বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্দিজীবনকে কাজে লাগিয়েছিলেন উন্নত দেশ গঠনে

  •    
  • ১১ জুন, ২০২১ ১৩:০৩

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে টানা ১১ মাস কাটে জেলখানায়। কিন্তু জেলে বা অন্তরিন থাকার সময়টি তিনি কাটিয়েছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যৎ সরকারের কর্মসূচি প্রণয়নের কাজে। একই সঙ্গে তিনি লেখনী চালিয়ে গেছেন এবং প্রকাশের জন্য তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা গণচীনের মতো কালজয়ী গ্রন্থ।

‘সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি’- বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আমার এ গ্রন্থে ২০০৮ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা উল্লেখ রয়েছে এভাবে- শেখ হাসিনার মুক্তি, খালেদা জিয়ার মুক্তি, জরুরি আইন প্রত্যাহার এবং সাধারণ নির্বাচন : ১৪ দলের বিপুল বিজয়।

শেখ হাসিনা মুক্ত হয়েছেন- এ কথার অর্থ হচ্ছে তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার সময় তিনি ছিলেন জার্মানিতে। এরপর প্রায় ৬ বছর তাকে কাটাতে হয় নির্বাসনে। জিয়াউর রহমান তাকে বাংলাদেশে আসতে দেননি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর এইচ এম এরশাদের শাসনামলে তাকে কয়েক দফা নিজ বাসগৃহে আটক রাখা হয়।

১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির পর বন্দি করে রাখা হয় ক্যান্টনমেন্টে। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে টানা ১১ মাস কাটে জেলখানায়। কিন্তু জেলে বা অন্তরিন থাকার সময়টি তিনি কাটিয়েছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যৎ সরকারের কর্মসূচি প্রণয়নের কাজে। একই সঙ্গে তিনি লেখনী চালিয়ে গেছেন এবং প্রকাশের জন্য তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা গণচীনের মতো কালজয়ী গ্রন্থ।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে জরুরি আইন বলবৎ হয় এবং পরদিন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ নির্দলীয় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। জরুরি আইন জারির কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ গোলযোগে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিপন্ন হওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু সবার জানা ছিল, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হওয়ার যে নীলনকশা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান চূড়ান্ত করেছিলেন, সেটা ব্যর্থ করে দিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়, নিষিদ্ধ হয় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

‘দলনিরপেক্ষ সরকার’ অচিরেই বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়তে থাকা সেনাবাহিনীপ্রধান মঈন উ আহমদের পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস ১৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দেন- ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল তিনি গঠন করবেন। [বার্তা সংস্থা রয়টার্স, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭]

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। জরুরি আইন জারির পর পরই তিনি লাগাতার অবরোধ-হরতালসহ সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনগণের প্রত্যাশার কথা।

বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর শাসনামলে তাদের পছন্দের বিচারপতি আবদুল আজিজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ১ কোটির বেশি ভুয়া ভোটার রেখে যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেটা বাতিল করে নতুন করে ছবিযুক্ত তালিকা প্রকাশের দাবিও তিনি তুলে ধরেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই প্রত্যুষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাসভবন সুধা সদন থেকে পুলিশ ৪০টি সিডি, শতাধিক ফাইল, তিনটি মোবাইল ফোন সেট ও বিভিন্ন কাগজ জব্দ করে এবং একটি সিন্দুক সিলগালা করে দেয়া হয়। তাকে আদালতে তোলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হেনস্তা করেছে- এ দৃশ্য দেশবাসী দেখেছেন টেলিভিশনের পর্দায়। [সমকাল ও প্রথম আলো। ১৭ জুলাই, ২০০৭]

গ্রেপ্তারের মাস দুয়েক আগে ৭ মে তিনি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে বের হয়ে এসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনের উদ্দেশে রওনা হবার সময় হাতে গোনা কয়েকজন নেতা তাকে স্বাগত জানান।

জরুরি আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশাল জমায়েত করে দলের সভাপতিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর সুযোগ আওয়ামী লীগের ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে বাংলাদেশে ফিরতে না দিতেই বিশেষভাবে তৎপর ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরের ভেতরের সড়ক থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে নিয়ে গাড়িটি প্রধান সড়কে পড়তে না পড়তেই দেখা গেল অভূতপূর্ব দৃশ্য- দলে দলে আওয়ামী-ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা প্রশস্ত রাজপথ ভরে ফেলল।

এ যেন ম্যাজিক! কেবল একটি স্থানে নয়, বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত ১৫-১৬ কিলোমিটার পথজুড়ে কেবল মানুষ আর মানুষ। কণ্ঠে তাদের স্লোগান জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার আগমন স্বাগতম স্বাগতম! সাধারণত আওয়ামী লীগ কিংবা এ ধরনের দলের বড় সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা আসেন বাস-ট্রাকে। কিন্তু সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমনটি ঘটতে পারেনি। কী করে সম্ভব হলো এ ধরনের জমায়েত? তিনি আন্দোলনের পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করেছিলেন বলেই এমনটি ঘটতে পেরেছিল।

শেখ হাসিনা ৭ মে নয়, আরও দুই সপ্তাহ আগে স্বদেশে ফেরার জন্য লন্ডন বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসার জন্য প্রথমে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভয়ংকর গ্রেনেড হামলার দিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তাকেসহ গোটা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল সেই অভিশপ্ত দিনে। অন্তত ২৪ জন সেই হামলায় নিহত হন।

এদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভী রহমান। আহত অন্তত ৫০০। ওবায়দুল কাদের, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ অনেকে আহতের দলে। ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানানো হয়েছিল। শেখ হাসিনাসহ আরও অনেক নেতা ছিলেন মঞ্চে। সমাবেশ ও মঞ্চ লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। চারদিকে মৃত্যুপথযাত্রীদের আর্তচিৎকার। এর মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে শরীর দিয়ে আড়াল করে রাখেন একদল নেতা-কর্মী। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রচণ্ড শব্দ ও গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে শ্রবণশক্তি কমে যায় এবং তা স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়।

এ ব্যাধি নিয়েই তিনি ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন ব্যর্থ করার সফল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জরুরি আইন জারির পর তিনি কানের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান। ফিরে আসার কথা ছিল লন্ডন হয়ে। সেখান থেকেই বিমানে ওঠার তারিখ নির্ধারিত হয় ২৩ এপ্রিল (২০০৭)। কিন্তু ততদিনে ঢাকায় নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। অপপ্রচারও চলতে থাকে। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর মতোই অদম্য। মামলার কথা জানতে পেরে ঘোষণা দেন- আদালতে গিয়ে তিনি প্রমাণ করে দেবেন যে, এ মামলা হয়রানিমূলক।

রাজনৈতিকভাবে তাকে দমিয়ে রাখার জন্যই এটা দায়ের করা হয়েছে। ততদিনে ঢাকায় ‘মাইনাস টু’ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক নির্বাসনে পাঠানো হবে। তবে রাজনৈতিক হালচাল যাদের জানা, তারা বলছিল- তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাইনাস টু নয়, প্রকৃতপক্ষে চাইছিল শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে। তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য মাইনাস ওয়ান। সামরিক বাহিনী নেপথ্যে থেকে যে সরকার চালাচ্ছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে তারা। কিন্তু আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ একই কথা বলেছিলেন।

জনগণ দেখেছে- এদের কেউ গণতন্ত্র দিতে চাননি। আর তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ভণ্ডুল করে দিতে বারবার যে দলটি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সেটির নাম আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মীকে হত্যা করেও এ দলকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। জরুরি আইনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা রুখে দাঁড়াবেন, এ নিয়ে শাসকদের সন্দেহ ছিল না। এ কারণে তারা চেয়েছিল রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে তাকে সরিয়ে দিতে।

তাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ছিল বাংলাদেশের বাইরে লন্ডন কিংবা অন্য কোনো স্থানে তাকে নির্বাসিত জীবনযাপনে বাধ্য করা। প্রয়োজনে আরাম-আয়েশে জীবন কাটানোর ব্যবস্থা করা হবে। এখন তারেক রহমান যেমন লন্ডনে জীবন কাটাচ্ছেন, অনেকটা সে ধরনের ব্যবস্থাই প্রায় করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সে অপচেষ্টা বানচাল করে দেয়। শেখ হাসিনা জানতেন, তাকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করা হতে পারে। কিংবা সুধা সদনে গৃহবন্দি করে রাখা হতে পারে। কিন্তু দৃঢ় সংকল্প তার- ‘নাথিং উইল গো আনচ্যালেঞ্জড।’ তিনি দলকে জানিয়ে দেন- রাজপথে থাকতে হবে।

১৬ জুলাই তিনি গ্রেপ্তার হন। ওই দিনই আদালতে নেয়া হলে দলের নেতা-কর্মীরা ফের স্লোগানমুখর হয়- শেখ হাসিনার মুক্তি চাই। তিনি যতদিন কারাগারে ছিলেন, একের পর এক মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভীক। কর্মীরাও ছিলেন রাজপথের সাহসী সৈনিক। ১১ মাসের বন্দিজীবন শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

তাকে গ্রেপ্তারের এক মাস যেতে না যেতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নামে। শুরু হয় আন্দোলন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় থেকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যহারের দাবিতে। ২০ আগস্ট ছাত্রছাত্রীরা রাতভর বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পুলিশের চেকপোস্টে আগুন দেয়া হয়। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয় শতাধিক শিক্ষার্থী। কলাভবন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি এলাকা ছিল ছাত্রছাত্রীদের দখলে। পরের দুই দিন আন্দোলনে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়।

কারফিউ জারি এবং সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সেন্সরশিপ আরোপ করেও আন্দোলন থামানো যায়নি। অধ্যাপক ড. হারুন-অর রশিদসহ কজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৩ জুলাই প্রথম আলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বরাত দিয়ে লিখেছিল- ‘আন্দোলন থামাতে কারফিউ জারির বিকল্প ছিল না।’

এই আন্দোলনের কয়েক দিন পর ৩ সেপ্টেম্বর (২০০৭) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারেক রহমান গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৭ মার্চ। একটি দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবার, যারা দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিল- তাদের গ্রেপ্তারে জনমনে স্বস্তি ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের গ্রেপ্তার ও তড়িঘড়ি বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের অপচেষ্টার কারণ তাদের বোধগম্য ছিল না।

শেখ হাসিনার বিচারকাজ শুরু হয় বিশেষ আদালতে। শুনানির দিনগুলোতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী আদালতের আশপাশে জমায়েত হতে থাকে। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো যে ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক, সেটা আইনজীবীরা যুক্তি ও তথ্য দিয়ে প্রমাণ করে দেন। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনও নানাভাবে দলনেত্রীর মুক্তির দাবিতে সক্রিয় থাকে। সে সময়ে তারা জরুরি আইনের পরিবেশেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার যে সক্ষমতা প্রদর্শন করে, সেটা ছিল অনন্য।

মুক্তির পর শেখ হাসিনা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় যে মহাজোট গঠন করেছিলেন সেটা আরও সম্প্রসারিত করতে পারেন। ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মুখে খালেদা জিয়া হয়ে পড়েন একঘরে।

নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়নেও শেখ হাসিনা অনন্য উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাতে পারেন। এর প্রস্তুতির জন্য তিনি বন্দিজীবনের সময়টি কাজে লাগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরুর দাবির পাশাপাশি সামনে আনেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের কর্মসূচি। তরুণ প্রজন্ম এসব ইস্যু লুফে নেয়। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় শেখ হাসিনার জয় ছিল আওয়ামী লীগের ইশতেহারের প্রতি বিপুল সমর্থনের প্রমাণ। এ জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হয়। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে অর্জিত দেশটি এগিয়ে যেতে পারে সম্ভাবনার পথে।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর