বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দারিদ্র্য বিমোচনে জয়সিঁড়িতে বাংলাদেশ

  • শেখ এ. রাজ্জাক রাজু   
  • ৪ জুন, ২০২১ ১৩:০১

অর্থনীতিতে দুটি শ্রেণি বিদ্যমান। এক শ্রেণি হয় শোষক আর অন্য শ্রেণি হয় শোষিত। শোষক শ্রেণির সংখ্যা হয় কম আর শোষিত শ্রেণির সংখ্যা হয় বেশি। যেহেতু শোষক শ্রেণি ছলে-বলে-কলে-কৌশলে শোষিত শ্রেণিকে শোষণ করে সেহেতু শোষিত শ্রেণি হয় দরিদ্র। অন্যথায় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন না ।

বিল গেটস বলেছিলেন, ‘দরিদ্র হয়ে জন্মগ্রহণ করা অপরাধ নয়, বরং দরিদ্র হয়ে মৃত্যুবরণ করা অপরাধ।’ আবার বাঙালি মনিষি বলেছেন, ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।’ বিখ্যাত লেখক-সাহিত্যিকেরা যখন এমন কথা বলেন, তখন ওই কথার মধ্যে মর্মার্থ আছে।

জন্ম নয় বরং তারা কর্মতৎপরতা ও প্রচেষ্টার কথা বলেছেন। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোগ প্রবণতা অধিক। প্রান্তিক মানুষের ভোগ প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণে সঞ্চয় কম। ফলে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেশি।

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্কস বলেছেন, পৃথিবীতে প্রতিটি দেশের ইতিহাসকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তবে দেখা যাবে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে রয়েছে স্বার্থের ইতিহাস। পদ-পদবি, যশ-খ্যাতি, ক্ষমতা-প্রতিপত্তির ইতিহাস আর অর্থনীতিজুড়ে রয়েছে শ্রেণি স্বার্থের ইতিহাস।

অর্থনীতিতে দুটি শ্রেণি বিদ্যমান। এক শ্রেণি হয় শোষক আর অন্য শ্রেণি হয় শোষিত। শোষক শ্রেণির সংখ্যা হয় কম আর শোষিত শ্রেণির সংখ্যা হয় বেশি। যেহেতু শোষক শ্রেণি ছলে-বলে-কলে-কৌশলে শোষিত শ্রেণিকে শোষণ করে সেহেতু শোষিত শ্রেণি হয় দরিদ্র। অন্যথায় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন না ।

মার্কস আরও বলেন, এ পৃথিবীতে মানব সন্তান শুধু পেট নিয়ে জন্ম নেয় না সঙ্গে দুটি হাত নিয়েও জন্মায় । এ মানব সন্তান কালক্রমে বড় হয়ে হাত দুটি দিয়ে কাজ করে কিন্তু শ্রেণি স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে অনেকেই নিপীড়িত ও শোষিত হয়ে আজ বিশ্বে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গণতন্ত্রের কাঠামো এমন যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে মেনে নিয়েই সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয় বলেই ধনী দেশগুলোতেও জাতীয় আয়ের পরিমাণ অধিক হলেও ওই সব দেশেও দারিদ্র্যের পরিমাণ শূন্যের কোটায় আসেনি।

আমেরিকায় বিল ক্লিনটন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে একটা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন; তথাপিও ওই সব দেশে প্রচুর গৃহহীন নর-নারী রয়েছে- যারা রেল স্টেশন কিংবা উন্মুক্ত জায়গায় বসবাস করে। তবে, দারিদ্র্য নিরসনে যেমন: বেকার ভাতা, দরিদ্র ভাতা, পোষ্য ভাতা, বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি সুবিধা পেয়ে থাকে, যা তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া কল্পনাতীত।

এর অর্থ হলো যে, অর্থনীতিতে সুবিধাবঞ্চিত লোকেরা যাতে কিছুটা সুবিধা পায়- এজন্য উন্নত দেশগুলোতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মানবতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে, বিশ্বের পুঁজিবাদী দেশগুলো যে পরিমাণ দরিদ্রের জন্য সুবিধা প্রদান করে তার চেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করে ধনীদের। ফলে, পুঁজিবাদী ধনীক শ্রেণির লোকের সংখ্যা বেশি এবং বিশ্বের মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ বিভিন্ন দেশের ধনীদের হাতে।

একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়। আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে চিন্তাশক্তি বড়।’ কিন্তু কথায় আছে, ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর।’ আমিও বলতে চাই- জ্ঞানের চেয়ে চিন্তাশক্তি নিশ্চয়ই বড়। তবে, নিজে নিজের জ্ঞান যত বৃদ্ধি করবেন- তবেই আপনার চিন্তাশক্তির পরিধি বৃদ্ধি পাবে- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।

বাংলাদেশ বর্তমান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর কিছু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক রসিকতা করেছে- তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করেছিলেন। তখন বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৯০ শতাংশ।

সেই দারিদ্র্যপীড়িত দেশ ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার এসে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। প্রকৃতপক্ষে, ৯০ দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেতে থাকে। এর মূল কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সবার জন্য শিক্ষা, নারী শিক্ষার উন্নয়ন- দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি প্রদান, পোশাক শিল্পে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, নারীর ক্ষমতায়ন, মানব সম্পদ বিদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রভৃতি।

পরিশেষে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, মানুষ যত তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত মানব সম্পদে পরিণত হবে এবং শিক্ষা উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারবে, দেশ তত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে এবং দারিদ্র্য নিরসন করে বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি।

লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষা-উদ্যোক্তা ও শিক্ষা বিষয়ক গবেষক।

এ বিভাগের আরো খবর