বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্ষক কে বা কারা?

  •    
  • ২ জুন, ২০২১ ১৩:৩২

অনেকে মনে করেন, একজন তরুণ বা যুবকের ধর্ষক হয়ে ওঠার পেছনে তার পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ, পরিবারে যদি শৈশব থেকেই তাকে মানবিক মূল্যবোধ এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব এবং অপরাধের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে শেখানো না হয় বা তাকে যদি অপরাধের ইহকালীন ও পরকালীন (সব ধর্ম অনুযায়ী) শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করা না হয়, তাহলে যেকোনো অপরাধ করার আগে এর সম্ভাব্য শাস্তি সম্পর্কে তার মনে ভয় তৈরি হবে না।

ঢাকার আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যেদিন ছয় পরিবহনশ্রমিককে গ্রেপ্তার করল পুলিশ, সেদিনই নওগাঁর বদলগাছিতে ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।

প্রশ্ন হলো, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধনী এনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা; ধর্ষণ মামলার অনেক আসামির বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার মতো ঘটনার পরেও কেন বাসের ভেতরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ বা শিশুর ওপর পাশবিকতা বন্ধ হচ্ছে না?

যারা এসব অপরাধ করছে, তাদের কাছে আইনের ওই কঠোরতা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার বার্তা কি পৌঁছেছে? নাকি তারা এসব পরোয়া করে না? নাকি যখন তারা ধর্ষণের সুযোগ পায়, তখন এসব আইনকানুন বা বন্দুকযুদ্ধের কথা তাদের মাথায় থাকে না?

স্মরণ করা যেতে পারে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে যেদিন (১৭ নভেম্বর ২০২০) জাতীয় সংসদে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করা হয়, এর দুই মাস না হতেই গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর দুদিন পর ৯ জানুয়ারি বগুড়ায় ডিজে পার্টির এক শিল্পীকে ধর্ষণ ও তার ভাগনিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পুলিশ এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রশ্ন হলো, কেন ওই তরুণ তার বন্ধুকে ধর্ষণ করল এবং কেনইবা খুন করল? এই তরুণ কীভাবে ধর্ষক ও খুনি হয়ে উঠল? এ রকম অপরাধী হয়ে ওঠার পেছনে তার পরিবারের ভূমিকাই বা কতটুকু? ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড, তা কি তার জানা ছিল না? জানলে কেন সে ভয় পেল না?

সবশেষ ঘটনা দুটির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। ঢাকার আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া এক তরুণীর মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছর। তারা সবাই আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল-নবীনগর মহাসড়কে মিনিবাস চালক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ওই নারী মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জে নিজের বাসায় ফেরার জন্য বাসে ওঠেন। রাত আটটার দিকে আশুলিয়ার নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বাসের জন্য তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত নটার দিকে নিউ গ্রামবাংলা পরিবহনের একটি মিনিবাসের চালকের সহকারী মনোয়ার ও সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম এসে টঙ্গী স্টেশন রোডের কথা বলে তার কাছে ৩৫ টাকা ভাড়া চান।

তিনি মিনিবাসে উঠলে গন্তব্যে যাওয়ার আগেই সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়। চালক বাসটি নিয়ে আবার নবীনগরের দিকে রওনা হন। এ সময় বাসের জানালা ও দরজা আটকে বাসের চালক, সহকারীসহ ছয়জন ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। টহল পুলিশ বাসটি থামিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই ছয়জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে নওগাঁর বদলগাছিতে। সেখানে ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আবু হাসান নামে ওই শিক্ষক তার বাড়িতে শিশুদের আরবি পড়াতেন। গ্রামের ৬-৭টি শিশু তার কাছে আরবি শিখত। ঘটনার দিন সকালে ভুক্তভোগী শিশুটি পড়তে যায়। এ সময় তাকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন শিক্ষক।

তিনি ঘটনাটি কাউকে না বলতে শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন। কিন্তু সন্তানের পোশাকে রক্ত দেখে শিশুটির মায়ের সন্দেহ হয়। তখন জিজ্ঞেস করলে শিশুটি তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। শিশুটির মা গ্রামের লোকজনকে বিষয়টি জানিয়ে বিচার চান। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আবু হাসানকে ধরে এনে গাছে বেঁধে রেখে থানা-পুলিশকে খবর দেয়।

এই দুটি ঘটনায় কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট, যেমন: আশুলিয়া এলাকায় এর আগেও চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে— যার সঙ্গে জড়িত ছিল পরিবহন শ্রমিকরা। তার মানে কি এই এলাকার সড়কটি ধর্ষকদের অভয়ারণ্য?

দ্বিতীয়ত, যখন তারা কাউকে এভাবে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তখন সেখানে বয়স নির্বিশেষে একটা ঐক্য রয়েছে। এই দলে ১৮ বছরের তরুণ থেকে শুরু করে ৪০ বছরের মাঝবয়সী লোকও রয়েছে। তৃতীয়ত, তাদের সবার পরিচয় পরিবহন শ্রমিক। প্রশ্ন হলো, পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে কেন এই ধর্ষণপ্রবণতা?

যেকোনো পেশার লোকই ধর্ষক হতে পারে। অর্থাৎ ধর্ষকের কোনো পরিচয় নেই। যখন সে এই কাজ করে, তখন তার পেশা, বয়স বা সামাজিক অবস্থান কোনো ভূমিকা রাখে না। বরং তার ভেতরের পাশবিকতাই প্রকাশিত হয়। তার মানে ধর্ষক হতে তার পরিচয় বা বয়সের চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে তার সংস্কৃতি ও বোধ—যে বোধ তাকে প্রচলিত আইনের প্রতি ভীত হওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দেয়।

এ যাবৎ যত লোককে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা যাদের বিচার হয়েছে কিংবা বিচার চলছে—তাদের সবার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবারিক সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং সর্বোপরি জীবন সম্পর্কে তাদের ভাবনাগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা গেলে দেখা যাবে, কোথাও না কোথাও সমস্যা রয়েছে।

অনেক সময় বলা হয়- সব পুরুষের ভেতরেই ধর্ষকামিতার বীজ লুকায়িত থাকে। সুযোগ পেলেই সে ধর্ষক হয়ে ওঠে। আসলে কি তাই? সম্ভবত না। কারণ এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, সমাজে এমন লোকের সংখ্যাই বেশি যারা সুযোগ পেলেও ধর্ষণের মতো অপরাধে যুক্ত হবেন না।

কারণ প্রথমত, তাদের মনে প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে ভয় আছে; দ্বিতীয়ত, এই কাজটি তার রুচি ও শিক্ষার সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ; তৃতীয়ত, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে। সুতরাং, এটিই আশাবাদের বিষয় যে, সমাজের অধিকাংশ মানুষই ধর্ষক নন এবং সুযোগ পেলেও তারা ধর্ষণ করবেন না।

এখন প্রশ্ন হলো, সমাজের যে অতি ক্ষুদ্র অংশ ধর্ষণ করে বা ধর্ষক হয়ে ওঠে, তার পেছনে মোটা দাগে কী কী কারণ থাকতে পারে?

অনেকে মনে করেন, একজন তরুণ বা যুবকের ধর্ষক হয়ে ওঠার পেছনে তার পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ পরিবারে যদি শৈশব থেকেই তাকে মানবিক মূল্যবোধ এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব এবং অপরাধের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে শেখানো না হয় বা তাকে যদি অপরাধের ইহকালীন ও পরকালীন (সব ধর্ম অনুযায়ী) শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করা না হয়, তাহলে যেকোনো অপরাধ করার আগে এর সম্ভাব্য শাস্তি সম্পর্কে তার মনে ভয় তৈরি হবে না।

রাজধানীর কলাবাগানে বন্ধুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে যে তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর বলছে, দিহানের বাবা রাজশাহী জেলার অবসরপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রাতুগ্রাম গ্রামে তার বাড়ি।

তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই বাড়ি ছাড়াও জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে তাদের আরও একটি বাড়ি আছে। রাজশাহী শহরেও আছে দুটি বাড়ি। ঢাকায়ও রয়েছে ফ্ল্যাট।

গণমাধ্যমের খবরে আরও জানা যাচ্ছে, দিহানের পরিবার ও তার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধেও হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রীকে মুখে জোর করে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল ওই বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মামলার সাক্ষীদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপস করেছেন এ তরুণের বাবা।

এসব অভিযোগ সত্য হলে বোঝা যাচ্ছে, ওই তরুণ খুব ভালো কোনো পারিবারিক পরিবেশে বড় হননি। তার অবসরপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার বাবার যে সহায়সম্পত্তির বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে, তা তার চাকরির বৈধ পয়সায় হওয়া সম্ভব নয়।

সুতরাং বাবা যদি অসৎ পথে উপার্জন করেন, সেই সন্তানের পক্ষে আদর্শবান, সৎ ও মানবিক হওয়া কঠিন। ওই তরুণের বাবা নিশ্চয়ই তাকে ধর্ষক হতে বলেননি। কিন্তু একজন ন্যায়পরায়ণ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে তিনি যে সন্তানকে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটি এই ঘটনায় প্রমাণিত।

শুধু অবৈধ পথে উপার্জন করলেই যে সন্তান খারাপ হবে এমনটি নয়। অসৎ লোকের সন্তানও যেমন ভালো হতে পারে, তেমনি সৎ লোকের সন্তানও খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে যারা সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেন না কিংবা ক্যারিয়ার ও সামাজিকতা সামাল দিতে দিতে যারা পরিবারের সন্তান কীভাবে বেড়ে উঠছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে- এসব খোঁজ নেয়ার সময় পান না, তাদের সন্তানও বখে যেতে পারে। ভেতরে ভেতরে ধর্ষক ও খুনি হয়ে উঠতে পারে।

অনেক সময় বলা হয়, দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরাধের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারে। সম্প্রতি বাগেরহাটে শিশু ধর্ষণের ঘটনার দুই সপ্তাহের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে একমাত্র আসামি আবদুল মান্নান সরদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মামলায় এত দ্রুত সময়ে বিচারপ্রক্রিয়া শেষের নজির নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আইনজীবীরা। যে কারণে তারা এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কঠোর করা, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এমনকি কখনও সখনো বিনা বিচারে আসামিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পরেও তো ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না।

তাছাড়া অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেই যে সেই অপরাধ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় না, তারও অনেক উদাহরণ আছে। বন্দুকযুদ্ধের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যার সপক্ষেও যে জনমত রয়েছে, তাতে এই প্রশ্নটিও এখন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই যে, বছরের পর বছর ধরেই বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা হচ্ছে।

ধরা যাক বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের অধিকাংশই বড় অপরাধী; কিন্তু তাই বলে সমাজ তো অপরাধমুক্ত হয়নি।

অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া ধর্ষণ বন্ধ হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকারের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আছে বলেই আইন কঠোর করা হয়েছে। তারপরও ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না কেন? তার মানে কি অসুখের কারণ অনুসন্ধান না করে কেবল ওষুধের গুণগত মান বাড়ান হচ্ছে?

স্মরণ করা যেতে পারে, নোয়াখালীতে ঘরের ভেতরে ঢুকে একজন নারীকে বিবস্ত্র করে পিটিয়েছিল যারা, তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। সিলেটের এমসি কলেজের একটি আবাসিক হলে নিয়ে এক নারীকে গণধর্ষণ করেছিল যারা, তারাও ক্ষমতাবান।

শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতাই নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতাও এসব ধর্ষণের পেছনে ভূমিকা রাখে। সেইসঙ্গে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পৌরুষের বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু সে নিজেকে পুরুষ দাবি করে, ফলে সে এই পৌরুষের ক্ষমতাটি দেখাতে চায়। সেটি কখনও নিজের স্ত্রীর সঙ্গে; কখনও প্রতিবেশীর সঙ্গে; কখনও রাস্তাঘাটে, শপিং মলে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কিংবা কোনও নিরিবিলি জায়গায়।

একজন পুরুষ যখন সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে; যখন তার মধ্যে এই উপলব্ধি ক্রিয়াশীল হয় যে, একজন নারীকে বিবস্ত্র করে পেটালে কিংবা স্বামীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ধর্ষণ করলে অথবা প্রকাশ্য রাস্তায় একজন নারীকে নাজেহাল করলেও এই সমাজ ও রাষ্ট্রে তার সুরক্ষার নানারকম উপায় বিদ্যমান— তখন সে সাহসী হয়ে ওঠে। ধর্ষণ সব সময় শারীরিক না-ও হতে পারে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধর্ষণও হতে পারে।

অনেক সময় বলা হয়, নারীর একা রাতের বেলা বাইরে যাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে করে তার ধর্ষণের শিকার হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যাবে। আশুলিয়া এলাকায় এ পর্যন্ত যত নারী চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই কথাটি আংশিক সত্য। কারণ দিনের বেলায়ও এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী ও শিশুরা ধর্ষিত হয় তাদের পরিচিতজনের দ্বারা। এমনকি পরিবারে।

অনেক সময় নারীর পোশাককেও ধর্ষণের জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু নিজেকে পুরোপুরি ঢেকে রাখেন, এমন নারী এবং নিষ্পাপ শিশুরাও ধর্ষিত হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে পোশাকের কোনো প্রসঙ্গ ছিল না। আরও নির্মম বাস্তবতা হলো, পরিবারে এবং পরিচিতজনের মধ্যে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার অনেক ঘটনাই জানাজানি হয় না, মামলা বা গ্রেপ্তার তো দূরে থাক।

প্রশ্ন হলো, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা আদালতের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসলে কী বলে বা তারা যা বলে, সেই কথাগুলো কি আমরা আসলেই জানতে পারি?

সুতরাং, ধর্ষককে গ্রেপ্তার এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি আইন ও আইনপ্রয়োগকারীদের কঠোরতার পরেও কেন ধর্ষণের মতো অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না— তা জানা। কেননা, নিয়মিত বিরতিতে এরকম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে মানেই হলো, সমাজের ভেতরে অপরাধের বীজ লুকিয়ে আছে— যার মূলোৎপাটনে ঘাটতি রয়েছে। কী করে সেই ঘাটতি পূরণ করা যাবে, সেটিই বরং মূল আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত।

লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর