বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেফাজতের অর্থবিত্ত!

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ১৭:০২

মামুনুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একবছরে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য মিলেছে। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক কীভাবে, কোত্থেকে এত টাকা পান? হেফাজতের ক্ষমতার মূল উৎস তাদের নিয়ন্ত্রিত কওমি নেটওয়ার্ক। এই মাদ্রাসাগুলো চলে মূলত ধর্মপ্রাণ মানুষের দান-সদকা, জাকাত-ফিতরার টাকায়। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরে থেকেও আসে বিপুল অর্থ। এই অর্থ আসে মাদ্রাসার জন্য, মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য আর রোহিঙ্গাদের জন্য। কিন্তু হেফাজত নেতারা সেই অর্থ ব্যয় করেন নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য।

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব বহুল সমালোচিত মামুনুল হকের জীবনযাপন ছিল রাজকীয়। কথিত স্ত্রী নিয়ে তিনি আটক হয়েছিলেন সোনারগাঁওয়ের রাজকীয় রয়েল রিসোর্ট থেকে তিনি চড়তেন দামি গাড়িতে। ওয়াজ করতে যেতেন হেলিকপ্টারে। আর এই হেলিকপ্টারে উড়ে উড়ে তিনি দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতেন, ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়াতেন। অথচ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ছাড়া তার আয়ের দৃশ্যমান কোনো উৎস ছিল না। আয় নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছিলেন মামুনুল। তিনি তখন শুনিয়েছিলেন পৈত্রিক সূত্রে জমিদারি পাওয়ার গল্প।

অথচ তার পিতা আল্লামা আজিজুল হক নিজের অর্থনৈতিক দৈন্যের কথাই বলে এসেছিলেন। এখন প্রমাণ হচ্ছে, মামুনুল হক ছিলেন আগাগোড়া এক মিথ্যুক। নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে, বিয়ে নিয়ে একের পর এক মিথ্যাচার করে গেছেন তিনি। কিন্তু মিথ্যার ওপর ভর করে গড়ে ওঠা মামুনুল হকদের সাম্রাজ্য এখন তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়েছে।

দাবি করা হয় হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে গেছে হেফাজত। রাজনৈতিক হোক আর অরাজনৈতিক হেফাজতে ইসলাম যে একটি লাভজনক সংগঠন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রহস্যজনক উৎস থেকে অর্থ আসতে থাকে হেফাজতের ফান্ডে। আর সেই অর্থেই তারা বড় বড় কর্মসূচি পালন করে সরকারকে ভয় ধরিয়ে দেয়।

ভয় পেয়ে সরকার হেফাজতকে পোষ মানানোর কৌশল নেয়। সেই কৌশলের পেছনেও নানান লেনদেন, জমি বরাদ্দের কথা প্রচলিত আছে। তবে তখন হেফাজতের ক্রিম গেছে আল্লামা শফী আর তার পরিবারের পাতে। তাই হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ পেতে মরিয়া হয়ে যায় আল্লামা শফীর প্রতিপক্ষ। গতবছর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় রীতিমতো ক্যু করে ক্ষমতা দখল করে জুনায়েদ বাবুনগরীরা। আল্লামা শফীর চিকিৎসায় বাধা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তার পরিবারকে হটিয়ে হেফাজতে নিজেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে বাবুনগরীর অনুসারীরা।

নতুন হেফাজতে বাবুনগরীর সব অপকর্মের দোসর হয় মামুনুল হক। নতুন করে নিজেদের শক্তির জানান দিতে এবং রেট বাড়াতে উগ্রপন্থাকেই বেছে নেন মামুনুল হক। প্রথমে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য আর পরে নরেন্দ্র মোদির সফর- এই দুটিকে ইস্যু বানিয়ে দেশজুড়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মামুনুল হক। বিশেষ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন বানচাল করতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে তাণ্ডব চালায় হেফাজত। তাদের এই অশুভ তৎপরতা হোঁচট খায় সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে গিয়ে। মুখে ইসলামের হেফাজতের কথা বললেও তাদের জীবনযাপন, সংসার সব ছিল ইসলামবিরোধী।

মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর তছনছ হয়ে গেছে মিথ্যার ওপর ভর করে গড়ে ওঠা হেফাজতের সাম্রাজ্য। সহিসংসতায় জড়িত থাকার দায়ে একের পর এক গ্রেপ্তার করা হয় হেফাজত নেতাদের। সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নাকে খত দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। তবে হেফাজত অনেক আগেই সীমা লঙ্ঘন করেছে। তাই এখন কোনোভাবেই সরকারের মন গলাতে পারছে না। আর গ্রেপ্তার করেই বসে থাকেনি সরকার। টান দিয়েছে হেফাজতের শক্তির আসল উৎস ধরে।

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৬ জন নেতাকর্মীর সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারের ৪টি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। সরকারি দপ্তরগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), চার জেলার (ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নেত্রকোনা) পুলিশ সুপার, তিন থানার (ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও পটিয়া) সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারকে পাঠানো চিঠিতে হেফাজত নেতাদের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমির দাগ, খতিয়ানসহ নথি চাওয়া হয়েছে। আর বিএফআইইউ-এর প্রধানকে পাঠানো চিঠিতে সবার ব্যাংক হিসাবের তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে।

এখন একের পর এক বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। মামুনুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একবছরে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য মিলেছে। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক কীভাবে, কোত্থেকে এত টাকা পান? হেফাজতের ক্ষমতার মূল উৎস তাদের নিয়ন্ত্রিত কওমি নেটওয়ার্ক। এই মাদ্রাসাগুলো চলে মূলত ধর্মপ্রাণ মানুষের দান-সদকা, জাকাত-ফিতরার টাকায়। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরে থেকেও আসে বিপুল অর্থ। এই অর্থ আসে মাদ্রাসার জন্য, মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য আর রোহিঙ্গাদের জন্য। কিন্তু হেফাজত নেতারা সেই অর্থ ব্যয় করেন নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য। এই অর্থ ব্যয় করা হয় সরকারবিরোধী নানান রাজনৈতিক কর্মসূচির পেছনেও।

দেশি-বিদেশি নানা উৎস থেকে পাওয়া এই অর্থই হেফাজতে ইসলামের সকল শক্তির আর ক্ষমতার মূল উৎস। অর্থের জোগান বন্ধ করতে পারলেই বন্ধ হয়ে যাবে হেফাজতের সব অশুভ তৎপরতা। ইসলাম এবং দেশ রক্ষা পাবে হেফাজতে ইসলামের কবল থেকে।

লেখক: সাংবাদিক-কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর