বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৩৯

আগামী জুনের ভেতর ৫৬০ মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হলে তাদের প্রতিদিন ১১.৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হবে। চায়নার বর্তমানে যে ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা আছে তাতে কোনো মতেই এটা সম্ভব নয়।

বর্তমানের এই সফট স্কিলের যুগে সফট ডিপ্লোম্যাসিই যে সেরা ডিপ্লোম্যাসি এ নিয়ে পৃথিবীজুড়ে কোনো বির্তক নেই। এখান থেকে মাত্র বছর পাঁচ আগেই চায়না সাউথ চায়না সি’র দাবিদার দেশগুলোকে উত্তর দিয়েছিল তারা এ সমস্যা কামানের গোলার মুখে সমাধান করবে।

সাউথ চায়না সি’র ডিপ্লোম্যাসিতে যে সেখান থেকে চায়না খুব বেশি সরে এসেছে তা নয়। তবে এও সত্য, চায়না পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এক ধরনের সফট ডিপ্লোম্যাসিতেও এখন ঢুকতে চাচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানের কোভিড-১৯ এর কালে তারা সফট ডিপ্লোম্যাসির অন্যতম উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছে ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি।

এই ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসিতে চায়না’র যতটা না প্রতিযোগিতা পশ্চিমাদের সঙ্গে তার থেকে বেশি প্রতিযোগিতা ভারতের সঙ্গে। তবে এটাও সত্য চায়না এই ভ্যাকসিন কূটনীতিতে, ভ্যাকসিন নিয়ে যে বিশ্ব রাজনীতি শুরু হয়েছে সেখানেও তারা পা রাখতে চায়- এমনকি জিততেও চায়। চায়নার এই ভ্যাকসিন কূটনীতি ও রাজনীতিতে জেতার জন্যে তাকে তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এই তিনটি বিষয়, তাদের ভ্যাকসিনের সাপ্লাই, ওই সাপ্লাইয়ের গতি এবং এর চাহিদার ওপরে।

চায়নার সরকারি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আগামী জুনের মধ্যে তাদের দেশের ৪০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেবে। অর্থাৎ জুনের ভেতর তাদেরকে ভ্যাকসিন দিতে হচ্ছে ৫৬০ মিলিয়ন মানুষকে। চায়নাকে এই কাজ করতে হলে তাদের ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়াতে আরও বেশি তৎপর ও উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, আগামী জুনের ভেতর ৫৬০ মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হলে তাদের প্রতিদিন ১১.৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হবে। চায়নার বর্তমানে যে ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা আছে তাতে কোনো মতেই এটা সম্ভব নয়। কারণ, চায়নার সিনোভ্যাক বায়োটেক ও চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ বর্তমানে দিনে উৎপাদন করতে পারে ৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন। অর্থাৎ তাদেরকে প্রায় দ্বিগুণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এই সক্ষমতার অভাবে ইতোমধ্যে চায়নার পাঁচটি প্রদেশে ভ্যাকসিনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। শুধু এ নয়, তুরস্ক থেকে ব্রাজিল অবধি যতগুলো দেশকে চায়না প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা সেই প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী এখন ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারছে না। যা চায়নার ভ্যাকসিন দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বলা হচ্ছে চায়না অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটা ছিল অনেকটা তাদের বিদেশ-নীতিতে এক ধরনের এগিয়ে যাবার কৌশল। কিন্তু সেখানে তারা এখন প্রশ্নের মুখোমুখি পড়ে যাচ্ছে। এমনকি ভারতের বাইরে যে আমেরিকার সঙ্গে চায়নার এই ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের কূটনৈতিক লড়াই সেই আমেরিকা যেভাবে ভ্যাকসিন তাদের মানুষকে দিচ্ছে তাতে আগামী জুনে তারা একটি হার্ড ইমিউনিটিতে এসে যাবে।

অপরদিকে অক্সফোর্ড, ফাইজার, মর্ডানা ও জনসন ও জনসনের ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতার কাছে চায়নার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রতিযোগিতায়ও টিকতে পারছে না। কারণ চায়না বলেছিল তাদের সিনোর্ফামার ভ্যাকসিন ৭৯% কার্যকর হবে। কিন্তু বাস্তবে পেরুতে দেখা যাচ্ছে এটা মাত্র ৩৩% কার্যকর হচ্ছে। অপরদিকে সিনোভ্যাক ব্রাজিলের প্রয়োগ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে মাত্র ৫০.৭% উপসর্গ নিরাময়ে কার্যকর হচ্ছে। তাছাড়া কোনোটাই বর্তমানের এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের ওপর কোনো কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারছে না।

এমত অবস্থায় বাংলাদেশ চায়নার সাউথ এশিয়ান কোভিড প্যাক্টে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই প্যাক্টে যোগ দিয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। সাউথ এশিয়ার সব থেকে বড় দেশ ভারত এই প্যাক্টে যোগ দেয়নি।

এই জোটের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাস্তবে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখানে তিনটি সিদ্ধান্ত এসেছে।

এক. কোভিড ম্যানেজমেন্টের জন্যে একটি মেডিক্যাল সহযোগিতার স্টোরেজ গড়ে তোলা। যেখান থেকে এই জোটের এই দেশগুলোর ভেতর যে যখন ক্রাইসিসে পড়বে তখন মেডিক্যাল সহায়তা নিতে পারে।

দুই. কোভিড-উত্তর দারিদ্র্য দূর করার জন্যে এই ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গড়ে তোলা। যা কোভিড উত্তর এই জোটের দেশগুলোতে যে দারিদ্র্য বাড়বে তা দূর করতে সহযোগিতা করবে।

তিন. একটি ই-কমার্স ফোরাম গড়ে তোলা। কারণ কোভিডের কারণে দিন দিন ই-কর্মাসই বাড়ছে; এবং এখন এই ই-কমার্সকে এগিয়ে নিতে হলে একটি জোটের দরকার।

বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। তাই মেডিক্যাল স্টোরেজে সহয়তা কোনপথে আসবে। কোথা থেকে আসবে। সেগুলো ঠিক করা হয়নি। অপরদিকে কোভিড চিকিৎসায় যে এন্টি ভাইরাল ওষুধগুলো ব্যবহার হচ্ছে, তাও পশ্চিমা দেশের। সেগুলো কীভাবে নেয়া হবে- তা পরিষ্কার নয়। তাছাড়া পশ্চিমা কিছু কোম্পানি বিশেষ করে ফাইজার আশা করছে আগামী এক বছরের মধ্যে তারা মুখে খাওয়ার ওষুধ ও ইনজেকশানের মাধ্যমে কোভিড চিকিৎসার কার্যকরী এন্টিভাইরাল ওষুধ বাজারে দিতে সক্ষম হবে। সেগুলো কীভাবে জোগাড় হবে তাও এখানে পরিষ্কার নয়।

দ্বিতীয় বিষয়টি আসছে কোভিড-উত্তর দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্যে ফান্ড। চায়নার এই জোটের যে দেশগুলো এখানে একমাত্র চায়না ছাড়া সবগুলো দেশেই কোভিড উত্তর দারিদ্র্য নামবে বেশ বড় ভাবে। সেখানে তা মোকাবিলা করার জন্যে বেশ বড় আকারের অর্থই প্রয়োজন হবে এ ফান্ডে। এখন এই অর্থের জোগানদাতা কে হবে? এই জোটে অর্থ জোগানদাতা হিসেবে একমাত্র চায়নাকে ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চায়না কি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বা এডিবির মতো নামমাত্র সুদে বা শুধু সার্ভিস চার্জে এই টাকার জোগান দেবে? চায়নার অতীত কোনো রেকর্ড সেটা বলে না।

বরং বিশ্বে চায়নাই সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টে ঋণ দেয়। শুধু তাই নয়, তারা কোনো ডেভেলপমেন্ট কাজ ধরলে সেটাকে সময় বাড়িয়ে সব সময়ই খরচ বাড়িয়ে ফেলে। এমনকি অনেক দেশে চায়নার অর্থায়নে অনেক ডেভেলপমেন্ট কাজের খরচ এ পর্যায়ে চলে গেছে, তাদের সেখানে ওই স্থানসহ চায়নাকে লিজ দিতে হয়েছে। লাওসে তো কয়েকটি সিটিই চায়নার অধীনে। যে কারণে চায়নার ‘ঋণের ফাঁদ’ বলে একটা বিষয় পৃথিবীতে সকলের জানা হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় এই ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে এই বিষয়টি পরিষ্কার করে না নিলে বাকি দেশগুলো কোভিড-উত্তরকালে আরও বেশি সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে।

এছাড়া এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের মিটিংয়ের যৌথ ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে, এই জোটের সব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মূল অস্ত্রই হচ্ছে ভ্যাকসিন। আর বাস্তবতা হলো, শেষ অবধি কার্যকরী ভ্যাকসিনগুলো থেকে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর হাতে। এর একটি বড় অংশের উৎপাদক ভারত। তাই এই ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসিতে শেষ অবধি পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের সহযোগী ভারতের সঙ্গে দৌড়ে কোন পর্যায়ে থাকবে চায়না? এখনও অবধি বাস্তবতা বলছে পশ্চিমা দেশগুলোই এই ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসিতে এগিয়ে আছে।

এ বিভাগের আরো খবর