বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছয় দফা থেকে স্বাধীনতা

  • মোহাম্মদ শাহজাহান   
  • ৭ জুন, ২০২১ ১৭:০৮

গভর্নর মোনায়েম খান বঙ্গভবনে সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন। শেখ মুজিব ওই সভায় সাহসী বক্তব্য রাখেন। তিনি ভারতীয় হামলার যেমন প্রতিবাদ করেন তেমনি পূর্ব বাংলাকে অরক্ষিত রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬৫ প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আহূত পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকেও শেখ মুজিব ভারতীয় হামলা এবং পূর্ব বাংলাকে অরক্ষিত রাখার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মাথায় রেখেই শেখ মুজিব ছয় দফা দিয়েছিলেন। ছয় দফা ও স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দিয়েছিলেন বলেই ৫ বছরের মাথায় একাত্তরে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ছয় দফা আন্দোলনের ইতিহাসে ৭ জুন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিন।

ছয় দফা আন্দোলনে কারাবরণকারী দেশবরেণ্য ছাত্রলীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন- ‘আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি রচিত হয় ৭ জুন।’

গত বছর (৭ জুন ২০২০) বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ছয় দফা বাঙালির স্বাধীনতার সনদ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লেখায় উঠে এসেছে বেগম মুজিবের ভূমিকা এবং জেলে থেকে সেদিন বঙ্গবন্ধু ডায়েরিতে কী লিখেছিলেন, সে-সব কথা। তিনি লিখেছেন-

‘৭ জুনের হরতালকে সফল করতে আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে তিনি দিক-নির্দেশনা দেন। শ্রমিক নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন।’

সেদিন বঙ্গবন্ধু তার ডায়েরিতে লিখেন, ‘১২টার পর খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে, হরতাল হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। তারা ছয়দফা সমর্থন করে মুক্তি চায়। বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তিস্বাধীনতা চায়, শ্রমিকের ন্যায্য দাবি, কৃষকের বাঁচার দাবি তারা চায়, এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যেই হয়ে গেল।’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃ. ৬৯)। বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে সকল সংকটে ছায়ার মতো পাশে থেকে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক, মিজানুর রহমান চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ৭ জুনের হরতাল সফল করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তখন দেশের ওই কঠিন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভয়ে কেউ কথা পর্যন্ত বলত না।

৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যাওয়া দূরের কথা, বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করতে সাহস করত না। ৭ জুনের হরতাল পালনে চরম অর্থসংকটে ছিল। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল সিএসপিদের অন্যতম রুহুল কুদ্দুসের বাসায় যান মিজান চৌধুরী। অর্থসংকটের কথা তাকে জানালে তিনি জানতে চান, কত দরকার। চার হাজার টাকা হলেই চলবে। তিনি সাথে সাথে চার হাজার টাকা দেন।

মিজান চৌধুরী তাঁর আত্মজীবনীতে (পৃ. ৮২) লিখেছেন, ‘ওই ভীতিকর অবস্থায় তিনি যে আমার সঙ্গে দেখা করলেন, এটাই বড় কথা, টাকার কথা ছেড়েই দিলাম। লাহোরে বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের সম্মেলনে ছয় দফা দাবি পেশ করার ব্যাপারে মিজান চৌধুরী তার গ্রন্থে (পৃ. ৭৭) লিখেছেন- ‘কতো বড় বুকের পাটা হলে ওই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবি সংবলিত ছয় দফা ঘোষণা করা যায় তা বলাই বাহুল্য।

আসলে ৭ জুনের হরতালে বাঙালি জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৬৬-এর ৭ জুনের হরতালটি ছিল পশ্চিমা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।

কঠিন নির্যাতনের মুখে ৭ জুন সারা দেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। বহু লোক হতাহত হয়। কলকারখানা, গাড়ির চাকা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। স্তব্ধ হয়ে যায় পূর্ব বাংলার নাগরিক জীবন। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে শত শত জঙ্গি মিছিল বের হয়। নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকা থেকে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ মানুষ মিছিল করে ঢাকায় প্রবেশ করে। প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই হরতাল তথাকথিত লৌহমানব আইয়ুব খানের তখতে তাউস কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

আসলে শেখ মুজিবের রাজনীতির মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মুজিব যুবক বয়সে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান শব্দটি তার মুখে খুব একটা শোনা যায়নি। তিনি বলতেন পূর্ব বাংলা। ১৯৬৫ সালে ১৭ দিনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মাত্র ৫ মাসের মাথায় শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি জাতির সামনে পেশ করেন।

শেখ মুজিব হঠাৎ করে ৬ দফা দেননি। পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিমা শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর অতিরিক্ত খবরদারি শেখ মুজিব কখনো মেনে নিতে পারেননি। পশ্চিমা সামরিক জান্তা বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করতো। পাকিস্তানের ২৩ বছরে সংখ্যালঘু পশ্চিম পাকিস্তানিরাই রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়।

১৭ দিন স্থায়ী হয় ওই যুদ্ধ। পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয় ভারত। রাশিয়া ও পাকিস্তানের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫-এর ২০ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। উভয় দেশ মেনে নেয় যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধের সময় পূর্ব বঙ্গ ছিল সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত। ভারত চাইলে অনায়াসে দখল করে নিতে পারত। শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ ভারতীয় হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং একই সঙ্গে পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়। যুদ্ধকালে গভর্নর মোনায়েম খান বঙ্গভবনে সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন। শেখ মুজিব ওই সভায় সাহসী বক্তব্য রাখেন।

তিনি ভারতীয় হামলার যেমন প্রতিবাদ করেন তেমনি পূর্ব বাংলাকে অরক্ষিত রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬৫ প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আহূত পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকেও শেখ মুজিব ভারতীয় হামলা এবং পূর্ব বাংলাকে অরক্ষিত রাখার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

১০ ফেব্রুয়ারি লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা সম্পর্কে শেখ মুজিব বলেন- ‘সাম্প্রতিক পাক-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষিতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন এবং দেশ রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রশ্নটা মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং পাকিস্তানের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানবাসীর অকৃত্রিম ভালোবাসাই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষার ব্যাপারে সুসংহত রেখেছে। কিন্তু একই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানবাসী দেশরক্ষার ব্যাপারে তাদের প্রদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে থাকে। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন জাতি ও সংহতির কোনো ক্ষতিতো করবেই না বরং পাকিস্তানকে আরও শক্তিশালী করবে।’

সম্মেলনের আয়োজকগণ ৬ দফা নিয়ে কোনো প্রকার আলোচনা করতে রাজি হননি। শেখ মুজিব সম্মেলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে সম্মেলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ ব্যাখ্যা করেন শেখ মুজিব।

৬ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে সর্বপ্রথম ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের এমএ আজিজ, আবদুল্লাহ আল হারুন ও এমএ হান্নান যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমি ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানায় পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি।

৬ দফার পক্ষে-বিপক্ষে সারা দেশে বক্তৃতা-বিবৃতি শুরু হয়। এমনকি আওয়ামী লীগও দু’ভাগ হয়ে যায়। জামায়াতে ইসলামী ও নেজামে ইসলাম ছয় দফার বিরোধিতা করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের পুরানা পল্টন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা কর্মসূচির ব্যাখ্যা করেন। ঐ সময় ৬ দফা দাবির মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব বাঙালি জাতীয়তাবাদের একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।

২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফাকে অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় দফা আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহারে পরিণত হয়। এরপর ছয় দফার সমর্থনে দেশের সর্বত্র জনসভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে ৬ দফার সমর্থনে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

৫ ফেব্রুয়ারি ছয় দফা পেশের পর ১৯৬৬ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, হাফেজ হাবিবুর রহমান ও রাজশাহীর মজিবর রহমান সহসভাপতি, মিজানুর রহমান চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদক, জহুর আহমেদ চৌধুরী শ্রম সম্পাদক, এডভোকেট আবদুল মোমেন প্রচার সম্পাদক, মিসেস আমেনা বেগম মহিলা সম্পাদক ও মোহাম্মদ উল্লাহ দফতর সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ মুজিব দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে চারণ কবির মতো বাংলার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ছয় দফা কর্মসূচিকে জনগণের বাঁচার দাবিতে পরিণত করেন। এ সময় সকল পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তারের পর ১৯৬৬ সালের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় বিশাল জনসভা শেষে গভীর রাতে ৩২ নম্বরের বাসা থেকে পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতে আরও গ্রেপ্তার হন তাজউদ্দীন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, নূরুল ইসলাম চৌধুরী, এম এ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, মুজিবুর রহমান (রাজশাহী), এমএস হক এবং আবদুর রহমান সিদ্দিকী।

নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সভায় ছয় দফা বাস্তবায়ন নীতি অব্যাহত রাখা এবং ৭ জুন পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গভর্নর মোনায়েম খান হরতালকে সামনে রেখে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, হয়রানির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

২ জুন পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা জেলা ও নগর কমিটির বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ জুনের হরতাল বানচালের জন্য সরকার সকল পর্যায়ে অঘোষিতভাবে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। মানিক মিয়ার ইত্তেফাকব্যতীত কোনো পত্রিকাই ৬ দফা কর্মসূচি সমর্থন করেনি।

৭ জুন হরতাল পালিত হবে- এই খবরটিও ইত্তেফাকব্যতীত অন্য কোনো পত্রিকা প্রচার করেনি।

সরকারের কঠোর দমননীতির মধ্যেও হরতাল যে সফলভাবে পালিত হলো ওই খবরও ইত্তেফাক ছাড়া অন্য কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়নি।

হরতাল পালনরত সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে জনতাকে বিভিন্ন স্থানে ছত্রভঙ্গ করে। নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে মনু মিয়া, মজিবুরসহ ১১ জন নিহত, বহু লোক আহত এবং গ্রেপ্তার হন। হরতাল সম্পর্কে সরকার একটি প্রেস রিলিজ দেয়। মিথ্যায় ভরপুর ও বানোয়াট ছিল সেটি।

সরকারি বিজ্ঞপ্তি থেকে ঐদিন টঙ্গী, ঢাকা, আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, তেজগাঁওসহ অনেক স্থানে জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের কথা জানা যায়। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ওইদিন হরতাল সফল করার জন্য বিভিন্ন স্থানে জনতার সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

পাকিস্তানের ১৯ বছরের ইতিহাসে ১৯৬৬ সালের ৭ জুনের মতো এমন সরকারবিরোধী সফল হরতাল এর আগে যেমন হয়নি, তেমনি হরতালকে সফল করার জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ডাকে এর আগে কোনো সময় এত সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ রাজপথে নামেনি। আসলে ৭ জুন ছিল পশ্চিমা সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে এবং বাংলা ও বাঙালির নেতা মুজিবের পক্ষে একটি সফল গণবিস্ফোরণ।

ছয় দফা দৃশ্যত পূর্ব পাকিস্তান তথা পাকিস্তানের সব প্রদেশের স্বায়ত্তশাসেনর দাবি হলেও এর মধ্যে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। আর এ জন্যই ৬ দফা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় হুমকি দেন এবং তাঁর বশংবদ গভর্নর মেনায়েম খান পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তারসহ বর্বর দমননীতি শুরু করে।

১৯৬৬ সালে জাতির সামনে পেশ করা মুজিবের ৬ দফা ৪ বছরের মাথায় এক দফায় পরিণত হয়। আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এটাই মুজিবের দূরদর্শিতা, এটাই মুজিব নেতৃত্বের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এখানেই শেখ মুজিব অনন্য।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সিনিয়র সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর