছে। দেশের শত্রু বলে অভিযুক্ত করেছে। মামলা-হামলায় জর্জরিত করেছে।

এরকম চরম বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগের মতো বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একটি অসাম্প্রদায়িক উদার রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা খুব সহজ ছিল না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি ২৩ বছরের শাসনামলে যেসব অভিযোগ শুনতে হয়েছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত সেই একই অভিযোগ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে! দলের কর্ণধার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

পাকিস্তানি দর্শন ধর্মের রাজনীতি, সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসা, সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এবং ভারত-বিদ্বেষের রাজনীতি আজও এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জিইয়ে রাখা হয়েছে! এই চিত্র দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই! কী বিচিত্র এই দেশ আর দেশের রাজনীতি!

ত্রিশলাখ শহিদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধের রাজনীতি পাকিস্তানি পরাজিত অপশক্তির অনুসারীদের সাম্প্রদায়িক আস্ফালন দেখতে হচ্ছে! ধর্মানুরাগ আর ধর্মান্ধতা যে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর বিষয় তারা কিছুতেই মানতে নারাজ। সে কারণে ধর্মান্ধতা দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি আজও এদেশে জারি রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যে বৈরিতার শিকার হয়েছিলেন সেই একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। ১৯ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বার বার অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন।

দেশি-বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। ২০০৪ সালে তো বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোটের শাসনামলে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। প্রবাদ আছে-- রাখে আল্লাহ মারে কে! শেখ হাসিনা টিকে আছেন। আওয়ামী লীগও টিকে আছে।

আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। কারণ এই দলটি সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মেহনতি মানুষকে নিয়ে। কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করতেই দলের সৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছেন। তার কন্যা মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের শত্রু পুরনো শত্রু, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি, পরাশক্তি, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, সেই ১৯৪৯ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তৎপর। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাবে কারা সেই অপশক্তি।

সেই অপশক্তি স্বাধীন দেশের স্থাপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। আওয়ামী লীগের ভিতরেও অনেক শত্রু ছিল। পাকিস্তানি আমলে ছিল, এখনও আছে। অতীতেও খন্দকার মোশতাক ছিল এখনও হাইব্রিড খন্দকার মোশতাকরা আছে। বাইরের শত্রু তো চেনা যায়, ভেতরের শত্রু চেনা কষ্ট। এরা দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকে।

ভেতরের এবং বাইরের এই আঘাতের মধ্যদিয়েই বার বার পরীক্ষা দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে সুবিধাবাদীরা থাকবে, নতুন কিছু নয়। কিন্তু চোখ কান খোলা রেখে এগোতে হবে। ক্ষমতার চারপাশে নানান সমস্যা থাকে।

সাম্রাজ্যবাদী আর সাম্প্রদায়িক অপশক্তির চরম বিরোধিতার মুখেই শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করিয়ছেন, দণ্ড কার্যকর করেছেন। যুদ্ধাপরাধীরা সমস্ত আস্ফালন শেষে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, একাত্তরে গণহত্যা- ধর্ষণসহ মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের দায়ে অপরাধীরা দণ্ডিত হয়েছে। সেই দণ্ড কার্যকরও হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় মৌলবাদীদের সহায়তায় দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ছিল তাও শেখ হাসিনার সরকার কঠোর হাতে দমন করেছেন। পৃথিবীর কাছে এসব সাহসী পদক্ষেপ বাংলাদেশকে অত্যন্ত মর্যাদাবান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

সরকারে এবং দলের অভ্যন্তরে নানা সমস্যার মধ্যেও গত একযুগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তার কোনো তুলনা নেই। দরিদ্র দেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, আজ সেই সোনার বাংলা বলতে গেলে হাতের নাগালে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর কাছে আজ এক বিস্ময়।

উন্নয়নের রোল মডেল। নেতা হিসেবে বিশ্বসভায় শেখ হাসিনা এক অনন্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সংবর্ধিত, সম্মানিত, মহিমান্বিত। এই গৌরব হতদরিদ্র দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ই শুধু বাড়ায়নি, মানুষ হিসেবে পৃথিবীর কাছে মাথাটা উঁচুও করে দিয়েছে।

দারিদ্র্য কমাতে সারা দেশে শেখ হাসিনার সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীই কেবল প্রসারিত করেননি, নারীর ক্ষমতায়ন সম্প্রসারিত হয়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, স্বকর্ম সৃষ্টির সুযোগসহ কর্মসংস্থানের নানাপথ উন্মুক্ত হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সর্বোপরি স্বপ্নের পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু আর মেট্রোরেলের মুখে প্রবেশ দেশের জন্য অভূতপূর্ব অর্জন। তথ্যপ্রযুক্তি আর অবাধ তথ্যপ্রবাহ দেশকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ওয়ান প্রেরণসহ ব্যাপক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশের এসব ইতিবাচক পরিবর্তন তথা অর্জন দেশের সরকারপ্রধান তথা জননেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য যেমন মহত্তম অর্জন, তেমনই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্যও ঐতিহাসিক অর্জন। বন্যা খরা করোনার মতো মহামারির বিপর্যয় মোকাবিলা করেও বাংলাদেশে যেভাবে এগোচ্ছে তাকে এককথায় বলতে গেলে বলব অসামান্য এই সাফল্যের পথযাত্রা।

তেইশে জুনের ঐতিহাসিক এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথযাত্রার অনুপ্রেরণা, অগ্রণী এবং সহযাত্রী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সেই শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, আবুল হাশিম, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হকসহ পাকিস্তানি পর্বের স্মরণীয় নেতাদের। আওয়ামী লীগের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক। ৭২পেরিয়ে সাফল্যে পেরিয়ে যাক যাক শতবর্ষের বিজয়তোরণও- এই শুভকামনা।

লেখক: কবি-নাট্যকার, সিনিয়র সাংবাদিক, সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর