বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানবাধিকারে অ্যালার্জি

  •    
  • ১৯ জুন, ২০২১ ১৩:৪০

মিয়ানমারের বিষয়ে মানবাধিকারের বিপরীতে শুধু চায়নাই হাঁটেনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই হাঁটছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সব থেকে বড় সংগঠন ‘আশিয়ান’-ই প্রথম আন্তর্জাতিক সংগঠন- সেখানে যখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে বৈধ সরকারপ্রধান হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়, সে সময়ে মিয়ানমারের রাস্তায় নারী ও শিশুর লাশ।

চায়না সরকারের একটি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস অন্যান্য দেশের সরকারি মুখপত্র থেকে অনেক বেশি রাখঢাক না করেই লেখে। এ কারণে তাদের সরকারের মনোভাব ও অনেক নীতির কিছু আভাস সেখানে পাওয়া যায়। এই গ্লোবাল টাইমসে গত বেশ কয়েক মাস বা বছরের কাছাকাছি হবে- লক্ষ করা যাচ্ছে, মানবাধিকারে তাদের অনেক বেশি অ্যালার্জি।

বরং যেসব বিষয় নিয়ে চায়নায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে পশ্চিমা দুনিয়ায় প্রশ্ন ওঠে, সেগুলোর তারা বেশ সরাসরি জবাব দিয়ে তাদের দেশের অবস্থানের ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করে। এর পাশাপাশি একটু মিলিয়ে দেখলে দেখা যায়, অন্য দেশে যখন সত্যি সত্যি মানবাধিকার খুব বড়ভাবে লঙ্ঘন হয়, তখন তারা চুপ করে থাকে। এর থেকে কিছুটা হলেও আঁচ করা যায় চায়না সরকারের নীতি, পৃথিবীর যেখানে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হোক না কেন, তাদের তাতে মোটেই মাথাব্যথা নেই।

তাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে এ মুহূর্তে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আগেও হয়েছে। আগেও চায়নাকে এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করতে কেউ শোনেনি। এখনও শুনছে না। বরং তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে, কত দ্রুত মিয়ানমারের অবস্থা স্বাভাবিক করতে পারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত সরকারকে দিয়ে।

চায়নার এই সমর্থনের কারণে সেখানে যারা সরকারের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে তারা ক্ষুব্ধ চায়নার ওপর। চলতি মাসের ১১ তারিখে বড় আকারের বোমা মেরেছে চায়নার একটি কারখানার ওপর। এরপরও চায়না তাদের নীতি থেকে সরে এসে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের আন্দোলন ও নির্বাচিত সরকারের পক্ষের আন্দোলনকে কোনো সমর্থন না দিয়ে বরং ভিন্নপথে হেঁটেছে। তার পরের দিনই চায়নার রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারের সামরিক সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে তাকে সহযোগিতার আরও আশ্বাস দিয়েছে।

মিয়ানমারের বিষয়ে মানবাধিকারের বিপরীতে শুধু চায়নাই হাঁটেনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই হাঁটছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সব থেকে বড় সংগঠন ‘আশিয়ান’-ই প্রথম আন্তর্জাতিক সংগঠন- সেখানে যখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে বৈধ সরকারপ্রধান হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়, সে সময়ে মিয়ানমারের রাস্তায় নারী ও শিশুর লাশ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর ভেতর একমাত্র জাপান ছাড়া আর সব দেশই কখনই মানবাধিকারের কোনো গুরুত্ব দেয় না। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এসব দেশেই গণতন্ত্র আছে। কিন্তু কেউই গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত মানবাধিকারের বিষয়টিকে কোনো রকম দায়িত্ব বলে মনে করে না। বরং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট তো একবার হুমকিই দিয়েছিলেন, মানবাধিকারকর্মীরা যদি তার এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের বাধা হয়, তিনি মানবাধিকারকর্মীদের প্রতিও গুলি চালাতে নির্দেশ দিতে দ্বিধা করবেন না। তার উদ্দেশ্য মহৎ ছিল।

তিনি দেশ থেকে মাদক উচ্ছেদ ও মাদক চোরাচালান বন্ধ করার জন্য এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ে নেমেছিলেন। শুধু ফিলিপাইন নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও অনেক দেশ, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশও এ পথে গেছে। কেউই পারেনি মাদক নির্মূল করতে। আসলে তরবারিতে যদি শান্তি ও সমাধান হতো তাহলে তো মধ্যযুগেই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হতো। কারণ, তখন তরবারি আরও বেশি ব্যবহৃত হতো। মানুষকে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যে, যে রাষ্ট্র সিকিউরিটি ও আইনের শাসন দেবে। যেখানে বিচারের মাধ্যমে ছাড়া কাউকে হত্যা করা যাবে না, এমন একটি রাষ্ট্র তৈরির জন্যে মানুষকে এই দীর্ঘ সংগ্রামের পথে হাঁটতে হতো না।

চায়না এখন হংকংয়ের প্রেসের ওপর হামলা করেছে। এর সপক্ষেও তাদের মেইন ল্যান্ডের মিডিয়াগুলো কথা বলছে। তারা প্রেসের ওপর ওই হামলাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে না দেখে বরং ওই মিডিয়া হাউসটিই ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করছে।

চায়না এত দিন পৃথিবীর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থিত করছিল। গত কয়েক বছর নিজেরদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত করার চেষ্টা করছে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি থেকে আমেরিকা ও জাপানকে হটিয়ে দিতে চাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ এখন মোটামুটি তাদের রাজনৈতিক করতলে। পাকিস্তান শতভাগ, শ্রীলঙ্কা অনেকখানি। তারা নেপালের রাজনীতিতেও প্রকাশ্যে প্রবেশ করেছে।

এমনকি কিছুদিন আগে ইন্দো-প্যাসেফিক জোটের ও তাদের প্রস্তাবিত কোয়াডে বাংলাদেশের যোগদান করা না করার বিষয় নিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই মন্তব্য করেছে। যা শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলা নয়, সরাসরি জানিয়ে দেয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহযোগী শুধু চায়না থাকবে না, এ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েও তাদের একটি অবস্থান থাকবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার পরে দেখা যাচ্ছে চায়না চেষ্টা করছে সেন্ট্রাল এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি নিয়ে যেতে। কিন্তু চায়না যখন তাদের এই রাজনৈতিক উপস্থিতি নিয়ে যেতে চাচ্ছে, সে সময়ে এটাও পরিষ্কার হয়েছে, চায়নার যে রাজনৈতিক পথ তাতে মানবাধিকারের কোনো অবস্থান নেই। তাই সে উইঘুর হোক আর হংকংয়ের প্রেস হোক।

পূর্ব এশীয় দেশগুলো কমবেশি রেজিমেন্টাল সোসাইটির দেশ। কিন্তু দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো মোটেই রেজিমেন্টাল নয়। বরং অনেক বেশি আর্গুমেনটেটিভ। এমনকি পাকিস্তানের সোসাইটিও। ইমরান খান সব ক্লাসে কোরআন শরিফ পড়া বাধ্যতার পথে হাটঁছেন, তা নিয়ে তাদের সমাজে সরবে অনেকই বলছেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাসায় বসে পড়ার। এটা সিলেবাসের পড়ার জন্যে হতে পারে না। এর থেকে বোঝা যায়, পাকিস্তানের সোসাইটি কতটা আর্গুমেনটেটিভ। শ্রীলঙ্কাও এর থেকে কম নয়। আর ভারত ও বাংলাদেশ আরও বেশি।

ভারত ও বাংলাদেশে যে রাষ্ট্রনায়কই মানুষের ব্যক্তিগত মানবাধিকারকে অস্বীকার করে ও প্রেসের ওপর বা মিডিয়ার ওপর কঠোরতা প্রয়োগ করে দেশ ও সমাজ চালাতে গেছেন। তিনি তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া নিউটনের থিওরিকেও ছাড়িয়েও আরও বেশি মাত্রায় পেয়েছেন। অনেকেই এ আঘাতে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বা নির্বাচনে হেরেছেন।

ইন্দিরা গান্ধীর মতো জনপ্রিয় নেত্রীকেও জরুরি আইন জারি করার পর মানুষের মৌলিক অধিকার ও প্রেসের ওপর হাত দিয়ে নির্বাচনে হারতে হয়েছিল মাত্র তেরো দিন বয়সের একটি জোটের কাছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে অনেক এথনিক সংঘাত আছে। তারপরেও তারা রেজিমেন্টাল সোসাইটি নয়। বরং অনেক বেশি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের চরিত্রে বিশ্বাসী। সেখানেও মানবাধিকার-বর্জিত রাজনীতি চালু করা সম্ভব নয়।

আরও সত্য হলো বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার-বর্জিত রাজনীতি নিয়ে শেষ অবধি কেউ টিকতে পারবে না। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই এখন অনেক বেশি উন্মুুক্ততায় বিশ্বাসী। এ সময়কে যে দেশ বা যে শক্তি অস্বীকার করবে- তারাই ভুল করবে।

এ বিভাগের আরো খবর