বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় তথ্যযোদ্ধা কমিউনিটি রেডিও

  • হীরেন পণ্ডিত   
  • ২৮ মে, ২০২১ ১২:৩৫

কমিউনিটি রেডিওগুলো যেসব বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো হলো- সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিতকরণ, টিকাদান কর্মসূচি বিষয়ক মিথ্যা তথ্য চিহ্নিতকরণ ও গতানুগতিক ভুল ধারণা, গুজব, ডাহামিথ্যা এবং বিস্তার রোধ করার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে জনগণের জীবন ও জীবিকা সহজতর করা। একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে টিকা গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং টিকা গ্রহণ পরবর্তী সম্ভাব্য শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

জাতিসংঘের তথ্যসমাজ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন পুরস্কার ২০২১-এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বমঞ্চে স্থান লাভ করেছে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ কমিউনিটি সম্প্রচার বিষয়ক উদ্যোগ। গত ১৯ মে ২০২১ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)-এর সদর দপ্তর থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এটি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য সুসংবাদ এবং করোনার বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের সরকারের সাফল্যের কথাই ঘোষণা করে।

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) বাংলাদেশে সম্প্রচাররত সব কমিউনিটি রেডিও স্টেশনকে সম্মিলিতভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তিনটি পর্যায়ে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

জুন থেকে অভিযোজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কমিউনিটি গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর জোরালো করা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদেরকে প্রভাবিত করা।

এছাড়া অপতথ্য, বা তথ্যের পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যমূলক অপব্যবহার ও ভুল তথ্য প্রতিরোধ করে জীবন ও জীবিকা সহজতর করা এবং কমিউনিটি রেডিওতে কর্মরত ১০০০ সম্প্রচারকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা।

গণমাধ্যম বিকাশের জন্য বিএনএনআরসির দৃষ্টিভঙ্গি হলো জ্ঞাননির্ভর প্রাসঙ্গিক সংবেদনশীলতা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে মিডিয়া, তথ্য ও বিনোদনের ভবিষ্যৎ গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে বাংলাদেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল মিডিয়া পরিবেশের তৈরি চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো বিবেচনায় রেখে কণ্ঠহীনের কণ্ঠস্বর হিসেবে কমিউনিটি রেডিওর উন্নয়ন করা।

কোভিড-১৯ মহামারি করোনা ভাইরাস জনমানুষের জীবন-জীবিকার পথ রুদ্ধ ও ব্যাহত করে দিয়েছে। প্রথম ঢেউ এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশ বিপর্যস্ত সেই সঙ্গে সারা পৃথিবী।

বিএনএনআরসি বাংলাদেশে সম্প্রচাররত সব কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় তিনটি পর্যায়ে কাজ করছে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে এবং জুন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযোজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও তাদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যায়সংগত বিষয়ে দৃষ্টিপাত করার মাধ্যমে কাজ করেছে।

সম্প্রচারকারী ও অংশীজনদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও সহনশীল অবস্থা তৈরির জন্য অনুশীলনে গুরুত্ব আরোপ করে কাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে জনগণের জীবনের সার্বিক সুফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যমে কার্যকর প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে তথ্যের মহামারি প্রতিরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের মাধ্যমে জীবন ও জীবিকা সহজতর করার দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ করছে। ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে।

বিএনএনআরসি কেন্দ্রীয়ভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত কোভিড-১৯ : মোকাবিলায় জাতীয় প্রস্তুতি পরিকল্পনা এবং এ বিষয়ে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি, প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রাপ্ত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে অনুষ্ঠান নির্মাণের দিক-নির্দেশনাসহ সম্প্রচাররত কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলোতে প্রেরণ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কমিউনিটি রেডিওর কার্যক্রম তুলে ধরছে।

কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো জনসাধারণের প্রাত্যহিক জীবনে মনোভাব পরিবর্তন এবং এই মহামারি মোকাবিলার জন্য কাজ করে চলেছে; সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১৬৫ ঘণ্টা অনুষ্ঠান প্রচার করছে। কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য প্রদান করছে। তাদের এই দ্বিমুখী যোগাযোগের সুযোগে শ্রোতারা ক্ষুদেবার্তা ও ফোনকলের মাধ্যমে তাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো পেয়ে থাকেন।

কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো জেলা ও উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। কোভিড-১৯ কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য একজন সম্প্রচারকারী দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো কোভিড-১৯ সংক্রান্ত-অনুষ্ঠান স্থানীয় ভাষায় তৈরি ও সম্প্রচার করছে।

ফলে কমিউনিটি রেডিওগুলো বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের কাছে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

দেশের চলমান কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকাদান বিষয়ক প্রচারণার ফলে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে টিকা নেয়ার প্রতি ভীতি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত ভুল ধারণা বা সন্দেহ দূর হচ্ছে। পাশাপাশি টিকা গ্রহণের প্রতি তাদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।

কমিউনিটি রেডিওগুলো যেসব বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো হলো- সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিতকরণ, টিকাদান কর্মসূচি বিষয়ক মিথ্যা তথ্য চিহ্নিতকরণ ও গতানুগতিক ভুল ধারণা, গুজব, ডাহামিথ্যা এবং বিস্তার রোধ করার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে জনগণের জীবন ও জীবিকা সহজতর করা।

একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে টিকা গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং টিকা গ্রহণ পরবর্তী সম্ভাব্য শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।

টিকাদান কর্মসূচিতে দলিত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যেমন- নাপিত, ঝাড়ুদার, মুচি, কামার, জেলে, হিজড়া সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ঝুঁকিতে রয়েছে এমন অন্যান্য প্রান্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ।

কমিউনিটি রেডিওগুলোতে নিয়মিত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কী কী করণীয় সে সংক্রান্ত অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ফলে গ্রামীণ জনপদে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে, শ্রোতারা ফোন কল, ক্ষুদেবার্তা প্রেরণে এবং ফেসবকু লাইভে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করে উত্তর জানতে পারছে এবং জনসাধারণ প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এখন তারা এ সম্পর্কে তথ্য পেয়ে সচেতন হচ্ছে। ফলে কমিউনিটি রেডিও বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের কাছে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলো হলো- স্থানীয় পর্যায়ে টিকাদান বিষয়ক সংবাদ, টিকাগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, স্থানীয় পর্যায়ে গঠিত কোভিড-১৯ টিকাদান কমিটির সদস্যবৃন্দ যেমন- জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও র‌্যাব-এর কমান্ডার, পুলিশ সুপার, অফিসার ইন-চার্জসহ জাতীয় পর্যায়ের সেলিব্রেটি ও স্থানীয় জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ। জনপ্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকারসহ রেডিও স্পট, নাটিকা, কথিকা, জিঙ্গেল, ভক্সপপ, কমিউনিটি সার্ভিস এনাউন্সমেন্ট (সিএসএ) প্রচারিত হচ্ছে নিয়মিত।

চ্যাম্পিয়ন প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো- বিএনএনআরসি ২০২০ সালের মার্চ থেকে কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের সব কমিউনিটি রেডিও স্টেশনকে সংগঠিত করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এই উদ্যোগের প্রধান ফোকাসগুলো হলো-

সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন বা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও তাদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যায়সংগত বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা। একই সঙ্গে সহনশীল অবস্থা তৈরির জন্য অনুশীলনে গুরুত্ব আরোপ করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে জনগণের জীবনের সার্বিক সুফল নিশ্চিত করা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে তথ্যের মহামারি প্রতিরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের মাধ্যমে জীবন ও জীবিকা সহজতর করা।

উল্লেখ্য, বিএনএনআরসি বিজয়ী হিসেবে ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার অর্জন করে ২০১৬ সালে, এছাড়া ২০১৭ এবং ২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সম্মাননা লাভ করে।

বাংলাদেশের কমিউনিটি মিডিয়ায় গ্রামীণ কণ্ঠহীন জনগোষ্ঠীর কণ্ঠ শক্তিশালী করা তথা তথ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার সৃষ্টি ও তাদের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য বিএনএনআরসি’র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, নিবিড়ভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণ এবং জোরালো নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার অর্জন।

বিএনএনআরসি জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) ও জাতিসংঘের ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের বিশেষ পরামর্শক মর্যাদাপ্রাপ্ত সংস্থা।

বিএনএনআরসির কর্মপ্রচেষ্টা হলো- বাংলাদেশে কমিউনিটি মিডিয়াসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিবেচনায় রেখে গণমাধ্যমের জ্ঞানভিত্তিক ও চলমান ইস্যু উভয় বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের উন্নয়নের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে গণমাধ্যম, তথ্য এবং বিনোদন জগতের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখা।

লেখক: প্রাবন্ধিক

এ বিভাগের আরো খবর