বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জনসংখ্যার ভার ও বাসের অযোগ্য হয়ে ওঠা ঢাকা

  •   লাভা মাহমুদা   
  • ২৬ মে, ২০২১ ১৩:৩৭

১৩৪ বর্গমাইল আয়তনের ঢাকায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ। প্রতি বর্গমাইলে ১ লাখ ১৫ হাজার লোকের বাস এবং প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ মানুষ। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘনত্বপূর্ণ নগরী। এই বিশাল মানুষের বোঝা বইতে পারছে না ঢাকা। অতিরিক্ত মানুষের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আর দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নগর জীবন।

রাজধানী শহর ঢাকা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে অনেক আগেই। দূষণেও সেরাদের তালিকায় স্থান পেয়েছে। দীর্ঘদিন থেকেই দূষণের নগরীর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দুই কোটিরও বেশি মানুষের এই প্রাণের শহর। পানি-বায়ু, শব্দ সব ধরনের দূষণে নাজুক ঢাকা এখন সব মাত্রা অতিক্রম করে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত নগরী।

শিল্পকারখানা ও যানবাহন বায়ুদূষণের প্রধানতম কারণ। এর উপাদানগুলো মূলত ধূলিকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, কার্বন মনো-অক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনের কারণে ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ ঘটছে, ফলে বায়ুদূষণও ক্রমাগত বাড়ছে।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন পৃথিবীর বড় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বাতাসে সবচেয়ে বেশি মিশছে সিসা। সিসা কমানোর কোনো তথ্য জানা নেই।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় যানবাহনগুলো প্রতিদিন ১০০ কেজি সিসা ১ দশমিক ৫ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ৬০ টন কার্বন মনো-অক্সাইড নির্গত করে। এসব উপাদান ক্রমাগত বাতাসের সঙ্গে মিশছে। সেই বাতাস আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে দেহে যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি প্রভৃতি মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য প্রতিনিয়ত খাল-বিল, নদীতে মেশার ফলে এবং জমিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে পুকুর, নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাবক হিসেবে পুকুর ও নদীর জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। কীটনাশক, সার ও বর্জ্য মাছের রোগ সৃষ্টি করছে, যার ফলে ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে।

আমরা যারা ঢাকা শহরে বাস করি তারা জানি, প্রতি পদে কত যন্ত্রণা ভোগ করি । ধুলায়, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পুরো শহর, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মেজাজ বিগড়ে যায়। শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের কারণে দশ মিনিটের পথ পার হতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। সকল সহ্য ক্ষমতা ছাড়িয়ে জ্যাম এখন অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে।

প্রতিদিন কী পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, ভাবলে শুধু কষ্টই বাড়ে। অনেকেই হাঁটার কথা বলেন। কিন্তু ফুটপাতগুলো দিয়ে হাঁটতে গেলে বোঝা যায়, সেগুলো মোটেই জনবান্ধব নয় বরং যন্ত্রণাদায়ক। হাঁটতে গেলে কতবার হোঁচট খেতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তাছাড়া বেশিরভাগ ফুটপাতও স্থায়ী অথবা অস্থায়ী হকারদের দখলে।

একটু বৃষ্টিতে পানি জমে রাস্তাঘাট টইটম্বুর হয়ে যায়, অন্যান্য বাহনের সঙ্গে চলে নৌকাও। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এই শহরে । এখন এখানে শীতকাল আসে শুধু ঋতু হিসেবে। প্রায় পুরোটা বছরই প্রচণ্ড গরম থাকে। গরম এবং আর্দ্রতার পরিমাতণ এ বেশি যে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সারা বছর তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করি, কবে হিমালয় থেকে একটু শীতের হিমেল পরশ আমাদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি দেবে। তবে বাস্তবতা হলো অন্যরকম।

১৩৪ বর্গমাইল আয়তনের ঢাকায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ। প্রতি বর্গমাইলে ১ লাখ ১৫ হাজার লোকের বাস এবং প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ মানুষ। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘনত্বপূর্ণ নগরী। এই বিশাল মানুষের বোঝা বইতে পারছে না ঢাকা। অতিরিক্ত মানুষের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আর দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নগর জীবন।

তবে বাস্তবতা যা-ই হোক, দখল হওয়া খালগুলোকে এর যৌবন ফিরিয়ে দিতে হবে, ঢাকার ভেতর থেকে সব ধরনের কলকারখানা বাইরে নেয়াসহ সব ধরনের মেকানিজম প্রয়োগ করে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।

আমরা চাই বিশুদ্ধ মুক্তবায়ুতে প্রাণভরে শ্বাস নিতে, চাই গাছের ছায়ায় আচ্ছাদিত শহরের হিমেল পরশ পেতে। মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে যানবাহনের চাপ কমবে৷ চার শ’ বছরের পুরাতন এই শহর আমার অতি আপন, হৃদয়ের অংশ, এর অলিতে-গলিতে আমি প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাই। এই শহরের বাসিন্দা হিসেবে দূষিত বায়ুতে ধুঁকে ধুঁকে মরতে চাই না। এই নগরীর একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে প্রাণোচ্ছল জীবন চাই, চাই আনন্দে বেঁচে থাকতে।

লেখক: শিক্ষক ও কলাম লেখক ।

এ বিভাগের আরো খবর