বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেকশিফট হাসপাতাল

  •    
  • ১১ জুন, ২০২১ ১৭:৪২

ভারতে গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়লে তারা সব থেকে বেশি মুশকিলে পড়েছিল। কারণ, দিল্লিতে অক্সিজেন-সংকট ছিল কয়েকটি দিন। সে সংকট হয়েছিল মূলত ওদের অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলো সব নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ায়। সেখান থেকে অক্সিজেনের কনটেইনার নিয়ে দিল্লিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল বলে। আর এ সময়টা লাগা স্বাভাবিক। কারণ সবাই জানেন, অক্সিজেন কনটেইনার নিয়ে যে ট্রেনগুলো চলে, সেটা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের থেকে বেশি জোরে চালানো সম্ভব নয়।

বেশি জোরে চললে যেকোনো মূহূর্তে কনটেইনার ব্লাস্ট হতে পারে। আর অক্সিজেন কতখানি দাহ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই ধীরগতির এই ট্রেন যেতে যতটা সময় লেগেছিল, ততদিনই সেখানে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ বেশি মারা যায়। কিন্তু গ্রামে গ্রামে ওই ট্রেন পৌঁছানোর কোনো পথ নেই। সেখানে আরও ধীরগতিতে পৌঁছাতে হচ্ছে।

দিল্লিতে এই করোনার ভয়াবহ সময়ে ওদের পত্রপত্রিকায় একটা বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা এসেছিল, সেখানে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এখনই গ্রাম এলাকায় অক্সিজেন সরবরাহ করা দরকার। সেখানে ডাক্তার পাঠানো দরকার। তারা শতভাগ করতে পারেনি। তাই গ্রাম এলাকায় চিকিৎসার সংকট দেখা যাচ্ছে। না পাওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনের সময় ডাক্তার, না পাওয়া যাচ্ছে অক্সিজেন।

বাংলাদেশেও এখন ঢাকা থেকে মফস্বলে করোনা সংক্রমণের হার বেশি। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, খুলনা এমনি ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এখন করোনার সংক্রমণ হার ২৩ শতাংশ থেকে ৬৩ শতাংশ।

ইতোমধ্যে এসব এলাকার হাসপাতালগুলোর করোনা ডেডিকেটেড সিট রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। অধিকাংশ এলাকার ডাক্তাররা বলছেন, তাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেয়ার সক্ষমতা ও অক্সিজেন সরবরাহ নেই। তাই সীমান্ত এলাকায় করোনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে এ সংকট বাড়বে। কেউ চায় না। তারপরেও বলতে হয়, মৃত্যুও হয়তো ঠেকানো যাবে না সেভাবে। তাতে হয়তো মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে।

বাস্তবে আমাদের সরকারও ভারত সরকারের মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে, এ তাদের চিন্তায় ছিল না। ইংল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে দ্বিতীয় ঢেউ দেখে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সিদ্ধান্ত নেয়নি আফ্রিকার দেশে দেশে দ্বিতীয় ঢেউ দেখে। এমনকি যে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ নিজেদের করোনার প্রথম ধাক্কা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিল, তারাও পারেনি দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে।

তাই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ নীতিনির্ধারকদের করোনার প্রথম ধাক্কা চলে গেলেই ‘বেঁচে গেছি’ মনে না করে পৃথিবীর নানান দিকের অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। এমনকি প্রচার করা উচিত ছিল খুব বেশি করে পৃথিবীর দেশে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কীভাবে আসছে। এবং এর মূর্তি কতটা সংহারকারী।

অবশ্য প্রচার করলে যে খুব বেশি লাভ হতো তা বলা যায় না। কারণ, আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে স্রষ্টা ভিন্নভাবে তৈরি করেছেন। এদের জন্য স্রষ্টা আলাদা স্বভাব বরাদ্দ করে রেখেছেন।

কারণ, আমাদের এই উপমহাদেশের পাশে ভুটান বা মিয়ানমারে গেলে আপনি রাস্তায় থুথু ও কাগজ ফেলানো পাবেন না। কিন্তু উপমহাদেশের রাজধানীর পশ এলাকাতেই মিলবে এটা যত্রতত্র। তেমনি করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে যখন ভারতের বোম্বে মানুষ মরছে শত শত। হাসপাতালগুলোতে মানুষকে বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা।

এই সময়ে প্রখ্যাত সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায় লিখছেন। ‘প্লেন থেকে বোম্বে নেমে দেখলাম এয়ারপোর্টেও সবার মুখে মাস্ক নেই। আর রাস্তায় বের হয়ে তো অবাক, মানুষ কোনো কিছু কেয়ার করে না।।’ বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। যেহেতু একই ভূগোলের মানুষ তো!

যে কারণে সরকারের এত বিধিনিষেধের পরেও দেখা গেল মানুষ ঈদে সমানে বাড়ি গেল। এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক এলাকায় ঈদের পরে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, এখনও দেশের কোথাও মাস্ক পরা নিয়ে বা করোনা সতর্কতা নিয়ে চলতে শতকরা ৫০ ভাগ মানুষকেও দেখা যায় না।

তাই পৃথিবীর দেশে দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রবলতা দেখে সরকার যদি আগের থেকে হুঁশিয়ার হতো, তাহলে অন্তত বড় বড় জেলা শহরগুলোতে কিছু মেকশিফট হাসপাতাল করা সম্ভব হতো। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং ভারতীয় ভেরিয়েন্ট দেখার পরে বাচ্চাশিশুটিরও বোঝা উচিত ছিল, এ ঢেউ আজ না হোক কাল বাংলাদেশে আসবে।

তখন থেকেই জেলা শহরগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো, ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো এবং সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৫০টি মেকশিফট হাসপাতাল সরকার তৈরি করতে পারত। না এর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এখন সীমান্ত এলাকায় উপজেলা পর্যায় শুধু নয়, ইউনিয়নের বাজারগুলোতেও লকডাউন দিতে হচ্ছে। সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণের হার ৬৩ শতাংশ। আরও বেশি পরীক্ষা করলে এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাই-বা কে জানে!

এখন বাস্তবতা হলো, এই ভয়াবহ সময়ে দেশের মানুষের ও সরকারের একমাত্র শক্তি হলো মনোবল। যেকোনোভাবে হোক, মনোবল ধরে রাখতে হবে। মানসিক শক্তিতে ভর করে দ্রুত কিছু কাজ করতে হবে। দ্রুত এই কাজগুলোর মধ্য প্রথমে দেশের এসব সীমান্ত এলাকায় অক্সিজেন সরবরাহ আরও বাড়াতে হবে। এবং ওই সব এলাকার যে হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধা নেই। সেটা গড়ে তুলতে হবে যুদ্ধকালীন গতিতে।

পাশাপাশি অবিলম্বে মেকশিফট হাসপাতাল গড়তে হবে যুদ্ধকালীন ট্রেনিংকে ব্যবহার করে। আর সে কাজে যদি আর্মির মেডিক্যাল কোর ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর থেকে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়, তাহলে তাদের ব্যবহার করতে হবে। কারণ, তাদের দ্রুত মেকশিফট হাসপাতাল গড়ে তোলার শিক্ষা ও ট্রেনিং আছে। তাই এখন আপৎকালে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।

করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো দেশই শতভাগ জয়লাভ করতে পারেনি। ধনী ও দরিদ্র দেশ সবাই সমান ভুগেছে। তবে ভারতকে দেখে বলা যায়, দরিদ্র ও জনঘনত্বপূর্ণ দেশ সব থেকে বেশি ভুগেছে। বাংলাদেশও দরিদ্র ও জনঘনত্বপূর্ণ। তারপরে এখানে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ও আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট দুটো করোনাই ঢুকেছে। এ কারণে আমাদের হাতে এখন আর নষ্ট করার মতো কোনো সময় নেই।

এ বিভাগের আরো খবর