বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কারামুক্তি দিবস ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা

  • দুলাল আচার্য   
  • ১১ জুন, ২০২১ ১৪:১৪

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই। আর বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৮ দিন পরে ৩ সেপ্টেম্বর। অথচ জামায়াত-বিএনপি সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে দেশের সব পেশার মানুষ তখনও ক্ষুব্ধ ও ঐক্যবদ্ধ ছিল। সে সময় বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক অংশীদার মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইবরাহিম বলেছিলেন, ‘হাওয়া ভবন দুর্নীতির ওয়ান স্টপ সার্ভিস।’ সেই সরকারের প্রধানকে আগে গ্রেপ্তার না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ। দীর্ঘ ১১ মাস কারাবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন তিনি। উল্লেখ্য, ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কারাগারে থাকাকালে শেখ হাসিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় চিকিৎসার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার মুক্তির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও দেশবাসীর আন্দোলন, আপসহীন মনোভাব এবং অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

এই মুক্তির মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসে। বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের। তার নেতৃত্বেই বাঙালির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। সেই থেকেই তিনি আমাদের গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা, মাদার অব হিউম্যানিটি শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে তৎকালীন সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে ধানমন্ডির বাসভবন সুধা সদন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে আটক রাখা হয়। অবশ্য এর আগে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ১৯৮৩, ১৯৮৫ এবং ১৯৯০ সালেও তিনি রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেন।

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। মুক্তি পেয়েই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেয়া হয় তাকে। পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তথা ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থ পুত্রবধূকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্র যান। তারপর থেকে দেশের ভেতরে ক্ষমতালোভী-উচ্চাভিলাষী একটি চক্র তাকে দেশে ফিরতে না দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

প্রথমে একজন ঠিকাদারকে দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়। এফআইআরে নাম না থাকা সত্ত্বেও জামায়াত-শিবিরের দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। চাঁদাবাজির বানোয়াট ও কল্পিত মামলাটি দায়ের করা হয় ৯ এপ্রিল। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলাটি আইনগতভাবে মোকাবিলার জন্য তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল মতিন শেখ হাসিনাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাড়াহুড়ো করে দেশে ফেরার প্রয়োজন নেই। বলা হয়, তিনি যেন তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষ করে নির্ধারিত সময়ে দেশে ফেরেন।

প্রভাবশালী ওই উপদেষ্টা সাংবাদিকদের আরও বলেন, শেখ হাসিনার মর্যাদা ও সম্মানহানির কোনো কিছুই তার সরকার করবে না। এমনকি প্রেসনোট জারির আগের দিন ১৭ এপ্রিলও তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে না দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত তার জানা নেই। আবার প্রেসনোট জারির পর সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, প্রেসনোটের প্রসঙ্গে তার কোনো বক্তব্য নেই। সবচেয়ে বিস্ময়কর বক্তব্য দিয়েছিলেন আইন ও তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। উল্লেখ্য, সরকারি প্রেসনোটে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি উল্লেখ করা হয় এবং তার দেশে ফিরে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রেসনোট ইস্যু করার পর শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন।

একই দিন রাতে বাংলাদেশের মিডিয়ায় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে দেশের কোনো টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকন্যার সেদিনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। সরকার তার ওপর নিষেধাজ্ঞার খবরটি দ্রুত বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়।

বিমান ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। অপরদিকে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করার পর উপদেষ্টা জেনারেল মতিন এবার সুর বদলে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশে ফিরলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২২ এপ্রিল ২০০৭ বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় দৈনিক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে নিষেধাজ্ঞা-সম্পর্কিত রিপোর্ট ছেপেছিল। ২৫ এপ্রিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ শেখ হাসিনাকে বোর্ডিং পাস না দেয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। তারা জানিয়েছিল, বাংলাদেশ এভিয়েশন অথরিটির এক লিখিত নোটিশের কারণেই এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।

২০০৭ সালের ৩ মে বিশ্বখ্যাত পত্রিকা ‘আউট লুক’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে তার সংগ্রামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যক্ত করেছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অসাংবিধানিক সরকার আমার জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারছে না। এই দেশে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, মাকে হত্যা করা হয়েছে, আমার ভাইদের ও পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি আমার দেশে ছিলাম, জনগণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম, আমার সরকার ছিল খুবই সফল। আমরা বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করেছি। গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল; কিন্তু আমার সময়ে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়। আমাদের সময় খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল, জিডিপি বেড়েছিল, মুদ্রাস্ফীতি কমেছিল।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে তার দায়িত্ব হলো জাতীয় নির্বাচন করা। কিন্তু তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা উচিত।’

৭ মে ২০০৭ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক অনন্য দিন। দিনটিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দ্বিতীয়বার শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

প্রথম ফিরে আসার দিন ছিল ১৭ মে ১৯৮১। আর ২০০৭ সালের এদিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তার ঐকান্তিক দৃঢ়তা, সাহস ও গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তী সময়ে ৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরে এলে লাখো জনতা তাকে অভ্যর্থনা জানায়।

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে মিছিল শোভাযাত্রাসহকারে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে নিয়ে আসা হয়। সেদিন নানা বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও লাখো জনতাকে রোখা যায়নি শত প্রচেষ্টায়। দেশে ফিরে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শুরু হয় তার নবতর সংগ্রাম।

সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে আসতে না পারলে এ দেশে রাজনীতিতে নিষ্ঠুর-নৈরাজ্য বিরাজ করত। অগণতান্ত্রিক সরকার অতীতের মতো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে নিত। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’।

রাজনৈতিক কর্মী নয়, একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সে সময় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার আন্দোলনে অন্যদের মতো নিজেও সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি তখন শেখ রেহানার মাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করি।

অফিস ছিল ধানমন্ডির ৩২ নং সড়কে (জাতির পিতার পাশের বাড়িতে)। সেখান থেকে বেবী আপার (প্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদ) নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে একটি ‘ট্যাবলয়েট’ (রঙিন) প্রকাশ করা হয়, সঙ্গে কিছু লিফলেটও। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু লেখা সংযোজন করে এটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করা হয়। ট্যাবলয়েটে অন্যদের মতো আমারও একটি প্রতিবেদন ছিল। প্রকাশের পর এটি প্রচারে আমরা বিচিত্রাকর্মীরা (জসিম ভাই, ওয়ালিদ ভাই, চম্পকদা, স্বপনদা, বিল্লাল, মনিরসহ আরও অনেকে। সবার নাম এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না) নানা স্পটে কাজ করেছিলাম। সময়ের স্রোতে অপ্রতিরোধ্য হলেও সেই স্মৃতি আজও অমলিন।

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পূর্বমুহূর্তে জাতির উদ্দেশে তিনি একটি চিঠি লিখে যান; যা পরদিন জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রকাশ করে। সেদিন শেখ হাসিনা নির্ভীকচিত্তে জাতির উদ্দেশে অবিস্মরণীয় উক্তি করেছিলেন-

‘…অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন, আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।’

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই। আর বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৮ দিন পরে ৩ সেপ্টেম্বর। অথচ জামায়াত-বিএনপি সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে দেশের সব পেশার মানুষ তখনও ক্ষুব্ধ ও ঐক্যবদ্ধ ছিল।

সে সময় বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক অংশীদার মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইবরাহিম বলেছিলেন, ‘হাওয়া ভবন দুর্নীতির ওয়ান স্টপ সার্ভিস।’ সেই সরকারের প্রধানকে আগে গ্রেপ্তার না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫৮ দিন পরে খালেদা জিয়াকে বাধ্য হয়ে গ্রেপ্তার করেছিল; কারণ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এককাট্টা হয়ে গিয়েছিল। ঢাকা শহরের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর করে। তা একসময় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন একটা বিষয় স্পষ্ট ছিল যে, অগণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোটের অপশাসনের কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের একতরফা সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত হয় সেনানিয়ন্ত্রিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’। সরকারের প্রায় দুই বছরে সংস্কারপন্থী নামে দল ভাঙা-দল গড়ার ‘খেলা’ও ওই সময়ে দেখেছে জনগণ।

শেখ হাসিনা তার ১১ মাসের কারাজীবন সৃজনশীল রাজনৈতিক চিন্তায় পার করেছেন। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নির্জন কারাগারে তিনি জনগণের কল্যাণ চিন্তা করেছেন। এক স্মৃতিচারণায় শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা, তা সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলোতেই তৈরি করেছিলেন তিনি।

শত বাধাবিপত্তি, প্রতিকূলতা ও হত্যার হুমকি উপেক্ষা করেও শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আজকের গণতান্ত্রিক ও জনমুখী বাংলাদেশকে অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে, হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। শত বাধা ও ষড়যন্ত্র পাশ কেটেই শেখ হাসিনা গত এক যুগে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এক সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন।

এখনও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গভীর ষড়যন্ত্রের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে দেশ। সম্প্রতি হেফাজতসহ নানা অরাজক ঘটনাবলিই তার প্রমাণ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।

মনে রাখা দরকার, সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যার মুক্তি না হলে অগণতান্ত্রিক সরকার অতীতের মতো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকত, স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল হতো না, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না, এগোত না উন্নয়নের ধারা। সে কারণে বাঙালি ও বাংলাদেশের রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে আজকের দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটি কেবল শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবসই নয়, এটা গণতন্ত্রেরও ফের মুক্তি দিবস।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর