বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আল কায়েদা ও হেফাজত

  •    
  • ৬ মে, ২০২১ ২১:২০

২ মে ছিল আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালে এই দিনে পাকিস্তানের অ্যাবোটোবাদে লাদেনের গোপন আস্তানায়, পাকিস্তানকে না জানিয়েই অপারেশন চালায় আমেরিকা। এবং সেই কমান্ডো অপারেশনে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। এই অপারেশন এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে পুরো অপারেশন প্রক্রিয়া সেদিন স্যাটেলাইটের মাধমে প্রত্যক্ষ করেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

সৌদি আরবের এই ধনী কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী ১৯৮৮ সালে আফগানিস্তানে আল কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন। লাদেন ছাড়া ওই মুহূর্তে অত ধনী ও প্রতিষ্ঠিত কেউ আল কায়েদায় ছিলেন না। অধিকাংশ আল কায়েদার নেতা ছিল মিসরীয়। তবে তারা কেউই লাদেনের মতো পরিচিত নাম নন এবং ওই মাপের ধনী নন।

লাদেনের মৃত্যুর পর থেকে আল কায়েদা আর পৃথিবীতে ওই ধরনের কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। আফগানিস্তান ছাড়া ইরাক ও সিরিয়াতেও তারা দুর্বল হয়ে গেছে। তারা ওইভাবে তাদের প্রসার ঘটানোর কোনো স্পেস কোথাও আর পায়নি বলে বলা হয়ে থাকে। অথচ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা পাকিস্তানের বর্ডার থেকে কান্দাহার অবধি তাদের শাসন চালু করেছিল।

২০০১-এ ৯/১১ এর পরে গত বিশ বছরে আফগানিস্তানে আমেরিকা ও ন্যাটোর বাহিনী উপস্থিত। তারা শুধু তালেবান শাসন হটায়নি। তালেবানকে দুর্বল করে একেবারে কোণঠাসাও করেছে। এর পরে ট্রাম্প রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরে আমেরিকাকে গ্রেট করার জন্য বাইরের বহু দেশ থেকে ট্রাম্প সৈন্য উঠিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়। কারণ, আমেরিকার সৈন্য পৃথিবীর বহু দেশে। তাছাড়া, আমেরিকার কোথাও সৈন্য পাঠাতে খুব বড় কোনো অজুহাত লাগে না। তাদের ওই একটাই কথা, আমেরিকার সিকিউরিটির জন্য তারা সৈন্য পাঠিয়েছে। যাহোক, ট্রাম্পের ওই উদ্যোগের ফলে গত বছর দোহা এগ্রিমেন্ট হয় তালেবানদের সঙ্গে। সেখানে বলা হয়, তালেবানরা আর কোনো বিদেশি মিলিশিয়ার ওপর হামলা করবে না। রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর ওপর হামলা করবে না। আমেরিকাও ১ মে ২০২১ থেকে তাদের সৈন্য সরিয়ে নেবে।

গত বছরের ৪ তারিখ নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হয়ে আমেরিকায় জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে ট্রাম্পের বহু পদক্ষেপ বাইডেন বাতিল করেছেন। তবে দোহা এগ্রিমেন্ট বাতিল করেননি। শুধু ১ মে থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সময়টা সরিয়ে সেপ্টেম্বরে নিয়ে গেছেন।

আমেরিকা হয়তো সেপ্টেম্বরে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করবে। তবে ইতোমধ্যে ‘আল আহরাম’ তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল কায়েদার সঙ্গে বিদেশি মিলিশিয়া ও আফগান বাহিনীর ভয়ংকর সংঘর্ষ হবে। প্রতিনিয়ত তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। যে শান্তি চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে এ ধরনের কোনো কার্যকর শান্তিচুক্তি হবে না। তাছাড়া আমেরিকার সৈন্যদের সাহায্য ছাড়া এখনও আফগান সেনাবাহিনী তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে না বা ততটা প্রস্তুত নয়। বরং দেরিতে হোক বা শিগগিরই হোক, আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহার হলে তালেবানরা আফগানিস্তানের বিশাল জায়গা দখল করবে।

আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে কাজ করছে বর্তমানে তালেবানের নামকরা নেতা মোহাম্মদ হকও তাই মনে করেন। তিনি জাপানের একটি নিউজ পোর্টালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তালেবানদের সঙ্গে বিদেশি মিলিশিয়া ও আফগান বাহিনীর যে সংঘর্ষ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া আফগান সরকার এখনও সারা দেশে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এখনও পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু স্থান তালেবানদের দখলে রয়েছে। আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহার হলে দ্রুতই আফগান তালেবানরা তাদের দখলকৃত স্থান বাড়িয়ে নেবে।

অন্যদিকে এ মুহূর্তে তালেবানদের সহযোগিতা করছে রাশিয়া ও ইরান। আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে কৌশলগত কারণে রাশিয়া ও ইরান তাদের সহযোগিতা আরও বাড়াবে। কারণ, ইরানের সঙ্গে আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ বাইডেনের আমলে আরও বাড়বে। অন্যদিকে রাশিয়ার জনপ্রিয় বিরোধী নেতা নাভালনিকে নিয়ে বাইডেন যে অবস্থান নিয়েছেন তার ফলও ভিন্ন হবে। এর ফলে, রাশিয়া সেন্ট্রাল এশিয়ার সঙ্গে সাউথ এশিয়াকে যোগ করার রোড ও রেললাইনের থেকে বেশি গুরুত্ব দেবে আফগানিস্তানে তালেবানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা বাড়ানোতে। পাকিস্তান সরকার না চাইলেও তাদের সামরিক বাহিনী যেহেতু তালেবানদের সঙ্গে বিভিন্ন রকম ড্রাগ ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাই পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সমর্থন আফগান তালেবানদের প্রতি থাকবে।

বাংলাদেশের তালেবান হচ্ছে হেফাজত। সরকারসহ অনেকেই বিষয়টি এখনও অবধি চিহ্নিত করতে ভুল করছে। এমনকি এখনও অনেকে হেফাজতকে অরাজনৈতিক সংগঠনও বলে থাকে। ওসামা বিন লাদেন যদি বেঁচে থাকত এবং আফগানিস্তানে যদি আমেরিকান সৈন্য না আসত, তাহলে এত দিনে বাংলাদেশে হেফাজতের অবস্থা ভিন্ন হতো। যদিও চারদলীয় জোট সরকারের নামে একবার তাদের কিছু নেতা এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার অংশ ছিল। শুধু আমেরিকার চাপে তাদের কোনো নেতাকে সেদিন খালেদা মন্ত্রী করতে পারেননি। আমেরিকা পুরো একটি লিস্ট বিএনপিকে ধরিয়ে দিয়েছিল যে এই কজনের ভেতর থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হলে আমেরিকা যেকোনো ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশে। তবে তারপরেও খালেদার আমলে লাদেনের সেকেন্ড ম্যান জাওয়াহারি নৌপথে বাংলাদেশে আসেন। মতিউর রহমান নিজামীর তত্ত্বাবধানে তাকে চট্টগ্রাম বন্দরের একটু দূরে একটি বিশেষ নৌযানে করে নামানো হয়। তিনি ঢাকার উত্তরা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে যান। ঢাকার উত্তরায় যে মিটিং হয়, সেখানে হাওয়া ভবনের প্রতিনিধিও ছিল। টাইম পত্রিকার কভার স্টোরি ডেডলি কার্গো ও নিউ ইয়র্ক পত্রিকার বিভিন্ন রিপোর্টে এসব ঘটনা সে সময় ছাপা হয়।

সেদিনের সেই ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা ও তাদের ছেলেমেয়েরা এখন হেফাজত নেতা। এই হেফাজতকে অরাজনৈতিক সংগঠন, জামায়াত, বিএনপিবিরোধী সংগঠন- এমনি নানান অভিধায় ভূষিত করে সরকার এতদিন কেন তাদের সঙ্গে আপস করে এসেছে, কারা কারা সে আপসের সঙ্গে ছিল, এ বিষয়গুলো সত্যিই বিস্ময়কর। তবে এবার ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উপলক্ষ করে দেশব্যাপী হেফাজতের তাণ্ডবের পরে সরকার এখন তাদের প্রতি বেশ কঠোর হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী যেমন মনে করা হচ্ছে, তালেবানরা দুর্বল হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও তেমনি সরকারের কঠোরতা দেখে অনেকেই মনে করছেন হেফাজত দুর্বল হয়ে গেছে। আর দুর্বল বলেই তারা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহার হলে আফগানিস্তানে তালেবান যেমন ভয়ংকর হয়ে ফিরে আসবে- বাংলাদেশের তালেবান এই হেফাজতিরাও কিন্তু সরকার একটু দুর্বলতা দেখালেই ভয়াবহ হয়ে উঠবে। তাছাড়া তারা সরকারের এই কঠোরতার মধ্যেও ঈদের পরে তাদের ভয়ংকর রূপ নিয়ে নামার চেষ্টা করবে। তাই এখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাইডেনকে যেমন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সরকারকেও হেফাজতের প্রতি কঠোরতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোনো অবকাশ নেই।

এ বিভাগের আরো খবর