বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছয় দফায় ভিত রচিত হয়েছিল

  •    
  • ৭ জুন, ২০২১ ১৬:০৭

বঙ্গবন্ধু সরাসরি আইয়ুব খানকে প্রশ্ন করেন, যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানকে কেন অরক্ষিত রাখা হলো? ভারত চাইলে তাদের সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বিনা বাধায় যেতে পারত। কারণ এখানে প্রতিরক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পূর্ব বাংলাকে কীভাবে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বিস্মিত ও হতবাক হয়ে পড়েন। তার অনুগতরা মনে করেন- শেখ মুজিব ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু পূর্ব বাংলার জনগণ এ বৈঠকের খবর পাঠ করে খুশি হয়। তারা বুঝতে পারে- আইয়ুব খানকে চ্যালেঞ্জ করার উপযুক্ত নেতা এতদিনে পাওয়া গেছে।

পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে সামরিক শাসনের সময় জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। আগের বছর প্রবল ছাত্র-গণ-আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান বিদায় নিয়েছেন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে। ইয়াহিয়া খান তাকে হটিয়ে ক্ষমতা নিয়ে সাধারণ নির্বাচন প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন।

আমাদের এ ভূখণ্ডের অসিংবাদিত নেতা, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের কাছে নন্দিত নেতা, সবার প্রিয় বঙ্গবন্ধু। নির্বাচন সামনে, তিনি নিশ্চিত হয়ে গেছেন বাংলাদেশ চোখের সামনে উজ্জ্বলরূপে দৃশ্যমান। জনগণ ছয় দফাকে অন্তরে স্থান দিয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পূর্ব পাকিস্তানে পাবলিক রিলেসন্স অফিসার ছিলেন সিদ্দিক সালেক। তিনি ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘ইয়াহিয়া খান শাসনতন্ত্র অনুমোদনের ক্ষমতা নিজের হাতে রেখেছেন, যেন শেখ মুজিব ৬ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে না পারেন। কিন্তু শেখ মুজিব স্পষ্ট বলে দিয়েছেন- আমার লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে আমি লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডার বা এলএফও টুকরা টুকরা করে ফেলব। নির্বাচন হয়ে গেলে কে আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে? ইয়াহিয়া খান গোয়েন্দা সূত্রে মুজিবের এ অবস্থান জেনে বলেছিলেন- বিশ্বাসঘাতকতা করলে মুজিবকে আমি দেখে নেব।’ [পৃষ্ঠা ১]

দাম্ভিক ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে দেখে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। শেখ মুজিব অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান করেন। এ সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে, বঙ্গবন্ধু বীরবেশে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ইয়াহিয়া খানের স্থান হয় কারাগারে।

এ পরিবর্তনের ভিত রচিত হয়েছিল ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে।

বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফা কর্মসুচি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেছিলেন ৫৫ বছর আগে, ছয় দফা প্রদানের মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এ কর্মসূচির কারণেই শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়েছেন, ‘জাতির পিতা’ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেন।

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরোধী কয়েকটি দল লাহোরে একটি কনভেনশন আহ্বান করে। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী প্রভৃতি দল এর উদ্যোক্তা। শেখ মুজিবুর রহমান তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। বঙ্গবন্ধু মাত্র কয়েকদিন আগেই কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন জরুরি আইন ও দেশরক্ষা আইন বাতিলের দাবি উত্থাপন করার কারণে।

২৮ জানুয়ারি তাকে এক বছরের দণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি হাইকোর্টে আবেদন করে জামিনলাভ করেন। কনভেনশন আহ্বানকারীরা জানতেন, শেখ মুজিবুর রহমান বয়সে অপেক্ষাকৃত ইয়ং, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের আমজনতার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতা।

১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ দিন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তাতে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলিও নিক্ষেপ করেনি। কোনো বিমান হামলা হয়নি, কামানের গোলাও নিক্ষেপ করা হয়নি। যুদ্ধ হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান ভূখণ্ড ও সংলগ্ন ভারতীয় ভূখণ্ডে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান দাবি করছিলেন যুদ্ধে তাদেরই বিপুল জয় হয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, যুদ্ধে ভারত পাকিস্তানের ৭২০ বর্গমাইল ভূখণ্ড দখল করেছিল, পাকিস্তান দখল করেছিল ভারতের ৩০০ বর্গমাইল ভূখণ্ড। দুটি দেশের সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রচুর, পাকিস্তানের ক্ষতি তুলনামূলক বেশি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল- আইয়ুব খান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ভূখণ্ড দখলের জন্য এই যুদ্ধের সূচনা করে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কাশ্মীর দখলে আসেনি।

পাক-ভারত যুদ্ধের কিছুদিন পর ২৬ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ঢাকায় এসেছিলেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য। গভর্নর হাউসের (বর্তমান বঙ্গভবন) বৈঠকে একদল অনুগ্রহপ্রার্থী রাজনীতিক এসেছেন, এমন ভাব দেখিয়ে শুরুতেই আইযুব খান বলেন- ‘বলুন, আপনারা কেন এসেছেন? কী আপনাদের বক্তব্য?’ বিরোধী নেতারা সব চুপ। কিন্তু উঠে দাঁড়ালেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা তো নিজ থেকে আসিনি। আপনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাই এসেছি। আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, কিন্তু আমাদেরকে ডেকে এনে অপমান করার অধিকার আপনার নেই।’ [বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পৃষ্ঠা ৩৩৭]

বঙ্গবন্ধু সরাসরি আইয়ুব খানকে প্রশ্ন করেন, যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানকে কেন অরক্ষিত রাখা হলো? ভারত চাইলে তাদের সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বিনা বাধায় যেতে পারত। কারণ এখানে প্রতিরক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

পূর্ব বাংলাকে কীভাবে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বিস্মিত ও হতবাক হয়ে পড়েন। তার অনুগতরা মনে করেন- শেখ মুজিব ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু পূর্ব বাংলার জনগণ এ বৈঠকের খবর পাঠ করে খুশি হয়। তারা বুঝতে পারে- আইয়ুব খানকে চ্যালেঞ্জ করার উপযুক্ত নেতা এতদিনে পাওয়া গেছে।

বঙ্গবন্ধুর ওপর যেসব গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, তিনি স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রস্তাব উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন আহমদ। শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বলেন, এটা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের দাবি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আমরা এই দাবির ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। জাতীয় পরিষদে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সময় আমরা এই প্রস্তাব তুলেছি। অর্থ, বৈদেশিক নীতির সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে। আজ আমরা দেখতে পাই পাকিস্তানে দুইটা অর্থনীতি চলছে- একটা পশ্চিম পাকিস্তানে, আরেকটা পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে লাহোরের সর্বদলীয় জাতীয় সম্মেলনে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলতে চান- এ প্রস্তাব নিয়ে বঙ্গবন্ধু গিয়েছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমানের কাছে। তার জবাব ছিল- ‘মুজিবর মিয়া, আপনি এ দাবি তুললে নিজেও ফাঁসিতে ঝুলবেন, আমি তুললে আমাকেও ফাঁসির দড়ি পরতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু এ কথায় কান দেননি। শুধু তাই নয়, তিনি ২১ দফা থেকেও সরে আসেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ২১ দফায় প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থ কেন্দ্রের হাতে রাখার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ছয় দফায় অর্থ প্রদেশের হাতে প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ছয় দফা প্রদানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদীরা ঠিকই বুঝতে পারেন- শেখ মুজিবুর রহমান লাহোর নগরিতে ছয় দফা উত্থাপনের মাধ্যমে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের পথ উন্মুক্ত করেন। এ দাবি মানা হলে পাকিস্তান কেবল নামেই থাকবে, বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ। ছয় দফা প্রদানের ৪০ দিন পর আইয়ুব খান রাজশাহীতে এক জনসভায় বলেন, ‘অখণ্ড বাংলাই শেখ মুজিবের লক্ষ্য। এই দাবি প্রতিরোধ করা আমাদের দায়িত্ব।’ [দৈনিক পাকিস্তান, ১৭ মার্চ ১৯৬৬]

বঙ্গবন্ধু আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করেছেন। ক্ষমতার জন্য এ টু জেড ঐক্যে তিনি বিশ্বাস করতেন না। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টে মুসলিম লীগবিরোধী সব দলকে গ্রহণ করার বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন-

“যাদের নীতি ও আদর্শ নাই তাদের সাথে ঐক্য করার অর্থ হল কতক গুলি করা লোককে বাঁচিয়ে তোলা। এরা অনেকেই দেশের ক্ষতি করেছে, রাজনীতি এরা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য করে।” [পৃষ্ঠা ২৪৮]

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইয়ুব খানের বিরোধী দলগুলোর নেতারা কেবল পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সামনে আনেন ছয় দফা কর্মসূচি, যা জনগণ গ্রহণ করে নেয় মুক্তিসনদ হিসেবে। এ পথে চলতে গিয়ে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় পড়তে হয়। কিন্তু ছাত্র-জনতা তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করে আনে, তিনি বরেণ্য হন বঙ্গবন্ধু হিসেবে।

বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসন-স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনে উত্তরণ ঘটানোর জন্য দলকে প্রস্তুত করেছেন। ১৯৫৭ সালের মে মাসে তিনি মন্ত্রিপদ ছাড়েন দলকে আরও বেশি সময় প্রদানের জন্য। সে সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো জনপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করেছিলেন। তার সঙ্গে চলে যায় বিপুলসংখ্যক বামপন্থি নেতা-কর্মী। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে মানুষের কাছে নিয়ে যান।

পঞ্চাশের দশকে বিভিন্ন জেলা ও মহকুমায় যে তরুণ নেতাদের সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনিক সম্পাদকের মতো পদে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তারাই ষাটের দশকে এমনকি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের জেল-জুলুম উপেক্ষা করে আরও বড় দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠেন। ছাত্রদের প্রতিও তিনি নজর দেন। ছাত্রলীগ ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে স্লোগান দেয়- জয় বাংলা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা। পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা!

১৯৭১ সালের ২ মার্চ এই ছাত্রলীগ এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত ডাকসু স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ পতাকা তোলা যে প্রতীকী নয়, সেটা আমরা বুঝতে পারি এ স্লোগানে- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। বাস্তবেই ছাত্রলীগ অস্ত্র ধরেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য। ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের জনগণও অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। কৃষক-ক্ষেতমজুর-শ্রমিক-ছাত্র, সবাই অস্ত্র হাতে নেয়।

লাহোরে শত্রুর ডেরা বা দুর্গে বসে কেবল মহত্তম কর্মসূচি দিয়েই বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব শেষ করেননি, লক্ষ্য অর্জনে উপযুক্ত সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।

এ সব কারণেই বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রদানের প্রেক্ষাপট এবং তা আদায়ে পদক্ষেপ প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি, হারাবেও না। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এটাও কল্পনা ছিল না। ১৯৭৪ সালে প্রলয়ঙ্করী বন্যা-দুর্ভিক্ষের কঠিন সময় মোকাবিলায় করার সময়েই তিনি বলেছিলেন-

‘দুইশ’ বছর ধরে বাংলাদেশকে লুট করা হয়েছে। বাংলাদেশের সম্পদেই শ্রীবৃদ্ধি করা হয়েছে লন্ডন, ডান্ডি, ম্যাঞ্চেস্টার, করাচি, ইসলামাবাদের।...আজো বাংলাদেশে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে। একদিন আমরা দেখাবো বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। উন্নত বিশ্বের সারিতে বসার পথে চলতে পারে। এই যে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, তার পথনির্দেশনা এসেছিল ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর