বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেনিয়াবৃত্তিই আপারহ্যান্ডে

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:৩৯

সবাই নিজের দিকে তাকাই। ভুলত্রুটি কমিয়ে আনার কাজে মনোযোগী হই। লকডাউন মানা হচ্ছে না- এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিদিন টেলিভিশন চিত্রে ব্যস্ত সড়কপথের চিত্র দেখে অনেকে হতাশ হচ্ছেন। হাট-বাজারেও প্রায় স্বাভাবিক অবস্থা। সামাজিক দূরত্ব মানায় অনেকেই উৎসাহী নন। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে লকডাউন উঠে গেলে মার্কেটে কী অবস্থা দাঁড়াবে, কে জানে। মানুষের এমন অনেক ঝোঁক রয়েছে, যা বদলানো কঠিন।

একটি গ্লাসের অর্ধেক পানি থাকলে কেউ বলবেন গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ, কেউবা বলবেন অর্ধেক খালি। আবার হাল আমলে বেড়ে ওঠা একদল বলতে পছন্দ করেন- যে অংশটিকে খালি বলা হচ্ছে, তা আদৌ খালি নয়- বাতাসে পূর্ণ। আর এই বাতাসে রয়েছে জীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন।

করোনাকালে এই অক্সিজেন নিয়ে বড়ই টানাটানি। বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট। কেন যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও অক্সিজেন জোগান কার্যকর মাত্রায় নিয়ে যেতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, এ নিয়ে সমালোচনার তির প্রধানত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি। দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগও কম নয়। এ কারণে তাদের অনেক ভালো কাজ চাপা পড়ে যাচ্ছে।

ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক এলাকা মহারাষ্ট্র করোনায় বিপর্যস্ত। দিল্লিতে অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার চলছে। বাংলাদেশের অনেক রোগীর কাছে চিকিৎসার জন্য তুলনামূলক কম ব্যয়ে আকর্ষণীয় শহর দিল্লি। এখন এ শহরের কী দুর্দশা! এ নিয়ে বিদ্রূপ করাই যায়। কিন্তু কখন আমাদের কাঁধে এমন ভয়ংকর দানব চেপে বসবে, কে জানে! বরং আসুন, সবাই নিজের দিকে তাকাই। ভুলত্রুটি কমিয়ে আনার কাজে মনোযোগী হই।

লকডাউন মানা হচ্ছে না- এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিদিন টেলিভিশন চিত্রে ব্যস্ত সড়কপথের চিত্র দেখে অনেকে হতাশ হচ্ছেন। হাট-বাজারেও প্রায় স্বাভাবিক অবস্থা। সামাজিক দূরত্ব মানায় অনেকেই উৎসাহী নন। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে লকডাউন উঠে গেলে মার্কেটে কী অবস্থা দাঁড়াবে, কে জানে। মানুষের এমন অনেক ঝোঁক রয়েছে, যা বদলানো কঠিন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়মিত কারফিউ জারি থাকত। দেখামাত্র গুলি- এটাই ছিল পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের সংকল্প। এমন ভয়ংকর সময়েও একদল লোক গলি থেকে রাজপথের কাছে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, এমন ঘটনা শুনেছি।

শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে লকডাউন কঠোরভাবে বলবৎ করার জন্য বলপ্রয়োগ করা সম্ভব নয়। জীবিকার প্রশ্ন তো আছেই। তদুপরি আছে মানুষের স্বভাব, যা পাল্টানো সহজ নয়। ঘরে ভালো লাগে না, মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে- এমন যুক্তি কতজনই না দিচ্ছে। কক্সবাজারসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছে লাখ লাখ মানুষ- এ দৃশ্য বার বার দেখেছি টেলিভিশনে।

গত বছর যশোরের এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দু’জন কৃষককে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কান ধরে ওঠবস করিয়েছিলেন। এ ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ইউএনও ছিলেন নারী। এ পরিচয় বাড়তি সমালোচনার কারণ হয়েছিল। তাকে বদলি করা হয়। নানাভাবে হেয় করা হয়। এ বারের ‘কঠোর লকডাউনে’ ঢাকায় এক চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বচসার ঘটনাও ফেসবুক-ইউটিউবে ভাইরাল। কে দৃশ্যটি ধরে রাখে এবং কেনইবা সেটা করে? এটা কি সাজানো চিত্রনাট্য ছিল? কে জানে, কার কী মতলব? তবে উভয়পক্ষে সহনশীলতার অভাব ছিল, সন্দেহ নেই।

মানুষের স্বভাবের কথাই ধরুন। একবার স্মরণে আনুন- আপনি কোনো ফ্ল্যাট বাড়ি কিংবা অফিসে গেছেন, দারোয়ান কোথা থেকে এসেছেন, কার কাছে যাবেন- এ সব প্রশ্ন করলে বিরক্ত হননি, এমনটি মনে করতে পারেন? হাসিমুখে দারোয়ানের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, এমন ঘটনাই কি বিরল নয়?

অন্যভাবেও বিষয়টি দেখা যায়। দারোয়ান কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ‘ক্ষমতা দেখানোর’ সুযোগ হাতছাড়া করতে আদৌ উৎসাহী নয়, এমনটিও ঘটে থাকে। চিকিৎসক-পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট, কে বেশি সীমা লঙ্ঘন করেছে- সেটা এখন গৌণ হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি পেয়েছেন। তাকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি যদি ‘স্বাভাব বদমেজাজি’ হন, নতুন কর্মস্থলেও তার প্রকাশ ঘটতে পারে। তার পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তারা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যেমন হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। বর্তমান দুর্যোগকালে কারা কত বেশি সম্মুখযোদ্ধা, সেটাও আলোচনায়।

অপরদিকও রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে- সকল চিকিৎসককে ঘরের বাইরে বের হলেই পরিচয়পত্র সঙ্গে নিতে হবে এবং যেখানে দেখানোর প্রয়োজন পড়বে দেখাতে হবে। আশা করব, সংশ্লিষ্ট সকলে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে। রাস্তায় বের হয়েছি তাড়াহুড়া করে তাই মাস্ক সঙ্গে নিতে কিংবা পরিচয়পত্র বহন করতে ভুলে গেছি- এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। খুন করলে ফাঁসি হয়, এমন আইন জানা ছিল না- এ যুক্তি দেখিয়ে কোনো খুনি কি আদালতের সহানুভূতি পাবে?

আমরা চরম দুঃসময় অতিক্রম করছি। বিশ্বের সব দেশ এক ভয়ংকর ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি- সব বিপর্যস্ত। রোগে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। কবে এ দুর্যোগের শেষ হবে, কেউ জানে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর কতই না ভরসা বিভিন্ন দেশের। কিন্তু তারা ‘একেক সময় একেক কথা বলছে’।

ঘন ঘন পরামর্শ বদলাচ্ছে। উন্নত দেশগুলো ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা করছে। আবার এ সব দেশের মধ্যেই প্রতিযোগিতা- কে কাকে টেক্কা দেবে? মানবতা ভূ-লুণ্ঠিত। ঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে এক দেশ আরেক দেশের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ত্রাণসামগ্রী, ওষুধ ও অন্যান্য দ্রব্য জরুরিভিত্তিতে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ বহু বছর এ ধরনের সহায়তা পেয়েছে। একটা সময় গেছে যখন সামান্য মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের পরও আমরা বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছি। এখন অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। তদুপরি কমেছে ‘ভিক্ষাবৃত্তির মনোভাব’। করোনাকালে আমরা ভ্যাকসিন ভিক্ষা চাইনি, নগদ দামে কিনেছি। নিজেরা এ ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছি। মুক্তিযুদ্ধের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশিয়া ভ্যাকসিনের ফর্মুলা তৃতীয় পক্ষকে দেয়া যাবে না, এ শর্ত দিয়েছে। ব্যবসায়িক বিবেচনায় এ শর্ত স্বাভাবিক এবং অবশ্য পালনীয়। তবে গোটা বিশ্ব যখন সংক্রমণের ঝুঁকিতে, তখন স্বাভাবিক ছিল সব ফর্মুলা উন্মুক্ত করে দেয়া। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, চীন, জার্মানি- সবার দায় এটা। এখন শর্ত থাকতে পারত একটিই- ‘ফর্মুলা দিলাম, মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে হবে। ভ্যাকসিন দিয়ে মুনাফা করা যাবে না।’ কিন্তু হায়, মানবজাতির অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে তখনও বেনিয়াবৃত্তি আপারহ্যান্ডে!

করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় স্বেচ্ছাশ্রমের অনেক ঘটনা দেখেছি। ‘বিদ্যানন্দ’ নামের একটি সংগঠন তাদের কার্যক্রম দিয়ে আমাদের মন জয় করেছিল। দ্রুতই দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসার পর স্বেচ্ছাবৃত্তি কি কমে গেল, এমন প্রশ্ন উঠেছে। এমনটি ঘটবে না, বরং মানুষ হয়ে উঠবে মানুষের জন্য- এটাই কাম্য।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, কলাম লেখক, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর