বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের সদিচ্ছা

  • আহমেদ রিয়াজ   
  • ৫ জুন, ২০২১ ১৬:১১

আমাদের শহরগুলো থেকে সবুজ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বসতবাড়ি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। আর যত বেশি সবুজ কমতে থাকে, তত বেশি গরম বাড়তে থাকে। আমাদের ছেড়ে দেয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়ার মতো গাছপালা কমে গেছে। আর সে কারণেই এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টা যেন আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ইচ্ছা করলে আমরা গাছপালার সংখ্যা বাড়াতে পারি। এটা কোনোভাবেই সরকারের একার দায়িত্ব নয়। আমাদের সবারই দায়িত্ব।

১৯৭৪ সাল থেকে দুনিয়াজুড়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। আর সেই উদ্যোগ থেকেই পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সামুদ্রিক দূষণ, জনসংখ্যা, বিশ্বে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, বুনো প্রাণীদের প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়ানো ছিল এই দিবসের বিশেষ কারণ।

দুনিয়াজুড়ে প্রায় দেড় শ রাষ্ট্র একসঙ্গে দিবসটি পালন করে। আর প্রতিবছর পরিবেশ সুরক্ষায় একটি করে থিম সরবরাহ করা হয়। এ বছর ৪৭তম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের পরিবেশ দিবসের থিম হচ্ছে ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা’। থিমটির ব্যাখ্যায় জাতিসংঘের কথা হচ্ছে- শুধু সবল বাস্তুতন্ত্রের সাহায্যেই আমরা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে পারি, আবহাওয়া পরিবর্তন ঠেকাতে পারি এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি।’

পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও নগরায়ণ বেড়ে চলেছে। আর নগরায়ণ বাড়ার কারণে বসতবাড়ি তৈরির জন্য ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে আমরা শহরের গাছপালা কেটে ফেলছি। রাস্তা তৈরি করছি। সবুজ কমিয়ে ফেলছি। এর ফলে নানা সময়ে নানা রকম প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হচ্ছে। ভোগ করছি নানা রকম যন্ত্রণা।

জলাবদ্ধতা, বজ্রপাত, অতিবৃষ্টি, খরা, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত- নানাভাবে পরিবেশ আমাদের ওপর তার আক্রোশ মেটাচ্ছে। তবে এসবের জন্য তো আমরাই দায়ী। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে মহামারি করোনা। সব মিলিয়ে পৃথিবীর মানব সম্প্রদায় কঠিন এক সময় অতিক্রম করছে। কিন্তু প্রকৃতি যতই বিরূপ হোক না কেন, যুগে যুগে মানুষ এই বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। আর এই লড়াই করতে করতে পরিবেশ যেভাবে বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাতে মানব সম্প্রদায়ের জন্য আরও ভয়াবহতম কঠিন সময় আসছে সামনে।

অস্ট্রেলিয়ার কাটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের তাপমাত্রা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা হলো সম্প্রতি। ওই গবেষণায় কানাডার ক্যালগরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের গবেষকরাও যুক্ত ছিলেন।

নগরবিষয়ক সুপরিচিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘সাসটেইনেবল সিটিজ অ্যান্ড সোসাইটি’তে এপ্রিল মাসে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। আর সেই গবেষণা থেকে যা জানা গেল, তাতে বোঝা গেল ভীষণ বৈরী সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিশেষ করে যারা শহরে বাস করেন, তাদের জন্য তো কঠিন সময় আসছে।

আগামী ৩০ বছরে অর্থাৎ ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ নগরে বসবাস করবে। অথচ এর জন্য বাংলাদেশের শহরগুলোয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। ওদিকে গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে সারা বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া কাটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী এবং স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. আশরাফ দেওয়ান জানিয়েছেন, ‘অত্যধিক গরম হয়ে পড়বে শহরগুলোর জন্য পরিবেশগত বাড়তি সমস্যা।

‘বাংলাদেশের সরকারি নীতিমালা তৈরি হয়েছে মূলত ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কেন্দ্র করে। কারণ এত দিন এই দুটোই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এখন আরও নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নগরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি।’

তার মতে, ‘শহরগুলো ঠাণ্ডা রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে এয়ারকন্ডিশনার ও পানি ব্যবহার করার দরকার হবে। অর্থাৎ শক্তিসম্পদ ও পানিসম্পদের ওপরেও অত্যধিক চাপ বেড়ে যাবে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে।’

এর ফলে দেশের বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা আগামী ২০ বছরে গ্রামের তুলনায় ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তা ছাড়া এমনিতেই মানুষের ঘনবসতির কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটা ব্যাপার তো আছেই।

প্রত্যেক মানুষের শরীরের নিজস্ব একটা তাপমাত্রা আছে। যাকে বলে মেটাবলিক হিটিং। প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১০০ ওয়াট। কাজেই শহরে মানুষের চাপ যত বাড়বে, স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা তত বাড়বে।

অতিরিক্ত মানুষের জন্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটও বানাতে হবে বেশি। কাজেই মানুষের তাপ, ইটরডের তাপ, রাস্তার তাপ- সব মিলিয়ে দিন যত যেতে থাকবে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে। এখন থেকেই তাপ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দিন-রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকবে না। সব সময় গরম অনুভূত হবে।

গত কয়েক দিন ধরে দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেও এই তাপপ্রবাহ যাচ্ছে না। ওদিকে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতাসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সোজা কথা, নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়ও জানিয়েছেন গবেষকরা। পরিকল্পিত নগরায়ণ তো আছেই, পাশাপাশি শহরে সবুজের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন।

আমাদের শহরগুলো থেকে সবুজ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বসতবাড়ি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। আর যত বেশি সবুজ কমতে থাকে, তত বেশি গরম বাড়তে থাকে। আমাদের ছেড়ে দেয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়ার মতো গাছপালা কমে গেছে। আর সে কারণেই এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টা যেন আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

ইচ্ছা করলে আমরা গাছপালার সংখ্যা বাড়াতে পারি। এটা কোনোভাবেই সরকারের একার দায়িত্ব নয়। আমাদের সবারই দায়িত্ব। শহরের যেখানেই ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেই গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদে বাগান করার চর্চা বাড়াতে হবে।

মর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। ‘মুজিববর্ষে অঙ্গীকার করি, সোনার বাংলা সবুজ করি’- এই থিমে শুরু হচ্ছে এবারের জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান। জাতির পিতার প্রতি সম্মান রেখে হলেও অন্তত একটি করে গাছ লাগানো উচিত আমাদের সবার।

আসলে গাছপালার বিকল্প কিছু নেই। গাছপালা থাকলে আমরাও স্বস্তিতে থাকব। শান্তিতে নিশ্বাস ফেলতে পারব। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাব। যত বেশি গাছপালা, তত বেশি অক্সিজেন। আর যত বেশি অক্সিজেন, ততই আমাদের স্বাভাবিক দম নেয়া।

করোনাকালে স্বাভাবিকভাবে দম নেয়াও তো কম সৌভাগ্যের বিষয় নয়। আমরা যারা এখনও করোনায় টিকে আছি, তারা নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই চারপাশের পরিবেশ সুন্দর ও সবুজ করে তুলতে পারি।

লেখক: শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর