বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদেশের হাতছানিতে মেধাশূন্য হতে চলেছে দেশ

  • শেখ এ. রাজ্জাক রাজু   
  • ২২ মে, ২০২১ ১৫:৩৬

মেধাবীদের মূল্যায়নে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে নতুবা আগামী প্রজন্ম হবে মেধাশূন্য বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের ‘রূপকল্প’ বাস্তবায়নে এদেশের সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। বৈশ্বিক করোনাকালে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষায় যে ছেদ পড়ছে- তাতে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম হবে মেধাশূন্য। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মেধাবীরা সব জায়গায়, সবদেশেই মেধাবী।

শিক্ষার মান ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। তবে আগে চাই শিক্ষার মান উন্নয়ন। সামাজিক উন্নয়নের তিনটি বিষয় অন্তরায়, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে তাহলো- রোগ-ব্যাধি, দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা। উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে উচ্চশিক্ষাকে সময়োপযোগী করে নিতে হয়, তাতে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না। তাই সমাজকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন জ্ঞান ও দক্ষতা এবং এর যথোপযুক্ত প্রয়োগ।

দেশ এখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করছে। দেশের বয়স বেড়েছে বটে, অনেক কিছুই বদলেনি। জনসংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু সত্যিকারের আদর্শ মানুষের সংখ্যা বাড়েনি। দেশ স্বাধীনের সময় উত্তরসূরি হিসেবে পাওয়া গেল ৪টি সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। এই ৬টিতে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী, শ’ তিনেক কলেজে অধ্যয়ন করত ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। স্বাধীনতার পর ৫ দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪০টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১ লাখ।

কলেজের সংখ্যা ২২ শ’, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ লাখ। এক কথায় ৩ দশকে ৩০ হাজার থেকে ৩০ লাখে পৌঁছেছে। এই বাড়ার কারণ যা-ই হোক না কেন, উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হলো, গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো এবং বিশ্বমানের মানব সম্পদ তৈরি করা। কিন্তু আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি- তা শিক্ষিত সচেতন বোদ্ধামহল ভালো করেই জানেন।

বিশ্ববিদ্যালয় তো জ্ঞান সৃষ্টি বা উদ্ভাবনের উর্বর ক্ষেত্র। সেই উর্বর ক্ষেত্রের কৃষক যদি জ্ঞাননির্ভর দক্ষ কারিগর ও শিল্পী না হন, তাহলে সোনার ফসল ফলাবে কীভাবে? দেশে নানাভাবে অসংখ্য ভিআইপি, সিআইপি তৈরি হচ্ছে যার পরিসংখ্যান সরকারের হাতে আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জ্ঞানগভীর, প্রজ্ঞাময়, দক্ষ শিক্ষাবিদ দিয়ে সময়োপযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি।

শিক্ষার গুণগত মান নির্ধারণে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করলেই এই ধারণা স্পষ্ট হবে। এদেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর মাত্র শতকরা ৯ জন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত পড়ে। অথচ পাশের দেশ ভারতে এই হার শতকরা ৪০, মালেশিয়াতে ৪৪ এবং সিঙ্গাপুরে ৫০। এ কারণেই গবেষণা ও শিক্ষার মান প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি এ দেশে।

এছাড়াও মেধাবীরা বিদেশে চলে যাওয়ায় মেধাশূন্য হয়ে পড়েছে দেশ। গত ৫ বছরে প্রায় এক লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ ছেড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ভারত, মালেশিয়া, যুক্তরাজ্য, ব্রিটেন, চীন, জাপানের কথা নাই-বা উল্লেখ করা হলো। উচ্চশিক্ষার হাতছানিতে অনেক শিক্ষার্থী পাড়ি জমায় স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। ইউনোস্কোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, শুধু ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য এ দেশ থেকে পাড়ি দিয়েছে ৩৯,৫০০ শিক্ষার্থী এবং পরবর্তী বছরে প্রায় ৬০ হাজার।

এদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, স্থপতি, শিক্ষক ও মেধাবী শিক্ষার্থী। ডিগ্রি অর্জন শেষে এ মেধাবীরা দেশে ফিরতেও নারাজ। ফলে, দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে দিন দিন। কিন্তু উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখে প্রতিবছর এ দেশের প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী। অথচ বাংলাদেশে ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫০ হাজার আসন। ফলে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে এবং মেধা পাচারের সঙ্গে অর্থপাচারও হয়ে যাচ্ছে আপনা-আপনি। তথ্যমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে।

মেধাবীদের মূল্যায়নে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে নতুবা আগামী প্রজন্ম হবে মেধাশূন্য বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের ‘রূপকল্প’ বাস্তবায়নে এদেশের সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। বৈশ্বিক করোনাকালে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষায় যে ছেদ পড়ছে- তাতে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম হবে মেধাশূন্য। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মেধাবীরা সব জায়গায়, সবদেশেই মেধাবী। মেধার সঠিক মূল্যায়ন হলে নিজ জন্মভূমি ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমাবে না, এই অদম্য সম্ভাবনাময় মেধাবীরা।

বৈশ্বিক করোনাকালে একমাত্র বাংলাদেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে- আর সব কিছুই খোলা। এনজিও পরিচালিত ও সরকারের ‘সেকেন্ড চান্স’ এডুকেশনের বিশাল অংশের শিক্ষার্থী ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কোনো হদিস কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। তার মানে হচ্ছে তারা আর স্কুলে ফিরে আসছে না। নিয়মিত পড়াশুনা ও মূল্যায়ন ছাড়া শিক্ষার্থীদের অটোপাস দিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হচ্ছে। ফলে রয়ে যাচ্ছে বিশাল লার্নিং গ্যাপ। অতএব, ২০৪১ সালে উন্নয়নের রূপকল্প নয় বরং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ একটা মেধাশূন্য প্রজন্ম তৈরি হতে যাচ্ছে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষা-উদ্যোক্তা, শিক্ষা বিষয়ক গবেষক ও কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর